শক্তি চট্টোপাধ্যায়
হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান ঘুরতে দেখেছি অনেক
তাদের হলুদ ঝুলি ভরে গিয়েছিলো ঘাসে আবিল ভেড়ার পেটের মতন
কতকালের পুরোনো নতুন চিঠি কুড়িয়ে পেয়েছে
ওই হেমন্তের অরণ্যের পোস্টম্যানগুলি
আমি দেখেছি, কেবল অনবরত ওরা খুঁটে চলেছে
বকের মতো নিভৃতে মাছ
এমন অসম্ভব রহস্যপূর্ণ সতর্ক ব্যস্ততা ওদের—
আমাদের পোস্টম্যানগুলির মতো নয় ওরা
যাদের হাত হতে অবিরাম বিলাসী ভালোবাসার চিঠি আমাদের
হারিয়ে যেতে থাকে |
আমরা ক্রমশই একে অপরের কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছি
আমরা ক্রমশই চিঠি পাবার লোভে সরে যাচ্ছি দূরে
আমরা ক্রমশই দূর থেকে চিঠি পাচ্ছি অনেক
আমরা কালই তোমাদের কাছ থেকে দূরে গিয়ে ভালোবাসা-ভরা চিঠি
ফেলে দিচ্ছি পোস্টম্যানের হাতে
এরকমভাবে আমরা যে-ধরনের মানুষ সে ধরনের মানুষের থেকে
সরে যাচ্ছি দুরে
এরকমভাবে আমরা প্রকাশ করতে যাচ্ছি নিজেদের আহাম্মুক দুর্বলতা
অভিপ্রায় সবই
আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের দেখতে পাচ্ছি না আর
বিকেলের বারান্দার জনহীনতায় আমরা ভাসতে থাকছি কেবলি
এরকমভাবে নিজেদের জামা খুলে রেখে আমরা একাকী
ভেসে যাচ্ছি বস্তুত জ্যোত্স্নায়
অনেকদিন আমরা পরস্পরে আলিঙ্গন করিনি
অনেকদিন আমরা ভোগ করিনি চুম্বন মানুষের
অনেকদিন গান শুনিনি মানুষের
অনেকদিন আবোল-তাবোল শিশু দেখিনি আমরা
আমরা অরণ্যের চেয়েও আরো পুরোনো অরণ্যের দিকে চলেছি ভেসে
অমর পাতার ছাপ যেখানে পাথরের চিবুকে লীন
তেমনই ভুবনছাড়া যোগাযোগের দেশে ভেসে চলেছি কেবলই—
হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান ঘুরতে দেখেছি অনেক
তাদের হলুদ ঝুলি ভরে গিয়েছে ঘাসে আবিল ভেড়ার পেটের মতন
কতকালের পুরনো নতুন চিঠি কুড়িয়ে পেয়েছ অই
হেমন্তের অরণ্যের পোস্টম্যানগুলি
একটি চিঠি হতে অন্য চিঠির দূরত্ব বেড়েছে কেবল
একটি গাছ হতে অন্য গাছের দূরত্ব বাড়তে দেখিনি আমি ||