লোইট্টামাছের খাদ্যনালীর ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আমাদের একটি গবেষণা সম্প্রতি ফ্রন্টিয়ার্স ইন মাইক্রোবায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। খাদ্যনালী থেকে ব্যাকটেরিয়া আলাদা করে সেগুলো কি ধরনের হাইড্রোলেজ নিঃসরণ করতে সক্ষম (হাইড্রোলেজ হল এমন এনজাইম যা পানির অণুর সাহায্যে রাসায়নিক বন্ধন ভাঙ্গার যে প্রক্রিয়া তাকে ত্বরান্বিত করে), মাছের খাদ্যাভাসের সাথে তাদের সম্পর্ক কেমন, হজমে কোন ধরণের ভূমিকা আছে কিনা - এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা-যাচাই করাই ছিল এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। সেই সাথে ডিএনএ বারকোডিং করে হাইড্রোলাইটিক ব্যাকটেরিয়াগুলোর ট্যাক্সোনোমি বিশ্লেষণ করা।
লোইট্টামাছ মূলত মাংসাশী। এর প্রধান খাবার হল অন্যান্য ছোট মাছ, মাছের লার্ভা, চিংড়ি বা কাঁকড়া। এসব খাবারে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের মাঝে প্রোটিন আর ফ্যাটের প্রাধান্য বেশি (আর সে অনুযায়ী ধারণা করা যায়, প্রোটিন-লিপিড ভাঙ্গতে পারদর্শী এমন ব্যাক্টেরিয়াও তুলনামূলকভাবে বেশি থাকবে)। অন্যদিকে কার্বোহাইড্রেটজাতীয় পদার্থ যেমন সেলুলোজ, অ্যামাইলোজ ইত্যাদি যেসব মূলত উদ্ভিদ থেকে আসে, সেগুলো খুব একটা থাকারই কথা না! দেখা গেছে, লোইট্টা মাছের এই যে ডায়েট / খাদ্যাভাস, এর সাথে ব্যাকটেরিয়াগুলোর হাইড্রোলেজ-প্রোফাইল প্রায় পুরোপুরি মিলে গেছে! অর্থাৎ, প্রোটিন আর চর্বি ভাঙ্গে এধরণের হাইড্রোলেজ সত্যিকার অর্থেই পাওয়া গেছে অনেক বেশি; সংখ্যা আর পরিমান উভয় বিবেচনাতেই। অন্যদিকে সেলুলোজ বা অ্যামাইলোজকে ভাঙ্গতে পারে এমন এনজাইম পাওয়া গেছে মাত্র একটি করে ব্যাকটেরিয়াতে, উৎপাদনও হয়েছে খুব অল্প পরিমাণে, যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল! তবে ইন্টারেস্টিং হল, পেকটিন উদ্ভিজ্জ পলিমার হওয়া সত্ত্বেও পেকটিনোলাইটিক এনজাইম পাওয়া গেছে চারটি স্ট্রেইনে! এই যে মাছের খাবার ভেঙ্গে তার ভাগ নিচ্ছে, এতে ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি মাছেরও কিন্তু লাভ! মাছের খাবার থেকে ব্যাকটেরিয়াগুলো নিজের জন্য যেমন পুষ্টির ব্যবস্থা করছে, সেইসাথে খাবারকে ভেঙ্গে ছোট করার কারণে মাছের হজমেও সাহায্য হচ্ছে! আমাদের পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোও একইভাবে আমাদের হজমে সহায়তা করে, অন্যান্য অনেক উপকারও করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া আছে যেগুলো প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া বলে পরিচিত, স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াগুলো উন্নতদেশের দোকানগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি সহজলভ্য।
হাইড্রোলেজ নিঃসরণকারী সব কয়টা ব্যাকটেরিয়াকেই ‘১৬এস আর আরএনএ (16S rRNA)-জিন সিকুয়েন্স’ করে শনাক্ত করা গেছে। দেখা গেছে, এগুলোর মাঝে আটটা ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া আছে যার মধ্যে শুধুমাত্র স্টাফিলোকক্কাস প্রজাতিরই আছে ছয়টা স্ট্রেইন। অন্যদিকে এক্সিগুয়োব্যাকটেরিয়াম প্রজাতিভুক্ত একটা স্ট্রেইন পাওয়া গেছে যাকে কয়েক ধরনের হাইড্রোলেজ উৎপাদনের জন্য বেশ সম্ভাবনাময় বলে মনে হচ্ছে। কমপক্ষে চার ধরনের ভিন্ন ভিন্ন এক্সোএনজাইম নিঃসরণ করতে সক্ষম এই স্ট্রেইন। বিশেষ করে প্রোটিওলাইটিক, লিপোলাইটিক আর পেকটিনোলাইটিক এনজাইম উৎপাদন করতে পারে তুলনামূলকভাবে বেশি পরিমাণে।
পরবর্তী পর্যায়ে, ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাবহারোপযোগী বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে এই এক্সোএনজাইমগুলোর উৎপাদনের মাত্রা কেমন তা পরীক্ষা করে দেখা দরকার। বেশি প্রোডাক্টিভ যে স্ট্রেইনগুলো শনাক্ত করা হয়েছে তাদের প্রকৃত সক্ষমতা বা কার্যকারিতা কতটুকু তাও জানা প্রয়োজন। মাছের খাদ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায় এমন উপযুক্ত কোন প্রোবায়োটিক স্ট্রেন আছে কিনা সেটাও যাচাই করে দেখা যায়।
Hossain, T.J., Chowdhury, S.I., Mozumder, H.A., Chowdhury, M.N.A., Ali, F., Rahman, N. and Dey, S., 2020. Hydrolytic exoenzymes produced by bacteria isolated and identified from the gastrointestinal tract of Bombay duck. Frontiers in microbiology, 11, p.2097
available on https://doi.org/10.3389/fmicb.2020.02097