মাছ স্টকিং বলতে কি বুঝায়?
একটা অ্যাকুয়ারিয়াম ট্যাংকে নির্দিষ্ট সংখ্যক এবং প্রজাতির মাছ একসাথে শান্তিপূর্ণভাবে একোমোডেট করা কে স্টকিং বোঝায়।
অ্যাকুয়ারিয়ামের ভূবনে অসংখ্য প্রজাতির মাছ রয়েছে, আর তাদের বৈচিতত্রের কারণে মাছের স্টকিং ক্যালকুলেশনের জন্য অনেকগুলো মেথড রয়েছে। কাজেই “one Size fits all” টাইপের কোন সমাধান আসলে নেই, এটা কেস টু কেস বেসিস হয়ে থাকে।
আজকের আর্টিক্যালে বিভিন্ন ধরনের মাছের জন্য বিভিন্ন ফর্মুলা আলোচনা করা হবে যার উপর ভিত্তি করে আপনি মাছ স্টকিং বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন বলে আশা রাখি। তার আগে আসুন দেখিঃ
একটা মাছের সুখী হতে কতটুকু জায়গা দরকার?
মাছের সংখ্যা আর অ্যাকুয়ারিয়াম সাইজ ম্যাচ করানোর জন্য আপনার বেশকিছু ফ্যাক্টরকে কনসিডার করতে হবে। পুরো বিষয়টাকে মাছের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করার চেষ্টা করুন, কেবলমাত্র তখনই আপনি সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন। নিচে কিছু ফ্যাক্টর আলোচোনা করছি যা আপনাকে মাছের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কনসিডার করতে হবেঃ
প্রাপ্তবয়স্ক মাছের সর্বোচ্চ সাইজঃ আমরা একুয়ারিয়ামে যে মাছই ছাড়ি না কেন সেই মাছটা কালক্রমে বড় হতে থাকবে, একই সাইজের থাকবে না। ঠিক তেমনি ভাবে আমরা একটা মাছকে অনেক লম্বা সময় ধরে পুষতে চাই। বিষয়টা এমন নয় যে, মাছটাকে আমি চার-পাঁচ মাস পর অ্যাকুয়ারিয়াম থেকে সরিয়ে ফেলব বা ভেজে খেয়ে ফেলবো। তাই একটা একুয়ারিয়ামে কয়টা মাছ ধরবে সেটা বের করার জন্য মাছের “অ্যাডাল্ট সাইজ”টা জেনে নেয়া খুব জরুরী। মাছ যত বড় হবে তার মেনুয়েভার করতে ততবেশি জায়গা প্রয়োজন পড়বে। অনেক মাছ আবার লেন্থের সাথে সাথে উচ্চতায়ও লম্বা হয়ে থাকে, যেমন এঞ্জেল মাছ, ডিস্কাস। কাজেই এ ধরনের মাছের জন্য অ্যাকুয়ারিয়ামের গভীরতাটাও ম্যাটার করবে।
বিভিন্ন রেফারেন্স ঘেঁটে নিশ্চিত হোন আপনার পছন্দের মাছটা অনুকূল পরিবেশ সর্বোচ্চ কতটুকু বড় হতে পারে।
এক্ষেত্রে নিচে দেয়া ওয়েবসাইটগুলোর সহায়তা নিতে পারেনঃ
এবার বিবেচনা করুন কতগুলো সুস্থ-সবল সর্বোচ্চ বড় সাইজের মাছ একসাথে আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামের স্বাচ্ছন্দে সাঁতার কেটে বেড়াতে পারবে, এবং তার উপর স্টকিং সিদ্ধান্ত নিন।
মাছের সুইমিং প্যাটার্নঃ
স্কুলইং/ শোলিং মাছ একা থাকতে পছন্দ করে না বরং এরা দলবেঁধে ঘুরে বেড়াত এ ভালবাসে।
এ ধরনের মাছের ক্ষেত্রে কমপক্ষে 6 টি মাছ একসাথে রাখি এরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে বলে জানা যায়।
কিছু মাছ আছে খুব দ্রুত সাঁতার কাটে, যেমন জেব্রা ড্যানিও। এদের জন্য বড় একুরিয়াম প্রয়োজন যেন স্বাচ্ছন্দে সাঁতার কাটতে পারে।
মাছের কম্পাটিবিলিটি অনুসরণ করা
আপনি বোয়াল মাছ আর পুঁটিমাছ একসাথে এ্যাকুয়ারিয়ামেরাখেন তাহলে সকালবেলায় হত পুটি মাছটিকে আর খুঁজে পাবেন না। অনেক খোঁজাখুঁজি পড়লে হয়তো বোয়াল মাছের পেটের ভিতর পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া আরো কিছু মাছ আছে তারা হয়তো বোয়াল মাছের মতো নরখাদক হবে না কিন্তু এরা অন্যান্য শান্তিপ্রিয় মাছকে প্রতিনিয়ত উত্যক্ত করতে থাকে। এর কোনটাই আসলে মাছের জন্য ফেভারেবল কণ্ডিশন হবে না।
মাছের বায়োলোড কেমন?
যত বড় হয় তাদের বায়োলজিক্যাল লোড তত বেশি হয়ে থাকে।
ক্ষেত্রে মাছের দৈর্ঘ্য নয় বরং পুরো মাছের ভলিউম আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ একটা বাইম মাছ ফেন্সি গোল্ড ফিসের থেকে লম্বা হলেও সমান আকৃতির হলেও গোল্ডফিশের আয়তন অনেক বেশি হবে, আর সেইসাথে বায়োলজিক্যাল লোডও অনেক বেশি হবে
সেই সাথে মাছের খাদ্য-প্রকৃতির সাথে ও বায়োলজিক্যাল লোডের একটা সম্পর্ক রয়েছে।
অন্যান্য লক্ষ্যণীয় বিষয়ঃ
অনেক ক্ষেত্রে অ্যাকোয়ারিয়ামের ভিতরে ডেকোরেশন বা পাথর এবং কাঠ দিয়ে অনেক জায়গা ভরে যায় ফলে পানির ভলিউম কমে আসে।
গাইডলাইন হিসেবে কিছু পদ্ধতি আপনাদের সামনে তুলে ধরছিঃ
ইঞ্চি পার গ্যালন মেথডঃ একটা অ্যাকোয়ারিয়াম এর আয়তন কত গ্যালন হবে, তত ইঞ্চিপর্যন্ত লম্বা পূর্ণবয়স্ক মাছ সেই একুয়ারিয়ামে দেয়া যাবে। যদি কোন অ্যাকুয়ারিয়ামের আয়তন হয়ে থাকে 15 গ্যালন তাহলে সেই অ্যাকোয়ারিয়ামে ১.৫ ইঞ্চি আকৃতির পূর্ণবয়স্ক 15 টি গাপ্পি মাছ সেখানে ছাড়া যাবে।
একটু চিন্তা করলেই আপনি দেখতে পারবেন, এই মেথডে অ্যাকোয়ারিয়ামের আকৃতি কে প্রাধান্য দেয়া হয়নি বরং তার ভলিউমটাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে
-এই সূত্রটি আসলে ছোট ছোট মাছের জন্য কার্যকর, বড় মাছের জন্য এই সূত্রটা খাটবে না। উদাহরণ হিসেবে 15 গ্যালন একটা একুয়ারিয়ামে একটা 15 ইঞ্চি আকৃতির গোল্ডফিশ কোনোভাবেই রাখা সম্ভব হবে না।
সারফেস এরিয়া মেথডঃ যেহেতু একটা অ্যাকোয়ারিয়ামের অক্সিজেন দ্রবীভূত হওয়ার ক্ষমতা তার সারফেস এরিয়ার উপর ডিপেন্ড করে। তাই অ্যাকোয়ারিয়ামের সার্ভিস সিরিয়ার উপর ভিত্তি করে মাছের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এই সূত্র অনুযায়ী প্রতি 12 বর্গইঞ্চি অ্যাকুয়ারিয়ামের সারফেস এরিয়া-র জন্য এক ইঞ্চি লম্বা মাছ ছাড়া যেতে পারে।
আমরা যদি একটি 15 গ্যালন অ্যাকুয়ারিয়ামের কথা চিন্তা করি, আর উচ্চতা 12 ইঞ্চি ধরে নেই, তাহলে তার সারফেস এরিয়া দাঁড়াবে (২৪x12) বর্গইঞ্চি। আমাদের সারফেস এরিয়া সূত্র মতে তাহলে সর্বসাকুল্যে লম্বায় 24 ইঞ্চি পর্যন্ত মাছ একুরিয়ামে ছাড়া যাবে।
এই মেথডের দুর্বলতা হলো এক্সরে সারফেস এরিয়া আর পানির ভলিউমের উপর প্রাধান্য দিয়ে মাছের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। শ্যালো ট্যাংক হলে এই ফরমুলা অকার্যকর হয়ে পড়বে।
মাছের দৈর্ঘ্যের ছয়গুণ মেথডঃ
Practical Fishkeeping magazine মূলত এই সূত্রের প্রবক্তা।
এই সূত্র অনুযায়ী একটা অ্যাকোয়ারিয়াম এর দৈর্ঘ্য হতে হবে পূর্ণবয়স্ক মাছের দৈর্ঘ্যের অন্ততপক্ষে ছয় গুণ।
অপরদিকে প্রস্থ এবং উচ্চতা হতে হবে পূর্ণবয়স্ক মাছের অন্তত দ্বিগুণ।
এই সূত্র অনুযায়ী একটা 1 ফুট দৈর্ঘ্যের গোল্ডফিশের জন্য প্রয়োজন পড়বে দৈর্ঘ্যে 6 ফুট, এবং প্রস্থ ও উচ্চতায় 2 ফুট সাইজের অ্যাকোয়ারিয়াম।
এই সূত্রের মাধ্যমে একটা পূর্ণবয়স্ক মাছের দৈর্ঘ্যকে কনসিডার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এই মেথডের দুর্বলতাগুলো স্কুলিং বা ক্ষুদ্র মাছের জন্য ফর্মুলা টা ঠিক সে ভাবে কার্যকর হবে না। উদাহরণস্বরূপ 1 ইঞ্চি সাইজের নিয়ন-টেট্রা মাছের জন্য এই সূত্রানুযায়ী অ্যাকুয়ারিয়ামের সাইজ দাঁড়ায় ৬”x২”x২”। যা সম্পূর্ণ অবাস্তব।
কাজেই দেখা যাচ্ছে এই সূত্রটা বড় আকৃতির মাছের জন্য একটা কার্যকরী সূত্র কিন্তু ছোট মাছের জন্য নয়।
সমন্বয় সাধনঃ
সারফেস এরিয়া মেথড এবং ইঞ্চি পার গ্যালন মেথড দুইটি প্রচলিত হয়েছিল অনেক আগে যখন অ্যাকোয়ারিয়াম ফিল্টার ততটা ইফিসিয়েন্ট ছিল না। বর্তমানে প্রচলিত আধুনিক ফিল্টার গুলো অনেক বেশি ইফিসিয়েন্ট বলে উপরের ফর্মুলা দুটো থেকে ফিল্টার এর উপর ভিত্তি করে আরো বেশি মাছ মজুদ করা যেতে পারে।
মাছের দৈর্ঘ্যের ছয়গুণ মেথড অনুযায়ী প্রাপ্ত পন্থায় একটা 1 ফিট লম্বা গোল্ড ফিস এর জন্য 6 ফুট লম্বা অ্যাকোয়ারিয়াম প্রয়োজন। কিন্তু অনুরূপভাবে 2:01 সাইজের গোল্ডফিশের জন্য 12 ফুট লম্বা অ্যাকুয়ারিয়ামের প্রয়োজন পড়বে না। এক্ষেত্রে মাছের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে আপনাকে পুরো পরিস্থিতিকে বিবেচনা করে একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবেঃ বায়োলজিক্যাল লোড, সাঁতার এর জন্য জায়গা ইত্যাদি ফ্যাক্টর গুলোকে আমলে নিতে হবে।
আপনি যদি দেখেন আপনার একুরিয়ামের মাছের গ্রোথ স্বাভাবিক গ্রোথের তুলনায় কম, তাহলে বুঝতে হবে অ্যাকোয়ারিয়ামের পরিবেশের কোথাও কোনো সমস্যা রয়েছে।
“We want your fish to thrive, and this is very different to simply surviving.”
সবশেষে পরামর্শ রইল এটাই যে আপনি যে মাছের বিষয়ে আগ্রহী তার ব্যাপারে রিসার্চ করুন, তার হবিট গুলো জানুন, তার রিকোয়ারমেন্ট গুলোকে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার ভালবাসার মাছের চোখ দিয়ে পুরো বিষয়টি অনুধাবন করে উপরে দেয়া মেথড গুলোর মধ্যে প্রাসঙ্গিক মেথড ব্যবহার করে এবং অন্যান্য ফ্যাক্টর কে বিবেচনায় নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
তথ্যসূত্রঃ INJAF (https://injaf.org/articles-guides/general-guides/understanding-fish-stocking-guides/)