প্রবাসে থেকে যেই জিনিসটা নিয়ে বারে বারে নতুন উপলব্ধি পেয়েছি, সেটা হলো ভাষা। শুধু নিজের ভাষার প্রতি অগাধ প্রেম বা পরিচিতির রক্ষার ব্যাপার নয়, হয়তো এটা দিয়েই শুরু হয়েছিল, কিন্তু ক্রমশ ভাষার আরো জটিল কিছু অনুষঙ্গের কথা জেনেছি একটু একটু করে। ভাষা থেকে আমাদের মনন কি ভাবে আদল পায়, ইতিহাস আর রাজনীতি থেকে ভাষা কি ভাবে আদল পায়, মরে বা বাঁচে, তার নানান হদিস পেয়েছি।
শখ বশত নতুন ভাষা শেখা, আর বড় হয়ে ওঠার সময়ে প্রথাগত ভাবে ভাষা শেখার অভিজ্ঞতা আর ফল, দুটোই খুবই ভিন্ন। মনোবিজ্ঞানীরা এখনো এর তাদপর্য পুরোটা তলীয়ে দেখতে পারেনি। সে ক্ষেত্রে আমাদের দক্ষিণ এশীয়ার মানুষের ভাষার অভিজ্ঞতা বাকি পৃথিবীর থেকে খুব আলাদা, আমরা অন্তত যারা উচ্চশিক্ষা করেছি, ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যম পেয়েছি অনেক শুরু থেকেই। বাকি পৃথিবীর ধনি বা দরিদ্র, উন্নত বা অনগ্রসর সব দেশেই স্থানীয় ভাষাতেই প্রধাণত শিক্ষা পেয়ে থাকে।
আবার দক্ষিণ এশীয়ার দেশের মধ্যে যারা ভারতের হিন্দিবলয়ের বাইরে বসবাসকারি, তাদের অভিজ্ঞতাটা আরো আলাদা। হিন্দি নিরন্তর একটা তৃতীয় ভাষা আর “জাতীয় পরিচয়” বলে সব যোগাযোগ মাধ্যমেই আরোপ করা হয়েছে । এর অনেক ইন্টারেস্টিং ফল আছে, নানান ভাবে প্রকাশ পায় তাদের ব্যাবহারে।
আবার ভারতের হিন্দিবলয়ের বাইরে এই বসবাসকারিদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বাসীদের অভিজ্ঞতাটা আরো আলাদা। ভারতের কিছু কিছু রাজ্যের জাতীয় পরিচয়টা দিল্লির শাসন থেকে চিরকালই খুবই স্বতন্ত্র ছিল, ভাষাগত ভাবে বা সংস্কৃতিগত ভাবে। এই কতিপয় রাজ্যগুলির মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই সরাসরি হিন্দি বলয়ের রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্রের মধ্যে পরে, হিন্দি ভাষী মানুষদের সবচেয়ে বেশি সমাগম এখানে। সামপ্রতিক কালে এদের ভোট-আদায়ের রাজনীতি খুবই নিয়ামক চেহারা নিয়েছে এই রাজ্যে। আর কোন রাজ্যে বোধহয় তিনটি ভাষার ত্র্যহস্পর্শ এতো প্রবল নয়।
এই পশ্চাদভূমি থেকে এসে সদ্য-লব্ধ সামান্য কিছু জ্ঞানের আলোকে আমার (আর আমার পারিপার্শ্বিক অনেকেরই) কিছু অভিজ্ঞতা ফিরে দেখতে চাই, পর্বে পর্বে।