প্রকাশিত, নতুন বই, 'নিঃসঙ্গ সম্রাট ও অন্যান্য নাটক'।
[ জ্যঁ পল সার্ত্রের ‘নেক্রাসভ’ নাটকের একটি দৃশ্যকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে, তার রূপান্তর ঘটিয়ে লেখা হয়েছে এই স্বয়ং সম্পূর্ণ নাটিকাটি। এটি যেহেতু ইংরাজী অনুবাদের বাংলা রূপান্তর, তাই স্বভাবতই বহুবিধ স্বাধীনতা নিতে হয়েছে, সুতরাং ভূমিকাকে সার্ত্রে অনুপ্রাণিত পৃথক একটি নাটিকা বলাই ভালো। তবে মূল নাট্যকার ভিক্ষুক দম্পতির সিদ্ধান্তের মধ্যে অস্তিত্ববাদী দর্শনের যে প্রকাশ ঘটাতে চেয়েছেন তা আমার জ্ঞানমত অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টা করেছি। - নাটককার ]
কলকল করে গঙ্গা বইছে। তীরে একটু আগুন জ্বালিয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে এক ভিক্ষুক দম্পতি। অদূরে
ব্রীজ চকচক করছে চাঁদের আলোয়। নভেম্বরের ঠাণ্ডা রাত।
স্বামী – উহ্, কী ঠাণ্ডা!
স্ত্রী – পৌষ মাস, ঠাণ্ডা হবে নি? তাছাড়া নদীর ধার।
স্বামী – শালা। রাত কাটাবার একটা ছাউনি অবধি জোটে না – এমনি কপাল।
কিছুক্ষণ নীরবতা
স্ত্রী – ঘুমালা?
স্বামী – ক্যানে?
স্ত্রী – দেখেছ – চাঁদটারে – কী সোন্দর না?
স্বামী – চুপ যা। ক্যালামনি।
স্ত্রী – কেনে?
স্বামী – সোন্দরের হলটা কী? রোজই তো দেখিস।
স্ত্রী – না, মনে হল হঠাৎ, বোধহয় গোল, তাই, রুটির মতো।
স্বামী – ওসব বড়লুকে ব্যাপার। চাঁদ-ফাঁদ সবই বাবুদের।
স্ত্রী – যা বলেছ, তারা গুলানও তাই।
আবার নীরবতা
স্ত্রী – দেখিচ, দেখিছ-
স্বামী – আঃ। এট্টুস ঘুমুতে দিবি নাকি? আবার ভোর রাত্তিরে বেরুতে হবে ভিক্ষায়।
স্ত্রী – আহা, দেখই না – ওই – ওই যে –
স্বামী - কই? কোথায়? কী দেখব সেটা তো বলবি?
স্ত্রী – সেতুটার ওপর ঠাওর কর – আলোর থাম্বটার কাছে – লোকটা করে কী?
স্বামী – পাগল মাতাল হবে।
স্ত্রী – আরে না! দেখ, দেখ, সোয়েটার খুলতিছে।
স্বামী – তাই তো, জুতোও খুলতিছে দেখতিছি।
স্ত্রী – এত রাতে ও করে কী? কী চায়?
স্বামী – (গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসে) আরে, আরে, বাবুটা বিরিজের রেলিঙে ওঠে ক্যান?
স্ত্রী – মা গো!
স্বামী – বুঝিছি!
স্ত্রী – কী হবে?
স্বামী – চুপ!
স্ত্রী – চেঁচাই?
স্বামী – (ধমকায়) চুপ মার। এমন লোক আমি আগেও দেখেছি – এই বিরিজেই।
স্ত্রী – অবাক কাণ্ড বটে।
স্বামী – অবাকের হলটা কী? এমন কত হয়।
স্ত্রী – দেখ, লোকটা চাঁদের দিকে ঠায় চেয়ে আছে। ইস আমার গা কাঁপে! আমিও তো একটু আগে চাঁদ
দেখতিছিলাম।
স্বামী – সোয়েডারটা বিরিজের রেলিঙে রেখেছে।
স্ত্রী – লোকটা দেখতি কিন্তু খাসা।
স্বামী – তবে মনের জোর নাই।
স্ত্রী – ক্যানে? স্বামী – নাহলে ডুবে মরতি আসে?
স্ত্রী – শোনো, আমিও না কখনও কখনও মরবার কথা ভেবেছি ওমনি – জলে ডুবে – মাঝে মাঝে স্বপনও
দেখি – আমার চাদ্দিকে জল – কত জল – কিন্তু ভয় করে জেগে উঠলেই।
স্বামী – মেয়েছেলে আর বলে কাকে? ওই লোকটাও আসলে ব্যাটাছেলের চেহারায় আস্ত মাগী।
স্ত্রী – ক্যানে? ডুবে মরতি বুঝি সাহস লাগে না? আমার বাপু সত্যিকারের ঝাঁপ দেবার সাহস নেই। … কী
হল! তুমি শুলা যে!
স্বামী – তা কী করব? নাচব? ওর মরতি এখনো ঢের দেরি। আগে ঝাঁপাক। ঝপাস করে আওয়াজটা
শুনি।
স্ত্রী – তারপর? স্বামী – তারপরই তো আসল কাজ! আমারে ডেকে দিস।
স্বামীটি অচিরাৎ শুয়ে পড়ে।
স্ত্রী – আহা, মরার সময় মানুষেরে সোন্দর লাগে!
কিছুক্ষণ নীরবতা। হঠাৎ স্ত্রীটি চিৎকার করে ওঠে।
শুনিনেছো? ওগো, লাফিয়েছে, লাফিয়েছে, আহা কি সোন্দর লাফালো।
স্বামী – লাফিয়েছে? লাফিয়েছে? যাই –
সে উঠে পড়ে দৌড়য়
স্ত্রী – আরে – যাও কোথায়? স্বামী – ঐ যে – সোয়েডারটা দেখতিছিস না পড়ে আছে, ওটার দাম
জানিস? নিয়ে আসি। আবার জুতোও আছে!
স্ত্রী – না, না , আমি একা থাকতি পারবো না।
স্বামী – (খেঁকিয়ে ওঠে) আ মোল যা! এখানে জীয়ন্ত প্রাণী আছে কেউ? তোর ভয়টা কাকে?
স্ত্রী – ওই লোকটা।
স্বামী – ও তো মরি গেছে – আরে, নাতো, দ্যাখ্ দ্যাখ্!
স্ত্রী – কী?
স্বামী – ওই দ্যাখ্, ওতো মরে নি।
স্ত্রী – নিচ্চয় মরিছে।
স্বামী – দুর – ওই দ্যাখ্ মুণ্ডুটা ভাসতিছে। এরমই হয়। (বসে পড়ে) আর এট্টুক বসতি হবে।
স্ত্রী – ক্যানে?
স্বামী – লোকটা মরে নি যে এখনও। আগে মরুক। তবে না সোয়েডার নেব । জীয়ন্ত মানুষের ধন না বলে
নিব ক্যানে? আমি কি চোর?
স্ত্রী – তবেই হয়েছে। ওতো সাঁতার কাটতিছে।
স্বামী – জোচ্চোর।
স্ত্রী – ক্যানে?
স্বামী – মরতে এসিছিস – তার আবার সাঁতার কীসের?
কিছুক্ষণ নীরবতা
স্ত্রী – ওই দ্যাখ, এখনও ভাসতিছে।
স্বামী – দুনিয়াটাই শালা হারামী। সবাই কি আমার মতন সাধু? আসা যাওয়ার পথে কেউ যদি এখন
জুতোটা নিয়ে পালায়?
স্ত্রী – মনে হয় লোকটা বেঁচে যাবে।
স্বামীটি হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়
স্ত্রী – আরে আবার যাও কোথায়?
স্বামী – চুপ। ঐ বাঁধা নৌকাটার কাছে যাবো।
স্ত্রী – ক্যানে?
স্বামী – দড়ি চাই , দড়ি - নৌকায় আছে দেখিছি।
ওরা উঠে বেঁধে রাখা নৌকার কাছে ছুটে যায়। স্বামীটি দড়ি খুলতে থাকে।
স্ত্রী – দড়ি দিয়ে হবেটা কী?
স্বামী – ওর দিকে ছুঁড়বো।
স্ত্রী – আর ওমনি ও চেপে ধরবে? তুমি তাই ভেবিছ?
স্বামী – ধরুক না ধরুক ও যখন সাঁতার কাটতিছে, তখন একবার ছুঁড়ে দেখি।
স্ত্রী – খেপিছ? ও বাঁচে বাঁচুক, মরে মরুক, তোমার মাথা ব্যথা কীসের? এই নদীর ধারে ঠাণ্ডায় তুমি না
খেয়ে মরি থাকলই কেউ দেখতি আসবে তোমারে? আমাদের কিছু নাই, কেউ নাই তাই কিছু করারও নাই।
আগ বাড়িয়ে উবগার করতি গিয়ে যদি কোনো ঝামেলা বাধে?
স্বামী – চুপ মার, আমি ছুঁড়বই।
স্ত্রী – না।
স্বামী - ছুঁড়বই।
স্ত্রী – আরে আরে যাঃ! দেখিছ?
স্বামী – তাইতো!
স্ত্রী – ডুবে গেল?
স্বামী – গেল।
স্ত্রী – তুমি দেরি করে ফেলিছ।
কিছুক্ষণ নীরবতা। ওরা চুপচাপ ফিরে আসে।
স্বামী – ধুর শালা। আমাদের জেবনটাই এমনি ফালতু!
স্বামীটি হাতের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। স্ত্রী চুপচাপ জলের দিকে তাকিয়ে।
স্ত্রী – ওর সোয়েডার?
স্বামী চুপ
স্ত্রী – জুতো?
স্বামী চুপ
স্ত্রী – কী হল? নিয়ে আনবা না? স্বামী – ছাড়ান দে। ছ্যাঁচড়ামো করে হবেটা কী? একটা জলজ্যান্ত লোক
ডুবি গেল। আচ্ছা, আমি যদি ডুবি যাই, আর কেউ যদি দড়ি না ছোঁড়ে?
কিছুক্ষণ নীরবতা। হঠাৎ
স্ত্রী – আরে আরে – ঐ যে ঐ যে –
স্বামী – ( ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে ) কী কী কী ?
স্ত্রী – ওই দ্যাখ, আবার ভেসে উঠিছে!
স্বামী – ( হাই তোলে ) ছাড়ান দে!
স্ত্রী – ক্যানে? ছাড়বো ক্যানে? এখনো বেঁচি আছে – ওঠো ওঠো – উঠে পড়ো। দড়িটা ছুঁড়বা না?
স্বামী – সেকি! তুই তো বারণ করলি?
স্ত্রী – তাতে কী? আবার যে ও ভেসে উঠবে আমি কি জানতাম?
স্বামী – শালা, মেয়ে মানুষের মন – সাধে বলে?
দুজনে উঠে নৌকার কাছে যায়। অধীর উত্তেজনায় দড়িটা খুলে, দু-তিন বার দুলিয়ে ছুঁড়ে দেয়।
স্ত্রী – বাঃ বাঃ বাঃ। খাসা ছুঁড়িছ কিন্তু।
স্বামী – তবে! ঠিক হাত্তের কাছেই পড়িছে।
স্ত্রী – এই - এই যে- দড়িটা পাকড়ান – শুনিতেছেন? দেখিছ – দেখিছ – কিছুতেই ধরতিছে না!
স্বামী – আমি জানতাম। সহজে ধরবে না।
স্ত্রী – ক্যানে?
স্বামী – আরে বুদ্ধু- লোকটা এই মাত্তর ঝাঁপাল মরবে ব’লে, আর এক্ষু্ণি দড়ি ধরে হাসতি হাসতি উঠে
আসবে? পেস্টিজ ব’লে কোনো কথা নাই? উঠে এলি ও আমাদেরই বা কবে কী আর নিজেরেই বা কবে
কী?
স্ত্রী – ধরিছে – ধরিছে – টানো টানো ।
স্বামী – আরে- ধরি নিল? এত শিগগিরই! এটা দেখি একেবারেই মাগী।
স্ত্রী – তুমি টানবা?
স্বামী – হ্যাঁ, টানি। তুইও ধর।
দুজনে টানতে থাকে। মাঝে মাঝে চেঁচায় – ‘ছাড়বেননি বাবু’ – ‘ধরি থাকেন’ – ‘আর এট্টুস্ খানি’ –
ইত্যাদি
স্ত্রী – এসে গেছে – এসে গেছে
স্বামী – হ্যাঁ, এইবার পায়ের নীচে মাটি পেয়ে গেছে।
স্ত্রী – আঃ – আমার কী খুশি লাগতিছে কী বলবো, মনে হচ্ছে এ্যাদ্দিন পর একটা ব্যাটা হল আমাদের।
স্বামী – (হাঁপাচ্ছে) উঠি আসেন বাবু – এই ধার দিয়ে – দেখলি? দুনিয়াটা শুধুই খারাপ লোকে ভর্তি
না!আমায় যদি কেউ এমনি করে টেনে তুলত – তাইলে জেবনডাই বদলে যেত। আসেন বাবু, আসেন।
জলসিক্ত একটি যুবক কাদা মাড়িয়ে উঠে আসে। ভিক্ষুকদ্বয় দাঁত বার করে অভ্যর্থনা করে।
যুবক – চুপ! বাঞ্চোৎ! আবার হাসছে!
স্বামী – লাও ঠেলা, তোমারে বলিছিলাম!
স্ত্রী – কেমন মানুষ গো – একটু বুঝদারি নাই।
যুবক – (প্রচণ্ড ধমক দেয়) শুয়োরের বাচ্চা, তোদের কে কেরদানি দেখাতে বলেছে? ভগবান হয়ে গেছিস
না?
স্বামী – আমরা ভাবলাম –
যুবক – কী? কী ভাবলি? আমি ঢের আগে তোদের দেখেছি – ঐ ব্রীজের ওপর থেকে। আমি আত্মহত্যা
করতে যাচ্ছিলাম - তোরা বুঝিস নি? খুব বুঝেছিলি। তাহলে? কে নাক গলাতে বলেছে তোদের? ছিঃ ছিঃ!
একটা লোক মরতে চলেছে- তার শেষ ইচ্ছা পর্যন্ত স্মমান করতে পারিস না? জানোয়ার!
স্বামী – এই মোটেও গাল দিও না। তুমি মোটেও মরতি চাও নি।
যুবক – তার মানে? আত্মহত্যা করতে চাওয়া মানে মরতে চাওয়া নয়?
স্বামী – তুমি মরতে চাওনি বলেই এখনো বেঁচে আছ!
যুবক – বেঁচে আছি কারণ তুই বাধা দিয়েছিস।
স্বামী – তুমিই তো বাপু হাঁকুপাঁকু করে, সাঁতার কাটতিছিলে।
যুবক – মোটেই না। আমি শুধু মরার আগে হাত পা খেলিয়ে দেখে নিচ্ছিলাম মরতে কেমন লাগে! তুই যদি
দড়িটা না ছুঁড়তিস –
স্ত্রী – তা বাবু, আপনেরে দড়িটা ধরতি কে মাথার দিব্যি দিয়েছিল শুনি?
যুবক – তোরা আমাকে দড়িটা ধরতে বাধ্য করেছিস।
যুবকটি ক্রমান্বয়ে হাঁচতে থাকে
স্বামী – নাও নাও, খুব হয়েছে – আবার যে ঠাণ্ডায় মরবা, আগুন্টার কাছে এসে বোস।
ওরা বসে
স্ত্রী – আমরা আপনেরে দড়ি ধরতে জোর করিছি?
যুবক – নিশ্চয়। তোমরা আমার বাঁচার ইচ্ছেটাকে জাগিয়ে তুলেছ। কে না জানে বাঁচাটাই স্বাভাবিক।
আত্মহত্যা অস্বাভাবিক।
এই শক্ত কথা শুনে স্বামী - স্ত্রী মুখ চাওয়া চাওয়ি করে
যুবক – আমি জানতাম। আমার মন সায় দেবে না, তাই জোর করে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম,
ভেবেছিলাম ঠাণ্ডা জলে হাত পা হিম হয়ে গেলেই – উঃ- সব ভেবেছিলাম, শুধু ভাবি নি একটা বুড়ো পাঁঠা
–
স্বামী – এই গাল দিও নি। আমরা তোমার ক্ষেতি করতে চাইনি!
যুবক – সেটাই তো অপরাধ। দুনিয়ার সবাই শালা অন্যের ক্ষতি করতে চায়। তোমরা আর সকলের মতো
হলে আমার মরাটা দেখতে আর বগল বাজাতে। তারপর আমি মরে গেলে ঐ সোয়েটার আর জুতোটা নিয়ে
বেচে দিতে। আমি মরে বাঁচতাম আর তোমরাও সাতশ টাকা পেয়ে বাঁচতে।
স্বামী – ও দুটোর দাম সাতশ টাকা? হ্যাঁ?
স্বামীটি উঠে ছুটতে যায়। যুবক তাকে চেপে ধরে
যুবক – এই এই , বসো বসো। যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি আমার মাল আর কারোর নয়।
স্বামী – হায় হায় হায়।
যুবক – শালা, বুড়ো ভাম। ওটা নর্থ স্টার জুতো। সোয়েটারটা নাইকের। সব মিলিয়ে সাতশোর বেশিও হতে
পারে। এবারে লাফালে আমি সব পরেই লাফাবো। বুঝলে গাধা, আমাকে শান্তিতে মরতে দিলে তোমারই লাভ
হত।
স্ত্রী – সে তো ঠিকই। কিন্তু বাবু আমরা আপনের কথাই ভাবতিছিলাম।
যুবক – চোপ। ইয়ার্কি ? পরোপকার না? মারবো এক ঝাবড়া।আমার বয়স কত জানো? পঁয়ত্রিশ। পঁয়ত্রিশ
বছর ধরে আমি মানুষ সম্পর্কে যা বুঝেছি আজ মরার আগে তোদের দেখে সে ধারণা বদলাতে হবে বলতে
চাস? শোন, মানুষ যদি মানুষের উপকার ফেরত দেয় তাহলে কৃ্তজ্ঞতা বলে একটা ব্যাপার থাকতো।
উপকার ফেরত দেবার ব্যাপার থাকতো। তার মানে তোদের জন্যেও আমার কিছু কর্তব্য থাকতো। ফুঃ!
তোদের কি ধারণা – আমি তোদের কাছে ঋণী?
স্ত্রী – আজ্ঞে?
যুবক – মানে আমার কাছে তোদের কিছু পাওনা আছে?
স্ত্রী – আজ্ঞে না।
যুবক – আমার এই প্রাণটা – এটা কার?
স্বামী – তোমারই , আবার কার?
যুবক – তবে? কারো কাছে আমার কোনো ঋণ নেই! এমনকি বাপ মায়ের কাছেও না। স্ত্রী – বা, বা, বা!
যুবক – আমার জন্ম হয়েছে এমনিই। স্রেফ দুর্ঘটনায়। কে আমাকে খাইয়েছে? বড়ো করেছে? বিপদে সান্ত্বনা
দিয়েছে? আমি আমি আমি নিজেই। আমি একা। (হঠাৎ স্বামীর ঘাড় চেপে ধরে) এবার বল তো বুড়ো
ভাম। মরার আগে সত্যি কথাটা জেনে যাই, আমাকে বাঁচালি কেন? ভেবেছিলি অনেক টাকা পাবি, না?
স্বামী – ছাড়ো। ছাড়ো।(জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়) মোটেই না। আমি তো জানতাম টাকা না
থাকলিই লোকে মরতি যায়।
যুবক – তাহলে তাহলে …… (হঠাৎ) ওঃ। ঠিক। এবার বুঝেছি। অহংকার। তোরা এক একেকটা
অহংকারের ডিপো! ভিখারির আবার অহংকার!
স্বামী + স্ত্রী – তার মানে?
যুবক – তোরা দেখলি – একটা ভদ্দর লোক মরতে চলেছে। দিব্যি চেহারা। বুদ্ধিশুদ্ধি নিশ্চয় আছে। তার
মানে মরার একটা সঙ্গত কারণও আছে। তাই আমরা – দুটো জানোয়ার – ওকে মরতে দেবো না। কেন?
না ওর কীসে ভালো হবে তা নিশ্চয় আমরা ভালো বুঝি।স্ত্রী – দেখিছ কাণ্ড? যুবক – দেখার কী আছে?
তোরা তোরা (হঠাৎ হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে)- তোরা নিষ্ঠুর। জলের বুক থেকে তুলে এনে তোরা
আমাকে মানুষের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলতে চাস। এতে কী আনন্দ তোদের? আমাকে কষ্ট দিয়ে -
স্ত্রী – আরে আরে করেন কি? ও বাবু, আমরা অত ভাবি নাই।
যুবক – (ধাতস্ত হয়) ভাবো নি, না? ভাবো নি? শয়তান। ভেবেছ সুতো ধরে আমাকে নাচাবে? শোন,
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করি আমি নিজেই। আমি একা। গত দশ বছর ধরে আমি হাজার হাজার মানুষ্কে চরিয়েছি।
মন্ত্রী থেকে অধ্যাপক – এদের আমি আঙ্গুলের ডগায় করে নাচিয়েছি। বড়োলোকদের ঘরে সোজা ঢুকে গিয়ে
ওদের কাছে হাওয়া বিক্রি করে দিয়ে এসেছি। জীবন ছিল আমার জুয়ো খেলার মতো ভয়ংকর। আর তোমরা
নাচাবে আমাকে? – থাকগে। এত বকে লাভ কী? আমি – আমি চললাম।
স্ত্রী – কোথায়?
যুবক – মরতে।
স্বামী – ও আচ্ছা।
স্ত্রী – এসো বাছা। দুর্গা। দুর্গা।
যুবক – শোনো, তোমরা চেঁচাবে না তো?
স্বামী – না না।
যুবক – দড়িটা আবার ছুঁড়ে দেবে না তো?
স্বামী – পাগল? স্ত্রী – অমন কাজ আর করি? এই নাক খৎ দিচ্ছি।
যুবক – আমি যদি খুব ছট ফট করি, তোমাদের ডাকি, তাহলেও না – বুঝলে?
স্বামী – আরে না না, বলতিছি তো।
যুবক – কিন্তু আমি যদি চেঁচাই , আর অন্য কেউ যদি শুনে ফেলে?
স্বামী – আমরা বরং চিৎকার করে গান ধরবো।
যুবক – ঠিক?
স্বামী – ঠিক।
যুবক – তাহলে যাই?
স্বামী – যাও
যুবকটি তবু দাঁড়িয়ে থাকে
স্ত্রী – কী হল?
যুবক – ইস্! কতটা সময় নষ্ট হয়ে গেল, এসব ঝামেলা না বাঁধলে আরো দশ মিনিট আগেই আমার মরা
কমপ্লিট হয়ে যেত।
স্ত্রী – দশটা মিনিটে আপনের কী এমন আসি যায় বাবু? যুবক – তুমি বুঝবে না।দশ মিনিট আগে আমি
যখন ওই ব্রীজে উঠলাম- পৃথিবীর সঙ্গে সব সম্পর্ক আমি শেষ ক’রে দিয়েছিলাম। আমার সামনে ছিল অন্য
একটা জগৎ- অন্ধকার কালো। সেটা একটা চরম মুহূর্ত। সেটা এসেছিল। কিন্তু এখন? এখন যে সব উলটে
পালটে গেছে।
নাঃ। যাই। ঐ মনোভাবটা আমাকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। যে ভাবেই হোক!
হঠাৎ দূরে একটা গাড়ি থামার শব্দ। একটা হুইসল সোনা যায়।
আঃ। ঐ তো ওরা এসে গেছে।
স্ত্রী – কারা?
যুবক – আমার মৃত্যুর কারণগুলো।
স্বামী – মানে?
স্ত্রী – ইয়ে – বাবু – যদি কিছু মনে না করেন তো – শুধোই, কারণটা কী?
স্বামী – হ্যাঁ, মানে, আমরা আগেও কাউকে কাউকে জলে ঝাঁপ দিতে দেখিছি, কিন্তু কারণডা জানা হয় নাই।
স্ত্রী – জানা থাকলি কত সুবিধা।
যুবক – ওরা এক্ষুনি পৌঁছে যাবে।
স্বামী – কারা?
যুবক – হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। ওহে চাঁদ মুখ ঢাকো । তারারা গা ঢাকা দাও। এমন বোকামি তোমরা দেখেছো
কখনো? এ্যাঁ? কী দুঃসাহস তোমাদের, আমার আত্মহত্যার কারণ জানতে চাও। তাহলে আমিও তোমাদের
কাছে কৈফিয়ৎ চাইবো।
স্বামী – কী?
যুবক – তোমরা বেঁচে আছ কেন?
স্বামী – কী? এটা কোনো কথা হল?
যুবক – উত্তর দাও।
স্বামী – ইয়ে - মানে – হ্যাঁরে – তুই জানিস?
স্ত্রী – বেঁচি আছি।মানে এমনিই। আমাদের মধ্যে বাপু ঘোর প্যাঁচ নাই।
স্বামী – তাছাড়া বাঁচতি যখন শুরু করিছি তখন তো শেষও তো করতি হবে।
স্ত্রী – বটেই তো। একদিন তো শেষ হবেই। তাহলে পালানোর দরকারটা কী? যুবক – বোকা। বোকা।
একদিন শেষ হবেই। ঠিক। কিন্তু কী অবস্থায়? ভেবেছ কখনো?এই রকম - না খেয়ে – ধুঁকে ধুঁকে - পচে
মরবে। ছিঃ!পচা দুর্গন্ধ বেরুবে তোমাদের শরীর থেকে।
আবার হুইসল শোনা যায়
তার চেয়ে এসো, ঝটপট। আমরা হাত ধরাধরি ক’রে জলে ঝাঁপ দিই। সবাই একসাথে। সে বেশ হবে। এ্যাঁ?
হাঃ হাঃ। বেশ পিকনিকের মতো। এসো।
স্বামী – কক্ষনো না। মরবো কেন? যুবক – কারণ সেটাই উচিত। সিনেমা হলে আগুন লাগতে দেখেছো
কখনো? একগাদা লোক হুড়মুড় ক’রে ছুটছে। সবাই চায় আগে বেরুতে। কিন্তু দরজা যে একটাই। এই
দুনিয়াটাও সেই রকম। তোমাদের বুকের ওপর নিত্যদিন হাজার লোকের পায়ের চাপ পড়ছে। তোমরা অন্ধ,
বুঝতে পারছো না। এভাবে বেঁচে কী লাভ? এসো।
ওদের হাত ধরে টানে। স্ত্রীটি হাত ছাড়িয়ে নেয়।
স্ত্রী – না।
যুবক – তবে থাক তোমরা। আমি যাবো। শোনো, কে কোথায় আছো শোনো। আমি আমার জন্ম-মৃত্যুকে
নিজে নিয়ন্ত্রণ করি। ভগবানের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমি তাকে হারিয়ে দিয়েছি। আমি স্বাধীন।
আমি গর্বিত। বন্ধুগণ, আসুন, আমরা জলে ঝাঁপ দিই। মানুষের সঙ্গে জন্তুদের এই একটাই তফাৎ - মানুষ
মরতে পারে।
যুবকটি উন্মাদের মতো চিৎকার শুরু করে
স্বামী – চুপ, চুপ, বিপদে ফেলল দেখতিছি।
দূরে সম্মিলিত বুটের শব্দ শোনা যায়
যুবক – আর সময় নেই। সিগগির। কী হল? তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করছো না?
স্বামী – না।
যুবক – তুমি?
স্ত্রী – না।
যুবক – এসো এসো। আমি একজন শিল্পী। শিল্পীর বুকে মাথা দিয়ে মরণ হবে তোমাদের।
ওদের হাত ধরে টানতে থাকে। ওরা প্রাণপণে বাধা দেয়।
স্ত্রী – আরে আরে। করো কী! করো কী?
স্বামী – কে আছো? আমাদের বাঁচাও। এই আমার বুড়িকে ছেড়ে দাও বলতিছি।
আবার হুইসিল খুব কাছেই
যুবক – ওই তো এসে গেছে।
স্বামী – কে?
যুবক – পুলিশ।
স্ত্রী – মাগো! তুমি কি ডাকাত না কি?
যুবক – না আমি – আমি একজন বুদ্ধিজীবী।
স্বামী – কী জীবী?
যুবক – আমি কবিতা লিখি।
স্ত্রী – তো পুলিশ ক্যানে?
যুবক – সে ব্যাপার আছে। জোচ্চুরির কেস! কিন্তু পাঁচ বছর জেল না মৃত্যু কোনটা ভালো?
স্বামী – দেখেছো কাণ্ড? ভদ্দরলোক না জোচ্চোর! আগেই জানতাম। এখন পুলিশ এসে ওর সাগরেদ বলে
আমাদের শুদ্ধু ঝোলাবে।
স্ত্রী – আপনে তাড়াতাড়ি যান না মশাই – ঝাঁপ দেন। স্বামী – হ্যাঁ, হ্যাঁ যান। শিগগির।
দুজনে মিলে যুবকটিকে জলের দিকে ঠেলতে থাকে।
যুবক – এই এই এটা কী হচ্ছে? কী মতলব?
স্বামী – তুমিই তো বলতিছিলে।
স্ত্রী – এমন কাজের শুরুডাই শক্ত। আমরা ঠেলে দিচ্ছি।
যুবক – না।
স্বামী – ক্যানে? তোমার তো কোনো আশা নেই।
স্ত্রী – লোকের পায়ের চাপে আপনের বদন বিগড়ে গেছে।
যুবক- এই ছাড়ো। ছাড়ো বলছি। তোমরা একবার যখন বাঁচিয়েছো, আমার প্রতি তোমাদের কর্তব্য জন্মে
গেছে।
স্বামী – কর্তব্য আবার কী?
স্ত্রী – আমাদের কোনো দায় নাই।
যুবক – পালাবার পথ আছে?
স্বামী – ওরা দুদিক দিয়েই আসতিছে।
যুবক – আরে ওটা কীসের পোঁটলা?
স্ত্রী – আমাদের জামা কাপড়ের। ক্যানে?
যুবকটি পোঁটলার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একটা ধুতি বার করে। নিজের জামা প্যান্ট খুলে সেটা পরতে থাকে।
স্ত্রী – এই করতিছেন কী?
যুবক – চুপ। এখন আমাদের স্বার্থ এক। আমাকে ধরতে পারলে ওরা তোমাদেরও ধরবে। শেষ করে দেবে
একেবারে। বুঝতে পারছো? আমাকে বাঁচালে, তোমরাও বাঁচবে।
এঃ! ধুতিটা কী ময়লা! কী দুর্গন্ধ!
নিজের প্যান্টটা জলের ধারে ছুঁড়ে দেয়।
উঃ! এটা দেখছি চামউকুনে ভর্তি। উঃ
দুহাতে চুলকাতে থাকে।
ঐ যে – ওরা এসে গেছে। শোনো, জিজ্ঞাসা করলে বলবে আমি তোমাদের ছেলে। বুঝেছো? বুঝেছো?
হুড়মুড় করে তিনজন পুলিশ ঢুকে পড়ে। একজন এস.আই, দুজন কনস্টেবল। যুবকটি মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে।
এস.আই – এই যে। বাবাজীরা।
স্বামী – পেন্নাম কর্তা।
এস.আই – বটে? এত ভক্তি? এখুনি চেঁচাচ্ছিল কে?
স্ত্রী – কখন ছার?
এস.আই – একটু আগে।
স্ত্রী – ঐ তো – ও।
এস.আই – বটে? কেন শুনি?
স্ত্রী – ইয়ে – আমি ওকে মারতিছিলাম।
এস.আই – বল কী? কেন?
ওরা চুপ।
এস.আই – ( স্বামীর কাঁধ ধরে) বল।
স্বামী – মারতিছেন কেনে? আমার বৌ মারলি চেঁচাতে পারবো না? এরকম কোনো আইন আছে?
এস.আই – আইন শেখাচ্ছো? শালা। প্রমাণ কর তুই নির্দোষ।
স্ত্রী – আমাদের দোষডা কী – সেইডা আগে বলেন।
এস.আই – আমরা কিছুই বলি না। বাজে বকার চেয়ে স্বাকীরোক্তি আদায়টাই বেশি পছন্দ করি।
কথা কম। কাজ বেশি।
থাপ্পড় মারে স্বামীকে
স্ত্রী – এই মারতিছেন কেনে? ও কী করিছে?
এস.আই – সেটা উত্তম মধ্যম দিলেই জানা যাবে। মোট কথা তোরা যথেষ্ট সন্দেহজনক।
(কনস্টেবলদের)এই, এদের আরেস্ট কর।
স্বামী – ক্যানে? আমরা কী করিছি?
এস.আই – কত কিছু করতে পারো। ফয়সালা না হওয়া কেসের কী অভাব আছে? ঝুলিয়ে দিতে
কতক্ষণ?
ওরা হাঁউমাঁউ করে ওঠে
এস.আই – ঠিক আছে। ঠিক আছে। চেঁচাতে হবে না। তার চেয়ে একটা সত্যি কথা বল। আমরা
একটা লোককে খুঁজছি। বয়স - পঁয়্ত্রিশ। হাইট - পাঁচ নয়। গায়ের রঙ – ফরসা। চালচলনে
তুখোড়। দেখেছিস এমন কাউকে?
স্বামী – কবে আজ্ঞে?
এস.আই – আজ! এই রাতে।
স্বামী + স্ত্রী – আজ্ঞে না তো।
হঠাৎ যুবকটি হেঁচে ফেলে
এস.আই – এই কেরে? কে ওটা?
স্ত্রী – আজ্ঞে কেউ না।
এস.আই – কেউ না মানে? জলজ্যান্ত শুয়ে আছে।
স্ত্রী – আজ্ঞে। আমার ধাড়ি ব্যাটাটা।
এস.আই – ও। তা এমন কাঁপছে কেন?
১ম কনস্টেবল – দাঁতে দাঁতে লেগে আওয়াজ হচ্ছে সার।
এস.আই – কিন্তু কেন?
১ম কনস্টেবল – বোধহয় শীতে।
এস.আই – চোপ্। তোমাকে কে বলতে বলেছে?
স্বামী – আজ্ঞে। কিরমি। ছোটবেলা থেকেই ওর অমন ধারা।
এস.আই – (যুবককে ধাক্কা দেয়) এই – ওঠ।
যুবকটি বাধ্য হয়ে উঠে বসে, ধুটি দিয়ে তার মুখ, মাথা ঢাকা
যুবক – কী বলতিছেন আজ্ঞে? কী হইছে?
এস.আই – তোর বাপ চেঁচাচ্ছিল একটু আগে?
যুবক – আজ্ঞে, জানি না তো!
এস.আই – বটে? তোর ঘুম ভেঙ্গে যায় নি?
যুবক – না ছার। অব্যেস হয়ে গেছে। ছোট থেকে ওদের মারামারি দেখতিছি তো।
হঠাৎ একজন কনস্টেবল দৌড়ে ঢোকে
২য় কনস্টেবল – স্যর, স্যর – ব্রীজের ওপর ওর সোয়েটার আর জুতোটা পাওয়া গেছে!
এস.আই – কী? তার মানে জলে ঝাঁপ দিয়েছে?
পুলিশেরা লাফিয়ে ওঠে। ছুটোছুটি পড়ে যায়। এস.আই জলের ধার থেকে যুবকের প্যান্টটা কুড়িয়ে পায়।
এস.আই – আরে এটা কী? কী এটা? প্যান্ট? ওর প্যান্ট?
১ম কনস্টেবল – স্যর, ওতো জলে ডুবে মরার লোক নয়।
এস.আই – ঠিক। তাছাড়া ডুবেই যদি মরে তো প্যান্টটা এল কী করে? মরতে অসুবিধা হচ্ছিল বলে
প্যান্টটা খুলে রেখে ল্যাংটা হয়ে আবার জলে নেমে গেছে? তার মানে – তার মানে –
১ম কনস্টেবল – ( হঠাৎ কিছু অনুমান করেছে) স্যর!
এস.আই – ঠিক। প্যান্টটা ছেড়েছে।
১ম কনস্টেবল – তার মানে অন্য কিছু পরেছে।
এস.আই – সেটা কী?
১ম কনস্টেবল – ধুতি!
ওরা একসঙ্গে পিছন ফেরে। ওদের কথা শুনতে শুনতে যুবকটি উঠে বসেছিল। ওরা পিছন ফেরামাত্র
সে দৌড় দেয়। এস.আই চিৎকার করে কনস্টেবলদের হুকুম দেয় ওর পিছনে ছুটতে। তারপর
হিংস্রভাবে পিছনে ফেরে।
এস.আই – এবার?
ভিক্ষুক দুজন ক্রমশ জলের দিকে হাঁটছে। দুজনে দৃঢ়ভাবে হাত ধরে আছে পরস্পরের।এস.আই ক্রমশ
ওদের দিকে এগোছে।
স্বামী – কেঁপোনি। ধরি থাকো। শক্ত করি ধরি থাকো আমারে।
স্ত্রী – ওগো, কী হবে?
স্বামী – জানি না – জানি না।
এস.আই - শালা, কুত্তা। হারামী।
ওদের ধরতে যায়। ওরা উপায় না পেয়ে একসাথে জলে ঝাঁপ দেয়।
এস.আই – যাঃ। শালা। ঝাঁপ দিল?
১ম কনস্টেবল – ধরবো স্যর? ঝাঁপাবো?
এস.আই – নিজেই উঠবে? যাবে কোথায়? শালা – যত ফালতু পার্টি।
১ম কনস্টেবল – আরে – দেখুন – ওরা ডুবে যাচ্ছে যে।
এস.আই – সাঁতার জানে না নাকি? তাহলে ঝাঁপালো কেন?
১ম কনস্টেবল – বোধহয় বাঁচার জন্য।
এস.আই – ঝাঁপাও। তোল। ওরা মরবে হাজতে। আমার হাতে।
কনস্টেবল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইন্সপেক্টর কপালের ঘাম মোছে। কলকল করে গঙ্গা বইছে।
পর্দা পড়ে।
[ নাটিকাটি মুর্শিদাবাদের একটি ছোটো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশকাল - অজ্ঞাত ]