ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস, ' প্রান্ত-প্রাচীন' থেকে উদ্ধৃতি
শশাঙ্ক-পুত্র মানব সভাসদদের উদ্দেশ্যে বলেন
এই গৌড়-মগধ কিংবা প্রাচীন পুন্ড্র-বঙ্গ, সুম্ম, রাঢ়, অঙ্গ, কলিঙ্গই বলেন, এই সাম্রাজ্য আমার পিতা নরেন্দ্র গুপ্ত শশাঙ্কই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সূতীবদ্ধ করেছেন। হতে পারে এটি একটি মাকড়সার জালের মতো নরম, কিন্তু এই স্বপ্নটি বিশাল। জম্বুদ্বীপ বলেন, আর্যাবর্ত কিংবা ভারতবর্ষ যাই বলেন, উত্তরাপথের দিকে তাকাবার প্রশ্নে, আমাদের সাম্রাজ্যকে প্রতিস্থাপনের প্রশ্নে এই মহান স্বপ্ন জন্ম নিয়েছে। এই গৌরব সমগ্র বঙ্গজনের, গৌড়জনের, পুন্ড্র-বরেন্দ্রজনের, কলিঙ্গজনের, মগধ জনের।। যদি আজ আমরা পরাজিতও হই, এই স্বপ্ন কখনো পরাজিত হবে না।স্বপ্ন বার বার ডানা মেলবে অনাগত বীর ও মহান স্বাপ্নিকদের অবলম্বন করে।...
আমার ১৯তম গ্রন্থ ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস প্রকাশ করেছিল গতিধারা।
প্রচ্ছদ : সিকদার আবুল বাশার। মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
উপন্যাস, ' আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট' থেকে উদ্ধৃতি
ওরা প্রায়শই সংবিধান ঠিকা নেন। কিন্তু মানুষ তো তাদের কাছে সংবিধান ঠিকা দেয়নি। সংবিধান মানুষের জন্য, মানুষ সংবিধানের জন্য নয়- এটাও কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে।
একটি উদারহণ দেই, এরশাদ-বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের দিনই জনতা তার হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। কেড়ে নেয়ার সপ্তাহ খানেক পর এরশাদ সাহাবুদ্দীন সাহেবের কাছে কাগুজেভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। অর্থাৎ সেদিন এরশাদ তা-ই হস্তান্তর করেন যা তার কাছে ছিল না। ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও সংবিধানের প্রয়োজনে সেটা প্রয়োজনীয় ছিল। ...মাঝখানের সাতদিন সংবিধান এই বলে চিৎকার করছিল যে, আমাকে এডজাস্ট করো, আমাকে এডজাস্ট করো।
আরেকটি উদাহরণও দেয়া যায়, ১৯৯৬ সালের ২৫ মার্চ রাতে আমরা যাকে কালরাত বলে থাকি, বিএনপিওয়ালারা সারা রাত জেগে, হাই তুলতে তুলতে সংবিধান সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছিলেন - এটাও কিন্তু জনতার চাপে।
অতএব, সংবিধান ঠিকা নেওয়ার ভাবটা না ধরলেই ভাল হতো।
কিন্তু সেটা হবার নয়। কারণ, বাংলাদেশের এখনকার রাজনীতিকরা সব সময়ই চালাকির মধ্যে থাকেন। চালাকি করেই করে-কেটে খান। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাদের এই চালাকির জন্য মানুষের জানমাল বিপন্ন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ বিপন্ন হয়ে পড়ে।
আমার ২০তম গ্রন্থ এই উপন্যাসটি প্রকাশ করে বিদ্যাপ্রকাশ।
প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
কলামগ্রন্থ : ' যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন' থেকে উদ্ধৃতি
…১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিন বছরে নানা মতবিরোধের কারণে বার কয়েক পদত্যাগও করতে চেয়েছিলেন তিনি (আবদুল মান্নান ভুঁইয়া)। বার-তিনেক তার পদত্যাগপত্র আমাকে দিয়ে লিখিয়েও ছিলেন। এসব ক্ষেত্রে হাতের লেখা ব্যবহারের পরামর্শ ছিল আমার। কারণ কম্পিউটারে কম্পোজ করতে গেলেও ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। প্রতিবারই লেখা শেষ করে বলেছি, আপনার নির্দেশ মতো লিখলাম, তবে আমার অনুরোধ, এটি জমা দেওয়ার আগে আরো ভাবুন। অবশ্য আমার অনুরোধে জমা দিতে বিরত ছিলেন ব্যাপারটা এমনও নয়। নানাবিদ কারণে জমা দেওয়া হয়ে উঠেনি। প্রথমবার যখন লিখলাম, আমার ‘অসাবধানতার কারণে’ ডেইলি স্টারে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু নূরুল কবীর সেটি ফাঁস করে দেন যে, মান্নান ভুঁইয়া পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর নানামুখী চাপে এমন অবস্থা সৃষ্টি হলো, পদত্যাগের কথা ভুলে গিয়ে মান্নান ভুঁইয়াকে রিপোর্টের প্রতিবাদ করতে হলো।…
* ২১তম এই গ্রন্থ প্রকাশ করেছে সূচীপত্র, প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি ।
দাম ৩০০ টাকা, ১০ ডলার ও ৭ পাউন্ড।
*****************************************************************
ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস, ' প্রান্ত-প্রাচীন' থেকে উদ্ধৃতি
অভিশপ্ত সতীদাহ প্রথার পক্ষে সহমরণ-অনুমরণে
একশ্রেণীর ব্রাম্মণ তখন প্ররোচনা দিত এভাবে
বুঝলে মা, আর দেরি করো না। স্বর্গ এসে তোমার দুয়ারে কড়া নাড়ছে মা। ফিরিয়ে দিয়ে মহাপাতকী হয়ো না মা। সতী হলেই এক মন্বন্তরকাল স্বামীর সঙ্গে স্বর্গবাস। মানুষের এক বছর দেবতার একদিন। দেবতার দশ বছর মনুর এক অহোরাত্র মাত্র। প্রত্যেক মনুর এক এক মন্বন্তর তেতাল্লিশ লাখ বিশ হাজার বছর। ভেবে দেখ। তৈরি হও, তোমার অনেক কাজ।
কি কাজ
¯œান করে জমকালো সাজে সাজতে হবে। পায়ে দিতে হবে আলতা। তোমার সব গহনা পরে নেবে, কারো জন্য রেখে যাবে না।যেগুলি পিতার বাড়ি থেকে পেয়েছো সেগুলিও পরবে। তারপর, চাল কলায় স্বামীর জন্য ভোগ তৈরি করবে। যেহেতু স্বামীর শব নিরুদ্দেশ বলে অনুমরণে যাচ্ছো তুমি,স্বামীর ব্যবহৃত ধূতি, পাগড়ি, খরম, প্রভৃতির ওপরের পোশাকাদিতে রাখবে ভোগ। তারপর সেগুলির ওপর গঙ্গাজল ছিটিয়ে চিতার চারপাশে ঘুরবে। তারপর আরোহন করবে চিতায়...
প্রান্ত-প্রাচীন-এ সতীদাহের বিরুদ্ধে সংগ্রামও করেন আলোকিত ব্রাম্মণেরা। যেমন শ্রী ধর..
আমার ১৯তম গ্রন্থ প্রকাশ করেছিল গতিধারা।
প্রচ্ছদ : সিকদার আবুল বাশার।
মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
উপন্যাস, ' আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট' থেকে উদ্ধৃতি
উপন্যাসে যুদ্ধে সন্তান হারানো এক আমেরিকান পিতার আর্তনাদ এ রকম
Òবুঝলেন তো জনাব প্রেসিডেন্ট, কিছু হক কথা বলার ন্যায্য অধিকার আমার অবশ্যই আছে। সর্বস্ব হারিয়ে আমি এই অধিকার অর্জন করেছি। আমার সুঠাম-রূপবান পুত্রটিকে দিয়েছিলাম দেশ রক্ষার কাজে। তাকে আপনারা অপ্রয়োজনীয় এক যুদ্ধের নামে কোথায় কোন এক দেশে পাঠিয়ে হত্যার মুখে ঠেলে দিলেন।
Òযুদ্ধ চাষ করে রক্ত, অশ্রু, বেদনা আর পাপ। আমেরিকার মতো মেধা-মনীষাসম্পন্ন একটি জাতি কেন বার বার নিষ্প্রয়োজনীয় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে বুঝতে পারি না আমি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমেরিকা চাইলে গোটা পৃথিবীকে ধনে-সুখে-স্বস্তিতে স্বর্গের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। কত রোগ-শোক পৃথিবী থেকে একেবারে নির্মূল করে দিতে পারে Ñ কলেরা-বসন্তের মতো। আমেরিকা গোটা সভ্যতার কথা ভাবলে কতোই না ভালো হতো। কিন্তু তা তারা করছে না, বরং কিছু দেশে তারা তৈরি করছে নরকের দরজা। কোথাও যুদ্ধ না পেলে আমরা ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করি। কোনো মানে হয় জনাব প্রেসিডেন্ট? আমাদের বক্তব্য পরিস্কার, বেজড্ অন এ লাই, এ ওয়ার শুড নেভার বিন হ্যাপেন্ড। …হেইট ক্যান নট ড্রাইভ-আউট হেইট। ওনলি লাভ ক্যান ডু দ্যাট। হেইট মাল্টিপ্লাইস হেইট। ওয়ার শুড নট ডিজাইন্ড বাই ন্যাচার, ইট ইজ ইনস্টিড অব সাম, বাট নট হিউম্যান কালচার।…
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিল বিদ্যাপ্রকাশ।
প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।
মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
কলামগ্রন্থ : ' যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন' থেকে উদ্ধৃতি
Òক্যু-দেতা সফল হলে বিপ্লব, আর ব্যর্থ হলে হয় ‘মিউটিনি, ষড়যন্ত্র। ভিক্টোরী হ্যাজ ম্যানি ফাদার্স বাট ডিফিট ইজ অরফ্যান। ওয়ান ইলেভেনের নায়করা মঞ্চে এসেছিলেন কোনো রুটিন-ওয়ার্ক না করে। এ জন্য সিলেবাসও ঠিক করতে পারেননি। অনেকগুলি ফ্রন্ট তারা এক সাথে খুলে নাস্তানাবুদ হয়েছেন। দশ কেজির ব্যাগ হাতে বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনেছেন চল্লিশ কেজি। তাদের হটকারিতায় বাংলাদেশের বহু ভালো মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হয়তো তাদের ইচ্ছা এমন ছিল না। বাংলাদেশের রাজনীকিত ও ব্যবসায়ীরা কতোটা চতুর এ ব্যাপারেও তাদের ধারণা ছিলো বলে মনে হয় না। তবে তাদের আমলে মানুষ স্বস্তিতে না থাকলেও শান্তিতে ছিল সন্দেহ নেই। হরতাল-চাঁদাবাজী-মাস্তানী ছিল না। ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাট-চুরি-ডাকাতি কমেছিল উল্লেখযোগ্য হারে।
* ২১তম এই গ্রন্থ প্রকাশ করেছে সূচীপত্র, প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি ।
দাম ৩০০ টাকা, ১০ ডলার ও ৭ পাউন্ড।
*****************************************************************
কলামগ্রন্থ : 'যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন' থেকে উদ্ধৃতি
আবদুল মান্নান ভুঁইয়াকে পঁচিশ বছরে সবচেয়ে বিষন্ন দেখেছি দুই দিন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে মন্ত্রিসভা গঠন করার পর তাকে দেখেছি কেমন যেন বিমর্ষ, অন্যমনস্ক। তার বাসায় এক সময় সবাই চলে যাওয়ার পর দু’জন মুখোমুখি হই। অভিনন্দন জানিয়ে কুশল জিজ্ঞেস করি। জবাবে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে এলাম ওদের দুই গাড়িতে। কিছুক্ষণ পর আরো বিষন্ন কন্ঠে বললেন, দেখবেন এই জামায়াত বিএনপির জন্য একদিন বড় লায়াবিলিটি হয়ে উঠবে। তারপর যেন ঘোরের মধ্যেই উঠে দাঁড়ালেন। চলে গেলেন বেড রুমে। ফিরে এলাম আমি। কিছু বলিনি। কারণ তার মনোস্তত্ব আমি কিছুটা বুঝতাম, বুঝতাম কখন প্রশ্ন করতে হয়, কখন উত্তর দিতে হয় কিংবা কখন নিশ্চুপ থাকতে হয়। এ নিয়ে পরবর্তীকালে আমাদের মধ্যে অনেক কথা হয়েছে। তখন আমিও অসহায়ের মতো তাকিয়ে দেখছিলাম, মধ্যপন্থী গণতাকিন্ত্রক দল বিএনপিকে কীভাবে রাজপথ থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কানাগলিতে; এবং সেখান থেকে কসাইখানার দিকে।
*প্রকাশ করেছে সূচীপত্র, প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি ।
দাম ৩০০ টাকা, ১০ ডলার ও ৭ পাউন্ড।
*****************************************************************
কলামগ্রন্থ : 'যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন' থেকে উদ্ধৃতি
ওয়ান ইলেভেন-সংস্কার মূলত: ব্যর্থ করে দেন বেগম খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনা দেশ থেকে বের হয়েই গিয়েছিলেন। খালেদা জিয়াকেও বের করে দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। তিনি বের হয়ে গেলে শেখ হামিনাও আর দেশে ঢুকতে পারতেন না। খালেদা জিয়ার তৎকালীন বিজয়ের বেনিফিশিয়ারি হয়েছেন শেখ হাসিনা। খালেদা জিয়া টিকে যাচ্ছেন দেখে শেখ হাসিনা মরিয়া হয়ে দেশে ঢোকেন। না ঢুকতে পারলে তখনই শেখ হাসিনার রাজনীতির কবর হয়ে যেত। ওয়ান ইলেভেন ওয়ালারা শেখ হাসিনাকে দেশে ডুকতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা কওে ব্যর্থ হন।
অন্যদিকে দেশে টিকে যাওয়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য। তাকে জেলে যেতে হয়েছে। তারেক রহমানের ওপর নেমে এসেছে ভয়ঙ্কর নির্যাতন ও নির্বাসন। আরাফাত রহমানও নিগৃহীত ও নির্বাসিত হন। পরিবারটি ভেঙ্গে তচনচ হয়ে গেছে। খালেদা জিয়ার নিকট-আত্মীয়দের অনেকেও নির্যাতন-হয়রানীর শিকার হতে হয়েছেন। বিএনপির অসংখ্যক নেতাকর্মীকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। সে তুলনায় কিছুদিন জেলে থাকা ছাড়া শেখ হাসিনা বা তার পরিবারকে কোনে বিপদে পড়তে হয়নি। এরপরও ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ মরার ওপর খাড়ার ঘা’র মতো বিএনপির ওপর ভয়ঙ্কর ভাবে চড়াও হয়ে দলটিকে নির্মূল করতে চাইছে। রাজনীতির এই নির্দয়তা খুবই মর্মান্তিক।
*প্রকাশ করেছে সূচীপত্র, প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি ।
দাম ৩০০ টাকা, ১০ ডলার ও ৭ পাউন্ড।
*****************************************************************
কলামগ্রন্থ : 'যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন' থেকে উদ্ধৃতি
একদিন সকালে তার বাসায় গিয়ে দেখি খুব চিন্তিত মুখে বসে আছেন। কথা শুরুর পর তিনি বললেন, আমাকে কিছু লোক খুব বিপদে ফেলেছে। আমাদের শতাধিক এক্স-এমপিকে ওয়ান ইলেভেন ওয়ালারাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ফেরদৌস কোরাইশির পিডিএফ পার্টিতে যোগ দিতে। কিন্তু তারা সবাই একই কথা বলে এসেছেন যে, ফেরদৌস কোরাইশীকে দিয়ে পার্টি হবে না, বরং মান্নান ভুঁইয়া ও আওয়ামী লীগের আবদুল জলিলকে সামনে রেখে কিছু করতে পারেন কি না দেখেন। ডিজিএফআই এখন সে লাইনে এগুচ্ছে।
*প্রকাশ করেছে সূচীপত্র, প্রচ্ছদ এঁকেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি ।
দাম ৩০০ টাকা, ১০ ডলার ও ৭ পাউন্ড।
*****************************************************************
উপন্যাস, ' আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট' থেকে উদ্ধৃতি
একজন মানুষ বিভ্রমে কথাবার্তা বলে এলিয়েনের সঙ্গে
আমি তোমাকে বাংলাদেশের ব্যাপারে অনুরোধ করেছিলাম।
ও, হ্যাঁ। বলতে ভুলেই গেছি। দেখো, সেই জায়গাটা সম্পর্কে আমি কনফিউজড। সেখানে কি এখনও দাসপ্রথা আছে?
না তো? এ কথা কেন বলছো?
সে সমাজ কি নারী শাসিত?
নাতো।
কিন্তু আমাদের পর্যবেক্ষণ সেরকম কিছুই তুলে ধরছে। দেখতে পাচ্ছি কয়েকজন নারী, তাদের মধ্যে আবার বনিবনা নেই, তারা যা বলছে তাদের সমিতির লোকেরা দাসের মতো পালন করছে। মানুষ হত্যার কথা বললে তাও করছে বা ভাড়াটে খুনী দিয়ে করাচ্ছে।
না না, তুমি ভুল করছে। ওরা নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় যায়।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে ওরা কেন? কেন তোমরা তোমাদের নেতাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করে তাদের অপভ্রংশকে মাথায় নিয়ে নৃত্য করছো? আমাদের লজিক এখানে অসহায়। আবার দেখছি এই অপভ্রংশ-সকল অসংখ্য অপোগন্ড তৈরি করে চলেছে। আমি ওদের ভবিষ্যৎ ভাল দেখছি না। হতে পারে এটা তাদের দাহকাল।
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিল বিদ্যাপ্রকাশ।
প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
উপন্যাস, 'আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট' থেকে উদ্ধৃতি
এক বাংলাদেশির সঙ্গে আমেরিকান পুলিশের কথাবার্তা
তুমি কি জান, মিথ্যা শনাক্ত করিবার জন্য আমাদের উন্নত প্রযুক্তি রহিয়াছে? মিথ্যা ধরা পড়িলে শাস্তি অধিকতর হইবে।
আমাকে সেই প্রযুক্তির নিকট লইয়া চল। অযথা সময় নষ্ট করিও না। এইখানে সময় অতীব মূল্যবান। নহে কি? ভাল, তোমরা কি আমাকে রিমান্ডে লইবে?
না তো! ইহা কেন মনে হইল।
আমাদের দেশে রিমান্ড নামক একটি বিভীষিকা রহিয়াছে। সেইখানে নিলে মানুষ যাহা করে তাহা যেমন স্বীকার করে যাহা করে না তাহাও স্বীকার করে।
অতীব আশ্চর্য হইলাম। উদাহরণসহ তুলিয়া ধর।
ধর রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হইল, জুলিয়াস সিজারকে কে হত্যা করিয়াছে? আমি উত্তর দিব, কেন, আমি, আমিই জুলিয়াস সিজারকে হত্যা করিয়াছি। ব্রুটাস নহে। যদি জিজ্ঞাসা করে গান্ধীকে কে মারিল? উত্তর দিব আমিই মারিয়াছি। নাথুরাম গডসে তো আমার অনেক পশ্চাতে ছিল।
কিন্তু তখন তো তোমার জন্মও হয় নাই।
না হইলে কি হইবে, প্যাদানির চোটে এসব হিতাহিত জ্ঞান রহিত হয়।
তুমি কি কখনো রিমান্ড মোকাবেলা করিয়াছো?
করিয়াছি।
কেন নেওয়া হইয়াছিল?
বাংলাদেশে রিমান্ডে নেওয়ার নিমিত্তে কিছু করিতে হয় না। বিরোধী দলে থাকিলেই হয়।
কোন কিসিমের রাজনীতি করিতে?
সেক্যুলার টাইপের।
শুরু করিয়াছিলে রেড টাইপের রাজনীতি দিয়া?
হ্যাঁ, কি করিয়া জানিলে।
আমাদের জানিতে হয়। তোমার সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানিয়াছি।
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিল বিদ্যাপ্রকাশ।
প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।
মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
উপন্যাস, ' আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট' থেকে উদ্ধৃতি
ওরা প্রায়শই সংবিধান ঠিকা নেন। কিন্তু মানুষ তো তাদের কাছে সংবিধান ঠিকা দেয়নি। সংবিধান মানুষের জন্য, মানুষ সংবিধানের জন্য নয়- এটাও কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে।
একটি উদারহণ দেই, এরশাদ-বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের দিনই জনতা তার হাত থেকে সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। কেড়ে নেয়ার সপ্তাহ খানেক পর এরশাদ সাহাবুদ্দীন সাহেবের কাছে কাগুজেভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। অর্থাৎ সেদিন এরশাদ তা-ই হস্তান্তর করেন যা তার কাছে ছিল না। ব্যাপারটা হাস্যকর হলেও সংবিধানের প্রয়োজনে সেটা প্রয়োজনীয় ছিল। ...মাঝখানের সাতদিন সংবিধান এই বলে চিৎকার করছিল যে, আমাকে এডজাস্ট করো, আমাকে এডজাস্ট করো।
আরেকটি উদাহরণও দেয়া যায়, ১৯৯৬ সালের ২৫ মার্চ রাতে আমরা যাকে কালরাত বলে থাকি, বিএনপিওয়ালারা সারা রাত জেগে, হাই তুলতে তুলতে সংবিধান সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছিলেন - এটাও কিন্তু জনতার চাপে।
অতএব, সংবিধান ঠিকা নেওয়ার ভাবটা না ধরলেই ভাল হতো।
কিন্তু সেটা হবার নয়। কারণ, বাংলাদেশের এখনকার রাজনীতিকরা সব সময়ই চালাকির মধ্যে থাকেন। চালাকি করেই করে-কেটে খান। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তাদের এই চালাকির জন্য মানুষের জানমাল বিপন্ন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ বিপন্ন হয়ে পড়ে।
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিল বিদ্যাপ্রকাশ।
প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
উপন্যাস, ' আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট' থেকে উদ্ধৃতি
তা হলে কি মানুষের সহসা মুক্তি নেই।
সহসা নেই। কারণ, এই চালাকেরা সারাদেশে কয়েক হাজার খাদকগোষ্ঠী তৈরি করেছে, এসিস্ট্যান্ট চালাক- এসোসিয়েট চালাক সৃষ্টি করেছে। নিবেদিত রাজনীতিকরা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। তাই সহসাই মুক্তি পাচ্ছে না বাংলাদেশের মানুষ। এটা বাংলাদেশের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, আমাদের যোগ্য নেতাদের আমরা খুঁজে খুঁজে হত্যা করেছি, আমাদের বীরদের মেরে সাফ করেছি। এখন আছে নেতৃত্ব ও বীরত্বের অবশিষ্ট সমূহ- সামন্ত অবশেষের মতো।
এরা কি আরেকটু পরিশীলিত হতে পারে?
না, এরা মহৎ হয়ে জন্মায়নি, মহৎ হওয়ার চেষ্টাও করেনি। তাদের ওপর মহত্ব আরোপ করেছে একদল ফেরুপাল। ওতেই তাদের লাভ। কারণ মেকি মহৎদের বাজারদর ভাল।
তাহলে নেতৃত্বের স্বরূপটাকে আধুনিক ভাষায় কি বলবেন?
নব্য-জমিদার ও নয়া-পৌত্তলিক। ওরা তাদের দলের নেতাদের মনে করে কর্মচারী এবং জনগণকে মনে করে প্রজা। ওদের দলে গণতন্ত্র ফাই ফরমাস খাটে পরিবারতন্ত্রের।
ওদের দলে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে না বলছেন?
বিলক্ষণ না, ওরা দলের শীর্ষ পদে পরিবারের বাইরে কাউকেই বসাবে না। পরিবারে কাউকে খুঁজে না পাওয়া গেলে প্রয়োজনে কাজের বুয়াকে বসাবে।
কিন্তু মাঝে মাঝে যে বলে দলে নতুন নেতৃত্ব আনা হবে?
সেটাও ওদের পরিবার থেকেই এবং ধরে রাখেন সেটাও তাদের মনের আসল কথা নয়। নতুনের কথা বলেন তারা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন বলে। আসলে কবরে ঠ্যাং যাওয়ার আগে তাদেও দলে পরিবর্তনের আশা নেই।
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিল বিদ্যাপ্রকাশ।
প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।
*****************************************************************
ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস, ' প্রান্ত-প্রাচীন' থেকে উদ্ধৃতি
“ এখন ক্ষুদ্র মৎস্যকে বৃহৎ মৎস্য ভক্ষণ করবে, তাকে ভক্ষণ করবে বৃহত্তর মৎস্য, তাকে গিলে খাবে বৃহত্তম। এর নাম মাৎস্যন্যায়।”
প্রান্ত-প্রাচীন শেষ হয়েছে এই বাক্যটি দিয়ে।
আজ থেকে সাড়ে তের শ বছর আগে গৌড়-বরেন্দ্র-মগধ-বঙ্গে শুরু হয়েছিল শতবর্ষব্যাপী নৈরাজ্য, যাকে বলা হয় মাৎস্যন্যায়।মাৎস্যন্যায়ের প্রাক-অবস্থার সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের অনেক মিল।
সপ্তম শতাব্দীর ত্রিশের দশকের শেষের দিকের প্রাক-মাৎস্যন্যায় সময়টি প্রান্ত-প্রাচীন উপন্যাসের চলতি খন্ডের কালপরিধি।এতে ইতিহাসকে আশ্রয় করা হয়েছে, ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর অভিঘাত আছে, সে-সব অভিঘাতে জনজীবনের ওপর সৃষ্ট প্রভাবের চিত্র আছে। তবে রাজা-রাজপুরুষ-রাজদরবার বা রাজঅন্তপুরের ধারাবাহিক জীবনের বর্ণনা অনুপস্থিত। আমাদের প্রাচীন ইতিহাসে যারা উপেক্ষিত সেই সাধারণ মানুষ, সম্ভাবনাময় মানুষ, সৃজনশীল মানুষ, অনুসন্ধিৎসু-দ্রোহী মানুষই আমার ১৯তম গ্রন্থ প্রান্ত-প্রাচীন-এর প্রধান অবলম্বন।
প্রকাশ করেছিল গতিধারা।
প্রচ্ছদ : সিকদার আবুল বাশার। মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
উপন্যাস, ' আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট' থেকে উদ্ধৃতি
“আমাদের আজকের যে বাংলাদেশ, তারও রয়েছে অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়ার সুমহান ঐতিহ্য। অহিংস ধর্মের অনুসারী বৌদ্ধদের ওপর প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন স্থানে যখন হত্যাযজ্ঞ ও আক্রমণ শুরু হয় তখন বৌদ্ধদের বিরাট অংশ আশ্রয় নেয় পুন্ড্র-গৌড়-বরেন্দ্র,-বঙ্গ-সমতট-হরিকলে, যার সমন্বিত রূপ এখনকার বাংলাদেশ। বৌদ্ধ ধর্ম প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে যখন বিলুপ্ত-প্রায় তখন ভারতবর্ষের পূর্ব প্রান্তের আমাদের অঞ্চলে সগৌরবে বিরাজিত ছিল। শাসক হিসেবে পাল-খড়গদের কথা সুবিদিত। পরবর্তীকালের তুর্কি-পার্সী-পাঠান-মোগলদের আশ্রয় নেয়ার পরিসংখ্যানও কম নয়। অন্যদিকে আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে আজকের উপজাতিরা বিতাড়িত হয়ে এসেছিল বার্মা-আরাকান থেকে।
“আমরা মূলত সেই ইমিগ্র্যান্ট ঐতিহ্য থেকেই আরেকটি ইমিগ্র্যান্ট ঐতিহ্যে এসেছি। এ যাত্রা শুধু একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে নয়, একটি ঐতিহ্য থেকে আরেকটি ঐতিহ্যে যাত্রা। বাংলাদেশের দারিদ্র্যের ইতিহাস দেড়-দু’ শ’ বছরের মাত্র। এর আগের হাজার-হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধি ও অভিবাসী-বাৎসল্যের। আমাদের সভ্যতা যদি কারো জন্য বুক বিছিয়ে দিতে পারে, অন্য সভ্যতা কেন আমাদের জন্য বুক বিছিয়ে দেবে না?”
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিল বিদ্যাপ্রকাশ।
প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।
*****************************************************************
ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস, 'প্রান্ত-প্রাচীন' থেকে উদ্ধৃতি
আজ থেকে সাড়ে তের শ বছর আগে গৌড়-বরেন্দ্র-মগধ-বঙ্গে শুরু হয়েছিল শতবর্ষব্যাপী নৈরাজ্য, যাকে বলা হয় মাৎস্যন্যায়।মাৎস্যন্যায়ের প্রাক-অবস্থার সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের অনেক মিল দেখা যাচ্ছে।
মাৎস্যন্যায়ের ঠিক প্রাক-অবস্থা, অর্থাৎ শশাঙ্কের মৃত্যুর অল্প পরেই কী ভাবে শুরু হয়েছিল সেই অন্ধকার সময় তা আমি যথা সম্ভব তুলে ধরেছিলাম আমার ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস প্রান্ত-প্রাচীন-এ।
প্রকাশ করেছিল গতিধারা।
প্রচ্ছদ : সিকদার আবুল বাশার। মূল্য : ২০০ টাকা : ১৫ ডলার।