Date: November 03, 2019
আরামবাগের চিপায় মেসের এক রুমে থাকে মুহিব আর রাহাত। নটরডেম কলেজে পড়ার সুবাদে কলেজ লাইফ থেকে দুজনের পরিচয়। কলেজ শেষে দুজনই পড়ছে একটা পাবলিক ভার্সিটি তে।
" এই রাহাত, এই.. উঠ, ৮.৩০ এ ক্লাস আছে, যাবি নাহ? উঠ"
রাত জেগে সাইয়ারার সাথে চ্যাট করে করে বদ অভ্যাস বানায় ফেলসে। প্রত্যেকটা দিন দেরি করে।
উঠেই হুড়মুড় করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো রাহাত। গোসল করে দাত ব্রাশ করে একেবারে রেডি হয়ে ভার্সিটি যাওয়া ওর নিত্যদিনের কাজ।
এই ফাকে ওর ফোন টা হাতে নেয় মুহিব। সুযোগ পেলেই রাহাতের ফোন টা হাতে নেয় সে। রাহাত ও যে ধোঁয়া তুলসি পাতা তা নাহ। সুযোগ পেলে মেসেঞ্জার হোয়াটস অ্যাপ সবগুলায় ঢু মেরে তা নিয়ে আবার পচাতে ভুল করে নাহ।
সাইয়ারার ইনবক্সে ঢুকে মুহিব। ওদের দুজনের মেসেজ স্ক্রল করতে ভালোই লাগে তার। ৩ বছর ধরে রিলেশন অথচ ভালোবাসি শব্দটাই একে অন্যকে বলে নাই!
" এই আবার ফোন গুতাস আমার"- ফোন কেড়ে নেয় রাহাত এক ঝটকায়।
" ভালোই তো ছেলেমেয়ের নাম ঠিকঠাক করলি রাতে"- চোখ টিপেই হাসতে থাকে মুহিব। "
" নিজে তো... " হাহা করে হাসতে শুরু করল রাহাত।
নিশাতের প্রসংগ আসলেই চুপ করে যায় মুহিব বরাবরের মতই।
" এই দৌড় মার ভার্সিটি বাস ধরা লাগবে" কথা পাল্টে দুজনই দৌড় মারে ভার্সিটির দিকে।
কিছুদিন পরেই বিএসসি শেষ করে বের হল দুজন। রেসাল্ট বেশ ভালোই হল দুজনের। আগে থেকেই কয়েকটা টিউশনি করাতো রাহাত। মুহিবের টার্গেট বাইরে এমএস করতে যাবার। সেভাবে প্রিপারেশন নিয়ে বেশ কয়েকটা ভার্সিটিতে এপ্লাই করে সে। অপেক্ষা এখন কোত্থেকে ডাক আসে সেটার অপর।
বেশ কিছুদিন ধরেই মনমরা রাহাত।
" কিরে, খুব চিন্তিত লাগছে তোকে.কি হইসে? সিরিয়াস কিছু নাকি"- মুহিব
কিছু না বলে বারান্দায় দাড়ায় রাহাত সিগারেট টানতে লাগল।
প্রতিদিন সকাল ৮ টায় বের হয় রাত ৮ টায় আসে রাহাত। এসে খেয়ে দেয়ে মরার মত ঘুম। আবার সকাল হলেই আবার দৌড় দেয়।
মুহিব জানে রাহাত কিছুটা চাপা স্বভাবের।এতো সহজে বলবে নাহ। যথারীতি ওর ফোন গুতায় যা পেল তার সারমর্ম হল সাইয়ারার বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।
" তো এখন কি করবি ভাবতাসিস?? কই কই এপ্লাই করতাসিস?"
" যেখানেই পারতাসি এপ্লাই করতাসি।আমার যেকোন মূল্যে জব লাগবে। "
" আচ্ছা তোর সাথে একটা কথা ছিল। আমার একটা ফুল ফ্রি স্কলারশিপের অফার আসছে। আগামী শুক্রবার ফ্লাইট"
"আরেহ, জোস তো।এই কথাগুলা এমনে ভ্যান্দা মার্কা ভাবে বলতাসিস কেন। চল, আজকে বাইরে খাওয়াবি"
রাহাতের জন্য কিছু করবে ভাবতাসে মুহিব। ডাইরেক্ট কিছু দিলে ও মানা করবে সেটা ভালো করেই জানে সে।রাহাত ঘুমানোর পর রাহাতের ফাইল টা নিয়ে বসে মুহিব। দেখে কালকে এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে লেকচারার পদে রাহাতের ভাইভা। ঐ ভার্সিটির এক প্রফেসর নিলুর বাবা। নিলুকে বলে দেখা যেতে পারে।
পরদিন বিকালে নিলুর সাথে দেখা করতে এক কফিশপে আসল মুহিব। নিলুর সাথে মুহিবের পরিচয় আজ প্রায় দেড় বছর ধরে। পরিচয়ের শুরু টা বেশ মজার-
একদিন ভার্সিটি থেকে বাইকে করে ফেরার পথে মুহিব খেয়াল করে এক মেয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে কিছু খুজছে?
" আপনি কি কিছু খুজছেন? " জিজ্ঞেস করল মুহিব।
" আপনার কি খুব তাড়া আছে?? আমাকে একটু ডিএমসি পৌছায় দিবেন? আজকে অবরোধ, একটা বাস ও নেই। আমার বাবা এক্সিড্যান্ট করেছে।"
এরপর নিলুকে পৌছে দেয়। পরিচিয়ের শুরু সেখানেই।
কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে মুহিব বলল রাহাতের ব্যাপারটা। নিলু রাহাতের ফুল নাম আর বায়োডাটাটা নিলো।
" আরেকটা কথা আমার কিন্ত শুক্রবার ফ্লাইট। হয়ত আজকেই আমাদের শেষ দেখা"
" আর দেশে ফিরবা নাহ??"
" সম্ভাবনা কম। ইচ্ছা আছে ঐখানেই কোন ভার্সিটি তে লেকচারার পদে জয়েন করার"
কিছু না বলে চুপচাপ দুজন বসে থাকল অনেকক্ষণ।
" আর নিশাত??? ওর সাথে আর যোগাযোগ হয়েছিল??"
অনেকক্ষণ নিরব থেকে মুহিব উত্তর দিল-" যোগাযোগ কি হবার কথা??"
আসার আগে মুহিব কে অবাক করে দিয়ে নিলু একটা প্যাকেট দিয়ে বলল
" এটা তোমার জন্য। একদম প্লেনে উঠে খুলবা"
" আচ্ছা"- কে জানে কেনো দীর্ঘশ্বাস ফেলল মুহিব।
কিছুদিন পর...
পরদিন সকালে রাহাত একটু অবাক হল। আজকে কেউ ওকে ডাকে নাই উঠার জন্য। মুহিব তো ওকে না ডেকে বাসা বের হয় নাহ.
কলিংবেল বাজল। দরজা খুলতেই দেখে এক লোক আসছে একটা চিঠি নিয়ে।
খাম খুলতেই দেখে কয়েকদিন আগে যে প্রাইভেট ভার্সিটিতে এপ্লাই করেছিল সেখান থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার!
খুশিতে চোখে পানি চলে আসে রাহাতের। এই মূহুর্তে মুহিবটা কোথায় গেলো?
টেবিলের উপর দেখে একটা নীল কালারের ফর্মাল শার্ট আর একটা নোট-
" তোকে কিছু না বলেই চলে গেলাম। আসলে তুই ফ্লাইটের আগে এয়ারপোর্টে আসলে ইমোশনাল হয়ে যাবো এই কারণে হুট করেই চলে গেলাম। আর কোনদিন দেশে ফিরব কিনা জানি নাহ। তোর এই শার্ট টা খুব পছন্দ হইসিল দোকানে ঐদিন বুঝছিলাম, তাই গিফট করে গেলাম। এমনে দিলে তো কখনোই নিতি নাহ।"
ঠিক একই সময় প্লেনে নিলুর দেয়া প্যাকেট টা খুলল মুহিব। মুহিবের পছন্দের চকলেট আর একটা নোট-
" আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকব। যদি আমাকে মনে পরে দেশে এসো"
বাইরে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আবার জানি কিসের চিন্তায় বুদ হল মুহিব।
বিঃদ্রঃ রাহাত আর সাইয়ারার প্রথম সন্তান ছেলে হয়েছিল এবং রাহাত তার নাম রেখেছিল মুহিব।