বিশেষ্য (Noun) হলো এমন একটি পদ যা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, স্থান, জাতি, সমষ্টি, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝায়; সহজ কথায়, যেকোনো কিছুর নামকেই বিশেষ্য পদ বলা হয়, যেমন: 'ঢাকা' (স্থান), 'মানুষ' (জাতি), 'দয়া' (গুণ), 'বই' (বস্তু)। এটি বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং একে নামপদও বলা হয়।
বিশেষ্যের উদাহরণ
ব্যক্তি: রহিম, মারিয়া, নজরুল
বস্তু: বই, থালা, বাটি, টাকা, ফল, ফুল
স্থান: ঢাকা, বাংলাদেশ, যমুনা
জাতি: মানুষ, গরু, ছাগল, পাখি
গুণ/ভাব/অবস্থা: দয়া, মায়া, সততা, আভিজাত্য
কাল: আষাঢ়
সংজ্ঞাবাচক বা নামবাচক বিশেষ্য (Proper Noun) হলো এমন শব্দ যা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, স্থান, বস্তু, প্রতিষ্ঠান, দিন, মাস বা বিশেষ কিছুর নাম বোঝায় (যেমন: করিম, ঢাকা, পদ্মা, ফেসবুক, ডিসেম্বর), যা সাধারণ বিশেষ্য (Common Noun) থেকে আলাদা কারণ এগুলো সবসময় বড় হাতের অক্ষর দিয়ে শুরু হয় এবং একটি বিশেষ সত্তাকে নির্দেশ করে।
সংজ্ঞা:
যে বিশেষ্য পদ (Noun) দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, স্থান, জাতি, বস্তু, প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থ, দিন, মাস বা বিশেষ কোনো কিছুর নাম বোঝানো হয়, তাকে নামবাচক বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য (Proper Noun) বলে।
উদাহরণ:
ব্যক্তি: করিম, রহিমা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শেখ হাসিনা।
স্থান: ঢাকা, বাংলাদেশ, মাউন্ট এভারেস্ট, পদ্মা নদী।
বস্তু/বিষয়: Titanic (টাইটানিক জাহাজ), War and Peace (বই), Facebook (ফেসবুক)।
দিন/মাস/ঋতু: Sunday (রবিবার), December (ডিসেম্বর), Summer (গ্রীষ্ম)।
প্রতিষ্ঠান: Domino's, Mercedes, Amazon।
গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
নির্দিষ্টতা: এটি একটি সাধারণ ক্যাটাগরির (যেমন: শহর) পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট নাম (যেমন: ঢাকা) বোঝায়।
Capitalization: ইংরেজি ব্যাকরণে Proper Noun সবসময় বাক্যের শুরুতে বা মাঝে যেখানেই বসুক না কেন, বড় হাতের অক্ষর (Capital Letter) দিয়ে শুরু হয়।
সাধারণ/জাতিবাচক বিশেষ্য (Common Noun) হলো এমন একটি শব্দ যা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, স্থান, প্রাণী বা বস্তুর নাম না বুঝিয়ে একই শ্রেণির সকল সদস্যকে বোঝায়, যেমন: 'ছেলে', 'নদী', 'শহর', 'পশু'—এগুলো সাধারণ বা জাতিবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ, যা একটি জাতির বা শ্রেণির সাধারণ নাম প্রকাশ করে।
সাধারণ বিশেষ্যের বৈশিষ্ট্য
সাধারণ নাম: এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট নাম নয়, বরং একটি সাধারণ পরিচয় দেয় (যেমন: 'মানুষ', 'দেশ', 'বই')।
শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব: একই জাতীয় সবকিছুর জন্য এই শব্দটি প্রযোজ্য (যেমন: 'শিক্ষক' বললে যেকোনো শিক্ষককে বোঝানো যায়)।
ছোট হাতের অক্ষর: সাধারণত, বাক্যের মাঝে এলে সাধারণ বিশেষ্য ছোট হাতের অক্ষর দিয়ে শুরু হয় (যদি না এটি বাক্যের শুরুতে থাকে)।
উদাহরণ
ব্যক্তি: ছেলে (boy), মেয়ে (girl), শিক্ষক (teacher)।
স্থান: শহর (city), দেশ (country), নদী (river)।
বস্তু: বই (book), কলম (pen), গাড়ি (car)।
প্রাণী: কুকুর (dog), পাখি (bird), মাছ (fish)।
সাধারণ বিশেষ্য বনাম নামবাচক বিশেষ্য (Proper Noun)
সাধারণ: ছেলে, নদী, শহর (যেকোনো ছেলে, যেকোনো নদী, যেকোনো শহর)।
নামবাচক: রহিম (নির্দিষ্ট ছেলে), পদ্মা (নির্দিষ্ট নদী), ঢাকা (নির্দিষ্ট শহর)।
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য (Collective Noun) হলো এমন একটি বিশেষ্য পদ যা একদল ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীকে একত্রে একটি একক সমষ্টি হিসেবে বোঝায়, যেমন - দল (Team), পরিবার (Family), সভা (Meeting), জনতা (Crowd), আর্মি (Army) ইত্যাদি। এই শব্দগুলো অনেকগুলো সদস্যের একটি দলকে নির্দেশ করে, কিন্তু এককভাবে একটি নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ:
সংজ্ঞা: যে বিশেষ্য পদ কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর সমষ্টিকে বোঝায়, তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে।
উদাহরণ (মানুষ):
জনতা (Crowd) - অনেক মানুষের সমষ্টি।
কমিটি (Committee) - একদল মানুষের সমষ্টি।
শ্রোতা (Audience) - একদল শ্রোতার সমষ্টি।
পুলিশ (Police) - আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমষ্টি।
উদাহরণ (প্রাণী):
ঝাঁক (Flock) - পাখির দল।
দল (Herd/Pack) - পশুর দল।
উদাহরণ (বস্তু):
শ্রেণী (Class) - শিক্ষার্থীদের একটি দল।
বহর (Convoy) - গাড়ির একটি সারি।
ব্যবহার:
এই শব্দগুলো একটি একক হিসেবে কাজ করে, কিন্তু এর ভেতরে অনেক সদস্য থাকে, যেমন 'আমাদের ক্লাস একটি ভ্রমণে গিয়েছিল' ('Our class took a trip')।
সংক্ষেপে, সমষ্টিবাচক বিশেষ্য হলো এমন একটি শব্দ যা একটি গোষ্ঠীকে একটি নাম দেয়, যেমন "দল" (Team) একটি একক শব্দ হলেও এটি অনেক খেলোয়াড়কে বোঝায়।
বস্তুবাচক বিশেষ্য (Material Noun) হলো সেইসব বিশেষ্য পদ যা কোনো সাধারণ বস্তু বা পদার্থের নাম বোঝায়, যেগুলোর সংখ্যা গোনা যায় না, শুধু পরিমাণ মাপা যায়, যেমন: জল, দুধ, চাল, তেল, লবণ, মাটি, বালি, চিনি, কাগজ ইত্যাদি। এগুলো মূলত দ্রব্যবাচক বা উপাদানবাচক নাম, যা সাধারণ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ:
তরল: জল, দুধ, তেল,
শস্য: চাল, চিনি,
খনিজ: লবণ, বালি, মাটি,
অন্যান্য: কাগজ, কলম, বই, থালা, বাটি
বৈশিষ্ট্য:
এটি কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর নাম না বুঝিয়ে একটি শ্রেণির বা পদার্থের সাধারণ নাম বোঝায়।
এগুলোকে একক বা সংখ্যা হিসেবে গণনা করা যায় না, বরং পরিমাণ হিসেবে ধরা হয় (যেমন: এক লিটার জল, এক কেজি চাল)।
গুণবাচক বিশেষ্য হলো সেই বিশেষ্য পদ যা কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা অবস্থার দোষ, গুণ, অবস্থা বা ভাবের নাম বোঝায়, যেমন—সুখ, দুঃখ, দয়া, প্রেম, মধুরতা, তারুণ্য, সৌরভ, স্বাস্থ্য ইত্যাদি। এটি বিশেষ্যের একটি প্রকারভেদ যা কোনো কিছুকে সংজ্ঞায়িত করার পরিবর্তে তার অন্তর্নিহিত গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে, যেমন এটি " মধুর মিষ্টত্বের গুণ" বা "তরল দ্রব্যের গুণ" কে "মধুরতা" বা "তারল্য" হিসেবে প্রকাশ করে.
উদাহরণ:
গুণ: দয়া, প্রেম, সৌন্দর্য, মধুরতা.
দোষ: তিক্ততা, ক্রোধ.
অবস্থা/ভাব: সুখ, দুঃখ, যৌবন, তারুণ্য, স্বাস্থ্য, সৌরভ, বেদনা.
গুরুত্বপূর্ণ দিক:
এটি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুর নাম নয়, বরং তাদের বৈশিষ্ট্য বা গুণের নাম.
জাতিবাচক বিশেষ্যের মতো এর বহুবচন হয় না (যেমন: 'সুখ' এর 'সুখেরা' হয় না).
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য হলো সেই বিশেষ্য পদ যা কোনো কাজের নাম বোঝায়। একে ভাববাচক বিশেষ্যও বলা হয়, কারণ এটি কোনো ক্রিয়ার ভাব বা কাজের ভাব প্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ: 'গমন' (যাওয়ার কাজ), 'দর্শন' (দেখার কাজ), 'ভোজন' (খাওয়ার কাজ) ইত্যাদি হলো ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের উদাহরণ।
সংজ্ঞা: যে বিশেষ্য কোনো কাজকে নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে।
গঠন: ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যোগে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য গঠিত হয়। যেমন:
ধাতু + কৃৎ প্রত্যয় = ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য
খাওয়া (খা + ওয়া) → খাওয়া
শোনা (শুন + আ) → শোনা
গমন (গম + অন) → গমন
ভোজন (ভোজ + অন) → ভোজন
দেখা (দেখ + আ) → দেখা
উদাহরণ:
গমন (যাওয়ার ভাব)
দর্শন (দেখার ভাব)
ভোজন (খাওয়ার ভাব)
শয়ন (শোয়ার ভাব)
দেখা, শোনা (ক্রিয়াপদের ভাব)
লেখাপড়া (লেখার ও পড়ার ভাব)
ঘুমান (ঘুমানোর ভাব)
ক্রিয়াপদ থেকে পার্থক্য
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য কোনো কাজকে একটি নাম হিসেবে বোঝায়, যা সরাসরি ক্রিয়াপদের মতো বাক্যে ব্যবহৃত হয় না, বরং বিশেষ্যের ভূমিকা পালন করে (যেমন: "ভোজন শেষ")।
মূল কথা:
কাজ বা ক্রিয়ার নাম: কোনো কাজকে যখন বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় (যেমন 'গমন' মানে 'যাওয়া')।
ভাব প্রকাশ: কাজটি কেমন বা তার ভাবটা কী, তা বোঝায়।
উদাহরণ: 'সে গমন করছে' (এখানে 'গমন' কাজটি), 'আমাদের ভোজন শেষ হলো' (এখানে খাওয়া কাজটি)।
ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের মূল নিয়ম হলো এটি কাজের ধারণা দেয়, কিন্তু তা বিশেষ্যের রূপ নেয়, এবং এর গঠন মূলত ধাতুর সাথে বিভিন্ন কৃৎ প্রত্যয় যোগ করে হয়ে থাকে।