ডিমকে স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একে বলা হয় সুপার ফুড। এতে উচ্চ প্রোটিন, প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। অনেকে কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিম খান না। কিন্তু এটি ঠিক নয়। কারণ, একটি ডিমে ১৮৬ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা খুব বেশি নয়।
একটি সিদ্ধ ডিমে রয়েছে ৭৮ ক্যালরি, ৬ দশমিক ৩ গ্রাম প্রোটিন, ৫ দশমিক ৩৪ গ্রাম ফ্যাট ও সামান্য কার্বোহাইড্রেট। এ ছাড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ফসফোরিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি৫, ভিটামিন ডি, জিংক, ফোলেট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোলিন, লুটেইন, জেক্সানথিন।
উচ্চ-মানের প্রোটিনের উৎস: ডিম প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস যা পেশি গঠনে ও শরীরের টিস্যু মেরামতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ডিমের পুষ্টি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে: ডিমে থাকা ভিটামিন 'এ', লুটেইন এবং জিয়াজ্যান্থিন চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি: ডিমে থাকা 'কোলিন' মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ডিমের প্রোটিন পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী: ডিম হাড় ও দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ সরবরাহ করে।
হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে: ডিমের ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড মানসিক চাপ কমাতে ও মন শান্ত রাখতে সাহায্য করে, যা ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ডিমের 'ভালো কোলেস্টেরল' বা HDL কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে: ডিম চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সিদ্ধ ডিম খাওয়া সবচেয়ে ভালো এবং এটি সহজে হজম হয়।
যাদের কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাওয়া উচিত।
প্রতিদিন ১-২টি ডিম খাওয়া বেশিরভাগ সুস্থ মানুষের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
কেউ যদি ক্যালরি, ওজন বা কোলেস্টেরল কমানোর কথা চিন্তা করেন অথবা ফ্যাটি লিভারের কথা ভাবেন, তাহলে তাঁরা ডিম সিদ্ধ বা পানিতে পোচ করে খাবেন। কারণ, এখানে কোনো তেল থাকবে না।
ডিমের পুষ্টি সর্বাধিক পেতে যতটা সম্ভব কম তাপমাত্রায় স্বল্প সময়ে রান্না করুন।
প্রচলিত ডিমের চেয়ে অরগানিক ডিম বেশি পুষ্টিকর। দেশি প্রাকৃতিক চারণ করা মুরগির ডিমে ভিটামিন এ, ই, ওমেগা থ্রি ও ভিটামিন ডি প্রচলিত ডিমের চেয়ে তিন গুণ বেশি। এ ছাড়া ওমেগা থ্রি যুক্ত ডিমে উপকারী চর্বি বেশি। তাই হৃদ্রোগ, কোলেস্টরল ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এই ডিম ভালো।
ডিম রান্নার ক্ষেত্রে ভালো তেল নির্বাচন করা উত্তম। যেমন অ্যাভোকাডো ও এক্সট্রা ভার্জিন জলপাই তেল।
ডিমে কোনো ফাইবার থাকে না। ডিমের সঙ্গে ফাইবার তথা আঁশ হিসেবে খেতে পারেন পালংশাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি।
ডিম চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন হওয়ায় একে সামান্য তেল দিয়ে খেলে সহজে শরীরে শোষিত হবে। তবে অবশ্যই বেশি তেল দিয়ে দীর্ঘ সময় ভাজবেন না।
ডিম কাঁচা বা অল্প পোচ করে খাবেন না। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুরা। এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে।
কোলেস্টেরল বেশি না থাকলে বা হৃদ্রোগের ঝুঁকি না থাকলে ডিম অল্প তেল যোগ করে খেতে পারেন। কারণ, ডিম সিদ্ধ থেকে ডিম ভেজে খেলে প্রায় প্রতিটি ভিটামিন বেশি পাওয়া যায়। বিশেষ করে শিশুদের এভাবে দিন।
ডিমের মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান ভালো থাকায় ডিম খাওয়ার পর চা, চিনিযুক্ত খাবার, দুধ বা সয়াজাতীয় খাবার খাবেন না।
ডিম যেহেতু প্রোটিনের ভালো উৎস, তাই প্রোটিনের চাহিদা ও অন্য প্রোটিন খাবার কেমন খাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে ডিম খেতে হবে।
ডিম ধরার পর অবশ্যই হাত সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন।