বাংলায় সর্বনাম (Pronoun) হলো এমন একটি পদ যা বাক্যে বিশেষ্যের (noun) পুনরাবৃত্তি এড়াতে বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, যেমন 'সে', 'তিনি', 'আমি', 'তুমি', 'যা', 'কে', ইত্যাদি; এটি বক্তা বা বিষয়কে নির্দেশ করে এবং বিভিন্ন প্রকারের হয় (ব্যক্তিবাচক, প্রশ্নবোধক, সাপেক্ষ)।
সংজ্ঞা:
বিশেষ্যের পরিবর্তে যে শব্দ ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
'সবার নাম' বা 'সবার সংজ্ঞা' (ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস)।
উদাহরণ:
বিশেষ্য: আফতাব ভালো ছেলে। আফতাব লেখাপড়া করে।
সর্বনাম: আফতাব ভালো ছেলে। সে লেখাপড়া করে। এখানে 'সে' সর্বনামটি 'আফতাব' (বিশেষ্য) এর পরিবর্তে বসেছে।
যে সর্বনাম কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিকে বোঝায়, তাকে ব্যক্তিবাচক সর্বনাম বলে। একে পুরুষবাচক সর্বনামও বলা হয়। এটি মানুষ, প্রাণী বা বস্তুর পরিবর্তে ব্যবহৃত হতে পারে এবং এর উদাহরণ হলো: আমি, আমরা, তুমি, তোমরা, সে, তারা, তিনি, ইত্যাদি।
ব্যক্তিবাচক সর্বনামের প্রকারভেদ
ব্যক্তিবাচক সর্বনামকে আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
উত্তম পুরুষ: যিনি কথা বলছেন, যেমন: আমি, আমরা।
সংজ্ঞা: বক্তা যখন নিজের পরিচয় দিতে বা নিজের সম্পর্কে কিছু বলতে 'আমি', 'আমরা' বা এদের বিভিন্ন রূপ ব্যবহার করেন, তখন তাদের উত্তম পুরুষ বলা হয়।
উদাহরণ: আমি, আমার, আমরা, আমাদের, আমাকে, আমাদের, ইত্যাদি।
মধ্যম পুরুষ: যার সাথে কথা বলা হচ্ছে, যেমন: তুমি, তোমরা।
সংজ্ঞা:ব্যাকরণে মধ্যম পুরুষ (Second Person) বলতে সেই সর্বনাম পদগুলোকে বোঝানো হয়, যা বক্তা তার শ্রোতা বা যার উদ্দেশ্যে কথা বলছেন, তাকে নির্দেশ করতে ব্যবহার করেন
উদাহরণ: একবচন: তুমি, তুই, আপনি। বহুবচন: তোমরা, তোরা।
নাম পুরুষ: যার সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে, যেমন: সে, তারা, তিনি।
সংজ্ঞা:বাংলা ব্যাকরণে নাম পুরুষ (Third Person) বলতে সেইসব ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে বোঝানো হয়, যাদের সম্পর্কে বক্তা (আমি) বা শ্রোতা (তুমি) ছাড়া অন্য কেউ বা কিছু বলা হয়; এরা বক্তা ও শ্রোতার অনুপস্থিতিতে পরোক্ষভাবে উল্লেখিত হয় এবং 'সে', 'তারা', 'তিনি', 'তাদের' ইত্যাদি সর্বনাম দ্বারা এদের বোঝানো হয়।
নাম পুরুষের বৈশিষ্ট্য:
অনুপস্থিতি: বক্তা ও শ্রোতার সামনে নেই এমন ব্যক্তি বা বস্তু।
উদাহরণ: "সে" (সে ভালো ছেলে), "তারা" (তারা খেলছে), "তিনি" (তিনি শিক্ষক)।
ব্যাকরণে ভূমিকা: এটি উত্তম পুরুষ (আমি) ও মধ্যম পুরুষ (তুমি) ছাড়া অন্য পক্ষকে বোঝায়, যা ক্রিয়ার আশ্রয় হিসেবে কাজ করে।
মর্যাদা অনুযায়ী ব্যক্তিবাচক সর্বনাম মূলত তিন প্রকার: মানী সর্বনাম (আপনি, তিনি), সাধারণ সর্বনাম (তুমি, সে) এবং ঘনিষ্ঠ/তুচ্ছ সর্বনাম (তুই, ও)—যা বয়স, সম্পর্ক ও সম্মানের ভিত্তিতে ব্যবহৃত হয়, যেমন শিক্ষককে 'আপনি' বলা হয়, বন্ধুকে 'তুমি', আর ঘনিষ্ঠ বা ছোটকে 'তুই' বলা হয়।
মর্যাদা অনুযায়ী ব্যক্তিবাচক সর্বনাম
১. মানী সর্বনাম (সম্মানসূচক):
ব্যবহার: সম্মানিত ব্যক্তি, বয়োজ্যেষ্ঠ, শিক্ষক, অপরিচিত বা শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: আপনি, আপনারা, তিনি, তাঁরা, তিনি/তিনি।
যেমন: "আপনি (শিক্ষক) কি আসবেন?"
২. সাধারণ সর্বনাম (মধ্যম/সাধারণ):
ব্যবহার: সমবয়সী, বন্ধু, ভাই-বোন, বা সাধারণ পরিচিতদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: তুমি, তোমরা, সে, তারা।
যেমন: "তুমি (বন্ধু) কোথায় যাচ্ছ?"
৩. ঘনিষ্ঠ/তুচ্ছ সর্বনাম (অসম্মানসূচক/স্নেহসূচক):
ব্যবহার: অতি ঘনিষ্ঠজন, ছোট শিশু বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ: তুই, তোরা, ও, ওরা, এ, এরা।
যেমন: "তুই (ছোট ভাই) খেয়েছিস?" অথবা "ও (অপরিচিত) ওখানে কী করছে?"
মনে রাখা জরুরি: বাংলায় কথা বলার সময় শ্রোতা বা যার সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তার বয়স ও সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী সঠিক সর্বনামটি ব্যবহার করা ভাষার মর্যাদা ও শিষ্টাচারের পরিচায়ক।
আত্মবাচক সর্বনাম হলো এমন সর্বনাম যা দ্বারা কর্তা নিজেই নিজের ওপর কাজ করে বা নিজের ওপরই ক্ষমতা প্রয়োগ করে বোঝানো হয়। এই সর্বনামগুলো কর্মের উপর কর্তার সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বা স্বকীয়তা বোঝাতে সাহায্য করে। যেমন: নিজ, নিজে, স্বয়ং, খোদ, আপনি ইত্যাদি।
সংজ্ঞা: যে সর্বনাম দ্বারা বোঝানো হয় যে, কর্তা নিজেই কর্মের অধীনে চলে গেছে বা কর্তা কোনো কাজ নিজেই সম্পন্ন করেছে, তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ:
আমি নিজেই অফিস করি।
সে স্বয়ং কাজটি করেছে।
আপনি খোদ এখানে আসুন।
আমরা নিজেদের মতো করে কাজ করি।
যে সর্বনাম পদ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে, তাকে নির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন: এ, এই, ও, ওরা, উনি, ঐ, এটা, ওটা ইত্যাদি।
নির্দেশক সর্বনামের কিছু উদাহরণ:
নিকটবর্তী বস্তু/ব্যক্তি নির্দেশক: এ, এই, এরা, এটা, এগুলো।
উদাহরণ: "এই বইটি আমার"।
দূরবর্তী বস্তু/ব্যক্তি নির্দেশক: ও, ওরা, ওটা, ওই, উনি।
উদাহরণ: "ওটা একটি সুন্দর পাখি"।
সামীপ্যবাচক সর্বনামের উদাহরণ
সামীপ্যবাচক সর্বনাম হলো সেই নির্দেশক সর্বনামগুলো যা কোনো নিকটের বা কাছের ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে। এগুলো 'এ', 'এই', 'এরা', 'ইহা', 'ইনি', 'এটা', 'এগুলি' ইত্যাদি শব্দ দ্বারা গঠিত এবং এদের সঙ্গে বিভক্তি যোগ হতে পারে।
এ: এ আমার বন্ধু।
এই: এই বইটি খুব ভালো।
এরা: এরা সবাই আমার পরিচিত।
ইহা: ইহা একটি সুন্দর ফুল।
ইনি: ইনি আমাদের শিক্ষক।
এটা: এটা খুব মজার জিনিস।
এগুলো: এগুলো আমার বই।
অনির্দিষ্ট সর্বনাম (Indefinite Pronouns) হলো এমন কিছু শব্দ যা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা পরিমাণকে না বুঝিয়ে অস্পষ্টভাবে বা সাধারণভাবে বোঝায়, যেমন 'কেউ', 'কিছু', 'অনেকে', 'সবাই', 'অন্য', ইত্যাদি; এগুলি সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যা বা পরিচয় প্রকাশ করে না, বরং একটি সাধারণ ধারণা দেয়।
উদাহরণ:
"কেউ দরজায় কড়া নাড়ছে।" (এখানে 'কেউ' নির্দিষ্ট করে কোনো ব্যক্তিকে বোঝাচ্ছে না)।
"কিছু খাবার দাও।" (এখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ নয়, বরং সাধারণভাবে কিছু খাবারের কথা বলা হচ্ছে)।
"অন্যরা কী বলছে, তা জানি না।"
সাধারণ অনির্দিষ্ট সর্বনামগুলো:
একবচন: অন্য (another), যে কেউ (anyone), যে কোনো (anything), প্রতিটি (each), হয় (either), যথেষ্ট (enough), ইত্যাদি।
বহুবচন: অনেকে (many), উভয় (both), সবাই (all)।
একবচন বা বহুবচন: কিছু (some), যে কোনো (any), যথেষ্ট (enough)।
নেতিবাচক: কেউ না (none), কেউ না (neither), না (no one)।
কাজের ধরন:
এগুলো বাক্যে কর্তা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন 'কেউ এসেছিল', অথবা কর্ম হিসেবে, যেমন 'আমি কিছু দেখলাম'।
প্রশ্নবোধক সর্বনাম হলো এমন সর্বনাম (যেমন: কে, কী, কোনটি, কারা, যাকে) যা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান বা কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে ব্যবহৃত হয় এবং একটি বিশেষ্যের পরিবর্তে বসে, যা অজানা তথ্য জানতে সাহায্য করে, যেমন - "তোমার নাম কী?" বা "কে ওটা?"।
মূল ধারণা:
কাজ: অজানা তথ্য জানতে প্রশ্ন করা।
উদাহরণ: কে, কী, কোনটি, কারা, যাকে, যা।
পার্থক্য: বাংলায় 'কি' (অব্যয়) ও 'কী' (সর্বনাম) -এর মধ্যে পার্থক্য আছে; 'কী' সাধারণত সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেমন 'তুমি কী খাবে?'।
উদাহরণ:
কে আসবে? (ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন)
কী করছ? (বস্তু বা কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন)
কোনটি তোমার বই? (পছন্দ সম্পর্কে প্রশ্ন)
কারা খেলছে? (বহুবচন ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন)
যাকে খুঁজছিলে, সে এলো। (আপেক্ষিক সর্বনামের মতো ব্যবহার)
সাপেক্ষ সর্বনাম (Relative Pronoun) হলো এমন সর্বনাম যা বাক্যের দুটি অংশকে যুক্ত করে এবং একটি বাক্যাংশের পরিবর্তে অন্য একটি বাক্যাংশকে নির্দেশ করে, যেমন 'যে-সে', 'যা-তা', 'যিনি-তিনি' ইত্যাদি, যা একটি সম্পর্ক স্থাপন করে এবং 'যে' বা 'যা' দিয়ে শুরু হয়ে সাধারণত 'সে' বা 'তা' দ্বারা শেষ হয়, যা নির্দিষ্টভাবে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে না বুঝিয়ে একটি সম্পর্ক স্থাপন করে।
সংজ্ঞা:
যে সর্বনাম পদ দুটি বাক্যাংশকে যুক্ত করে এবং একটির পরিবর্তে অন্যটিকে নির্দেশ করে, তাকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলে।
উদাহরণ ও ব্যাখ্যা:
"যে" ও "সে": "যে পরিশ্রম করে, সে-ই ভালো ফল পায়।" এখানে 'যে' (পরিশ্রমকারী) এবং 'সে' (ভালো ফল প্রাপক) একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত।
"যা" ও "তা": "যা চাই, তা-ই দাও।" 'যা' (যা চাওয়া হচ্ছে) এবং 'তা' (যা দেওয়া হচ্ছে) পরস্পর সাপেক্ষ।
"যিনি" ও "তিনি": "যিনি দেশের সেবা করেন, তিনি মহান।" 'যিনি' (সেবাকারী) ও 'তিনি' (মহান ব্যক্তি) পরস্পর সম্পর্কিত।
সাপেক্ষ সর্বনামের বৈশিষ্ট্য:
এগুলো সাধারণত দুটি সর্বনামের জোড়া (যেমন: যে-সে, যা-তা) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বাক্যে এরা আপেক্ষিক বা নির্ভরশীল সম্পর্ক তৈরি করে, অর্থাৎ একটি অংশ অন্য অংশের উপর নির্ভরশীল।
অন্যান্য উদাহরণ:
যা-কিছু, যা-তা, যে-কেউ, অন্য-কিছু, অন্য-কেউ, কেউ-না-কেউ।
পারস্পরিক সর্বনাম (Reciprocal Pronoun) হলো এমন সর্বনাম যা দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বা পারস্পরিক ক্রিয়া বোঝায়, যেমন ইংরেজিতে 'each other' বা 'one another' ব্যবহৃত হয়। বাংলাতে এর সরাসরি প্রতিরূপ না থাকলেও, 'পরস্পর', 'একে অপর', 'একজন আরেকজনকে'—এই ধরনের শব্দগুচ্ছ পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা 'পারস্পরিক সর্বনাম'-এর কাজ করে, যেমন— "তারা একে অপরকে ভালোবাসে", আপনা-আপনি, নিজে-নিজে, আপসে, পরস্পর ইত্যাদি। ।
মূল ধারণা:
সংজ্ঞা: যেসব সর্বনাম বা শব্দগুচ্ছ দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক (mutual relationship) বা পারস্পরিক ক্রিয়া (reciprocal action) প্রকাশ করে, তাদের পারস্পরিক সর্বনাম বলে।
উদাহরণ (ইংরেজি): Each other, one another।
উদাহরণ (বাংলা): পরস্পর, একে অপর, একজন আরেকজনকে, আপনারা একে অপরকে ইত্যাদি।
উদাহরণ (বাংলা):
"শিক্ষক ও ছাত্ররা একে অপরকে সম্মান করে।" (এখানে 'একে অপরকে' পারস্পরিক সম্পর্ক বোঝাচ্ছে)।
"তারা পরস্পরকে সাহায্য করেছিল।" (এখানে 'পরস্পরকে' পারস্পরিক ক্রিয়া বোঝাচ্ছে)।
সংক্ষেপে, পারস্পরিক সর্বনাম এমন শব্দ যা দেখায় যে ক্রিয়াটি উভয় পক্ষেই ঘটছে বা সম্পর্কটি উভয় দিকেই বিদ্যমান।
সাকল্যবাচক সর্বনাম (Inclusive Pronouns) বলতে সেইসব শব্দকে বোঝানো হয় যা কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের সমষ্টিকে বোঝায়, যেমন: সব, সকল, সমুদয়, উভয়, সবাই, সবকিছু, তাবৎ ইত্যাদি। এগুলো একটি সম্পূর্ণ দলকে বা সমষ্টিকে নির্দেশ করে, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নয়।
কিছু উদাহরণ:
সব মানুষ একমত হলো।
সকল প্রাণীই প্রকৃতির অংশ।
উভয় পক্ষই সিদ্ধান্ত মেনে নিল।
সবাই মিলে খেলা দেখতে গেল।
সমুদয় সম্পত্তি তার নামে লিখে দেওয়া হলো।
তাবৎ লোক জড়ো হয়েছিল।
এই শব্দগুলো বাক্যে একটি সম্পূর্ণতা বা সমষ্টিগত ধারণা প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
অন্যাদিবাচক সর্বনাম (Other Pronouns) হলো সেইসব সর্বনাম যা 'অন্য', 'অপর', 'পর' ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয় এবং বাক্যে ভিন্ন বা অনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝাতে সাহায্য করে, যেমন: অন্য, অপর, পর। এছাড়াও 'অন্য-কিছু', 'অন্য-কেউ', 'আর-কিছু', 'যে-কেউ' এই ধরনের শব্দগুলোও অন্যাদিবাচক সর্বনামের উদাহরণ, যা অনিশ্চিত বা অনির্দিষ্টতা প্রকাশ করে।
উদাহরণ:
অন্য কেউ আসবে।
এখানে অপর কেউ নেই।
আমার পর তুমি যাবে।
অন্য-কিছু দরকার নেই।
যে-কেউ এখানে আসতে পারে।
মূলত:
এগুলো অন্য বা ভিন্ন কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়।
এগুলো অনিশ্চয়তা বা অনির্দিষ্টতা বোঝাতেও কাজে লাগে, যেমন 'কেউ', 'কোন'।
ব্যবহারের উদ্দেশ্য:
বাক্যে বিশেষ্যের পুনরাবৃত্তি এড়ানো এবং ভাষাকে শ্রুতিমধুর করা।
ব্যক্তি বা বস্তুর পরিবর্তে ব্যবহার করে বক্তা বা বিষয়কে নির্দিষ্ট করা।
সংযোগজ্ঞাপক সর্বনাম (Relative Pronoun) হলো সেইসব সর্বনাম যা বাক্যের দুটি অংশকে বা দুটি ব্যক্তি/বস্তুকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে, যেমন: যে, যিনি, যাঁরা, যাহারা, যা, যা-কিছু ইত্যাদি; এগুলো একটি বিশেষ্য বা সর্বনামের সাথে সম্পর্কিত তথ্য যোগ করে বাক্যকে সম্পূর্ণ করে।
উদাহরণ:
"যে ভালো ছেলে, সে ভালো ফল করবে।" (এখানে 'যে' এবং 'সে' সংযোগ স্থাপন করছে).
"যারা কঠোর পরিশ্রম করে, তারা জীবনে সফল হয়।" (এখানে 'যারা' ও 'তারা' যুক্ত করছে).
প্রধান সংযোগজ্ঞাপক সর্বনামগুলো:
যে, যিনি, যাহারা, যাঁহারা.
যা, যাহা, যা-কিছু.
যাহা-তা, যে-কেউ, যে-কোন (যৌগিক রূপে).
এই সর্বনামগুলো একটি আপেক্ষিক বাক্য (Relative Clause) তৈরি করে বাক্যের মূল অংশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, যা এদের 'সংযোগজ্ঞাপক' বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে.