"বিশ্বের কঠিনতম অণুজীব হিসাবে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত!"
"মহাশূন্যের অতি বিরূপ পরিবেশেও বহাল তবিয়তে থাকে!"
"গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ লিপিবদ্ধ!!!"
ডাইনোকক্কাস রেডিওডুরান্ট নামে পরিচিত এই অণুজীবটি অত্যন্ত আশ্চর্যজনক একটি পলিএক্সট্রিমোফাইল যেটি ভয়াবহ সব এক্সট্রিম পরিবেশ সহ্য করতে পারে, যেমনঃ
- অত্যধিক রেডিয়েশন
- প্রচন্ড ঠান্ডা
- পানি-শূন্যতা
- বায়ূ-শূন্যতা
- মাত্রাতিরিক্ত অম্লতা
- ইত্যাদি
যেখানে ৫ Gy রেডিয়েশনেই মানুষেরই মৃত্যু হয় সেখানে এই এককোষী রেডিওডুরান্ট অণুজীবটি এমনকি ১৫০০ Gy পর্যন্ত রেডিয়েশনের ডোজ সহ্য করতে সক্ষম! আর ৬ Gy রেডিয়েশনে তো একেবারে স্বাভাবিকভাবেই বেঁচে থাকে। ই. কোলাই, যাকে মডেল অরগানিজম হিসাবে সবচাইতে বেশি ব্যবহার করা হয়, সেটি-ই মাত্র ৫ Gy রেডিয়েশনেই মারা যায়। এ থেকেই অনুধাবন করা যায় রেডিওডুরান্ট কি ভয়াবহ মাত্রার রেডিয়েশন সহ্য করতে সক্ষম।
রেডিওডুরান্টের এমন আশ্চর্য সহ্যক্ষমতার অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হল তার ভীষণ রকমের পারদর্শী ডি.এন.এ. রিপেয়ার মেকানিজম যার মাধ্যমে অণুজীবটি রেডিয়েশনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ নিজের ডি.এন.এ. অত্যন্ত দ্রুততার সাথে মেরামত করে ফেলতে পারে। রেডিয়েশনের কারণে ক্রোমোজোম ভেঙ্গে টুকরো টুকরোও যদি হয়ে যায় মাত্র কয়েক ঘন্টা সময়ের মাঝেই রেডিওডুরান্ট তার ক্রোমোজোম অত্যন্ত নির্ভুলভাবে একেবারে নতুনের মতো করেই মেরামত করতে আর জোড়া লাগিয়ে ফেলতে সক্ষম যা ভীষণ বিস্ময়কর!
এছাড়া রেডিওডুরান্টের প্রতিটি কোষে তার জিনোমের ৪ থেকে ১০টি করে কপি থাকে। এই বাড়তি কপিগুলো থাকার কারণে সেগুলো ব্যবহার করে রেডিওডুরান্ট রেডিয়েশনের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ নিজের সম্পূর্ণ জিনোম সহজে পুনরুদ্ধার করে ফেলতে পারে।
কেবলমাত্র মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশনই যে সহ্য করতে পারে তাই না, রেডিওডুরান্ট আরো কিছু ভয়ঙ্কর পরিবেশেও জীবন-যাপন করে অভ্যস্ত যেমন প্রচন্ড ঠান্ডা, শুষ্কতা, বায়ূ-শূন্যতা, অম্লতা, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ইত্যাদি। এমন আর কোন জীবিত প্রাণী নাই যার পক্ষে রেডিওডুরান্টের মতো এতোটা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সহ্য করা সম্ভব।
বৈরি পরিবেশে রেডিওডুরান্টের এই টিকে থাকার পারদর্শিতাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে সম্পর্কে অনেক বছর ধরেই বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। বিশেষ করে তেজস্ক্রিয় এলাকাসমূহ থেকে তেজস্ক্রিয় বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্যপদার্থ অপসারণের জন্য অণুজীবটিকে জিনপ্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবর্তনও করা হয়েছে।
আশ্চর্য এই অণুজীবটি ঘটনাক্রমে আবিষ্কৃত হয় আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে ভিন্ন একটি গবেষণা পরিচালনার সময়। গবেষণাটি ছিল রেডিয়েশন প্রয়োগ করে কৌটায় (can) সংরক্ষিত খাদ্য জীবাণুমুক্ত করার বিষয়ে। দেখা গেল অত্যন্ত উচ্চমাত্রার গামা রেডিয়েশন প্রয়োগ করা সত্ত্বেও কৌটায় রাখা খাবারটি (মাংস) অণুজীবের আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে, অর্থাৎ পুরোপুরি স্টেরিলাইজ হয় নাই! এমন অণুজীবও তাহলে আছে যে এই মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশন-প্রয়োগ করার পরেও বেঁচে থাকতে পারে! এই রেডিয়েশন-রেজিস্ট্যান্ট অণুজীবটিকেই পরবর্তীতে শনাক্ত করে এর নাম দেওয়া হয় ডাইনোকক্কাস রেডিওডুরান্ট।
কৌটার মাংসে প্রথম আবিষ্কৃত হলেও রেডিওডুরান্টের প্রাকৃতিক আবাসস্থল কোথায় সেটা এখনো পর্যন্ত অজানা। তবে বিভিন্ন সময় অদ্ভুত সব স্থানে আর নানা ধরণের বৈরি পরিবেশে রেডিওডুরান্টকে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি হল এন্টার্কটিকের অত্যন্ত শুষ্ক বন্ধুর এক উপত্যকা। রহস্যের ব্যপার হল এন্টার্কটিকের এই অঞ্চলের সাথে মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া আর প্রকৃতির তুলনামূলকভাবে অনেক সাদৃশ্য বিদ্যমান! এ কারণেই কিনা, রাশিয়া আর আমেরিকার কয়েকজন গবেষক এমনকি এই দাবীও করে বসলেন যে রেডিওডুরান্ট প্রকৃতপক্ষে মঙ্গলেরই বাসিন্দা, উল্কাপিন্ডে চড়ে পৃথিবীতে চলে এসেছে! তবে কি মঙ্গলের বিরূপ আবহাওয়ায় জন্ম বলেই অণুজীবটি এতোসব প্রতিকূল পরিবেশেও দিব্যি টিকে থাকে?
আবার খুব সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অণুজীবটিকে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে (আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বাইরে) তিন বছর রাখার পরেও সে বেঁচে ছিল। তবে সত্যিকার অর্থেই রেডিওডুরান্ট মঙ্গলের না পৃথিবীর অধিবাসী, নাকি অন্য কোথাও এর উৎপত্তিস্থল, সে রহস্য এখনো ভেদ হয় নাই!
frontiersin.org/articles/10.3389/fmicb.2020.02050/full
en.wikipedia.org/wiki/Deinococcus_radiodurans
nature.com/articles/nrmicro1264
afmc.af.mil/News/Photos/igphoto/2000655676/
esrf.eu/UsersAndScience/Experiments/MX/Research_and_Development/Biology/Deinococcus_radiodurans