“শিল্পী হিসেবে যিনি শ্রদ্ধেয়, তাঁকে এটুকু শিল্পবোধের মুগ্ধতা নিয়ে তুষ্ট হলে চলবে কেন? তিনি তো অরূপরতনের খোঁজে ডুব দেবেন শিল্পের অতল সমুদ্রে। উদয়াস্ত খুন করে আবিষ্কার করবেন শিল্পের ‘অলৌকিক আনন্দলোক’।”– কবি ফারুক সুমন
আলাপ শুরু
১.
খোরশেদ আলম : আমাদের মূলধারার কবিতার পাশাপাশি অন্যধারার কবিতা যেমন ‘পথ-কবিতা’, ‘মরমি কবিতা’ বা ‘আদিবাসী কবিতা’ ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলা জরুরি মনে করি। আধুনিক কবিতার স্বভাব-স্বাদ-সৌন্দর্য আর স্বভাব কবির শিল্প-নির্মাণের মধ্যে তুলনার কথা আবার বলছি না…
ফারুক সুমন : ‘মূলধারার কবিতা’ বলে আমরা এখন পাশ্চাত্য প্রভাবিত বাংলা কবিতাকে নির্দেশ করি। আদতে ‘অন্যধারার কবিতা’ বলে আপনি যে কবিতার কথা উল্লেখ করেছেন। সেগুলোই এই মাটি ও মানচিত্রের ‘মূলধারার কবিতা’ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার কথা নয় কি? হাজার বছরের বাংলা কবিতার যে ঐতিহ্যিক পরম্পরা প্রবহমান, সেখানে ‘পথ-কবিতা’ কিংবা ‘মরমি কবিতা’র ভূমিকা অস্বীকার করার জো নেই। প্রাচীন যুগের সাহিত্য-নিদর্শন চর্যাপদ থেকে শুরু করে মধ্যযুগ হয়ে পদাবলির যে জোয়ার দেখা যায়, সেখানে পদকর্তাগণ আধ্যাত্মিক আবহে সহজিয়া কিংবা মরমি ভাবধারার কাব্যস্রোত বইয়ে দিয়েছেন। চর্যাপদের পদকর্তা যখন ‘কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল’ বলেন। তখন রূপকের আড়ালে মরমিয়া কিংবা সহজিয়া সুর আভাসিত হতে দেখি। `শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’, `বৈষ্ণব পদাবলি’সহ মধ্যযুগের অপরাপর সাহিত্যশাখায় অনুরূপ ভাবসম্পদ বিম্বিত হয়েছে।
মূলত মাইকেল মধুসূদন দত্তের হাত ধরে আধুনিক বাংলা কবিতার যে পথরেখা আমরা নির্দেশ করে থাকি, এমনকি এই কবিতাকে উচ্চমার্গীয় আধুনিক বাংলা কবিতার তকমা দিয়ে সম্মানের আসন পেতে দিই। এটা আমাদের প্রাচীন ও মধ্যযুগের কবিতা তথা পদাবলিকে কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করছে? আমি মধুসূদনের হাত ধরে আসা আধুনিকতাকে খাটো করার জন্যে বলছি না। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা কাব্যবৈভবের প্রাসঙ্গিক পর্যালোচনার প্রশ্নে বলছি। উত্তর-ঔপনিবেশিক ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এখন ‘মূলধারার সাহিত্য’ চিহ্নিত করার প্রয়াস দেখা যায়। ইংরেজি ও ফরাসি কবিতার মানদণ্ডে আমাদের ‘মূলধারার কবিতা’ চিহ্নিত হয়। তাই নয় কি? ফলে ‘মূলধারার কবিতা’ না বলে এটাকে আমি ‘অপর প্রভাবিত আধুনিক বাংলা কবিতা’ বলতে বেশি উৎসাহ বোধ করি।
বাংলা কবিতায় হাজার বছরের ঐতিহ্যিক ধারা অনুসরণে ‘পথ কবিতা’ ‘মরমি কবিতা’ এবং ‘আদিবাসী কবিতা’ বর্তমানে বিশেষ অভিনিবেশ দাবি করে। বোধকরি, রবীন্দ্র-পরবর্তী ত্রিশের দশকে বাংলা কবিতায় যে আধুনিকতার আমদানি লক্ষ করি, সেটাই আমরা এখন পর্যন্ত প্রলম্বিত করে চলেছি। পক্ষান্তরে, এই মানচিত্রের হাজার বছরের কাব্যপ্রবাহ এইক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। বলা যায়, আমরা নিজেরাই নিজেদের অবহেলা করেছি। আশার কথা এই, সম্প্রতি ‘পথ কবিতা’ ‘মরমি কবিতা’ এবং ‘আদিবাসী কবিতা’ নিয়ে গবেষণার অভিপ্রায় দেখা দিয়েছে। সদ্যপ্রয়াত কবি হিমেল বরকত এই ধারার কবিতা-সংকলন করেছেন। প্রবন্ধও লিখেছেন।
২.
খোরশেদ আলম : রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন সাহিত্য মানে প্রকাশ। ‘প্রকাশতত্ত্ব’ নামক একটা দর্শনও তিনি দিয়েছিলেন। একজন লেখক হিসেবে শিল্পীর এই আত্মপ্রকাশের বিষয়টা কীভাবে দেখো?
ফারুক সুমন : প্রকাশেই আনন্দ। একথাটি কেবল শিল্পে নয়। অবস্থাভেদে জীবনের সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য। শিল্প-সাহিত্য তো জীবনেরই উৎসারণ। ফলে সাহিত্যে প্রকাশধর্মিতা অনিবার্য বৈকি। ‘আছি’। এই অস্তিত্ব জানান দিতেই আত্মপ্রকাশের উন্মাদনা তৈরি হয়। একজন শিল্পী কিংবা সাহিত্যিক সৃষ্টির পরমুহূর্তেই প্রকাশের জন্যে উন্মুখ হয়ে ওঠেন। অন্যের মনে সৃষ্টির শিল্পিত আনন্দস্রোত বইয়ে না দেওয়া পর্যন্ত যেন স্বস্তি নেই। আনন্দ যেহেতু ব্যক্তির অনুভূতি সম্পর্কিত। সেহেতু অনুভূতি পরস্পরের মাঝে সংক্রমিত হবে এটাই স্বাভাবিক। শিল্পে ‘প্রকাশতত্ত্ব’ (theory of expression) প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও আরও একজনের নাম স্মরণে আসে। তিনি হলেন ইতালীয় নন্দনতত্ত্ববিদ বেনেদেত্তো ক্রোচে। তাঁর মতে, ‘art is expression’ অর্থাৎ ‘শিল্প হলো প্রকাশিত অভিব্যক্তি।’ আধুনিক সময়ে এসে প্রকাশতত্ত্ব সুনির্দিষ্ট শিল্পদর্শন হিসেবে আলোচিত হলেও সক্রেটিস, প্লেটো কিংবা এরিস্টটলের শিল্পভাবনায় সেটা ছিলো। তবে প্রকাশতত্ত্বে শিল্পপ্রকাশের কথা বলা হলেও সম্প্রতি বোধকরি শিল্পীর আত্মপ্রচারের ব্যাপারটি প্রবল হয়ে উঠেছে। অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তির এই চরম প্রবাহের যুগে আত্মপ্রচার কিংবা প্রকাশের সহজ সুযোগ এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। আমি এই আত্মপ্রকাশকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকা মানে সময় থেকে পিছিয়ে পড়া। একজন সচেতন শিল্পী সমকালবিচ্ছিন্ন থাকতে পারেন না।
৩.
খোরশেদ আলম : এমন কোনো ব্যক্তির নাম (ছোটবেলাকার), যার কথায় ছিল কবিতা লেখার প্রেরণা—
ফারুক সুমন : আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি, তখন বাবার আকস্মিক মৃত্যু মেনে নিতে পারিনি। এই ঘটনা আমাকে শোকস্তব্ধ করে দেয়। সেই শৈশবে বাবা ছিলেন আমার নির্ভরতার নায়ক। নায়কের মৃত্যু হয়েছে, এটা আমার কোমল মনে তীব্রভাবে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। সারাক্ষণ মৃত্যুভয়ে থাকতাম। রাতে ঘুমাতে পারতাম না ভয়ে। না ঘুমিয়ে আমি ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ি। মা রাত জেগে আমাকে পাহারা দেন। এভাবে দিনের পর দিন চলতে থাকে। ডাক্তার-কবিরাজ, তাবিজ-কবজ, ঝাড়ফুঁক কিছুই বাদ থাকেনি। ধীরে ধীরে ভয় কেটে গেলেও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ি। কথা বলি একা একা। মানুষের ভিড় ভালো লাগতো না। খেলাধুলা বাদ দিয়ে মাঠে কিংবা পুকুরপাড়ে ঝোঁপের আড়ালে বসে থাকতাম। তখন বাংলা পাঠ্যবইয়ের ছড়াগুলোর অনুকরণে ছড়া লেখা শুরু করি। বাংলা শিক্ষক শহীদুল্লাহ স্যার একদিন বাড়ির কাজ দেখতে গিয়ে আমার লেখা ছড়া আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম কাছে ডেকে পিঠচাপড়ে লেখার প্রশংসা করেন। সেই উৎসাহের কথা কোনোদিন ভুলিনি। এভাবেই বোধহয় লেখালেখির অলৌকিক আনন্দভার আমার ওপর ভর করেছে। সেই আবিষ্কৃত ছড়ার কয়েকটি লাইন এমন- ‘আমার নাম হাদা/ বাবা বলেন গাধা।/ অঙ্ক করি ভুল/ মা ধরেন চুল।/ শিক্ষক ধরেন কান/ জোরে দেন টান।’
৪.
খোরশেদ আলম : কবিতায় যশ-খ্যাতি, নাকি সত্যিকারের শিল্প হয়ে ওঠা? জানি, দ্বিতীয়টার প্রতিই তোমার পক্ষপাত…
ফারুক সুমন : শিল্পের প্রতি সমর্পিত থেকে লেখার চেষ্টা করি। কিন্তু শিল্প হয়ে ওঠার অন্তিম মানদণ্ড নেই বলে একজন মহৎ লেখক আমৃত্যু অতৃপ্তি নিয়েই লেখা অব্যাহত রাখেন। আমিও সেই পথের অনুগামী হয়ে আমৃত্যু লিখতে চাই। শিল্পের আরাধনায় উদয়াস্ত খুন করে বেঁচে থাকায় বেশি আনন্দবোধ করি। এটাই বোধহয় ‘শিল্পসাধনা’ কিংবা ‘শিল্পে সমর্পণ’। তবে যশ-খ্যাতির ব্যাপারটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পীমাত্রই কমবেশি অন্যের হাততালি প্রত্যাশা করেন। তাঁর লেখার শিল্পরস অন্যের মনে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, সেটা তিনি জেনে আনন্দবোধ করেন। এই থেকে হয়তোবা নতুন কিছু সৃষ্টির প্রণোদনাও পেয়ে থাকবেন। অবশ্য এব্যাপারে কারো দ্বিমত থাকতে পারে। যশ-খ্যাতি সবার ভাগ্যে সমান ভাবে আসে না। কেউ কেউ জীবদ্দশায় গুরুত্বহীন হয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। আবার কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ হয়েও গুরুত্বহীন হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। উদাহরণ স্বরূপ, মৃত্যু পরবর্তীকালে জীবনানন্দ দাশ যতোটা খ্যাতিমান হয়েছেন, জীবদ্দশায় কিন্তু তাঁর ভাগ্যে যশ-খ্যাতি ততোটা জোটেনি। তবে জীবদ্দশায় যশ-খ্যাতি কিংবা জনপ্রিয়তা লাভ করাকে আমাদের এখানে ‘সস্তা জনপ্রিয়তা’ বলে তাচ্ছিল্য করতে দেখি। আমি এটার সাথে মোটেও একমত পোষণ করি না। যশ-খ্যাতি অর্জন করে জনপ্রিয় হয়ে উঠলে তার লেখা শিল্পমানহীন হবে। এই মন্তব্য সবসময় সঠিক নাও হতে পারে। ফলে ‘শিল্প এবং যশ-খ্যাতি’ এই দুটিকে আমি আলাদা করে দেখি না।
৫.
খোরশেদ আলম : বাংলাদেশের কবিতা নিজের কণ্ঠস্বর নিয়ে বেড়ে উঠছে কি?
ফারুক সুমন : বাংলাদেশের কবিতার নিজস্ব কণ্ঠস্বর বা নির্মিতি কি? এই ব্যাপারটি আগে সুচিহ্নিত করা জরুরি। যদি ১৯৪৭ পরবর্তী ৫০ বছরের কাব্যপ্রবণতা বিবেচনায় রেখে আমরা অগ্রসর হই, তবে দেখবো বিষয় হিসেবে বাংলাদেশের কবিতার বড় অঞ্চল অধিকার করেছে সমকালীন ঘটনাপ্রবাহ। ফলে কবিতা হয়ে উঠেছে বক্তব্যধর্মী এবং শ্লোগাননির্ভর। তবে সমকালীন অনুষঙ্গ ব্যবহার করেও স্বতন্ত্র কাব্যসরণি নির্মাণ করেছেন কেউ কেউ। এঁদের মধ্যে সর্বাগ্রে শামসুর রাহমানের নাম এসে যায়। তাঁর কবিতা যেন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের কাব্যময় ইতিহাস। এছাড়া সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরী, রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণসহ এই ঘরানার কবিতালিকা আরও দীর্ঘ হবে। বাংলাদেশের কবিতার বিষয়ে আরও একটি বিশেষ ধারা লক্ষণীয়। সেটা হলো গ্রামীণ ও লোকজ অনুষঙ্গনির্ভর কবিতা। নৈসর্গিক আবহের কিনার ছুঁয়ে এই কবিতা আবহমান বাংলার ঐতিহ্যিক ধারার নিকটবর্তী থেকেছে। এই ধারায় কবি জসীমউদ্দীন এবং কবি আল মাহমুদের নাম এসে যায়। এছাড়া চল্লিশের দশকের শুরুতে ধর্মকেন্দ্রিক কাব্যচর্চার প্রবণতা দেখা গেলেও সময়ের ভাঁজে এই ধারাটি গৌণ হয়ে মিলিয়ে যায়। বরং শেষাবধি প্রগতিশীল ধারা বাংলাদেশের কবিতার প্রধান কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে। এছাড়া কবিতার বিষয়ে নাগরিকবোধ ও নগরচেতনা মুখ্য হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রোত্তর কালে ত্রিশের দশকে আবির্ভূত কবিদের হাতে বাংলা কবিতা বিষয় ও আঙ্গিক পরিচর্যায় নতুন বাঁক নেয়। বোধকরি বাংলাদেশের কবিতা এখনও সেই বাঁকের ওপর ভর দিয়ে হাঁটছে। কাব্যালঙ্কার প্রয়োগ ও পরিবেশনে মুন্সিয়ানা থাকলেও কাব্যভাষায় বিশেষ কোনো বৈপ্লবিক বদলের দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে না। তবে এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, অন্য সাহিত্যশাখার তুলনায় বাংলাদেশের কাব্যধারা অগ্রসরমান এবং সমৃদ্ধ।
৬.
খোরশেদ আলম : কবিতার ভূগোলে পূর্ব-পশ্চিমবঙ্গ বিভাজনই বা কতটা জরুরি?
ফারুক সুমন : বিভাজনের চেয়ে সর্বাগ্রে জরুরি হলো কবিতাটি শিল্পমণ্ডিত হয়েছে কিনা। তবে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ভৌগোলিক বিভাজন তৈরি করে কাব্যমূল্য যাচাই করতে যারা উৎসাহী—আমি মনে করি এটার নেপথ্যে একধরনের রাজনীতি আত্মগোপন করে আছে। একথা সর্বজনবিদিত যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে বাংলা সাহিত্যচর্চার কেন্দ্রে ছিলো পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা। সেখানে শিল্পসাহিত্য ছাড়াও রাজনীতি ও সংস্কৃতি চর্চার উজ্জ্বল উপস্থিতি অস্বীকার করার জো নেই। কিন্তু এটাও অস্বীকার করা অন্যায় হবে যে, বর্তমানে ঢাকাকেন্দ্রিক শিল্পসাহিত্যচর্চা ক্রমশ প্রধান উঠেছে। এটা হয়তো একটা স্বাধীন দেশের রাজধানী হওয়ার কারণেও হতে পারে। এই সহজ সমীকরণ যারা মেনে নিতে নারাজ। তারাই গ্রহণ-বর্জনের রাজনীতি নিয়ে সোচ্চার থাকে। পূর্ববঙ্গ কিংবা পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিভাজনের বিতর্ক উসকে দেয়।
৭.
খোরশেদ আলম : আসলে ভাষায় আন্তর্জাতিকতা নাকি অঞ্চলবোধ? একজন কবি হিসেবে এক্ষেত্রে তোমার অভিব্যক্তি কি? অথবা আসলে কী হওয়া উচিত?
ফারুক সুমন : কেবল কবিই নয়; লেখা নির্ভর যে কোনো শিল্পীর প্রাতিস্বিকতা প্রদর্শনের প্রধান মাধ্যম হলো ভাষা। ভাষার বাহনে ভর দিয়েই তাঁর শিল্পসিদ্ধি ঘটে। একজন কবি জন্মসূত্রে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড কিংবা অঞ্চলের অধিবাসী। অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির ভেতর দিয়ে তাঁকে বেড়ে উঠতে হয়। এই অর্থে অন্য সবার মতো তিনিও আঞ্চলিক। তবে অঞ্চলের শিল্পসাহিত্যের প্রতিনিধি হিসেবে কবিকে আন্তর্জাতিক মনোভঙ্গির অনুগামী হয়ে উদ্দিষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন করতে হয়। বোধকরি, মহৎ কবি আঞ্চলিকতা আত্তীকরণের ভেতর দিয়ে হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক।
৮.
খোরশেদ আলম : একজন শিল্পীর জন্য পেশাদার হয়ে ওঠার প্রয়োজন কতটুকু? শিল্প তো মানুষের নিজস্বতা অথবা, তা স্বকীয় মানবিক অনুভব থেকেই গড়ে ওঠে। ধরা যাক—প্রচণ্ড খারাপ অবস্থার মধ্যেও কিন্তু পৃথিবীতে বহু ভালো শিল্পকর্ম তৈরি হয়েছে—
ফারুক সুমন : শিল্পীর ক্ষেত্রে ‘পেশাদার’ না বলে আমরা ‘শিল্পমগ্নতা’ বলতে পারি। অর্থাৎ একজন শিল্পীর জন্যে প্রয়োজন নিবিড়তম শিল্পমগ্নতা। ভালো-মন্দ যাই হোক, মহৎ শিল্পী অহর্নিশ বাগদেবীর আরাধনায় সমর্পিত থাকেন। সাধারণের সাথে শিল্পীর তফাৎ বোধকরি এখানেই। মানুষ স্বভাবতই কিছু শিল্পবোধ নিয়ে বেড়ে ওঠে। সুন্দর কোনো দৃশ্য দেখে কিংবা অনুভব করে যেমন মুগ্ধ হয়। তেমনই অসুন্দর কোনো দৃশ্য তাকে বিক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করে। কিন্তু শিল্পী হিসেবে যিনি শ্রদ্ধেয়, তাঁকে এটুকু শিল্পবোধের মুগ্ধতা নিয়ে তুষ্ট হলে চলবে কেন? তিনি তো অরূপরতনের খোঁজে ডুব দেবেন শিল্পের অতল সমুদ্রে। উদয়াস্ত খুন করে আবিষ্কার করবেন শিল্পের ‘অলৌকিক আনন্দলোক’। যিনি মৌলিক শিল্পী, তিনি খারাপ-ভালো দুই পরিস্থিতিকে শিল্পিত উপায়ে যাপন করেন। তবে তুলনামূলক ভাবে ‘খারাপ’ পরিস্থিতি কবি-শিল্পীদের বেশি আলোড়িত করে বৈকি। ব্যক্তিগত দহন কিংবা সামষ্টিক বৈরি পরিস্থিতি শিল্পীমনে গভীর সংবেদনা তৈরি করে। যার ফলে সৃষ্টি হয় মহৎ শিল্পকর্ম।
৯.
খোরশেদ আলম : কবিতা লেখার জন্য কোনো ‘স্কুলিং’-এর প্রয়োজন রয়েছে? অথবা পীর-মুর্শিদ ধরার প্রয়োজনীতা? এই পীর মুর্শিদ কিন্তু শিল্পের প্রথ-প্রদর্শক—
ফারুক সুমন : কবিতা স্বভাবজাত শিল্প। যেখানে স্বপ্ন-কল্পনা-আবেগ ও বুদ্ধির স্ফূর্তি ঘটে। কবিতার অধরা সুর-সুরভীর সম্মোহন সবার মাঝে থাকে না। যদিও কেউ কেউ কবিত্ব শক্তিকে অলৌকিক শক্তির অনুগামী মনে করেন। তাদের ধারণা, যিনি ঈশ্বরের বিশেষ বর পেয়ে থাকেন তিনিই কেবল হৃদয়সংবেদী কবিতা লিখতে সক্ষম হন। তাদের ধারণা, কবিতা অলৌকিক অনুপ্রেরণার ফসল। ফলে কবিতার জন্য পীর-মুর্শিদ কিংবা শিল্পগুরুর সান্নিধ্যের ব্যাপারটি কেউ কেউ অস্বীকার করেন।
আমাদের এখানে এখন চলছে ‘ব্যক্তি শিল্পগুরু’র তোষামোদ-কাল। শিল্পগুরুর টেক্সটের চেয়ে ব্যক্তিগত পদপদবি কেন্দ্রিক তোষামোদ মুখ্য হয়ে উঠেছে। এসবের নিরিখে নির্ধারিত হচ্ছে শিল্পগুরুর চরিত্র। অথচ স্কুলিংয়ের প্রয়োজনে ব্যক্তির চেয়ে টেক্সটের বিশ্লেষণ ও উপলব্ধি জরুরি। কবিতাকে আরও বেশি প্রাতিস্বিক করার প্রয়োজনে আমরা বারবার ক্লাসিক কবিতার দ্বারস্থ হতে পারি। কবিতায় ‘টেকনিক’ বদলের কৌশল রপ্ত করার প্রয়োজনে শিল্পগুরুসৃষ্ট কবিতার বিষয় ও আঙ্গিক পরিচর্যার অভিজ্ঞতা পেতে পারি। এই বিবেচনায় ‘পীর-মুর্শিদ’ বা ‘শিল্পগুরু’র অনুগামী হওয়া দোষের কিছু নয়।
১০.
খোরশেদ আলম : অনেকে মনে করেন, কবিদের আর লেখাপড়া প্রয়োজন নেই। যেহেতু তিনি শিল্পকে নিজেই ধরতে পেরেছেন—সেজন্য…
ফারুক সুমন: একথা ঠিক, কবিরা স্বভাবগতভাবে প্রতিভাবান। তার মানে এই নয় যে, তার আর পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। আধুনিক কবিতা বহুবিধ বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসসহ অসংখ্য বিষয় কবিতার জমিনে বাঙময় হয়েছে। ফলে একজন মৌলিক কবি এসব বিষয় স্বীকরণের ভেতর দিয়ে কাব্যচর্চায় অগ্রসর হন। জ্ঞানকাণ্ডের বিবিধ বিষয়ে ধারণা পেতে বইয়ের বিকল্প নেই।
১১.
খোরশেদ আলম : অনেকেই মিশন নিয়ে কবিতা লেখেন বা গদ্যও রচনা করেন। আসলে আবেগ-কল্পনা-স্মৃতি-প্রেরণা এই বিষয়গুলো একরকম আদিতম বিষয়। তাহলে কি কোনো আয়োজন করে মানুষকে তার ভেতরের শিল্পীকে ধরা উচিত?
ফারুক সুমন : মিশন নিয়ে কবিতা লেখা অসম্ভব নয়। তবে এই মিশনক্ষেত্রে আমি হাঁটতে চাই না। বিশ্বাস করি, কবিতা স্বতঃস্ফূর্ত শিল্পমাধ্যম। যদি মিশন নিয়ে কবিতা লেখার চেষ্টা করি, তবে সেই কবিতার স্বতঃস্ফূর্ততা ক্ষুণ্ণ হয় বৈকি। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ কবিতার এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ সম্পর্কে বলেছেন- “Poetry is the spontaneous overflow of powerful feelings”. সুনির্দিষ্ট মিশন কিংবা আরোপিত কোনো বিষয় নিয়ে গদ্য লেখা গেলেও কবিতায় এই প্রসঙ্গ সর্বাংশে সঠিক নয়। কারণ কবিতায় থাকে কল্পনার বহুবর্ণিল ডানার বিস্তার। ‘সিদ্ধান্তে উপনীত’ হওয়ার ব্যাপারটি গদ্যে যেমন সত্য। কবিতায় তেমনটি নয়। কবিতা মিশন অতিক্রমী শিল্প। যেখানে থাকে বিষয়াতীত ভাবনার খোরাক।
১২.
খোরশেদ আলম : আধুনিক কবিতা আর উত্তরাধুনিক কবিতা উভয় ধরনের কবিতার স্বভাবই বর্তমানে লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠছে। অনেকে বলে থাকেন—বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ কবিতাই দুর্বোধ্য। এক্ষেত্রে তোমার কী মনে হয়? দুর্বোধ্যতার অর্থই কি ভালো কবিতা?
ফারুক সুমন : আধুনিক এবং উত্তরাধুনিক কবিতা সম্পর্কে এ-যাবৎ বিস্তর কথাবার্তা হয়েছে। আমরা বরং কবিতার দুর্বোধ্যতা প্রসঙ্গে কথা বলি। কবিতার পাঠক কোনো কালেই বেশি ছিলো না। তবে হ্যাঁ, এটা সত্য—এখন কাব্যভাষায় কাঠিন্যহেতু কবিতার চিরায়ত সৌরভ অনুপস্থিত। কবিতায় শব্দপ্রয়োগে জবরদস্তিমূলক মনোভাবের ফলে কবিতা হারিয়েছে যথোপযুক্ত বাণীবিন্যাসের লাবণ্য। অভিধান খুঁজে আপাত অপ্রচলিত শব্দ নির্বাচনের তোড়জোড় চোখে পড়ে। ব্যতিক্রমী কাব্যভাষা নির্মাণের কথা ভেবে হয়তো কবি এই পথে অগ্রসর হয়েছেন। কিন্তু কবিতায় প্রয়োগকৃত শব্দ বিন্যাসে কাব্যিক ব্যঞ্জনা না থাকলে কবিতা শিল্পরসহীন শব্দস্তূপ হতে বাধ্য। ফলে দুর্বোধ্যতার অভিযোগে কবিতা পাঠকবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
তবে এটাও সত্য, আধুনিক কিংবা উত্তরাধুনিক কবিতা এখন ভাবনার বহুস্তরস্পর্শী শিল্প। মানবজীবনের বহুবিধ প্রসঙ্গ এবং দর্শন কবিতায় প্রযুক্ত হওয়ার ফলে অপ্রস্তুত পাঠকের কাছে কবিতা দুর্বোধ্য হয়ে পড়েছে। আধুনিক কবিতা বুঝতে হলে পাঠকের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। ইতিহাস, মিথপুরাণ, ভূগোল, নৃতত্ত্ব, ধর্মদর্শন, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, সাহিত্যতত্ত্বসহ জ্ঞানকাণ্ডের বিভিন্ন বিষয় এখন কবিতায় এসেছে। এসবে অনভিজ্ঞ পাঠকের কাছে কবিতা দুর্বোধ্য হয়ে ওঠার নেপথ্যে এটাও একটা কারণ।
১৩.
খোরশেদ আলম : কবিতা মানে কি জনবিচ্ছিন্নতা বা জগতবিচ্ছিন্নতা এমন কিছু? নাকি সত্তার গভীরতার সঙ্গে আপন-পরের মিলন?
ফারুক সুমন : কবিতা কোনোভাবেই জীবনবিচ্ছিন্ন শিল্প নয়। এমনকি যিনি ‘শিল্পের জন্য শিল্প’ দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে কবিতা লেখেন তাঁর কবিতাও জগতবিচ্ছিন্ন হতে পারে না। একজন কবি সত্তার গভীর সমুদ্রে সন্তরণ শেষে তুলে আনেন অনুভব ও উপলব্ধিমথিত পঙক্তি। যেখানে থাকে ঐশী বাণীর মতোই মুগ্ধতা এবং অন্তরতম নির্দেশনা।
১৪.
খোরশেদ আলম : একটু ভিন্ন প্রশ্ন—কবিতায় যেহেতু আবেগ প্রয়োজন হয়, তাই কবিদের বারবার প্রেমে পড়া জরুরি—এমন কথার সত্যতা কতটুকু?
ফারুক সুমন : কবিতা আবেগনির্ভর শিল্প। এই আবেগ উসকে দেওয়ার জন্যে আপনি বারবার প্রেমে পড়ার কথা বলেছেন। সাধারণের চেয়ে একজন কবি অতি সংবেদনশীল বিধায় তার অনুরাগ প্রকাশের ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এইক্ষেত্রে ‘প্রেম’ বলতে আমরা কেবল নর-নারীর সম্পর্ক নির্দেশ করি। আদতে এই প্রেম সর্বমানবের প্রেম। তুচ্ছ তৃণের বিবর্ণ ডগা দেখেও একজন কবি ব্যথিত হন। মাকড়সার জালে আটকে পড়া ছোট্ট মশামাছিকে মুক্ত করে দিতে পেরে একজন কবির মনে যে আনন্দজোয়ার, তা আমরা প্রত্যক্ষ করি। সাধারণের সাথে কবিদের তফাৎ বোধহয় এখানে। অতিমানবিক এবং সংবেদনাহীন মানুষ কবি হতে পারেন না। ফলে প্রেমের বহুবর্ণিল রূপদর্শন কেবল কবি-ই পেয়ে থাকেন। সাধারণের কাছে এই প্রেম স্বাভাবিক নয় বলে জনারণ্যে কবি হন বিতর্কিত এবং দণ্ডিত।
১৫.
খোরশেদ আলম : তোমার হাতে শামসুর রাহমান বিষয়ক লেখাসহ বেশ কিছু ভালো গদ্য তৈরি হয়েছে। লেখা বিষয়ে তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? এমন কোনো বিষয় নিয়ে কাজ যা যুগান্তকারী হয়ে থাকবে?
ফারুক সুমন : সাহিত্যচর্চায় কবিতা-ই আমার অন্তিম আরাধ্য। একটি ব্যঞ্জনাবহ সমুজ্জ্বল শব্দের সন্ধানে শরাহত হয়ে বেঁচে আছি। এটাই আমার কাছে অসীম আনন্দের উপলক্ষ। তবে কবিতা ছাড়াও নিজস্ব পাঠপরিধির নির্যাস উগড়ে দিতে প্রবন্ধ লিখছি। গবেষণা করছি। এইসব লেখায় ব্যক্তিগত শিল্পবোধের কিছু চিন্তাবিন্দু হয়তো জমা হয়। সম্প্রতি লিখেছি ‘ভ্রমণে অবাক অবগাহন’ নামে ভ্রমণগদ্য। এখন গল্প এবং উপন্যাস লিখছি। শিশুদের জন্য অচিরেই প্রকাশিত হবে ছড়াগ্রন্থ। সর্বোপরি শিল্পসাহিত্যের নানামাধ্যমে লিখতে চাই। আমৃত্যু শিল্পমুখর থাকতে চাই।
খোরশেদ আলম : তোমার প্রতি অনেক ভালোবাসা ফারুক সুমন। তোমার সঙ্গে সম্পর্কটা তো ধন্যবাদের নয়…তবে তোমার গুরুত্বপূর্ণ উত্তরদানের জন্য শুভাশীষ রইলো। ভালো থাকো সবসময়। আবার কথা হবে শিল্প-সাহিত্য নিয়ে…
ফারুক সুমন: আপনার উত্থাপিত নান্দনিক প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হয়ে ভাবনার নতুন রসদ পেয়েছি। এটা আমার জন্য বিশেষ প্রাপ্তি। আশাকরি প্রসঙ্গগুলো নিয়ে আগামীতে আরও কথা হবে। ভালো থাকুন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণ : খোরশেদ আলম, লেখক ও শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
কবির পরিচয় পর্ব
ফারুক সুমন || কবি ও প্রাবন্ধিক জন্ম: ১ মার্চ ১৯৮৫। শাহরাস্তি, চাঁদপুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণি) এবং উচ্চতর এম. ফিল. (২০১৪) ডিগ্রি অর্জন। একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন ‘নিপ্পন ফাউন্ডেশন অব জাপান’ (২০০৬) শিক্ষাবৃত্তি। ২০১৯ সালে অংশ নিয়েছেন যথাক্রমে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘সাউথ এশিয়ান লিটারেচার ফেস্টিভাল’ এবং ‘নেপাল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন’-এ। সম্পাদনা করেছেন (যৌথ) লিটল ম্যাগাজিন ‘অক্ষৌহিণী’। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ‘Poem Vein Bangla’।
বর্তমানে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ’ (রাইফেলস কলেজ, বিজিবি সদর, পিলখানা, ঢাকা)- এ বাংলা বিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ
♦ কাব্যগ্রন্থ
‘অচঞ্চল জলের ভিতর নিরাকার বসে’
‘আঙুলের ডগায় সূর্যোদয়’
‘বিচঞ্চল বৃষ্টিবিহার’
♦ গবেষণা/প্রবন্ধগ্রন্থ
‘শামসুর রাহমানের কবিতা: নগর-চেতনা ও নাগরিক অনুষঙ্গ’
‘শিল্পের করতালি’
‘শিল্পের সারগাম’
‘শামসুর রাহমানের কাব্যস্বর’
♦ভ্রমণগদ্য
‘ভ্রমণে অবাক অবগাহন’
♦সম্মাননা
‘রউফিয়ান রিদম সাহিত্য সম্মাননা-২০১৬’ ‘উচ্ছ্বাস প্রহর সাহিত্য সম্মাননা-২০১৯’ ‘সমতটের কাগজ লেখক সম্মাননা-২০২০’]