Date: October 25, 2019
৮ই এপ্রিল,সকাল ৯.৩০ঃ
"উফ, অসহ্য! সিগন্যাল টা ছাড়বে কখন??"
বিড়বিড় করে বলছে সাকিব। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে জ্যামে বসে আছে। সময়মত মিটিং এ না পৌছাতে না পারলে ডিলারদের কাছে প্রেস্টিজ রক্ষা হবে কিভাবে?? আর নতুন টেন্ডারটাও যদি হাতছাড়া হয়ে যায়?
"এই সুমিকে নিয়ে আর পারা গেলো নাহ। সকালে কি বলবে বলবে করে দেরি করে দিল। বিরক্তিকর!"
" এই কালাম, কতক্ষণ লাগবে আর?"
" এই তো স্যার আইসা পরসি, সিগন্যাল টা ছাড়লেই হুশ কইরা ১০ মিনিটের মধ্যে যামু গা"- হাসতে হাসতে বলল কালাম।
"এসিটা ছেড়ে দাও কালাম, আজকে অসহ্য গরম"
"আচ্ছা, স্যার।"
স্যার এর ভালো মুডের অপেক্ষায় আছে কালাম। আজকে একটু আগে আগে ছুটি নেয়ার কথা বলবে সে। ইতস্ততভাবে ভাবে জিজ্ঞেস করল
" স্যার, আজকে মিটিং কয়টায় শেষ?"
" আজকে বিদেশি ক্লায়েন্ট আসবে, দেরি হবে কেন??"
"নাহ স্যার এমনেই"
"সিগন্যাল ছাড়সে স্যার, আর টেনশন নাই, এইবার উইড়া উইড়া নিয়া যাইতাসি আপনারে"- বলেই একগাল হাসি কালামের।
ঠিক সময়েই পৌছালো সাকিব। স্বস্তির নিঃশ্বাস, যাক টেন্ডার টা হাতছাড়া হচ্ছে নাহ।
" এই কালাম, আমার মিটিং শেষ হতে বিকাল ৬ টা বাজবে। এই নাও ১৫০ টাকা বাইরে লাঞ্চ করে নিও। আজকে অফিসে বাইরের লোক আসবে, বুঝোই তো"
মাঝের সময়টা সাধারণত কালামের লালদোপাট্টা গানটা শুনেই কাটে। দিলে লাগে গানটা তার। আর মাঝে দুইবার নিলুর সাথে ইমোতে ভিডিও কল হয়। তবে আজকে নিলুকে ফোন দিবে নাহ। সকাল সকাল কি একটা গোস্বা করল নিলু!!
" এই শুনেন, আজকে একটু আগে আইসেন বাসায়"
" কেন কি হইসে? পারুম নাহ আসতে, বসের কাজ শেষ হইতে দেরি হবার পারে। উনারে ফেলায় আসুম কেমনে?"
" একটা দিনই তো শুধু"
" নাহ পারুম না"
" আপনি থাকেন আপনার বস লইয়া।"- এই বলে নিলু চলে গেলো।
"মাইয়া মানুশ নিয়া আর পারা গেলো নাহ, কিছুই বুঝোন যায় নাহ"- নিজের মনে বলে কালাম। দিনটা যে কালাম ভুলে গেসে এমন নাহ। কিন্তু তাই বলে নিজের দায়ীত্ব কে অবহেলা করবে এমন নাহ সে।
" বিকাল ৫ টা পর্যন্ত মেলা টাইম, যাই একটা খেপ মাইরা আসি।"- বলেই আরেকগাল হাসি মেরে খেপ দিতে বের হল কালাম।
এদিকে ক্লায়েন্টদের সাথে দফায় দফায় মিটিং হচ্ছে সাকিবের। মাঝে সুমির ফোন-
"এই শুনো"
" তাড়াতাড়ি বল মিটিং একটু পরে আবার"
"আজকে একটু আগে আগে আসবা??"
" নাহ সুমি, বিদেশি ক্লায়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ মিটিং দেরি"
" প্রতিদিনই তো রাত কর, আজকের দিনটা শুধু??"
ঠাস করে ফোন রেখে দিল সাকিব।
সন্ধ্যা ৭ টা
অনেক খুশি সাকিব। সফল আজ। বিদেশি ক্লায়েন্ট দের ভালোই সন্তুষ্ট করতে পেরেছে।
কালামের মনটাও ফুরফুরা।খেপ আজকে ২ টা মারসে। বেশ কিছু ট্যাকা পকেটে আহা! লাল দোপাট্টা গাইছে বিরবির করে।
বাসায় ঢুকে দেখে নিলু এখনো বারান্দায় বসা।প্রতিদিনের মত তোয়ালে সাবান এনে না দিলেও টেবিলের উপর ঠিকই রেখে দিয়েছে।
" খাবার গরম করে টেবিলে রাখসি, খেয়ে নিবেন"
" নিলু আইজ তো বাসায় খাইতাম নাহ, আর দেহো তো তোমার জন্য মিষ্টি কালারের একখন শাড়ি আনসি কেমন লাগে?? পিন্দায় দেহো"
বারান্দা থেমে দৌড়ে আসল নিলু।
" আপনার মনে আছে??? আমি আরো ভাবলাম..."
" যাও এটা পিন্দায় আসো, বাইরে ভাল মন্দ খামু একলগে"
সুমি প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে বারান্দায় বসা। সাকিবের আসার খবর নাই কোন। শাড়ি পরে এতোক্ষণ রবোটের মত বসে থাকাও বিরক্তিকর। আজ মিষ্টি রঙএর সেই শাড়িটা পরেছে সে, যেটা পরেই সাকিবের সাথে তার প্রথম পরিচিয়।
" এই সুমি, অনেক টায়ার্ড লাগতাসে। আমার তোয়ালে কই"
তোয়ালে নিয়েই বাথরুমে দৌড় সাকিবের। খেয়েই ঘুম।
সুমি জেগে থাকে।শুয়ে শুয়ে ভাবে সাকিব কেন এমন হয়ে গেলো। যত ব্যস্ততাই থাকুক এই দিন টা ভুলে যাবে?
হোটেল সালাদিয়ায় খেয়ে হলুদ ল্যাম্পপোস্টের নিচে হাটছে নিলু আর কালাম। খুশিতে নিলুর চোখে পানি আসছে আজ। কারণ অনেক দিন পর হাত ধরে একসাথে হাটছে দুজন। এক ফাঁকে আঁচল দিয়ে চোখ মুছে নিল সে। অন্য দিকে সুমিও চোখের জল শাড়ির আঁচলে মুছে নেয় সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে!!
কাকতালীয় ভাবে ৮ এপ্রিল ছিল কামাল- নিলু এবং সাকিব-সুমির বিবাহবার্ষিকী!