কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হক
জন্ম ২২ জানুয়ারি ১৯৭৩। নব্বই দশকরে মাঝামাঝি থেকে লেখালেখি করছেন। তিনি লিখে চলছেন গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও সমালোচনা। এছাড়াও করছেন অনুবাদ ও গবেষণামূলক কাজও। বর্তমানে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫টি। এর ভেতরে উপন্যাস: রাত্রি এখনো যৌবনে (২০০৮, কাগজ প্রকাশন), গোপনীয়তার মালিকানা (২০১০, ভাষাচিত্র), রক্ত অশ্রু ঘাম (২০১৬, বেহুলাবাংলা), আবছা আলোয় দেখা কয়েকটি মুখ (২০১৭, কথাপ্রকাশ), মঙ্গলবারের জন্য অপেক্ষা (২০১৮, পেন্সিল), চারু তাপসের আবেগ ও অর্জন (২০১৮, দেশ প্রকাশনী), দীর্ঘশ্বাসের সমান (২০১৯,গ্রন্থকুটির)। দুটো নভেলার সংকলন: গোলাপের সিঁড়ি (২০১২, ত্রৈবিদ্য)। ছোটগল্পগ্রন্থ: শূন্যপরান ও অন্যান্য গল্প (২০১৩, রোদেলা), অক্ষরপুরুষ ও অন্যান্য গল্প (২০১৭, গ্রন্থকুটির), আচ্ছন্নতার বাগান (২০১৮, গ্রন্থকুটির)। প্রবন্ধগ্রন্থ: ছোটগল্প লেখকের প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিবেচনা (২০১৭, কথাপ্রকাশ)। গবেষণাগ্রন্থ: মৃত্যুক্ষুধা: গতি প্রকৃতি ও পাঠবিবেচনা (২০০০, নজরুল ইন্সটিটিউট), জাদুবাস্তববাদ (২০১৬, সংবেদ)। সম্পাদনা: লেখার শিল্প, লেখকের সংকল্প (মুহম্মদ সাইফুল ইসলামের সহযোগে, ২০১৭, দ্বিতীয় সংস্করণ, সংবেদ)।
২০০৭ সালে রাত্রি এখনো যৌবনে উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির জন্য তিনি পেয়েছিলেন ‘কাগজ তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার’। বৈচিত্র্যময় জীবনের নানা অনুষঙ্গের প্রতি আগ্রহের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই তাঁর। তিনি বিশ্বাস করেন, ভালোবাসাই হলো জগতের সমস্ত প্রশ্ন, সমস্যা ও সংকটের একমাত্র উত্তর। তিনি বাংলাদেশের নৌবাহিনী উচ্চবিদ্যালয় চট্টগ্রাম থেকে প্রাথমিক, সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উর্ত্তীণ হন। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর; পরর্বতীকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে ‘তুলনামূলক নাট্যতত্ত্ব’ বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করছেন।
১. সরল বনাম জটিল গদ্য
খোরশেদ আলম : জানি, আপনি কঠিন লেখা পড়তে পছন্দ করেন। কিন্তু লিখতে ভালবাসেন সহজ গদ্য। কেন এই দ্বৈতাচার?
হামীম কামরুল হক : কঠিন লেখা কাকে বলে? গণিতে স্নাতকোত্তর করা ব্যক্তির কাছে, সে যদি আশৈশব গণিতে দক্ষ হয়ে থাকে, তাহলে তার কাছে সপ্তম অষ্টম নবম বা কলেজ পর্যায়ের ক্যালকুলাস স্থিতিবিদ্যা-গতিবিদ্যার সমস্যাগুলি কি কঠিন? অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর কাছে ক্যালকুলাস তো জটিল সে গণিতে দক্ষ হলেও। সেই পর্যায়ে না গেলে তো ওই গণিতটা সে আয়ত্তে করতে পারবে না।… লেখার কাঠিন্য নির্ভর করে পাঠকের প্রাপ্ত মনস্কতা বা অপ্রাপ্তমনস্কতার ওপরে, তাই না? ফলে কমলকুমার-অমিয়ভূষণ মজুমদার বা দেবেশ রায়ের লেখা অনেকের কাছেই কঠিন বলে ভালো লাগে না। এটা ভালো লাগা-মন্দ লাগার ব্যাপার নয়, এটা প্রাপ্তমনস্কতা বা ম্যাচ্যুরিটির ব্যাপার। অনেক সহজ গদ্যে লিখেছেন অসীম রায়, মাহমুদুল হকের মতো লেখকরা, তাদের লেখাও কিন্তু বিপুল জনপ্রিয়তা পায়নি।… বলাবাহুল্য পাঠক হিসেবে আমি নিজেকে কোনোদিনই খুব নম্বর দিতে পারিনি। প্রায় একটা বিষয় খেয়াল করি। ধরা যাক, চাঁদের অমাবস্যা পড়েছি, আমিও পড়েছি, আরেকজনও পড়েছেন, তো যে আরেকজন পড়েছেন, তিনি এ নিয়ে একটি আলোচনা লিখলেন, সেটি পড়ে দেখা গেল, আশ্চর্য এত বিষয় তিনি খেয়াল করেছেন, আমি তো খেয়াল করিনি। এঁরা কত নিপুণভাবে পড়েন। আমি ততটা পারি না, পড়তে পড়তে প্রায়ই আনমনা হয়ে যাই। অনেকক্ষেত্রে একটা বই পড়তে শুরু করে তা শেষ না করেই অন্য বইয়ে মজে যাই, আগে পড়তে শুরু করা বইটি আরো কয়েকটি বই পড়া শেষ করে, তারপর শেষ হলো। তারওপরও আমি সহজ ও কঠিন, এমনকি হালকা মেজাজের রীতিমতো বায়বীয় বইও পড়ি।… সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কমলকুমার মজুমদারের লেখা পছন্দ করতেন, কিন্তু তিনি লিখতেন একদম প্রাঞ্জল গদ্য। অন্যদিকে, কমলকুমারভক্ত রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু অত সরল প্রাঞ্জল গদ্য লিখতেন না। ইলিয়াসেরও একই দশা। তিনিও কমলকুমারভক্ত। জেমস জয়েস গুরু হলেন স্যামুয়েল বেকেটের। বেকেটের গদ্য কিন্তু তত কঠিন নয়। কিন্তু জটিল হলো তাঁর বিষয়, বা যা তিনি লিখেছেন। আমার তো বোধহয়, কাফকা ও কাম্যুর ভাষাও সহজ, কিন্তু উপস্থাপনা জটিল, আপাত সরল বাক্যের সঙ্গে জটিল ভাবনার বুনন। গদ্য লেখার কাজটাই মনে হয় এমন—শেতলপাটির মতো, একদিকে এর বুনন, অন্যদিকে একে যেমন গুটিয়ে রাখা যায়, তেমন বিছিয়ে দেওয়া যায়। এমন সহজ ও জটিলের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সম্বন্ধই প্রকৃত সাহিত্যের চলন। এটা দ্বৈতাচার নয়, এই দ্বন্দ্বের তালেই মনে হয় গদ্যলেখকের অভিযাত্রা।
২. লেখকের আত্মজ্ঞান
খোরশেদ : নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন বলেছিলেন, “যত লিখছি ভুলের মাত্রা বাড়ছে।” লেখালেখির বয়স তো কম হল না। এ-বিষয়ে আপনার কী উপলব্ধি?
হামীম: তিনি সঙ্গে যোগ করেছিলেন, কারো কারো মতে, ভুলের সঙ্গে সঙ্গে ভালোর মাত্রাও বাড়ছে, ভুলের মাত্রা পার হয়ে। তিনি বার বার বলতেন, লেখা হলো সাপের মতো। নিজের লেখা যদি তেমন কিছু না হয়, তা-ই হবে তোমার ধ্বংসের কারণ। লেখালেখির বয়স কম হলো না, কিন্তু আমার নিজের মনে হয়, লেখাটা শুরুই করা হলো না, পড়াটাও শুরু করা হলো না। বাংলা সাহিত্যের প্রধান কীর্তিগুলি পুনর্পাঠ করা দরকার। একেবারে চর্যাপদ থেকে শুরু করে হাল আমলের তরুণদের লেখা অব্দি। এর ভেতর দিয়েই একজন লেখকের হয়ে ওঠা। নিজেকে আরেকবার ঝালাই করা দরকার। ওই যে ‘ঈদসংখ্যা’ প্রকাশিত হয়, এত, একটা বয়সে কিন্তু গোটা ‘ঈদসংখ্যা’র গল্প উপন্যাস পড়া হয়ে যেত। এখন আর হয় না। কারণ সেই স্তর একজন লেখককে পার হতে হয়। ফলে ওটার গুরুত্ব কিন্তু সবসময় রয়ে গেছে। তিনি ওখান থেকে বুঝতে শেখেন কোথায় যেতে হবে। সবসময় তো আর ক্ল্যাসিক নিয়ে শুরু হয় না পড়া। আমার এক ফুপাত ভাই ছোটবেলা তখন সে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত, পড়ে ফেলেছিল ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’। আমি তখন নবমশ্রেণি, সেসময় এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য লেগেছিল! কিন্তু আমার মনে হয়, সেটা তার তেমন কাজে লাগেনি। সে তো পরে সাহিত্যের ধারে কাছেও ছিল না বা নেই। লেখাটা নিজেকে নিজের দান। এটা পুরস্কারের জন্যও নয়, খ্যাতির জন্যও নয়।(বলাবাহুল্য লিখে পুরস্কার বা খ্যাতি দুই আসতে পারে, বঙ্কিমচন্দ্র যেমন বলেছিলেন, কিন্তু কেবল ওই উদ্দেশ্যে লেখা ভয়াবহ)। আমার কাছে লেখাটা নিজেকে বার বার পরখ করার বিষয়। নিজের ভালো-মন্দ সবকিছুকে যাচাই করার বিষয়।— এটাও ঢালাও কথা হয়ে গেল। লেখা আমার কাছে বড়ই রহস্যময় বিষয় মনে হয়। মানুষ ও জীবন যেমন রহস্যময়, লেখাও তাই। এই রহস্যকে জানতে হলে অভিযান চাই, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস চাই। তার মানে যে আফ্রিকার জঙ্গলে যেতে হবে বা তিব্বতে যেতে হবে, তা নয়। এ এক কঠিন অন্তর্দেশ-অভিমুখী অভিযাত্রা। এ যাত্রা কম ভয়াবহ নয়। কম রোমঞ্চকর নয়। বিপুল কষ্ট যেমন, তেমনই বিপুল আনন্দ আছে। এই রহস্যের খনির কোনো অন্ত নেই।
৩. উপন্যাসের কাহিনি
খোরশেদ : উপন্যাসের ক্ষেত্রে কাহিনি-বর্ণনার ধারাই আবার ফিরে আসবে কীনা একদিন? অ্যারস্টিটল তো কাহিনির গুরুত্বই দিয়েছিলেন। তিনি এই গুরুত্ব কেন দিলেন বলে আপনার মনে হয়? এরপর পানি তো বহু ঘাটই গড়ালো।
হামীম : দেখুন, গল্পটা চাই। সে যতই বলা হোক, উপন্যাসে গল্প থাকার জন্য দুঃখিত, কারণ গল্পটা রাখতে হয় , কোনটার পর কী আসছে তা মনে করিয়ে দিতে।—অমিয়ভূষণের লেখায় পাবেন এটা। আমার মনে হয়, বহু উপন্যাসে তাসবাঁটার মতো করে গল্পটা থাকে, আগুপিছু হয়ে যায়, মানে পুরো কাহিনির আদি-মধ্য-অন্ত সব ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়। আমি ‘মঙ্গলবারের জন্য অপেক্ষায়’ এমন চেষ্টা করেছিলাম। ‘দীর্ঘশ্বাসের সমান’ উপন্যাসেও করেছিলাম। জানি না, তা কতটুকু কী হলো। কিন্তু আধুনিক প্রাচীন মধ্যযুগের যা-ই পড়ি না কেন, গল্প বাদ দিয়ে তো নয়। ‘লিপিকা’য় ছোট্ট একটা লেখা আছে ‘গল্প’ সেটি পড়লেই বোঝা যাবে একদিকে গণিত অন্যদিকে গল্প। একদিকে হিসাব ও বাস্তব, অন্যদিকে বেখেয়ালি মন ও এর কল্পনার জগৎ। কল্পনাই হলো আমার কাছে যেকোনো সৃষ্টির মূল। অভিজ্ঞতা তো হাজার হাজার জুয়াড়িরই ছিল, তারা সবাই তো জুয়াড়ি লেখেন নি; কিন্তু দস্তয়েভস্কির যেমন অভিজ্ঞতা ছিল, তেমন ছিল কল্পনা, সবচেয়ে বড় ছিল ‘ভাষার অভিজ্ঞতা’। এই ‘ভাষা-অভিজ্ঞতা’ হলো মারাত্মক। এটা যাদের নেই তার জন্য সাহিত্যে বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়। আর গল্পের মৌলিক-যৌগিক হয় না। টেলিভিশনে দেখা ঘটনা বা খবরের কাগজের কোনো প্রতিবেদন লেখককে দিয়ে বিরাট কিছু করিয়ে নিতে পারে। কাহিনি বা গল্পটা থাকাটা কীভাবে উপস্থাপন করতে হবে, সেটা হলো প্রশ্ন। কিন্তু কোনো লেখক এটা অন্তত প্রথম খসড়ার সময় এতটা ভেবে লেখেন না, যদিও আমাদের হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ হকের মতো লেখকরা তাদের অনেক লেখাই দাঁড়িকমাসহ মাথায় লিখে ফেলতে পারেন। লেখার পর কোনো কাটাকুটি সম্পাদনা করতে হয় না। অন্যদিকে, গুন্টার গ্রাস বলে ৩/৪টা খসড়া করেন। তলস্তয় ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ বলে ১২ থেকে ১৪ বার পুনর্লিখন করেছেন। তাঁরা কী লিখেছেন বার বার, কাহিনি? ভাষা ও বিন্যাসটি কতদূর মন মতো করা যায়, সেটি? প্রশ্ন যাই হোক, কাহিনি ছাড়া লেখকের শব্দ-বাহিনীর গতি প্রকৃতি নির্ধারিত করা কঠিন। আমার নিজের কাছে কাহিনি গুরুত্বপূর্ণ। তবে কীভাবে সেটিকে লেখায় পরিণত করতে হবে, তা কাহিনির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
৪. গল্প-লেখক ও পাঠকদের উদ্দেশ্যে
খোরশেদ : বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবনের গল্পটাই শুনতে ভালবাসে। এখনতো এ-রীতি পুরনো। গল্পলেখককে প্রধানত কী বিষয়ে নজর দিতে হয়, অথবা দেয়া জরুরি?
হামীম: আগের প্রশ্নে এটা একরকম বলা হয়ে গেছে। আমি কেবল বলব, লেখকের কাছে লেখাটাকে বা নিজের কাজটিকে লেখা করে তোলা জরুরি। এজন্য পরিশ্রমটা সবচেয়ে জরুরি। সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, আমাদের দেশে ফ্লবেয়ার হন না, কারণ সেই প্রতিভা আমাদের নেই, সেজন্য নয়; হন না কারণ ফ্লবেয়ারের মতো পরিশ্রম করতে চাই না আমরা। পারি না, তাও কিন্তু নয়। আমরা ছেড়ে দেই। যাহঃ হয়ে গেল! আর না। এই দমের অভাবটা আমাদের আছে। যেটাকে স্ট্যামিনা বলে, তা আমাদের ফুটবল খেলাতে দমের অভাব। লেখার সময়ও দম কম। কম দম নিয়ে বোমাবিস্ফোরকের তো বই লেখা কঠিন। আর আছে পূর্বাপর সংগতির সংকট, কনসিসটেন্সি যেটাকে বলে। মনস্তত্ত্ববিদ ইভান পেত্রোভিচ পাভলভ তরুণ বিজ্ঞানীদের কাছে লেখা এক চিঠিতে যে তিনটি বিষয়ে কথা বলেন, তার প্রথমটি হলো ওই পূর্বাপর সংগতি বা কনসিসটেন্সি, নিজের কাজের ধারাগতির ক্রম উন্নয়ন না হলেও কখনই সেটিকে পড়তে না দেওয়া। দ্বিতীয়টি হলো, বিনয় বা মডেস্টি। তৃতীয়টি হলো, তীব্র একাগ্রতা, তনিষ্ঠ মন ও মননে সাধন-মগন বা প্যাশন।— আমাদের অতীতের মহাগুরুরা এমন অনেক কথাই বলে গেছেন। রবীন্দ্রনাথে এগুলির সবই পাওয়া যাবে। ফলে কাজ হলো, গল্প লেখকের নিজের গল্পটা, কতটা এই সময়ের অস্তিত্বের সার নির্যাসকে তুলে ধরলো, কোনো লেখা হওয়ার পর সেটি যাচাই করা। আর পাঠককে তো নির্মম হতে হবে, লেখকেরই মতো। ওই শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের কথায়, আমি নির্মম হবো দয়ালু হওয়ার জন্য। দুদিকের নির্মমতা একটি মমত্বের গ্রন্থি তৈরি করতে পারে হয়ত।
৫. গল্পের কলকব্জা (১)
খোরশেদ : খুশবন্ত সিং-এর একটা ভাষ্য থেকে পেয়েছিলাম যে, আমেরিকায় ছোটগল্প বিচিত্রমুখিতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে কিন্তু ব্রিটেনে সেটা এখনো এর ধ্রুপদী মেজাজ ধরে রেখেছে। এমনকি ‘নিউ ইয়র্কার’, ‘গ্রান্টা’য় মুদ্রিত ছোটগল্পের ধরন আলাদা। ছোটগল্পে নতুনত্ব আনতে গেলে আসলে কী ধরনের মাল-মশলা প্রয়োজন?
হামীম: আমি কদিন আগে ডোনাল্ড বার্থেলমে নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধের শুরুতে খুশবন্ত সিংয়ের এই কটি কথা উল্লেখ করেছি তাঁর গল্পসংকলন ‘দ্য পোর্ট্রেট অব অ্যা লেডি’তে যে ভূমিকা আছে সেখান থেকে। সেখানে বার্থেলমে কিন্তু নিউ ইয়র্কারের লেখক। আর তাঁর গল্পগুলি কিন্তু আকারে তেমন বড় নয়। কিন্তু প্রচলিত গল্পের ছক এবং গল্পকারের অভিজ্ঞতা না কল্পনা কোন দিকে জোর দিতে হবে—এইসব তিনি একেবারে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তিনি যেসব গল্প লিখেছেন তাতে বিষয় যেমন বিচিত্র, বিন্যাসও বৈচিত্র্যময়। গল্প লিখতে গিয়ে নানান ছবি গ্রাফ ইত্যাদি ব্যবহার করেছেন। ভারতে বিখ্যাত কবি গীতিকার চলচ্চিত্র পরিচালক গুলজারের দেওয়া কবিতার সংজ্ঞা আছে: ‘‘ছোটি শব্দামে বাড়ি বাত।’’ এই শক্তিই সাহিত্যের শক্তি। অল্পই শিল্প। পরিমিতিবোধ যাকে বলে। যেকালেই যে গল্প লেখককেই দেখি না কেন, তার এটি আয়ত্তে ছিল। ফলে সমকালকে যা আগের চেয়ে আলাদা করেছে, সেটি নিয়ে তার ভেতরে পরিমিতিবোধের প্রয়োগই মনে হয় গল্পকে চিরকালের জন্য নতুন করে দেয়। আর গল্প-উপন্যাসের তো ব্যবস্থাপত্র হয় না। যদিও অনেকেই দিয়েছেন। ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ের কোর্স আছে উন্নত বিশ্বের সবখানে। তাতেও তাদের কথা হলো: আমরা বড়োজোর পরামর্শ দিতে পারি, একেবারে ছক কেটে দাগিয়ে দিতে পারি না। নতুনত্ব আনতে গেলে নতুন বিষয় ও নতুন ভঙ্গি আনলেই তো হয়। কিন্তু কীভাবে তা নির্বাচন করা হবে, সেই বাছবিচারের পরীক্ষাতেই লেখককে পাশ করতে হয়। ফেল করলেও সমস্যা নেই। কেবল লিখে গেলেই ‘আপনা আপনি’ আপনি অজানা পথে অজানা গন্তব্যে গিয়ে বার বার হাজির হবে, সেখানে থেকে ফের নতুন নতুন পথে। ‘রোড নট টেইকেন’-এর তত্ত্ব তো সেই রবার্ট ফ্রস্ট সেই কবে দিয়ে গেছেন। বা তাওবাদী দর্শনিকেরা। আমি সেখান থেকে নিজের মতো একটা বাক্য তৈরি করেছিলাম—যে পথে কেউ যায়নি, সেটাই তোমার পথ। কিন্তু কোন পথে কে কে গেছেন তাও তো জানা চাই। নইলে পিটার বিকসেলের সেই টেলিভিশন আবিষ্কারের গল্পর মতো হয়ে যাবে, যে জানতই না ১৯০৩ সালে জন বেয়ার্ড এই জিনিস আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন, আর সে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন সেটা তৈরি করে সবাইকে দেখাল, অন্যরা বলল, এ আর নতুন কী! ফলে নতুনত্ব আনার শ্রমটা বিপুল, অন্তত জানা থাকা দরকার ছোটগল্পের ইতিহাস ও আঙ্গিকের পালাবদল।
৬. গল্পের কলকব্জা (২)
খোরশেদ : “ছোটগল্প দেয় পাহাড়ের পাদদেশের বয়ান। উপন্যাসের শিখরমুখি অভিযানে সে ব্যস্ত নয়।”— একথাটা সম্ভবত সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন। কথাটা আমার কিন্তু বেশ মনে ধরেছে।
হামীম: এমন নানান জন নানান রকম বলেছেন। রমাপদ চৌধুরী তাঁর গল্পসংগ্রহের শুরুতে অল্প কটা কথায় ছোটগল্প ও উপন্যাসের তফাত তুলে ধরেছিলেন। ঔপন্যাসিক একটি যুদ্ধের অনুপুঙ্খ সব টুকে নিচ্ছেন, আর সেই পরাজিত বা বিজয় সেনাদল যখন ফিরছে যুদ্ধ শেষে, সেখানে একটি অপেক্ষারত নারীর এক ফোঁটা চোখের জলের ভেতরে পুরা যুদ্ধের মূল বেদনাটি দেখতে পারছেন যে সেই হলেন ছোটগল্প লেখক। সৈয়দ হকের মতে, উপন্যাস একসেট গহনা, আর ছোটগল্প হলো আংটিতুল্য কোনো স্মারক। এমন অনেক আছে। আমার কাছে ছোটগল্প আকারে ছোট এবং গল্প। তাতে বিন্দুতে সিন্ধু দেখা যেতেও পারে, নাও পারে। তবে জীবনটা, মানুষগুলির জ্যান্ত দশাটা টের পাওয়াটা যতটা জরুরি ততটাই জরুরি ওই গল্পটাকে গল্প করে তোলা। এটা লেখা শেষ হলে, তারপর নানান সম্পাদনা করার পর বলা যেতে পারে, হলো কি হলো না।
৭. শিল্পের বিষয়
খোরশেদ : আন্তন চেখভ আমার প্রিয় একজন গল্পকার। তিনি যেমন বলেছিলেন, “একটি আপেল নিয়েই হতে পারে গল্প।” গল্পে এই সূক্ষ্মতা, ডিটেইলিঙ বা বিষয়-নির্বাচন বিষয়ে আপনার ভাবনা কী?
হামীম: সাহিত্যের সব কিছুতেই সূক্ষ্মতা তীক্ষ্ণতা থাকে, থাকে জটিলতা, বিস্তৃতি, ও উচ্চতাও, মিলেমিশে থাকে। লেখক ভেদে কারো কারো মধ্যে কোন একটা দিক হয়তো প্রকট হয়ে ওঠে। কারো উচ্চতার দিকটাই প্রকট, সূক্ষ্মতার দিকটা কম। বা কারো লেখায় বিস্তৃতি অনেক, কিন্তু জটিলতা কম। কমলকুমার খুব সূক্ষ্ম, দেবেশ রায় খুব অনুপুঙ্খ বর্ণনার পক্ষপাতি মানে ডিটেইলিংয়ে নজর। বোর্হেস কী থেকে কী করে ফেলেন, তা তো তাঁকে পড়লে বোঝা যায়। ডোনাল্ড বার্থেলমেও তাই। গল্পের ভেতরে নিহিত থাকে এত সব সূক্ষ্মতা বার বার না পড়লে তা ধরা পড়ে না। আমরা ভাবনা থাকে একটাই: গল্পটা শেষ অব্দি গল্প হলো কিনা। আমি আমার সাধ্যমতো সময়ের ভেতরে মানুষটাকে, মানুষের ভেতরে সময়টাকে বা যা যা বললাম সেগুলি আনতে পারলাম কিনা—বোঝার চেষ্টা করি। আর গদ্যটা যতটা পারা যায় নিজের মতো লেখা। আমি একসময় খুব মধ্যমপুরুষ মানে সেকেন্ড পার্সন—‘তুমি’ দিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম। এখন যেমন একটানা কমা দিয়ে দিয়ে, সেখানে আবার সংলাপগুলির পর সেমিকোলন দেওয়া,—এভাবে লিখি। তাতে নতুন কী তৈরি হয় জানি না। পাঠকদের কাছে জেনেছি, এই যে এক অনুচ্ছেদে বা এক প্যারায় গল্প লেখা তাতে তা পড়তে কোনো অসুবিধা হয়নি। আমি ওইযে শুরুতে বলেছি, সহজ গদ্য কিন্তু জটিল বিষয় উপস্থাপনায় আগ্রহী।
৮. কল্পনা, অনুভব ও ভাষাবোধ
খোরশেদ : এই তিন প্রসঙ্গ নিয়ে আপনার ভাবনা-প্রবাহ লক্ষ করেছি। একটা লেখায় এ-প্রসঙ্গটাও এসেছে। এই তিন আসলে কীভাবে শিল্পে কাজ করে?
হামীম: এর উত্তরও ইতোমধ্যে এসে গেছে। কল্পনাশক্তি কোনো লেখকের মূল বিষয়। আর ভাষাবোধ। এর জন্যই কেউ লেখক। অবশ্য অভিজ্ঞতাবাদী বলে দাবি যারা করেন, তারাও আসলে কল্পনাকেই জারিত করেন অভিজ্ঞতায়। কল্পনা, অনুভব ও ভাষাবোধ তো আসলে অবিচ্ছিন্ন বা নিরবচ্ছিন্ন। মানুষের শরীরে নখটা জরুরি। চুলটাও। নখকাটারও দরকার হয়। চুল কাটারও দরকার হয়। কে কতটুকু ছাঁটবেন, বা কী ছাঁটে চুল রাখবেন সেটা রুচিমতো ঘটে। ভারতের নানান প্রদেশের সংস্কৃতিতে একটা সময় একেক রকমের চুলে ছাঁট ছিল বা আছে—তা যেমন বলে দেয় পুরুষেরা কোনখানের লোক, তেমন এলাকা-সংস্কৃতি-বর্ণ-জাতিভেদে নারীদের কেশবিন্যাসও বলে ভিন্ন। আলাদা আলাদা ভাষা দিয়ে তাদের চেনার আগেই তাদের দেখেই চেনার একটা সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। তেমন কল্পনা হলো বাকি দুটোকে সম্ভব করে তোলে। লেখকের ‘উপন্যাস-কল্পনা’ বা ‘গল্প-কল্পনা’ই আদতে বাকি দুটো—অনুভব ও ভাষাবোধের জোগান দিয়ে দেয়।— এসব নিয়ে বিরাট আলোচনা করা যেতে পারে—‘উপন্যাস-কল্পনা’ বা ‘গল্প-কল্পনা’ বলতে কী বুঝব? ছোট করে বললে বলতে হয়, এটা সেই পরিসর/স্পেস তৈরি করে, যেটার তৈরি হলে পরে লেখকের কাজ একটাই থাকে, তা হলো ওই পরিসরের ভেতরে ঢুকে পড়া। বাকিটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এগিয়ে যায়। অনুভব ও ভাষা তখন ঝাঁপিয়ে আসে।
৯. শিল্পের সংমিশ্রণ
খোরশেদ : যেমন সুবিমল মিশ্র গোদারের ধারণা থেকে নিজের গল্প-উপন্যাসকে জারিত করেছেন। শিল্পের এই মিশ্রণের ফলটা কী? বিশেষ করে গল্প-উপন্যাসে—
হামীম: সুবিমল মিশ্র জাঁ লুক গোদারের কাছে যেটা নিয়েছিলেন, সেটা হচ্ছে, ‘যখন বলাটাই বিষয় হয়ে ওঠে।’ সিনেমার আঙ্গিক তাঁকে প্রভাবিত করেছিল। আর আমরা যারা নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সুবিমল হাতে পেয়েছিলাম, তারা খুব চমৎকৃত হয়েছিলাম। তাঁর কাছে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্-র উজানে মৃত্যু নাটকে আছে, পুনরাবৃত্তির চেয়ে ক্লান্তিকর কিছু নেই। সুবিমল শুরুর দিকে এটা বলেছিলেন, কোনো প্রকৃত লেখক অন্য লেখকের কপি নন। কিন্তু এও তো দেখা দরকার, লেখক নিজেকেই যখন বার বার কপি করছেন, তখন কী ঘটছে? ফলে মিশ্রণ দরকার। এতে লেখা মৌলিক হবে না যৌগিক হবে, সেটা বড় নয়, আসল লেখা যাতে কারো নকল না হয়। এর মানে সংগীতে যেমন ফিউশন করে—তাও নয়। মিশ্রণটা কি বাস্তববাদের সঙ্গে পরাবাস্তববাদের হবে না জাদুবাস্তববাদের হবে না অস্তিত্ববাদী বা কাঠামোবাদী রচনা হবে,—এটা তো লেখক আগে থেকে কমই ঠিক করে নিতে পারেন। তবে সব শিল্পেই তো মিশ্রণ আছে কবিতার ভেতরে চিত্র থাকে, চিত্রের ভেতরে কবিতা থাকে। ভাস্কর্যের ভেতরে সংগীতময়তা থাকে, গল্পতেও তাই, আর উপন্যাস তো সর্বগ্রাসী। উপন্যাসকে প্রথম প্রথম ‘আনডিফাইন্ড জনার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। অশনাক্তকৃত বর্গ। উপন্যাসকে এখন আর বর্গও বলা হচ্ছে না, কেউ কেউ একে বলছেন একটা ‘পরিসর’। অনেক নদী যেমন সমুদ্রে মেশে উপন্যাস হচ্ছে সেই সমুদ্র। নানান কিছুর একযোগে মিশে হয়ে ওঠা, মানবজীবনের সঙ্গে তাই উপন্যাসেরই সবচেয়ে বেশি যায়। ফলে মিশ্রণে কোনো দোষ তো নেই, তাকে গুণে পরিণত করাই লেখকের কাজ।
১০. শিল্পে সময় ধারণা
খোরশেদ : জীবন ও সময় ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, এমনভাবে পাল্টাচ্ছে কখনো ধরতে গিয়ে সাংঘাতিক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে—“এমবিএ পড়ে দেখা যায় মাত্র আট হাজার টাকায় একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে চাকরি করছে, চৌদ্দ ঘণ্টা কাজ করছে, তার কোনো সংস্কৃতি নেই, তার কোনো গল্প নেই, আলাপ আড্ডার পরিসর নেই, থাকার মধ্যে আছে কিছু ভার্চুয়াল সম্পর্ক, একটি অনলাইনে পাওয়া বান্ধবী”—এভাবেই কি সময় ধৃত হবে কথাশিল্পে?
হামীম: শিল্প তো আসলে সময়েই প্রতিধ্বনি—এমন বললে খুব গড়পরতা শোনায়। আমি তো মনে করি, যেমন কবিতা—এটা লেখা যায় না। কবি চেষ্টা করে হওয়া যায় না, কবি হলো কিছু কিছু মানুষের প্রকৃতি—তাঁর স্বভাবপ্রকৃতি। কারণ কবিতা হচ্ছে প্রকৃতি বা ন্যাচার যখন মানুষের ভাষায় কথা বলে, তখন কবিতার জন্ম হয়। কবিতার কোনো সময়-অসময় আছে? কবিতা কি সময়কে ধারণ করে? কবিতা ধারণ করে মানবপ্রকৃতিকে। রবীন্দ্রনাথের গানে সময় কোথায়? হ্যাঁ, তিনি পূজা, প্রেম, বর্ষা, শরৎ, বসন্ত ইত্যাদি দিয়ে গীতবিতান ভাগ করেছেন। কিন্তু সেই ভাগ কি একটি অন্যটির সঙ্গে মিশে যায়নি? ফলে সেটা আর সময়নির্ভর থাকছে না। সেটি মানবপ্রকৃতি বা হিউম্যান ন্যাচারের বাণী ও সুরে পরিণত হয়ে গেছে। অন্যদিকে সময় কথা বলে ঔপন্যাসিকের মাধ্যমে। এখানে সময় মানে ইতিহাস। ইতিহাস মনে অতীতের নির্বাচিত অংশ। উপন্যাস বা গল্প সময়কে ধারণ করবে—এই ইতিহাসের মধ্যে থাকা ব্যক্তি ও তার পরিপার্শ্ব ধারণ করে।… আমি ওই কথাগুলি বলেছিলাম ছোটগল্পের বিবর্তন নিয়ে একটা রূপরেখামূলক প্রবন্ধে। কথা হলো, এটা হলো একটা বাহ্যিক পরিবর্তন। আমাদের একালের সঙ্গে একশো বছর আগের কথা বাদ দিই, মাত্র ত্রিশ বছর আগের প্রধান পার্থক্য কী? মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার— এসব? এসব তো আসলে ওই টেলিফোন, ফ্যাক্স, টেলিভিশনের পরিবর্তিত রূপ, তাই না? অন্যদিকে বৈশ্বিকভাবে দেখলে, বিশ্বরাজনীতি, ক্ষমতাবানদের আধিপত্য, সম্পদের বৈষম্য— এগুলি কতটা বদলেছে? প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, রাজনৈতিক মতবাদের প্রতি আস্থা, রাজনীতির প্রতি আস্থা এসব কতটা বদলালো? রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য, এর জন্য গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা জরুরি, কিন্তু সেই কবে মেকিয়াভেলি কি তাঁরও কত কত বছর আগে চাণক্য তালে তাল ঠুকে দেখি, রাজনীতির মূল বিষয় হলো: ক্ষমতাদখল—এটা দেখিয়ে যাননি কি সবাই? ফলে সময়ের বা ইতিহাসের ধারায় মানুষকে স্থাপন করতে একজন লেখক তার সমকালকে কীভাবে ব্যবহার করবেন তা প্রকৃত লেখক বের করে নেন। আমি বার বার ‘প্রকৃত’ ও ‘আসল লেখক’ কথাটি বলছি। কারণ এত ‘অপ্রকৃতস্থ’(নাম-খ্যাতি-স্থিতি-বিত্তর জন্য উন্মাদ কিছু লেখক) ও ‘নকল লেখক’ এখন আছে চারপাশে, তাদের সাহিত্যের নামে অসততা ভয়াবহ জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ এসব রোধ করতে পারবে না। প্রকৃত লেখকের কাজ এঁদের ঠেকা দেওয়া নয়, নিজের লেখাটি মন দিয়ে লেখা, তাতেই সময় ও ইতিহাসে মানুষের গল্প তৈরি হবে।
(আড্ডার বাকি দুই পর্ব)
কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হকের সঙ্গে আড্ডা (পর্ব-২)
কথাসাহিত্যিক হামীম কামরুল হকের সঙ্গে আলাপ (পর্ব-৩)
খোরশেদ আলম
লেখক : শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।