Date: February 14, 2020
Part-01
টিক টিক করে টিকটিকি ডেকে উঠল।
প্রচন্ড ধরফরিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি ঘড়িতে রাত ৩.১০ বাজে। এই প্রচন্ড শীতেও টপটপ করা ঘাম পরছে কপাল থেকে। বিছানার পাশেই রাখা গ্লাসের পুরা ঠান্ডা পানিটা এক গ্রাসেই শেষ করে ফেললাম। এতেও পানির পিপাসা কমল না। ফ্রিজে আর পানি আছে কিনা খুজতে যেতে এই মূহুর্তে ইচ্ছা করছে না। ফারজানাও বাসায় নেই আজকে। ভাই অসুস্থ শুনেই কুমিল্লা দৌড় মারল। এম্নেতে সবসময় আমিই সাথে যাই কিন্ত কাল অফিসের একটা কাজ থাকায় ঢাকা থেকে যেতে হল। ফারজানাও নাছোড়বান্দা , যাবেই।
" এই শুনো, এতো রাত্রে একা না গেলে হয় না? আমি কাল অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসে তোমার সাথে যাই?"
" না, আমি এক্ষুণি যাব। ছোটনের জন্য খুব খারাপ লাগতাসে।"
" সমস্যা নাই তো। ঐখানে তো আরো লোক আছে। "
" না আমাকে এক্ষুণি যেতেই হবে"য- জিদ করসে যেতেই হবে। তাই আর কি করা। রাত ১১.৪০ এর বাসে টিটিপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠায় দিয়ে আসলাম।
মোটেই ইচ্ছা করছিল না ওকে একা ছাড়তে কিন্ত নাছোড়বান্দা, যাবেই....
Part-02
দুপুরে ছোটনের খবর টা শুনার পর থেকেই অস্থির অস্থির লাগতাসে।বেচারা আমাকে ছাড়া কারো সাথেই ফ্রি না। না জানি ব্যথায় কেমন করতাসে। অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথায় বেশ কয়েকবার বমি করসে এটা শুনে খুব খারাপ লাগতাসে।
দুপুরেই অফিস ছুটি নিয়ে বিকালে বাসায় চলে আসলো ফারজানা। সোহেলকে ছাড়া কখনো এভাবে রাত্রে ঢাকার বাইরে যায় নাই আগে। কিন্ত সোহেলের অফিসে মারাত্মক চাপ, কিছুদিন আগেই ছুটি নিসে। এখন নিতে পারবে না। কিন্ত ওকে এভাবে রেখে যেতেও খারাপ লাগতাসে।বেচারা এম্নেতেই খাবার দাবারে অনিয়ম। দিলে খায়, না দিলে খাওয়ার খবর থাকে না।আর বাসায় একা রেখে গেলে আবার ভয়ও পেতে পারে। সারারার জড়িয়ে ধরে ঘুমায় এম্নেতেও।
কিন্ত ছোটনের কথা খুব মনে পড়তাসে। লাস্ট বার আসার সময় বাসে উঠায় দেয়ার সময় ও আসতে পারে নাই পরীক্ষার জন্য। কেন জানি আর অন্য ভাইবোনের জন্য অত মায়া লাগে না ওর জন্য যতটা লাগে।
রাত ১১.৩০. টিটিপাড়া বাসস্ট্যান্ড
সোহেল ব্যাগ সহ বাসে উঠিয়ে দিতে আসলো।
" এভাবে আজকে রাত্রেই একা না গেলে হত না? আমি না হয় কালকে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসে নিয়ে যেতাম?"
উত্তর দিলাম না। ওকে ছাড়া এভাবে একা যেতে তো আমারো ভালো লাগছে না।
"সব বিষয়ে তোমার জেদ।এক্ষুণি করা লাগবে। কি দরকার এভাবে এক্ষুণি যাওয়ার"
জানালা দিয়ে টাটা দিয়েও অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সোহেল। ইচ্ছা করছে নিজেই বাসে উঠে যাই। খুব বিরক্ত লাগতাসে!
ফারজানা জানালার পাশেই বসে সবসময়। বমি মাঝেমধ্যে করে। পাশের সিট ফাকা, কেউ নেই। রাতের বাস গুলাতে যাত্রী কম ই থাকে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ফারজানা ফিরে গেলো ৪ বছর আগে....
Part-03
১৩ই ফেব্রুয়ারী
সোহেল টেক্সট দিল।
"ফারজানা, তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। কাল ফ্রি আছো?"
আমাকে ও পছন্দ করে এটা আগে থেকেই বুঝতাম। গত দুই বছর ধরেই কথা আছে কথা আছে বলে পরে আর কিছু বলে না। কালকেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
"হুম আছি।কেন?"
"কাল বের হবা বিকালে?"
প্রায়ই আমরা বিকালে বের হতাম। লেকের পাশে হাটতাম আর পার্কের বেঞ্চে বসে গল্প করে মাগরীবের আজান দিলে বাসায় চলে যেতাম।
আহামরি কোন প্রেমের গল্প নেই আমাদের। " আমি তোমাকে ভালোবাসি " এটাও কেউ কাউকে বলি নাই।
৩ বছর এভাবে চলার পর একদিন সোহেল চাকরি পেয়ে যায়।। এরপর বাসায় সবার সম্মতিতেই বিয়ে হয়।
সোহেল খুব সাধাসিধে, চুপচাপ। কোন কিছুতেই উত্তেজিত হতে দেখা যায় না। আমাকে ও খুব পছন্দ করে কিন্ত কখনো তা প্রকাশ করবে না। কখনো একা ছাড়তে চায় না আমাকে। বিয়ের আগেও কোন কারণ ছাড়াই বিকালে ডেকে বসে থাকত। জিজ্ঞেস করলে এম্নেই অন্যদিকে কথা নিয়ে যেত।
একদিন ১৪ই ফেব্রুয়ারীতে হুট করে এক গোছা গোলাপ নিয়ে এসে বলল, "সুন্দর না? নাও"
এতটুকুই? আর কিছুই কি তোমার বলার নাই!? এরকম কেন তুমি!!?
মাঝেমধ্যে ওর উপর রাগ হয় খুব। বেশিক্ষণ থাকে না। ওকে যে খুব ভালোবাসি আমি। কিন্ত ও কি তা জানে?
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল ই ছিল না। ড্রাইভারে প্রচন্ড ব্রেকে ঝাকুনিতে ঘুম ভাংল।
চোখ খুলে দেখে বাসে কোন যাত্রী নাই। বাসের ড্রাইভার, হেল্পার আর দুইটা লোক গেটের কাছে দাঁড়ানো। অন্ধকার মত এক জায়গায় বাস থামায় রাখসে।
হুট করে প্রচন্ড ভয় হল। হেল্পার টা হলদে দাতের ফাকে হাসতে হাসতে এগিয়ে এসে বলল, " আপা একটু চুপচাপ থাইকেন। কাজ শেষে সুন্দরমত নামায় "
ক্ষণিকের জন্য চোখের সামনে ছোটনের চেহারা ভেসে উঠল। ওর সাথে কি আর কোনদিন দেখা হবে? সোহেল? সোহল, তুমি জানো না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি
সোহেলের খুব দেরী করে ঘুম ভাংল।রাত্রে ঘুম ভালো হয় নাই। ফারজানাকে নিয়ে কিসব আজেবাজে স্বপ্ন দেখসে।
দরজায় পত্রিকাটা নিয়ে টেবিলে রেখে দিল। পড়তে ইচ্ছা করতাসে না। আগে ফারজানাকে কল দেই। ঠিকমত পৌছাইসে কিনা।
অনেকবার কল দেয়ার পরেও ফারজানা কল ধরল না৷
ফারজানা যে আর কোনদিনও কল ধরবে না। সোহেল পত্রিকা খুল্লেই হেডলাইন পেত:
" ঢাকা চিটাগাং মহাসড়কে গণধর্ষণের পর এক মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার"