যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে, তাকে বিশেষণ বলে। এটি বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি বোঝায়। বাংলা ব্যাকরণে প্রধানত দুই প্রকারের বিশেষণ হলো: নাম বিশেষণ এবং ভাব বিশেষণ।
বিশেষণ
বিশেষণ কাকে বলে:
যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম বা ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে, অর্থাৎ এদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা বা পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ বলে।
উদাহরণ: লাল ফুল (এখানে 'লাল' শব্দটি 'ফুল' বিশেষ্যকে বিশেষিত করছে)।
উদাহরণ: ভালো ছেলে (এখানে 'ভালো' শব্দটি 'ছেলে' বিশেষ্যকে বিশেষিত করছে)।
যে বিশেষণ কোনো বিশেষ্য বা সর্বনামের গুণ, দোষ, অবস্থা, সংখ্যা বা পরিমাণ বোঝায়, তাকে নাম বিশেষণ বলে।
'বিশেষ্য' পদকে বিশেষিত করে। যেমন: লাল রক্ত।
'সর্বনাম' পদকে বিশেষিত করে। যেমন: করুণাময় তুমি।
যে বিশেষণ বিশেষ্য ও সর্বনাম ছাড়া অন্য কোনো পদের (বিশেষত ক্রিয়াপদ) দোষ, গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে, তাকে ভাব বিশেষণ বলে।
ক্রিয়াপদের গুণ, অবস্থা, প্রকৃতি ইত্যাদি নির্দেশ করে। যেমন: আস্তে হাঁটো।
অন্য একটি বিশেষণকে বিশেষিত করে। যেমন: খুব ভালো ছেলে।
অব্যয় পদকে বিশেষিত করে।
উদাহরণ: সে কেবল চেষ্টা করছে (কেবল অব্যয়কে বিশেষিত করছে)।
সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করে।
উদাহরণ: সত্যিই, সে খুব সাহসী (পুরো বাক্যটিকে বিশেষিত করছে)।
যে বিশেষণ কোনো ব্যক্তি/বস্তুর গুণ বা দোষ প্রকাশ করে।
উদাহরণ: ভাল, মন্দ, সৎ, অসৎ, সুন্দর, দয়ালু।
যে বিশেষণ কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পরিমাণ বা মাত্রা বোঝায়।
উদাহরণ: অনেক, অল্প, সামান্য, অধিক, পুরো, অর্ধেক।
যে বিশেষণ সংখ্যা বা ক্রম বোঝায়।
এটি আবার দুই ভাগে বিভক্ত—
নির্দিষ্ট সংখ্যা-বাচক: এক, দুই, তিন…
অনির্দিষ্ট সংখ্যা-বাচক: কিছু, কয়েকটি, বহু।
যে বিশেষণ কোনো বস্তুকে নির্দেশ করে।
উদাহরণ: এই, সেই, ওই, ঐসব, এরা, সেগুলো।
যে শব্দ কোনো কিছুর পরিমাপ বা মাত্রা বোঝায়।
উদাহরণ: লম্বা, খাটো, ভারী, হালকা, চওড়া, মোটা।
যে বিশেষণ কোনো একটি বিষয় বা বস্তুর সাথে অন্য কিছুর সম্পর্ক বোঝায়।
উদাহরণ: পিতৃসুলভ, মাতৃসুলভ, শিশুসুলভ, ভারতীয়, বাংলা, স্কুলের।
যে বিশেষণ কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর মানসিক/শারীরিক অবস্থা বোঝায়।
উদাহরণ: রাগান্বিত, ক্লান্ত, অসুস্থ, সুখী, দুঃখী।
যে বিশেষণ রং বোঝায়।
উদাহরণ: লাল, নীল, সবুজ, কালো, সাদা।
যে বিশেষণ কোনো বস্তুর গঠন বা তৈরির উপাদান বোঝায়।
উদাহরণ: কাঠের টেবিল, লোহার দরজা, সোনার আংটি।
ক্রিয়া থেকে গঠিত বিশেষণ।
উদাহরণ: হাস্যমুখ, চলমান বাস, দৌড়ানো ছেলে, লেখা খাতা।
নির্ধারক বিশেষণ (Nirdharok Bisheshon) হলো বাংলা ব্যাকরণে এমন এক ধরনের বিশেষণ যা কোনো বিশেষ্য পদের সংখ্যা, পরিমাণ, বা আধিক্য বা অল্পত্বকে নির্দিষ্ট করে বা সীমানা টেনে দেয়, যা সাধারণত দ্বিরুক্ত শব্দ (যেমন: 'অনেক', 'কিছু', 'রাশি রাশি') বা নির্দিষ্ট সর্বনাম (যেমন: 'এই', 'ওই') রূপে ব্যবহৃত হয়, যা বিশেষ্যের গুণ না বলে তার পরিমাণ নির্দেশ করে।
উদাহরণ ও ব্যাখ্যা:
রাশি রাশি ধান: এখানে 'রাশি রাশি' শব্দটি ধানের পরিমাণ বোঝাচ্ছে, কিন্তু ধান কেমন (ভালো/খারাপ) তা বলছে না, শুধু সংখ্যা/পরিমাণ নির্দেশ করছে।
ছোট ছোট মাছ: 'ছোট ছোট' শব্দটি মাছের গুণ (ছোট) বোঝালেও, এটি দ্বিরুক্ত হয়ে আধিক্য বোঝাচ্ছে, যা নির্ধারক বিশেষণের উদাহরণ।
অনেক লোক: 'অনেক' শব্দটি লোকের সংখ্যা বা পরিমাণ নির্দিষ্ট করছে।
নির্ধারক বিশেষণের কাজ:
পরিমাণ: অনেক, কিছু, অল্প, রাশি রাশি।
সংখ্যা: দুই, তিনটি।
নির্দিষ্টতা: এই, সেই, যে।
মূলত, এটি এমন একটি শব্দ যা বিশেষ্যের গুণ, দোষ বা অবস্থা না বলে, বরং তার সংখ্যা, পরিমাণ বা অস্তিত্বের একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে, যা বিশেষণের একটি বিশেষ রূপ।
বাংলা ব্যাকরণে বিধেয় বিশেষণ (Predicate Adjective) হলো এমন একটি বিশেষণ পদ যা বাক্যের উদ্দেশ্যের পরে বসে এবং সেই উদ্দেশ্য (বিশেষ্য বা সর্বনাম) সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য বা অবস্থা প্রকাশ করে, যা বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণ করে, যেমন 'সে খুব সুন্দর' বা 'মেয়েটি মেধাবী'। এটি বিশেষণের একটি প্রকারভেদ, যা সাধারণত বিশেষ্যের (noun) পরে অবস্থান করে।
মূল ধারণা:
বিধেয় (Predicate): বাক্যে উদ্দেশ্য (subject) সম্পর্কে যা বলা হয়, তাই বিধেয়।
বিধেয় বিশেষণ: এই বিধেয় অংশের মধ্যে থাকা বিশেষণ যা বিশেষ্যকে বর্ণনা করে।
উদাহরণ:
"ছেলেটি বড়।" (এখানে 'বড়' বিশেষণটি 'ছেলেটি' সম্পর্কে বলছে)।
"ফুলগুলো লাল।" (এখানে 'লাল' বিশেষণটি 'ফুলগুলো'-এর অবস্থা বোঝাচ্ছে)।
"সে খুব সুন্দর।" (এখানে 'সুন্দর' বিশেষণটি 'সে'-এর গুণ প্রকাশ করছে)।
কোথায় বসে:
বিধেয় বিশেষণ সাধারণত বিশেষ্যের পরে বসে, যা এটিকে সাধারণ বিশেষণ (যেমন 'সুন্দর ফুল'-এ 'সুন্দর') থেকে আলাদা করে।
সুতরাং, বিধেয় বিশেষণ হলো বাক্যের বিধেয় অংশে থাকা সেই বিশেষণ যা উদ্দেশ্য পদকে বিশেষিত করে এবং বাক্যকে সম্পূর্ণতা দেয়।