Date: December 22, 2019
"এক্সকিউজ মি ভাইয়া"
পিছে ঘুরে তাকাতেই দেখি পেস্ট কালারের জামা পড়া এক মেয়ে করুণ মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে। হাতে একটা ফাইল আর ব্যাগ।
" আপনি কি কিছু বলতে চান?"
" ভাইয়া, আমি ঢাকায় নতুন। আজ ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসছি কুমিল্লা থেকে। এখন আব্বুকে খুঁজে পাচ্ছি নাহ।"
" মোবাইল নাই। কল করেন, আজিব"
" আমার তো পার্সোনাল ফোন নাই। আর আব্বুর নাম্বার টাও নাই। আমাকে কি একটু কুমিল্লার বাসস্ট্যান্ড টায় পৌছে দিবেন?? বাবাকে ঐখানে পাবো মেইবি"
নাহ, মেয়েটা দেখি একেবারেই সহজ সরল। এইযুগে স্মার্ট ফোন চালায় নাহ ভাবা যায়!!!
"চলেন, তাহলে আপনাকে পৌছে দেই হাটতে হাটতে। বেশি তো দূর নাহ"
ফুলার রোড দিয়ে হাটছি।
"আপনার নাম টা তো জানা হল নাহ"
"আমার নাম তিথী"
"আমার নাম মুহিব। ঢাবিতেই ইকোনোমিক্সে পড়ছি ৩য় বর্ষে। থাকি সূর্যসেন হলে"
বাসস্ট্যান্ডে গিয়েই বাবাকে পেয়ে গেল তিথী। সেবারই তিথীর সাথে আমার প্রথম পরিচয়। ঠিকমত পরিচয় হবার আগেই বিদায়। ভাবিনি আবার দেখা হবে।
২য় বার দেখা হল কার্জনে।
"আরেহ ভাইয়া আপনি??"
"হ্যাঁ, তাহলে চান্স পেয়েছিলে পরে"
"জ্বি ভাইয়া আমি এখন এপ্লাইড ক্যামিস্ট্রিতে পড়ছি"
সেই থেকেই শুরু। ওর ল্যাব থাকত দুপুরে আর আমার ক্লাস হত সকালে। মাঝের গ্যাপে দেখা হত। ও কল দিত না হয় আমি। আর শ্রাবণে বিকাল ৫.২০ এ ব্যাক করতাম একসাথে। মাঝে ফুলার রোডে হাটতে হাটতে গল্প করা। মল চত্ত্বরে আড্ডা দেয়া।
প্রতি ঈদের বন্ধেই বাসস্ট্যান্ডে পৌছে দিতাম আমি আর ১ম দিনের কথা মনে পরে ও আর আমি প্রচুর হাসতাম।
দূরত্ব টা বাড়তে থাকে ও ৪র্থ ইয়ারে উঠার পর থেকেই। ওর ব্যস্ততা শুরু হয় ল্যাব আর অন্যান্য কাজ নিয়ে। আর আমি??? বেকারত্বের ঘানি নিয়ে জুতার তলা ক্ষয় করছিলাম। একটার পর একটা চাকরীর পরীক্ষা দিচ্ছিলাম আর ব্যর্থ হচ্ছিলাম।
এভাবে একসময় দূরত্ব টা অনেক বেশি বেড়ে যায়। একদিন তিথী চলে যায় রাশিয়ায় পিএইচডি করতে। যাওয়ার পর যোগাযোগ কমতে থাকে। একসময় একপ্রকার অফ হয়েই যায় বলতে গেলে।
৪-৫ মাস পরেই একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরি হয়। আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়ি নতুন চাকরির ব্যস্ততায়।
এখনো সূর্যসেন হলেই আছি। বেতন কম। বাড়ুক এরপর না হয় একটা বাসা নিব, বিয়ে করব।
আজ এই শীতের বিকালে ফুলার রোডে হাটছিলাম। বিকালের বাসে ফেরার আগে ফুলার রোডে হাটতে হাটতে গল্প করার দিনগুলোতে যেন ফিরে গেলাম। একদিন তিথীকে কথা দিয়েছিলাম পাশে শুধু ওকে নিয়েই হাটবো, জায়গাটা আর কাউকে দিবো নাহ।রিকশার পাশের জায়গাটা শুধুই ওর জন্য থাকবে সবসময়। কথাগুলো অবশ্য এখন শুধুই অতীত। অতীত কে আমরা এড়িয়ে যেতে চাই সবসময়, আমরা বাচি বর্তমানে। বর্তমান টা কে ঘিরেই থাকে পরিকল্পনা। আর ভবিষ্যৎ টা আমাদের কাছে এক মরিচীকা ছাড়া কিছুই না।
মনের অজান্তেই চোখ টা ঝাপ্সা হয়ে উঠল মুহীবের। এক ঝটকায় চোখ মুছে সামনের মামা কে বলল-
' বেশি করে চিনি দিয়ে এক কাপ দুধ চা দাও আর সাথে একটা বেনসন"
সিগারেটে টান দিতে দিতে হলের উদ্দেশ্যে হাটা দেয় মুহিব।