মানুষের কিছু সহজাত গণিত-চিন্তা আছে। অর্থাত বস্তুজগতকে বিমূর্ত বানিয়ে যুক্তিগত নানান আবিস্কারের সক্ষমতা আছে। এই সক্ষমতার প্রাচীনতম এক নিদর্শন হলো তার গোনার ক্ষমতা। গোনার জন্য আমাদের গড়ে তুলতে হয়েছিল "সংখ্যা" অথবা "গুণতি" সম্বন্ধে প্রাথমিক বোঝাপড়া। এই নিবন্ধে সংখ্যা জিনিসটার বোঝাপড়ার চেষ্টা হবে। সংখ্যায়ন করা বা গোনা এমন এক শ্বাস্বত ক্রিয়াকর্ম যে এর প্রকৃত অর্থ বা সংজ্ঞা নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলি না। এই প্রশ্নেরই অনুধাবনে আমরা খুব পরিচিত পরিসরের মধ্যেই গভীর কিছু উপলব্ধি আর খোলসাতে অবতীর্ণ হবো।
দিগন্তে কি ধর্মঘট?- চিম্নি... পাখির মতন অনায়াসে
নীলিমায় ছড়ায়েছে। এখানে নদীর স্থির কাকচক্ষু জলে
ঘুরুনো সিঁড়ির মত আকাশ পর্যন্ত মেঘ সব
উঠে গেছে।- অনুভব করে প্রকৃতির সাথে মিলিত হতেই,
অমিলনের সূর্যরোল জ্যোতির্ময় এলুমিনিয়ম অনুভব
ক'রে আমি দুই-তিন-চার-পাঁচ-ছয়টি এরোপ্লেন গুনে
নীলিমা দেখার ছলে শতাব্দীর প্রেতাত্মাকে দেখছি অরুণে।
-- জীবনানন্দ দাশ, 'ভোর ও ছয়টি বমারঃ ১৯৪২, আলোপৃথিবী
সংখ্যা বা নম্বর আমাদের জীবনে, চিন্তায় ছেয়ে আছে, কিন্তু এই সাধারণ আটপৌরে শব্দটার সঠিক সংজ্ঞা করা খুব দুরূহ কাজ। "সংখ্যা কি ?", "১ মানে কি ?", "২ মানে কি ?" এই জাতীয় প্রশ্ন করলে সাধারণত এই ধরণের উত্তর পাওয়া যায় -
-"সংখ্যা মানে ১,২,৩..."
-"১ মানে যা ২-এর আগে আসে"
-"২ মানে যা ১এর পরে আসে"
-"২ মানে যেরকম দুইটা গাছ, দুইটা বাড়ি..."
এই ধরণের উত্তরের সমস্যা হলো যে এতে সংখ্যা বা ১,২,৩...এর ধারণাগত কোনো ব্যাখ্যা হয় না। এই উত্তরে দেওয়া বিবরণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সংখ্যা বা ১,২,৩ নামগুলির ওপরেই নির্ভরশীল। নম্বরের এক নমুনা (যেমন "এক") দিয়ে আরেক নমুনা (যেমন "দুই")-এর ব্যাখ্যা করতে গেলে ঘুরপথেই ঘোরা হয়। এদের স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা দেওয়া সহজ নয়। এই ধারণা বা সংজ্ঞাগুলিকে তাদের স্বাকারে বোঝার উদ্দেশ্যেই এই নিবন্ধ।
একটা প্রস্তাবনা আছে যে মানুষ গুনতে শিখেছিল, বা শিখতে বাধ্য হয়েছিল, তার পশুপালনের রেওয়াজ থেকে। দিনের শেষে তার পালের সবাই ফিরল কিনা যাঁচাই করার একটা অভিনব কায়দার উদ্ভব হয়েছিল। তারা সম্ভবত ঢিল, গাছের ডাল, ঝিনুক অথবা অন্য যে কোনো কিছুর এক গুচ্ছ জমা করে রাখতো। তর্কের খাতিরে সেটাকে ঢিলই ধরে নি। তার পালের প্রত্যেক ভেড়ার মাথা পিছু একটা করে ঢিল থাকতো। দিনের শেষে তারা যখন একে একে বাড়ি ফিরত, সেই ঢিলগুলি একটা ঢিপি থেকে আরেকটা ঢিপিতে জমা করা হতো। এই ভাবে সব ঢিল এক ঢিপি থেকে অন্য ঢিপিতে চালান হওয়া মানে সব ভেড়া ঘরে ফিরেছে। মনে রাখতে হবে যে তাদের শব্দাবলীর মধ্যে কোনো রকমের সংখ্যাগত নাম অথবা ক্রমিক বৃদ্ধির নাম ছিল না। পরিমাণ বা গুনতি যাঁচাই করার জন্য এই ঢিলে-ভেড়ায় মেলাবার পন্থাই ছিল। ঢিল দিয়ে ভেড়ার প্রতিনিধিত্ব করে কাজ চালানো হয়েছে।
এই উপায়ে শুধু কাজ চালানো নয়, একটা চমৎকার গাণিতিক বৈশিষ্ঠ্য আবিস্কার করা হয়েছে। এই বৈশিষ্ঠ্যর দরুণ শুধু ভেড়া আর ঢিল নয়, গরু, ছাগল, খাবারের সম্ভার, গ্রামের লোকবল সব কিছুরই পরিমাপ পাওয়া সম্ভব। আসলে এই সব কিছুই হচ্ছে এক-একটা "সম্ভার" (ইং -set)। এদের সদস্য বা উপকরণ যাই হোক, এদের অভিন্ন খাসলত হচ্ছে যে এরা সকলেই নানান জিনিসের সমষ্টি বা সংগ্রহ। ধরা যাক দুই সম্ভার - এক গ্রাম মানুষ আর এক ঝুড়ি ডিম। মানুষ আর ডীমের মধ্যে তুলনা হয়না, কিন্তু "মানুষ' বা "ডীম"-এর খাসলতগুলি ভুলে গিয়ে, সমাহার বা সমষ্টি হিসেবে তাদের মধ্যে নানান গানিতিক সমতা বা অসমতা স্থাপন করা যায়। সেইরকমের এক সম্পর্কের নামই "গুনতি" বা "সংখ্যা"।
এই ব্যাপারটা খুঁটিয়ে দেখা যাক। ভেড়ার পাল আর ঢিল নিয়ে যেই হিসাবটা করা হলো, সেটা যে কোনো দুইটা সম্ভারের মধ্যে করা যায়। এর গাণিতিক নাম "মিলান্তি" (ইং-correspondence)।
মিলান্তি
একে-একে মিলান্তি
যদি যেকোনো দুইটা সম্ভার দেওয়া থাকে, 'ক' এবং 'খ', তাহলে 'ক'-এর প্রত্যেক সদস্যের সাথে 'খ'-এর কোনো সদস্যের সাথে জুটি বানানোকে "মিলান্তি" বলে। কাউকেই একাধিক সদস্যের সাথে জুটিবদ্ধ করা যাবে না। যদি এই মিলান্তির ফলে এমন দাড়ায় যে দুই দলেরই সব সদস্য জুটিবদ্ধ হয়ে গেছে, তাহলে বলা হবে যে দুই দলের মধ্যে "একে-একে মিলান্তি" (ইং - one-to-one correspondence ) আছে। অর্থাত প্রত্যেক সদস্যই কোনো না কোনো জুটিতে আবদ্ধ আছে।
এই মিলান্তির কাজটার জন্য সংখ্যা-বোধ লাগে না। এই কাজটায় সংখ্যা বা গণনা ব্যাবহার হয়নি। কিন্তু আমাদের সংখ্যা সম্বন্ধে জ্ঞান দিয়ে একে আরো সহজে বোঝা যাবে। খেয়াল করলে বোঝা যাবে যে দুইটা সম্ভারের মধ্যে একে-একে মিলান্তি স্থাপন করা সম্ভব যদি এবং কেবল যদি এদের সদস্যরা সংখ্যায় সমান হয়। প্রকৃতপক্ষে এই সম-সংখ্যক হওয়ার ধারণাটার জন্মই এই মিলান্তি থেকে। এর থেকেই আমরা পৌছাই সংখ্যা সংক্রান্ত আমাদের প্রথম সংজ্ঞায়নে -
সম-সংখ্যক
যে কোনো দুইটা সম্ভারের মধ্যে যদি একে-একে মিলান্তি স্থাপন করা যায়, তাহলে দুই সম্ভার কে সম-সংখ্যক বলা হয়।
সম-সংখ্যক কথাটার পরিচিত মানে ভুলে গিয়ে, শুধু মাত্র যদি এই মিলান্তি খেলার নিরিখে কথাটাকে তুলে ধরা হয়, তাহলে বিস্ময়ের ব্যাপার হবে যে এর সংজ্ঞায়নে "সংখ্যা" বা "নম্বর" জিনিসটার আবির্ভাবই হয়নি। এর ভিত শুধু মাত্র হচ্ছে একধরণের বিমূর্ত সম্পর্ক, সম্ভারে-সম্ভারে। দুই সম্ভারের মধ্যে একে একে মিলান্তি স্থাপন করতে পারলে আমরা এক প্রকারের সমতত্ত্বতা আবিস্কার করি। সেই সমতত্ত্বতাই হলো সম-সংখ্যকতা। সম্ভারগুলির উপকরণের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত থাকতে পারে। যেমন ধরা যাক - মানুষ আর রসগোল্লা। এদের মধ্যে কোনো প্রকারের তুলনা চলে না। কিন্তু "মানুষ" বা "রসগোল্লা"-র খাসলত ভুলে, এক হাড়ি রসগোল্লা আর একপাল অতিথির মধ্যে তুলনা করেই থাকি আমরা। সেই তুলনাটা বাস্তবিকই, একে একে মিলান্তির। একে-একে মিলান্তির চেষ্টা করেই আমরা সমসংখ্যকতার সন্ধান করি।
এই জন্যেই সম-সংখ্যকতা একটা বিমূর্ত সম্পর্ক। সম্ভারের উপকরণগুলির মূর্ত রূপ, অর্থাত নাম, চেহারা, ধর্ম ভুলে গিয়ে, শুধু মাত্র তাদের সদস্যতাকেই ভিত্তি করে এই সম্পর্ক।
এই সম-সংখ্যক হওয়ার ভিত্তিতে সম্ভারদের গোত্রে ভাগ করা যায়। যে কোনো এক গোত্রের অন্তর্ভুক্ত সম্ভারেরা একে অপরের সাথে সম-সংখ্যক। ধরা যাক একই সম-সংখ্যকতার এক গোত্রে আছে তিন সম্ভার, ক, খ, আর গ। ধরা যাক ক-খ এর মধ্যে একে-একে মিলান্তি আছে, আর খ-গ এর মধ্যেও একে-একে মিলান্তি আছে। তাহলে স্বাভাবিক নিয়মে ক-গ এর মধ্যেও একে-একে মিলান্তি তৈরি করা সম্ভব। এই জন্যেই এই সম-সংখ্যক গোত্রের অন্তর্ভুক্ত সকলেই সবার সম-সংখ্যক।
অন্যদিকে, দুইটা আলাদা গোত্রের সম্ভার কখনই সম-সংখ্যক হবে না। ধরা যাক দুই আলাদা গোত্র অ এবং আ, আর তাদের মধ্যেকার দুই সম্ভার ক এবং খ। তাহলে অনিবার্য ভাবে ক আর খ সম-সংখ্যক নয়। নাহলে তারা একই গোত্রের হতো।
সংখ্যা
সম-সংখ্যকতার বিচারে যেই আলাদা আলাদা গোত্র তৈরি হয়, সেই গোত্র গুলিকেই সংখ্যা বলে।
আদিম মানুষ মিলান্তি করতে শেখার পর অচিরেই আবিস্কার করেছিল এই গোত্রগুলিকে। মিলান্তি করেছে দলের সাথে দলের, ভাগ-বাটোয়ারায়, সম্পত্তির ঠিকাদারিতে। মিলান্তি করতে করতে বুঝেছে যে জিনিসের মূর্ত রূপের আড়ালের যেই জিনিসটার ধর্মটার অন্বেষণ তারা করছে সেটা হলো তাদের সম-সংখ্যকতার গোত্র, সহজ ভাষায়, তাদের গুনতি বা সংখ্যা।
এই উপলব্ধির তাদপর্য অসীম।
১) আমরা জানি সংখ্যার উপস্থিতি আর ব্যাবহার বিশ্বজনীন, এখন বুঝতে পারি যে এর উৎপত্তিতই ঘটেছে বিশ্বজগতের কিছু সমসত্ত্বতা ধারণ করতে। ১,২,৩...আসলে হলো কতগুলি লেবেল, এক-একটা গোত্রের।
২) আমরা রোজকার জীবনে আগে সংখ্যা গুণে তারপরে সম-সংখ্যকতার বিচার করি। কিন্তু ধারণাগত ভাবে সম-সংখ্যকতা আগে, তার থেকে সংখ্যার জন্ম।
৩) এই ক্রম-সংজ্ঞায়ন থেকে মানব-মননের ক্রমপরিণতি নিয়ে নানান প্রশ্নের উদয় হয়। সংখ্যা-জ্ঞান পৃথিবীর কোনো একজায়গায় জন্মে চারিদিকে ছড়ায়নি। প্রাকৃত-নিয়মে সব সভ্যতাতেই উদয় হয়েছে। এর থেকে গণিত আর জ্ঞানের অনিবার্যতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বলা হয়ে থাকে যে -
" গণিতে নতুন জিনিস গড়া হয়না বা সৃষ্টি হয়না,
শুধু বিদ্যমান সত্যের হদিস পাওয়া হয় "
মিলান্তির আরেক উদাহরণ - দূরে দেখা যায় হুগলি নদীর ওপর দিয়ে দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সেতুর এক প্রান্তে টোল-গেট। টোল গেটে টিকিট কেটে গাড়ি, বাস পার হয়। এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন পারাপারের সংখ্যা নির্ধারণের মূল সহায় হলো বিক্রী হওয়া টিকিটের গুনতি। টিকিট-গাড়ির মিলান্তির ভিত্তিতেই টিকিটের কাটতি থেকে যান চলাচলের পরিসংখ্যান পাওয়া যায়।
কম-সংখ্যক
বেশি-সংখ্যক
ধরা যাক সম্ভার ক আর খ সম-সংখ্যক নয়। তাহলে তাদের মধ্যে মিলান্তি করতে গেলে একটার সদস্য ফুরিয়ে যাবে, আরেকটার কিছু সদস্য রয়ে যাবে জুটি বিহীন। যেই সম্ভারটির সব সদস্য জুটিবদ্ধ হবে, তাকে বলা হবে কম-সংখ্যক, অন্য সম্ভারকে বলা হবে বেশি-সংখ্যক।
সাধারণ জ্ঞান থেকে আমরা জানি যে দুইটা সম্ভারের গুনতি হয় সমান, নয়তো একটায় আরেকটার চেয়ে বেশি। সহজ-সরল হিসাব। গুনতির আশ্রয় না নিয়েও, মিলান্তির ভিত্তিতে গড়ে তোলা সংখ্যার সংজ্ঞায়নেও এই ত্রি-ভাব (ইং-trichotomy) আছে।
ধরা যাক দুই আলাদা গোত্র অ এবং আ, আর তাদের মধ্যেকার দুই সম্ভার ক এবং খ। আলাদা গোত্রের হওয়ার দরুণ তারা সম-সংখ্যক নয়, ধরা যাক ক কম-সংখ্যক। তাহলে গোটা অ গোত্রের সব সম্ভার, আ গোত্রের যে কোনো সম্ভারের চেয়ে কম। অর্থাত সম্ভারে সম্ভারে কম-বেশি-সমান এর তুলনা তাদের নিজ নিজ গোত্রের মধ্যেও করা যাবে। গোত্র বলতে যেহেতু আমরা সংখ্যাই বুঝি, আমরা এর থেকে সংখ্যাদের মধ্যে কম-বেশি-সমান এর তুলনায় অবতীর্ণ হই।
মিলান্তি করতে গিয়ে, বিশেষ করে ব্যাপারীর কাজে, মাঝে মাঝে কিছু কিছু সম্ভারে বাড়তি থেকে যায়, অন্যটা ফুরিয়ে যায়। এই ভাবেই অনুরূপ পদ্ধতিতে মানুষও সংখ্যা-গোত্রের মধ্যে কম-বেশি তুলনা করতে শিখেছে। বস্তুত আমরা কোনো নম্বর শুনলে সেই নম্বরের তাদপর্য পাই তার তুলনামূলক মানে। অর্থাত অন্যান্য নম্বরের স্বাপেক্ষে তার অবস্থান থেকে। যেমন ৮ সংখ্যাটার পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী আলাদা তাদপর্য। কোলকাতার শীতকালে পারদের মাত্রা ৮ হওয়া মানে সাঙ্ঘাতিক ঠান্ডা। এখানে তুলনা হচ্ছে গড়-তাপমাত্রা, যা ১৫ ডিগ্রির বেশি। আবার কানাডার শীতে ৮ ডিগ্রি খুবই রোদ ঝলমলে দিন, কারণ এখানে তুলনা হবে ঋণাত্মক কোনো সংখ্যার সাথে। আবার ভূমিকম্প মাপার রিখটার স্কেলে ৮ অতি বিপর্যয়ের লক্ষণ, এখানে তুলনা হচ্ছে সাধারণ কম্পনের মাত্র ১-২ এর সাথে।
এই ছিল সংখ্যার জন্ম কাহীনি। আমরা নম্বর নিয়ে এখন অনেক জটিল জটিল কাজ করি। স্কুলের বাচ্চারাও যোগ, গুণ, বিয়োগ, ভাগ করতে জানে। এই কষাকষিগুলিও ধারণাগত ভাবে এসেছে সংখ্যার ওই প্রাথমিক বোধগুলি থেকেই। মানুষ অভিজ্ঞতা-লব্ধ বিদ্যায় এইগুলি শহস্রাব্দ ধরে করে এসেছে, ১৮শোর দশকে জিসেপ্পি পিয়ানো আর অন্যান্য ইউরোপীয় গণিতবিদেরা সংখ্যা আর তার সব কষাকষির ভিত্তিতিগুলি গোড়া থেকে নির্ণয় করল প্রথমবার। সংখ্যার ক্রমিক বিন্যাসের নিয়ম আবিস্কৃত হলো। মিলান্তির খেলা থেকে তৈরি নিয়ম-কাঠামোর মধ্যে যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ কে ফেলা হলো, সংখ্যাতত্ত্বের আরো দুরূহ নানান জিজ্ঞাসায় আর উত্তরে পৌছানো গেলো। ডেডেকিন্ড আর অন্যান্য রা ১,২,৩ ... নম্বরগুলি থেকে ভগ্নাংশ হয়ে, গোটা সংখ্যা জগতের স্পষ্ট, সম্পূর্ণ বিবরণ দিল অবশেষে।
শেষ করব এই মিলান্তি খেলা আবিস্কারের কিছু গুরুত্বের কথা বলে -
১) প্রথমত মিলান্তি করাই ছিল মানুষের স্বভাবজ অভ্যাস, তার থেকেই তার মস্তিষ্ক সংখ্যা আর ততসহ ধারণাগুলি ক্রমে ক্রমে জন্মায়।
২) মিলান্তি করার ধারণাটা স্পষ্ট হওয়ার পরে শুধু ক্রমিক সংখ্যা নয়, অসীমকেও সংখ্যা হিসাবে দেখা সম্ভব হলো। অসীম বা অনন্ত নিয়ে মানুষের বুঝের একান্ত অভাব ছিল, অসীম কে নিয়ে খালি একগাদা আধ্যাত্ম চর্চা হয়েছিল। এখন অসীম বা অফুরন্ত কোনো সম্ভারকেও সংখ্যা দেওয়া যায়, দুই অফুরন্ত সম্ভারের মধ্যেও কম-বেশি-সমান তুলনা করা সম্ভব, দ্ব্যার্থ-বিহীন ভাবে।
৩) সম্ভার-তত্ত্ব (ইং-set theory) কে উপাদান বানিয়ে পুরো গণিত চর্চাকে ইট গেঁথে গেঁথে পুনরনির্মাণ করার প্রচেষ্টা আরো বেগ পেলো।
তথ্যসূত্র