Date: October 30, 2019
"এই যে, হ্যালো, হ্যাঁ আপনাকে বলছি; একটু বসতে পারি"
ব্যাগ টা সরিয়ে জায়গা করে দিল সে। একটু বিরক্তই হল রাহাত। এমন রোবট টাইপ কেন মেয়েটা। এমনিতেই প্রায় ৫-৬ বার হ্যালো বলার পর বুঝল যে কেউ ডাকছে, আবার সৌজন্যতা করেও তো বলবে বসার জন্য। কিছুই বলল নাহ, আজব তো!!
বসেই গামছা দিয়ে মুখ মুছে নিল রাহাত। ফজরের নামাজ পড়েই দেড়ঘণ্টা হাটাহাটি, ব্যায়াম তার রোজকার রুটিন। এরপর বাসায় গিয়ে মায়ের হাতে নাস্তা করেই সকাল ৮.৩০ এর ক্লাস ধরতে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে দৌড়।
মুখ মুছা শেষে যখন আরেক রাউন্ড দৌড়ের প্ল্যান করছে ঠিক তখনই খেয়াল করল বেঞ্চের পাশের মেয়ে টি একমনে কি জানি করে যাচ্ছে তার খাতায়।
"কি আঁতেল রে বাবা!" নিজ মনে বিরবির করে বলল রাহাত। সাতসকালেই পড়াশোনা তাও এই পার্কে!
আরেক রাউন্ড দৌড়ের জন্য বের হল।
পরদিন সকালে রাউন্ড শেষে আবারো মেয়েটিকে একই বেঞ্চে পেলো। আগের দিনের মতই পুরো বেঞ্চটি দখল করে রেখেছে!
আজকে রাহাত একটু খেয়াল করল। দেখল হরেকরকম পেনসিল, কাগজ আর একটা পিচ্চি ব্যাগ নিয়ে বসে আছে মেয়েটা। আশেপাশের কিছুতেই তার খেয়াল নেই তার। কি জানি সমানে করে যাচ্ছে হাতে থাকা নোটবুক টায়।
"আজকেও কি একটু বসার জায়গা করে দিবেন?"
ব্যাগ সরিয়ে সরে বসল মেয়েটা। কিন্তু আজ ঠোঁটে ছিল কিঞ্চিত হাসি।
"বাহ, হাসলে তো ভালোই লাগে " নিজ মনে বলল রাহাত।
নাহ, এক দেখায় মানুষ কে জাজ করা উচিত নাহ। আড়চোখে বেশ কয়েকবার খেয়াল করল মেয়েটাকে রাহাত।আগের দিনের মত বদরাগী আর বিরক্তিকর লাগছে নাহ আজকে। আর হাসলে মেয়েটার গালে টোল পরে এটাও চোখ এড়ায় নাই রাহাতের।
বারকয়েকবার চোখাচোখি হলেও ভদ্রতাসূচক হাসি ছাড়া তেমন কিছু হল নাহ। নিজের থেকে যেচে যেচে কথা বলাটা রাহাতের কাছে ছ্যাচড়ামি লাগে তাই কথা বলার ইচ্ছা থাকলেও আর সামনে আগালো নাহ। তবে আজ হাটাহাটির মুড নাই।বসেই থাকল বেঞ্চে। ঠিক ৭.১৫ তে মেয়েটা সব জিনিস গুছায় সোজা হাটা দিল। রাহাত ও বাসার দিকে হাটতে শুরু করল আর মেয়েটা কে নিয়ে কৌতুহল বাড়ল।
"এতটুকু বুঝা যাচ্ছে নিয়মিতই আসে মেয়েটা, তবে ব্যায়াম এর জন্য নাহ। নোটখাতায় প্রতিদিন কি এতো নোট করে??" এসব ভাবতে ভাবতে বাসার উদ্দেশ্যে হাটতে থাকল।
পরদিন রাহাত একটু আগেই বের হল হাটতে। ভাবল পথে দেখা হয়ে যায় কিনা মেয়েটার সাথে!
বেঞ্চ ফাঁকা! রাহাত একটু অবাক হল।আজকে আসল নাহ যে??অসুস্থ নাকি??? হরেকরকম প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল মাথায়। ৮ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। নাহ আজকে আর আসবে নাহ মনে হয়- এই ভেবে রাহাত চলে গেলো।
৬ মাস পর....
আজকেও বেঞ্চে যথারীতি হাটাহাটি শেষে বসে আছে রাহাত। এ কয়দিন প্রতিদিনই এই সময়ে রাহাত বেঞ্চে অপেক্ষা করে, কিন্ত মেয়েটার দেখা পায় নাহ। হয়ত মনে কোন এক কোণে জায়গা করে নিয়েছিল টোল পরা হাসির সেই মুখটা। এসব ভেবে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার হাটা দেয় রাহাত।
ইস্কাটনের রাস্তা ধরে হাটছে রাহাত দ্রুত পায়ে। ভার্সিটি বাসে যাবার জন্য যাত্রী ছাউনির নিচে এসে দাড়ালো সে।
" এই মামা যাবেন??"
এক নারীকণ্ঠ ভেসে আসল রাহাতের কানে। ঘুরে তাকাতেই দেখে, আরেহ!! এতো পার্কের বেঞ্চে বসা ঐ মেয়েটা। আজকে কথা বলব এমন জিনিস ভাবতে ভাবতেই হুট করে দেখে রিক্সা নিয়ে চলে গেছে।
রাহাত খেয়াল করল বেঞ্চে পরে আছে নোটবুক টা।
"এই রিক্সা মামা দাড়ান, এই মামা"- নাহ, রিক্সা অনেক দূর চলে গেছে।
রাহাত নাম্বার বা কোন ঠিকানা পাবার আশায় নোটবুকটা হাতে নিল যা দেখে পৌছে দিতে পারবে। কিন্তু নোটবুকটা খুলার পর যা দেখলো রাহাত, তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না।
একদম ১ম পেইজে রাহাতের তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছার হাতে আকা ছবি! এরপরের পেইজেও একই ছবি কিন্তু একটু ঝাপসা, এরপরের টা আরো একটু ঝাপসা, এভাবে ৩-৪ পেইজ পরে শুধু রাহাতের চোখ এর ছবি!
শেষ পেইজে কোন ছবি নেই, শুধু রাহাতের উদ্দেশ্যে লেখা একটি নোটঃ
" তুমি হয়ত আমাকে চিন নাহ, কখনো হয়ত চিনবেও নাহ। আমিও তোমাকে চিনি নাহ। একসময় তোমার চেহারাও হয়ত আমার মেমোরি থেকে হারিয়ে যাবে।কারণ মেমোরি লস আমার কিছুদিন পরপরি হয়। লসের আগের দিন গুলোর কিছুই তেমন মনে থাকে না।
তোমার অপূর্ব সুন্দর চোখের ছবিও আমার মনে থাকবে নাহ। জানি নাহ তোমার চোখে আমি কোন জায়গা করে নিয়েছিলাম কিনা তুমি কিন্ত আমার শিল্পী চোখে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছিল"
ইতি সামিরা