Date: January 02, 2020
তিথীর সকাল থেকেই কেমন যেন লাগছে। কিভাবে কথাটা শফিককে বলবে বুঝতে পারছে।
আজকে তিথীর পোস্টিং হয়েছে। তিথীকে জয়েন করতে হবে বরগুনায়। শফিকের সাথে বিয়ে হয়েছে মাত্র ৫ মাস হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে এখনো বোঝাপড়া টা সেভাবে গড়ে উঠে নি। একজন আরেকজনকে সবেমাত্র বুঝে উঠা শুরু করেছিল। তাই হুট করে এমন সংবাদ শফিক কিভাবে নিবে বুঝতে পারছে নাহ তিথী।
" আমি তো ৯ টায় বের হব। ফাইল টা গুছিয়ে দিয়েছ??"
ফাইল টা এগিয়ে দিতে গিয়ে খবর টা জানালো তিথী। অতিরিক্ত কোন ভনিতা না করেই কথাটা বলে দিল সে। শফিক আচ্ছা বলেই অফিসের জন্য দৌড় মারল!!!
অন্তত জিজ্ঞেস তো করবে কবে যাব কীভাবে যাব, নাহ কিছুই জিজ্ঞেস করল নাহ!!
মায়ের বাসায় আসল তিথী। যা যা লাগবে গুছিয়ে নিতে একেবারে। আগামী নূন্যতম ৬ মাস তো বরগুনাতেই থাকা লাগবে।
" কিরে, তোকে বরগুনায় পৌঁছে দিতে শফিক যাবে নাহ??"- জিজ্ঞেস করল তিথীর মা।
"হ্যাঁ, যাবে তো।" অথচ শফিকের সাথে এসব কোন কথাই হয় নাই ঐদিনের পর তিথীর।
আজ ৫ দিন হল তিথী মায়ের বাসায়। শফিক একবারের জন্যেও ফোন দেয় নি৷ এর আগেও তিথীর ব্যাপারটা খেয়াল করেছে, কিচ্ছু বলে নাই। থাক, সারাদিন অফিয়া করে ক্লান্ত থাকে হয়ত। কিন্তু তাই বলে আর কয়েকটা দিন পর আর থাকবো নাহ, এখনো এমন করবে? আমার কথা কি ওর একবারো মনে পরে নাহ।
বরগুনা পৌছে দিতেও শফিক গেলো নাহ। অফিসে ছুটি নিতে পারে নাই নাকি। তিথীর প্রায় কান্নাই চলে আসলো বাসে একা যাওয়ার সময়। এভাবে একা একা ঢাকা থেকে যেতে হবে, কখনোই কল্পনা করে নাই সে।
বরগুনার একেবারে প্রত্যন্ত একটা গ্রামে পোস্টিং পরেছে তিথীর। থাকার জন্য বাংলো আছে। বাংলোটা সুন্দর।একটা বড় দিঘী আছে, পাড় বাধা। সন্ধ্যার পর এখানে বসে চা খেতে খেতেই সময় পার করে তিথী। আশেপাশের মানুষগুলো বেশ সহজ সরল। কাজের জন্য একটা মেয়ে আছে, নাম সুরমা, সেও বেশ ভালো।সময় যে খুব খারাপ কাটে তা নাহ। তবে শফিককে খুব মিস করে তিথী। সপ্তাহে ১ বার ফোন করে ও৷ কথা বলে মাত্র ১-২ মিনিট। আসার পর একবারো দেখা করতে আসে নি শফিক। যতবারই আসার জন্য বলে তিথী, অফিসে কাজের চাপ বলে এড়ায় যায় শফিক। তবুও কখনোই রাগ করে নাহ তিথী, বুঝতে দেয় জাহ নিজের কষ্ট।
আজ ১০ই এপ্রিল তিথীর জন্মদিন। সারাদিনে একবারো ফোন করে নি শফিক!!! সন্ধ্যা হবার পরেও যখন ফোন আসলো নাহ, তিথী বুঝলো অফিসে কাজের চাপে ভুলেই গেছে। পুকুর পাড়ে বসে প্রতিদিনকারমত সময় কাটাচ্ছে তিথী। আজকে পূর্ণিমা। আকাশে বড় থালার মত চাদ উঠেছে।
হঠাৎ একটা আওয়াজ শুনল তিথী। পিছে ফিরে দেখে শফিক !
" রাস্তায় ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট করায় এক জায়গায় প্রায় ৬ ঘণ্টা আটকা ছিলাম তাই আসতে দেরী হল। শুভ জন্মদিন তিথী"
আনন্দে তিথীর যেন প্রায় চোখে পানিই চলে আসলো।
" গতকাল স্বপ্নে দেখেছিলাম আমার জন্য এক গুচ্ছ কদম হাতে তুমি পুকুর পাড়ে দেখা করতে এসেছ। আমার ফুল কোথায়??? হুমমম...."
শফিক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বলল, নেক্সট টাইম নিয়ে আসবো। ফুল লাগবে নাহ, এখানে একটু বসত দেখো কি সুন্দর পূর্ণিমা।