👉 ট্যাংক পরিষ্কার করাঃ
প্রথমে বাজার থেকে কিনে আনা নতুন ট্যাংক কে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে ভিতরে এবং বাহিরে থেকে। আপনার ট্যাংক নতুন হলেও তার ভিতরে বাহিরে তেল বা এ-জাতীয় ক্ষতিকর কিছু লেগে থাকতে পারে। ধুয়ে নিলে সেগুলো সহজেই চলে যাবে।
২- আর ট্যাংক যদি পুরনো হয়, তাহলে ট্যাংকের ভিতরটাকে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দেয়া পানি বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেশানো পানি দিয়ে ভিতরটা ধুয়ে নেয়া যেতে পারে, তাহলে আগের এ্যাকুয়ারিয়ামে থেকে যাওয়া কোন জীবানু থাকলে সেগুলো মরে যাবে।
৩- সেইসাথে পুরনো ট্যাঙ্কে কোন ওয়াটারমার্ক থাকলে, লোহার মাজনি দিয়ে খুব সহজে সেগুলো রিমুভ করে নিয়ে নতুনের মতো ঝকঝকে করে নেয়া যাবে (চ্যানেলে পৃথক ভিডিও রয়েছে)।
👉প্লেসমেন্টঃ পরিষ্কার করা হয়ে গেলে ট্যাঙ্কটি সবশেষে যেখানে ফাইনালী বসবে সে জায়গাতে রাখতে হবে। কেননা পানি দেয়ার পরে এটার অনেক প্রয়োজন হয়ে যাবে তখন সেটাকে আর সরানো সম্ভব হবে না।
৫- ট্যাংক বসানোর সময় এটার নীচে কোয়ার্টার ইঞ্চি (০.২৫ ইঞ্চ) পুরুত্বের স্টায়রো ফোম বা সোলা বসিয়ে দিতে হবে। এর ফলে ট্যাংকের ওজন সমান ভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে তাই ট্যাংক ফেটে যাবে না।
👉 সাবস্ট্রেট বিছানোঃ খুব সহজে বললে, অ্যাকুয়ারিয়ামের নিচে যে কুচি পাথর, নুড়িপাথর বা বালি ইত্যাদি থাকে সেগুলো কে সাবস্ট্রেট বলা হয়ে থাকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে নুড়ি পাথর বা সিলেট বালিকে একুরিয়ামের জন্য প্রাধান্য দিয়ে থাকি কেননা জিনিসগুলো ন্যাচারাল লাগে আর পানির সাথে এদের কোন বিক্রিয়া হয়না। মোম দেয়া রঙিন পাথর ব্যবহার না করাই ভালো। প্রথমে সাবস্ট্রেট কে খুব ভালোভাবে বেশ কয়েকবার ধুয়ে নিতে হবে যেন সেখানে মিহি বালি বা কাদা অবশিষ্ট না থাকে। ভালোভাবে ধোয়া না হলে পানির ঘোলাটে ভাব যেতে অনেক লম্বা সময় লেগে যাবে। ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া নুড়িপাথর কে আপনার রুচি অনুযায়ী অ্যাকুয়ারিয়ামের তলায় বিছিয়ে দিন।
👉 ডেকোরেশন বা খেলনা সাজানোঃ এ পর্যায়ে ফিল্টারকে যেখানে রাখতে চান, আরে সেখানে প্লেস করে অন্যান্য ডেকোর, পাথর, ফসিলাইজড কাঠ, বগ উড, প্লাস্টিকের গাছপালা ইত্যাদি জিনিস দিয়ে আপনার একুয়ারিয়াম সাজাতে পারেন। একুয়ারিয়াম এর ভেতরে প্লেস করার আগে অবশ্যই সবগুলো জিনিস আগে ভালোমতো ধুয়ে নেবেন। প্লাস্টিকের যেকোনো জিনিসের জন্য খেয়াল রাখতে হবে যে সেটা যেন non-toxic প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হয় অন্যথায় বিষক্রিয়া হয়ে মাছ মারা যেতে পারে। একুয়ারিয়াম কে সাজানোর জন্য প্লাস্টিকের গাছ বা খেলনা ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন সেগুলো ভালো মানের প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা হয়ে থাকে। বিষাক্ত প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা যেকোনো খেলনা বা গাছপালার কারণে মাছের ক্ষতি হতে পারে। একই সাথে খেয়াল রাখতে হবেযেন খেলনা তে বা গাছে চোখা বা ধারালো কোন অংশ না থাকে। সামুদ্রিক ঝিনুক বা শামুকের খোল, মৃত কোরাল ইত্যাদি কোন কিছুই অ্যাকোয়ারিয়ামে দেয়া যাবে না। এগুলো পানির pH অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে দেবে, যা মাছের জন্য ক্ষতিকর হবে।
👉 ফিল্টার প্রস্তুত করাঃ 1- HOB 2- Power Filter
👉 অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য পানি প্রস্তুত করাঃ ট্যাপের পানিতে সরাসরি এ্যাকুয়ারিয়ামে দেয়া যাবে না কেননা সাপ্লাইয়ের পানিতে ক্লোরিন থাকে, যেটা মাছের জন্য মারাত্মক হতে পারে। তবে টিউবওয়েল গভীর নলকূপের পানি হলে সেটা সরাসরি দেয়া যেতে পারে। সাপ্লাইয়ের বা ট্যাপ এর পানি হলে সেটা থেকে ক্লোরিন কে সরিয়ে নিতে হবে। একটা বড় বালতিতে করে পানি একদিন ফেলে রাখলেই ক্লোরিন উড়ে যাবে, আরো তাড়াতাড়ি করতে চাইলে এয়ার পাম্প চালিয়ে এর সাথে এয়ার স্টোন দিয়ে রাখা যেতে পারে। সেইসাথে পানিতে অন্যান্য ক্ষতিকর কিছু থাকলে ওয়াটার কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। হেয়ার কন্ডিশনার কেনার সময় অবশ্যইভালো ব্র্যান্ড দেখে কিনতে হবে। পানিতে নীল বা বাড়তি লবণ দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। ওষুধের নামে যেসব রঙিন পানি বিক্রি করা হয়ে থাকে সেগুলো দেয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
👉 পানি দিয়ে পূর্ণ করাঃ সবকিছু সাজানো হলে ধীরে ধীরে অ্যাকুয়ারিয়ামের মধ্যে পানি ঢালতে থাকুন। মাঝারি মগে করে অল্প অল্প পানি চিকন ধারায় প্রবাহিত করতে থাকুন তাহলে সাবস্ট্রেট বা খেলনা গুলো এলোমেলো হয়ে যাবে না। পানিকে সম্পূর্ণ অ্যাকুয়ারিয়ামের উচ্চতা থেকে আধা ইঞ্চি বাদ রেখে পূর্ণ করুন।
👉 নাইট্রোজেন সাইকেল স্টাবলিশ করাঃ এ পর্যায়ে আপনি 24 ঘন্টা ফিল্টার চালু রাখবেন। প্রতিদিন একুয়ারিয়ামে 4 থেকে 5 টি দানা মাছের খাবার একুয়ারিয়ামে দিতে থাকুন। খাবারগুলো পানিতে পচে গিয়ে এমোনিয়া তৈরি করবে। আর সেখান থেকে জন্ম নেবে উপকারী ব্যাকটেরিয়া। পুরো প্রসেসটি কমপ্লিট হতে আনুমানিক এক মাস থেকে দেড় মাস সময় লেগে যেতে পারে। সে পর্যন্ত আপনাকে অবশ্যই - অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে। নাইট্রোজেন সাইকেল স্টাবলিশ না হওয়ার আগে কোন ক্রমেই মাছ ছাড়া যাবেনা, অন্যথায় সবগুলোই মারা যাবে। নাইট্রোজেন সাইকেল কমপ্লিট হয়েছে কিনা সেটা বোঝার জন্য টেস্ট কিট প্রয়োজন। API FRESHWATER MASTER TEST KIT বা Fluval টেস্ট কিট এর মাধ্যমে খুব সহজেই নাইট্রোজেন সাইকেল কমপ্লিট হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। টেস্ট কিট এর মাধ্যমে আপনার নিশ্চিত হতে হবে যে আপনার একুরিয়ামে অ্যামোনিয়া এবং নাইট্রাইট ০-পিপিএম হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ হবিএস্ট-এর কাছে টেস্ট কিট নেই, তাই অনুমানে আমরা দেড় মাস সময় অপেক্ষা করি। পুরো প্রক্রিয়াটা কে আরেকটু ত্বরান্বিত করতে চাইলে পুরনো যেকোনো ফিল্টার থেকে সিলেটের মেডিয়া এনে সময় কমানো সম্ভব।
👉 লাইট সেট করাঃ আপনি যেহেতু ফিস অনলি করছেন এবং এখানে গাছপালা নেই কাজেই যে কোনো ধরনের লাইট আপনার জন্য মানানসই হয়ে যাবে। লাইট জ্বালানোর জন্য আপনার পছন্দসই সময় বেছে নিতে পারেন অবশ্যই 24 ঘন্টা লাইট জ্বালিয়ে রাখবেন না। এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে যে মাছ দের ঘুমানোর জন্য কিছু সময় অবশ্যই অন্ধকার প্রয়োজন। তাছাড়া লাইট জ্বালিয়ে রাখার ফলে কিছুটা চাপ তৈরি হয় ফলে অ্যাকুয়ারিয়ামের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে সেই সময়ে।
👉 একুরিয়ামে মাছ ছাড়াঃ
একসাথে অনেক বেশি মাছ ছেড়ে দিলে অ্যাকোয়ারিয়ামের নাইট্রোজেন সাইকেল ইমব্যালেন্স হয়ে যাবে। মাছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কম্পাটিবিলিটি চার্ট অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে তা না হলে এক মাছ অন্য মাছকে খেয়ে ফেলতে পারে।
👉 শীতকালে হিটার ফিক্স করা:
আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য সঠিক ওয়াটের হিটার কিনে আনুন এবং সঠিকভাবে অ্যাকোয়ারিয়ামে প্লেস করুন। হিটারের কারণে যে কোন সময়ে বড় রকম দুর্ঘটনা হতে পারে কাজেই অ্যাকুয়ারিয়াম হিটারের প্রসঙ্গে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। থার্মোস্ট্যাট দেয়া হিটার বা অটো হিটার ব্যবহার করবেন। তাপমাত্রা 26 থেকে 28 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এর মধ্যে রাখুন।