প্রবাদ-প্রবচন-গণছড়া
এই বিভাগে প্রথমত আমার বিভিন্ন লেখার চুম্বকাংশ থাকবে, যাকে সাধারণত ইনসেট বা হাইলাইটস্ বলা হয়। ক্রমান্বয়ে সংখ্যা বাড়াব। অল্প কয়েকটি আছে এক বা দুই লাইনের, অনেকটা প্রবাদ-প্রবচনের মতো। এগুলিতে সূত্র উল্লেখ করছি না দুই কারণে; এক, কতগুলি আমার কোনো লেখা থেকে নেওয়া নয়, ফেসবুক স্ট্যাটাস বা বিচ্ছিন্ন, কিন্তু মৌলিক। কয়েকটি লেখা থেকে নিলেও সূত্র উল্লেখ করছি না দা'য়ের চেয়ে আছার বড় হওয়ায় বিদঘুটে দেখাবে বলে। বাকীগুলিতে সংক্ষেপে সূত্রের কথা উল্লেখ করবো। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে লম্বা উদ্ধৃতি ছোট করেছি। তবে সূত্রের উক্ত-অনুক্ত দুই অংশই যে মৌলিক এতে আমার সন্দেহ নেই। আমার উদ্ধৃতির সঙ্গে আমার আগে প্রকাশিত হওয়া কারো উদ্ধৃতির মিল কারো চোখে পড়লে অনুগ্রহ করে আমাকে জানাবার অনুরোধ করছি। সে-ক্ষেত্রে আমারটি প্রত্যাহার করে নেব। কাকতালীয় বা দুইজনের একধারার চিন্তা নতুন কিছু নয়।
সবগুলিই সামাজিক মাধ্যমেই বইয়ের প্রচার করবো। এতে আমার বই সম্পর্কে অনেকের আগ্রহ বাড়বে বলে ধারণা। বইয়ের পাঠক বাড়াতে যে-কোনো প্রচারণায় আমার দ্বিধা-কুন্ঠা নেই। এ কাজ আমি আগেও করেছি এবং এজন্য কেউ আমাকে মন্দ কিছু বলেননি। নিজের ঢোল নিজে পেটানো সবচেয়ে নিরাপদ। গুরুজনেরা বলে গেছেন, অন্যকে পেটাতে দিলে কেউ হয়তো ঢোলে এমন আস্তে কাঠি ঠুকবে যে, কেউ শুনতেই পাবে না। আবার কেউ হয়তো এমন জোরে বারি মারবে যে, ঢোলটাই ফেটে যাবে।
লেখা ও তার অর্জন শুদ্ধতম কর্ম ও অর্জনগুলির অন্যতম। আমার কাছে বই নিয়ে গর্ব ও তার প্রচার সব সময়ই স্বাগতিক।
প্রবাদ-প্রবচন হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-পর্ব
১. একজন সভ্য মানুষের চোখে সবচেয়ে মর্মান্তিক দৃশ্য হচ্ছে খাদ্যের জন্য ক্ষুধার্ত শিশুদের ছোটাছুটি।
২. যে-সব গুণাবলী অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করে, পৃথিবীর বহু মানুষ এখনও সেই গুণাবলী অর্জন করতে পারেনি, বিশেষ করে চতুর ও শক্তিমানেরা।
৩. মানবজাতির মহত্তম দিক হচ্ছে নির্বিশেষ মানুষের কল্যাণে চিন্তা ও কাজ করা, আর সবচেয়ে বড় নির্বুদ্ধিতা হচ্ছে যুদ্ধ।
৪. যুদ্ধ বা যে-কোনো আধিপত্য বিস্তারের নামে দুঃখের চাষ করতে যেও না; গেলে সেচ দিতে হবে অশ্রু ও রক্ত দিয়ে, মই বানাতে হবে ভাঙা পাঁজর দিয়ে, নিড়ানিতে উঠে আসবে মনস্তাপ এবং এর ফসল অবেলায় ডেকে আনবে মৃত্যু।
৫. গৌতম বুদ্ধ ছিলেন পৃথিবীর প্রধান যুদ্ধ-বিমুখ ও রক্তপাত-বিরোধী মানুষ, কিন্তু আলেক্সান্ডারের চেয়েও অনেক বেশি সাহসী।
৬. প্রাজ্ঞরাই আলোচনাকে নিয়ামক মনে করেন, কারণ, যুদ্ধের পরও আলোচনায়ই বসতে হয়।
৭. চাপিয়ে দেওয়ার কারণে প্রবলের বিরুদ্ধেও দুর্বলের যুদ্ধ বীরত্বপূর্ণ, কারণ কোনো কোনো যুদ্ধ করতে হয় সভ্যতার সম্মান রক্ষার জন্যও।
৮. প্রতিটি মানুষের জীবনই হচ্ছে কতগুলি নাটের সমাহার। যে-সব নাট আমৃত্যু যুৎসই বল্টু খুঁজে বেড়ায়। কেউ পুরোপুরি পায়, কেউ আংশিক পায়। কেউ দ্রুত পায়, কেউ দেরিতে পায়। আবার কেউ-কেউ একেবারেই খুঁজে পায় না।
৯. যে রীতিনীতি মানে না তার থেকে এক শ' হাত দূরে থাকো, যে যুক্তি মানে না তার থেকে দূরে থাকবে এক শ' মাইল, আর যে প্রকৃতির-প্রতিশোধ বা কর্মফলে বিশ্বাস করে না, তার সঙ্গে যেন তোমার দেখা না হয়।
১০. কোনো ধর্মই গণহত্যা করতে যায় না। কোনো ধর্মই নির্দোষ-নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে বলে না। যারা এ ধরনের হত্যাকান্ড ঘটায় তারা খুনি, যে-ধরনের খুনি সব ধর্মেই আছে।
১১. যারা যে-কোনো বিশ্বাস বা দর্শনের নামে উন্মাদনা সৃষ্টি করতে চায়, বুঝতে হবে তাদের মানসিক সমস্যা আছে। কোনো সুস্থ মানুষ অন্যকে উন্মাদ হতে বলে না।
১২. একটি হত্যাকান্ড আরো হত্যাকান্ড ডেকে আনে, অথবা ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডটি পূর্বের কোনো হত্যাকান্ডেরই জের।
১৩. ধার্মিকেরা আলোকিত, ধর্ম-ব্যবসায়ীরা অলস ও ফেরেববাজ এবং ধর্মান্ধরা ভয়ঙ্করতম।
১৪. সনাতন ধর্মের প্রবাদ - পুরুষ ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বলেছেন, ‘আমি ধর্মবণিক নহি', আর ধর্মবণিকেরা বলে, ‘আমরাই যুধিষ্ঠির।'
১৫. যে বিবেকের শাসন উপেক্ষা করে, সে অন্যসব শাসন-অনুশাসন মুহূর্তেই জলাঞ্জলি দিতে পারে।
১৬. যারা নিজেদের সীমান্ত সুরক্ষিত করে অন্যের সীমান্ত লংঘন করে, বুঝতে হবে এই পৃথিবীকে তাদের আর দেওয়ার মতো কিছু নেই - দুঃখ ছাড়া।
১৭. যে নিয়মিত ও দ্রুত হাঁটে, বহু রোগ তার পায়ের তলায় চাপা পড়ে মারা যায়।
১৮. তেল বেশি খেলে দেহধারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সবল হয় রোগ।
১৯. কারো কাছে সহায়তা চাওয়াই যথেষ্ট নয়, তা নিতেও জানতে হয়।
২০. জেনে-শুনে যানবাহন বা গৃহে আগুন লাগিয়ে যারা মানুষকে শিককাবাব বানায়, তাদের হৃদয় কি দিয়ে তৈরী?
২১. জীবিকাকে বেডরুম পর্যন্ত ঢুকতে দিলে শান্তি মরণ-ঘুমে চলে যায়।
২২. কোথায় গিয়ে থামতে হয়, সেই কথাটি জানতে হয়।
২৩. অতি দ্রুত ছুটতে গিয়ে দম নিতে ভুলে যেও না যেন!
২৪. অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা হচ্ছে বেতার-টিভিতে নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে যন্ত্রসঙ্গীত বাজিয়ে শোনানোর মতো।
২৫. যদি সামর্থ থাকে তাহলে যে-কোনো সমস্যার সমাধান অর্থ দিয়ে কিনে ফেলো। কারণ, এই পদ্ধতিই সবচেয়ে সস্তা ও স্বাস্থ্যকর।
২৬. আইন আর কতোটুকু খোঁজে, মিডিয়া আর কতোটুকু লেখে, । কতো সত্যই না রয়ে যায় আড়ালে।
২৭. স্তুতি বা নিন্দা - ইতিহাস কোনোটাকেই গ্রহণ করে না। স্তাবক বা নিন্দুকেরা যা লেখে সেটা ইতিহাস নয়।
২৮. রাজনীতিতে চতুরদের কাছে নির্বোধদের বাজার-দর বেশি।
২৯. বহু রাজনীতিক আছে যারা ক্ষমতায় যাওয়া বা উপরে ওঠার জন্য সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করে মানুষের লাশ। সেই সিড়িকে আলপনা করে রক্ত দিয়ে। শিশুরা যেমন ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করে, তেমনি এ-সব রাজনীতিকও লাশের জন্য অপেক্ষা করে।
৩০. দার্শনিকভাবে যারা জয়ী, নিত্যদিনের ক্ষুদ্র পরাজয় তারা ধর্তব্যে আনেন না। যদি আনতেন, এই জীবন-জগৎ বঞ্চিত হতো অনেক মহৎ অর্জন থেকে।
সূত্রের উল্লেখ শুরু
৩১. পারিবারিক পাঠাগার মানে আলোকিত পরিবার। বইয়ের জন্য আপনার সংসারে একটু জায়গা ও বাজেট বরাদ্দ রাখুন। গ্রন্থের সব ধরনের বিজ্ঞাপন শেয়ার করুন।
উৎস : বই নিয়ে কথা আছে বৈকি : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৩২. আমাদেরকে কখনো না কখনো, কোথাও না কোথাও থেকে অনেক কিছুই নতুন করে শুরু করতে হবে।
উৎস : ডিজিটাল মূর্খতা ও এনালগ চালাকির কথা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৩৩. মন্ত্রিসভার আজীবন সদস্য থাকার নিয়ম বাংলাদেশে নেই। অথচ সে চেষ্টাই করেন নেতা-নেত্রীরা ।
উৎস : ডিজিটাল মূর্খতা ও এনালগ চালাকির কথা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৩৪. রেডিওর তথাকথিত আর, জে-দের বাংলা শুনলে মনে হয়, নুরুল আমিন-নাজিমুদ্দিন গংদের প্রেতাত্মারা আবার উঠে এসেছে।
উৎস : প্রবাসে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৩৫. স্বার্থপরদের অনেক সুবিধে। কাউকে কিছু দিতে হয় না। সমালোচনা প্রচুর করা যায়, কিন্তু সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয় কমই। সবচেয়ে বড় সুবিধে হচ্ছে, স্বার্থপরদের কাছে কেউ কিছু আশা করে না।
ফেসবুকের স্ট্যাটাস থেকে।
৩৬. বহু বিত্তবান তাদের ঘরে কুকুর-বিড়ালের জন্য জায়গা এবং বরাদ্দ রাখলেও বইয়ের জন্য রাখেন না। চারদিকে বই-প্রতিবন্ধীদেরই জয়জয়কার।
ফেসবুকের স্ট্যাটাস থেকে।
৩৭. বাংলাদেশে বসবাসরত জনগণ ও প্রবাসীরা অল্পে তুষ্ট। তারা সরকারের কাছে তেমন কিছুই চান না। তবে এই গ্যারান্টি চান, তাদের শ্রমে-ঘামে অর্জিত সম্পদ ও সম্মান যেন কেউ কেড়ে না নেয়। তাদের জীবন-জীবিকা যেন নিরাপদ থাকে।
উৎস : ইতিহাসের সঙ্গে রসিকতার খেসারত : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৩৮. বিশ্ব-ব্রম্মান্ডের তুলনায় একটি বালুর চেয়েও আকৃতিতে ছোট আমাদের এই মানবগ্রহ ছাড়া আর কি কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব নেই। সবটাই কি শূন্য। প্রকৃতির এমন অপচয় তো হওয়ার কথা নয়।
উৎস : মানব-মনীষা কলিং-বেল টিপছে মহাকাশে : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৩৯. একজন মানুষ অবশ্যই নির্দলীয় থাকতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজে বিদ্যমান বহুমুখি দ্বন্দ্বের কারণে নিরপেক্ষ থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কোনো ইস্যুতে কেউ চুপচাপ বসে থকলেও তার নিষ্ক্রিয়তা কারো না কারো পক্ষে যাবে।
উৎস : উপন্যাস আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট।
৪০. শুধু মানুষ কেন, বুদ্ধিমান কোনো প্রাণীও তথাকথিত নিরপেক্ষ নয়। একটি কাককে হত্যা করলে অসংখ্য কাক জড়ো হয়ে বিকট স্বরে প্রতিবাদ করে। একটি পিঁপড়ে মরলে অনেক পিঁপড়ে তাকে বহন করে নিয়ে যায়। কিন্তু স্বল্পবুদ্ধির-পশু একটি গরুকে যখন জবাই করা হয় তখন আরেকটি গরু দিব্যি ঘাস খেতে থাকে।
উৎস : উপন্যাস আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট।
৪১. আর্যরা ভারতবর্ষে দাস প্রথার প্রচলন না করে তারচেয়েও জঘন্য ব্যবস্থার প্রচলন করেছিল, যার নাম জাত-পাত। দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটলেও জাত-পাতের বর্বরতা রয়েই গেল।
উৎস : প্রবাসীর কহতব্য যাহা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক ঠিকানা।
ছড়াধরনের প্রবাদ-প্রবচন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-পর্ব
ছড়াগ্রন্থ ‘পাগলা ঘোড়ার খুর’ থেকে
৪২. স্বাধীনতার মানে হলো শেকলবিহীন পা-ও,
নোঙর-ছাড়া পালতোলা ঐ উজান-ভাটির না-ও।
৪৩. সময়-কালে কতজনে কত কিছু হয়-হবে,
৪৪. সর্বকালের সেরা ওরা মুক্তিযোদ্ধার গৌরবে।
৪৫. যে-সব জায়গায় একাত্তরে উদিত হয় আল-বদর,
অভিশপ্ত সেই বাড়িঘর, অভিশপ্ত সেই পরিসর।
৪৬. একাত্তরের গ্রামে-গঞ্জে রাইফেল হাতের রাজাকার,
জন্মভূমির জাত-কলঙ্ক, মাতা-পিতার কুলাঙ্গার।
৪৭. কিছু মানুষের গজিয়েছে লেজ এবং মনোহর পুচ্ছ,
লেজ-পুচ্ছ নেড়ে-নেড়ে তারা বাকীদের করে তুচ্ছ।
৪৮. বিচার মানি, তবে কি-না, তালগাছটা আমার,
আম-ছালা সবই খালুর এবং বাগান মামার।
৪৯. ফাটা ডিমে দিয়ে তা/ নগদ চাও পাখির ছা।
হুশ হলো না এখনো/বৃথা বসে দিন গোণো।
৫০. গণতন্ত্র হো! জেগে আছো তো!
ঠিক আছে স্বাস্থ্যখানা? মন-মর্জি ভালোতো?
৫১. কি এমন দিন এলো, কি আজব দিন,
ভোট হলো গার্বেজ, প্রার্থীরা ডাস্টবিন।
৫২. দূরে থেকে তুমি কর ফান-মশকরা,
ময়দানে সে কারণে ঘুরে-ফিরে 'ওরা'।
৫৩. ফোটা চনা করে কলুষ বালতিভরা দুধ,
ভালো পেটও নষ্ট করে খানিক কুড়া-খুদ।
৫৪. কত প্রাণ ঝরে গেল কত অনাদরে,
জলচোখে ইতিহাস রেখেছে ধরে।
৫৫. সৈনিক কেন লড়ে জানে না,
সে-শুধু পালন করে হুকুমনামা।
৫৬. পাওয়ারের দর-বাও বোঝা গেলে,
অমৃতের স্বাদখানা পাবে মাকালে।
৫৭. কম্বল হয়ে গেলে উজার,
ভক্ত কোথায় পাবে পূজার।
৫৮. রক্তকে রূপ দিলে স্বর্ণেরপিন্ডে
শুধতে হয় ঋণ, সামডে, সামডে।
৫৯. কৈবর্তের নাতির দাবি, সৈয়দবংশ হই,
বসতে দিবা কই, তোমাগো তেমন চেয়ার কই?
৬০. দড়ি ছিইরা পরাণ কাইরা কইরা সর্বনাশ,
পাগলা ঘোড়ারে, কই থাইকা কই লইয়া যাস!
উদ্ধৃতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা-পর্ব
৬১. যেসব কারণে বাংলাদেশে নক্সালদের রাজনীতি ব্যর্থ হয়েছে, অভিন্ন কারণে জামায়াতে ইসলামী বা সে ধরনের দলের রাজনীতি ব্যর্থ হতে বাধ্য। কোনো উগ্র ঝোঁকসম্পন্ন রাজনীতিই বাংলাদেশে সফল হওয়ার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ সেই ধাচেরই।
উৎস : কওমী মাদ্রাসার সনদ-স্বীকৃতি ও রাজনীতির তাপ-পরিতাপ : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৬২. বাংলাদেশের মধ্যবিত্তদের অতিক্ষুদ্র অংশই বইয়ের জন্য তাদের সংসারে জায়গা ও বাজেট রাখেন। বহু পরিবারে এখনো সৃজনশীল বই মানে 'আউট' বই। তাই আমাদের মধ্যবিত্তদের মূলধারার অনেক সংসারে 'ইন' করতে পারছে না বই।
উৎস : বই নিয়ে কথা আছে বৈকি : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৬৩. বই-প্রতিবন্ধীরা উজ্জ্বল আলোর ভেতরেও অন্ধকারে ডুবে থাকেন। তাদের মনের অন্ধকার যায় না। অনেকের সন্তানকে গ্রাস করে মাদক, সন্ত্রাস প্রভৃতি। এদের বইয়ের নেশা ধরিয়ে দেওয়া গেলে ইতিহাস হতো অন্যরকম। কিন্তু অনেক অভিভাবকের সে সময় নেই। যে-ঘরে আলোকিত বই আছে, পিতামাতা বই পড়েন, তাদের সন্তানরাও বইমুখি হতে বাধ্য। বইমুখিদের সন্ত্রাসী-মাদকাসক্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম।
উৎস : বই নিয়ে কথা আছে বৈকি : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৬৪. এককালে পারিবারিক সম্বন্ধ স্থাপন করার আগে গোপনে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা হতো, সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যরা বই পড়েন কি না, ঘরে বই আছে কি না, সাংস্কৃতিক ভাবে উন্নত কি না। আজকাল অন্য কিছু দেখেন। বইয়ের অবস্থা হয়েছে বড় লোকের গরীব আত্মীয়ের মতো।
উৎস : বই নিয়ে কথা আছে বৈকি : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৬৫. বয়স ও সময়ের ফিতায় মাপলে আমাদের জীবন খুবই ছোট। তবে এই জীবনকে আমরা আগে-পিছে অনেকটাই সম্প্রসারণ করতে পারি। বিদ্যমান জীবনেই আমরা অতীতে চলে যেতে পারি ইতিহাস, ইতিহাস-আশ্রয়ী উপন্যাস, ঐতিহাসিক চিঠি ইত্যাদির ডানায় ভর করে। আবার দূর-সুদূরের ভবিষ্যতে চলে যেতে পারি কল্পবিজ্ঞান বা সায়েন্সফিকশনের রথে চড়ে। আজ যা কল্পবিজ্ঞান কাল তা বাস্তব হয়ে আসে - এতো বহুল প্রমাণিত। 'হিস্টোরি রিপিটস ইটসেল্ফ' এটাওতো মানব সভ্যতারই আপ্তবাক্য। এখানে রথ-ডানা সবইতো বই।
উৎস : বই নিয়ে কথা আছে বৈকি : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৬৬. অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃতের কবলে-পড়া রাজনীতি দিতে পারে অর্থ, ক্ষমতা ও প্রচার। মানবজীবনের এই তিনটিই মহার্ঘ-মোক্ষ। অন্যকোনো কর্মকান্ডে একসাথে এগুলি পাওয়া যায় না। এ-কারণেই সংশ্লিষ্ট দেশের রাজনীতিতে চাটুকার ও ফেরেববাজদের ভিড় বেশি।
উৎস : উপন্যাস, আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট।
৬৭. আওয়ামী লীগ চেষ্টা-তদবির ছাড়াই মিডিয়া ও বুদ্ধিবৃত্তির নজিরবিহীন সমর্থন লাভ করে চলেছে। বিকল্প না থাকাতেই এটা ঘটছে। শেখ হাসিনা ওদেরকে একটা বিকল্পহীন রামকুন্ডলির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। শেখ হাসিনার এতো বুদ্ধিমত্তা ও সাহস অতীতে আর কখনো দেখা যায়নি।
উৎস : ইতিহাসের জেরার মুখে আমাদের সৃজনকাল : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ/অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা ।
৬৮. হুমায়ূন আহমেদ তাঁর সৃজনশীলতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি ভালোবাসার পত্রই লিখে গেছেন। এই ভালোবাসা মানুষের প্রতি, মানবগ্রহের প্রতি ভালোবাসা। এই পত্রটিই আমরা কখনো দেখেছি উপন্যাসের আকারে, কখনো ছোট গল্পের আকারে, কখনো পত্রিকার কলামের আকারে, কখনো নাটক-চলচ্চিত্ররূপে। হুমায়ূন আহমেদের প্রধান গুণ, তিনি-যে মানুষকে ভালোবাসেন তা তিনি জানান্ দিতে পেরেছেন। মানুষকে বোঝাতে পেরেছেন। এ জন্যই প্রতিটি মানুষের হৃদয় জয় করা সহজ হয়েছে তাঁর ।
উৎস : হুমায়ূন আহমেদ ও আইডিয়ার জীবন : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৬৯. দুর্ভাগ্য বাংলাদেশ ও তার প্রয়াত নায়কদের। তাদের রেখে যাওয়া দলগুলি ক্রমশ দেউলিয়া হয়ে পড়ায় ক্ষমতার প্রাণ-ভোমরা হিসেবে প্রয়াত দুই নেতাকে এচ্ছত্রভাবে হাজির করতে গিয়ে দু’জনকেই গালিগালাজের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে চলেছে।
উৎস : কানু ছাড়াও আছে গীত : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৭০. বাংলাদেশের প্রধান-প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা সব সময়ই একটা চালাকির মধ্যে থাকেন। নিজের বা দলের ক্ষমতা ও স্বার্থ রক্ষায় চালাকির সুযোগ পেলে সেটা তারা ছাড়েন না। এই চালাকি তারা শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই করেন না, এটা তারা জনগণের বিরুদ্ধেও করে থাকেন। ফেসবুক বন্ধ রাখার বিষয়টিও এক ধরনের চালাকি ছিল বটে।
সূত্র : ডিজিটাল মূর্খতা ও এনালগ চালাকির কথা : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৭১. প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেটি স্বপ্ন দেখে উপজেলা শহরের বাসিন্দা হওয়ার। উপজেলায় যে আছে সে স্বপ্ন দেখে তার জেলা শহরে গিয়ে থাকার। জেলা শহরের বাসিন্দা চলে যেতে চায় রাজধানী ঢাকা শহরে। ঢাকা শহরের মানুষ আসতে চায় আমেরিকায়। আর, আমেরিকায় যারা আছে তারা যেতে চায় চাঁদে-মঙ্গলে। একদিন চাঁদে যারা বসবাস করবে, তারা ছড়িয়ে পড়তে চাইবে গ্রহ-গ্রহান্তরে। তারায়-তারায় গড়ে উঠবে মিতালী। মানুষের স্বপ্নের শেষ নেই। সম্ভাবনার শেষ নেই।
উৎস : প্রবাসীর কহতব্য যাহা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/ সাপ্তাহিক ঠিকানা
৭২. স্বৈরাচার-কবলিত দেশগুলিতে একটি রাজনৈতিক দলের জন্য কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন দলকে বাঁচানোই প্রধান লক্ষ্য হয়; কখনো কখনো এমন সময় আসে যখন প্রধান লক্ষ্য হয় দলের নেতা-কর্মীদের বাঁচিয়ে রাখা, আবার, কখনো কখনো এমন সময়ও আসে যখন নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাই হয়ে পড়ে বড় রাজনীতি।
উৎস : ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল টিভি সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে ২ মে সাপ্তাহিক আজকাল-এ টকশো-র কথামালা বিভাগে মুদ্রিত।
৭৩. সম্পন্ন মানুষেরাও কত কারণে হঠাৎ করে হয়ে পড়ে উন্মূল-উদ্বাস্তু। মানুষের অভিবাসনের শেষ নেই, ঠাঁইনাড়ারও ইতি নেই। যুদ্ধ, জীবিকা, নদী-ভাঙ্গন, ক্ষুধা ও নয়া স্বপ্নসহ কত কারণেই না মানুষ পরিত্যাগ করে তার পুরোনো ঠাঁই। যদিও মানুষ একটি ঠাঁই থেকে আরেকটিতে যায় মাত্র, আগেরটিকে ছেড়ে নয়, সেটি গেথে থাকে তার বুকে। প্রায়ই কোদাল পড়ে সেখানে।
উৎস : প্রবাসীর কহতব্য যাহা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/ সাপ্তাহিক ঠিকানা
৭৪. আজকের যে বাংলাদেশ, তারও রয়েছে অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার সুমহান ঐতিহ্য। অহিংস ধর্মের অনুসারী বৌদ্ধদের ওপর প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন স্থানে যখন হত্যাযজ্ঞ ও আক্রমণ শুরু হয় তখন বৌদ্ধদের বিরাট অংশ আশ্রয় নেয় পুন্ড্র-গৌড়-বরেন্দ্র,-বঙ্গ-সমতট-হরিকলে, যার সমন্বিত রূপ এখনকার বাংলাদেশ। বৌদ্ধ ধর্ম প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে যখন বিলুপ্ত-প্রায় তখন ভারতবর্ষের পূর্ব-প্রান্তের আমাদের অঞ্চলে সগৌরবে বিরাজিত ছিল। শাসক হিসেবে পাল-খড়গদের কথা সুবিদিত। পরবর্তীকালের তুর্কি-পার্সী-পাঠান-মোগলদের আশ্রয় নেওয়ার পরিসংখ্যানও কম নয়। অন্যদিকে আমাদের পার্বত্য অঞ্চলে আজকের উপজাতিরা বিতাড়িত হয়ে এসেছিল থাইল্যান্ড, বার্মা ও আরাকান থেকে। বাংলাদেশের আদিবাসী বলতে যাদের বোঝায় তারাও ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আসা। মূলত বাংলাদেশে বাঙালীরাই হচ্ছে প্রকৃত আদিবাসী।
উৎস : প্রবাসীর কহতব্য যাহা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/ সাপ্তাহিক ঠিকানা
৭৫. আমরা মূলত সেই ইমিগ্র্যান্ট ঐতিহ্য থেকেই আরেকটি ইমিগ্র্যান্ট ঐতিহ্যে এসেছি। এ যাত্রা শুধু একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশে নয়, একটি ঐতিহ্য থেকে আরেকটি ঐতিহ্যে যাত্রা। বাংলাদেশের দারিদ্র্যের ইতিহাস দেড়-দু' শ' বছরের মাত্র। এর আগের হাজার-হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধি ও অভিবাসী-বাৎসল্যের। বরং শাদা চামড়ার লোকেরা ভাগ্য গড়তে যেতো আমাদের ভূ-খন্ডে। আমাদের সভ্যতা যদি কারো জন্য বুক বিছিয়ে দিতে পারে, অন্য সভ্যতা কেন আমাদের জন্য বুক বিছিয়ে দেবে না?
উৎস : প্রবাসীর কহতব্য যাহা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক ঠিকানা।
৭৬. একজন প্রবাসীর জমাখরচের খাতায় ডলারের সাথে-সাথে অনেক কথাও থাকে। কিছু কথা 'কহতব্য'; কিছু কথা ' কহতব্য নহে'। আবার একজন প্রবাসী তার ভাই-বোনের কাছে যে দুঃখ-ভরা সত্যটি বলে, সেটি সে আড়াল করে তার বাবা-মায়ের কাছে। মুদ্রার একেক পিঠ একেকজনকে দেখায়। মধুর মিথ্যায় সুখে রাখতে চায় জনক-জননীদের।
উৎস : প্রবাসীর কহতব্য যাহা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক ঠিকানা।
৭৭. মানুষের দেশ আসলে কোনটি? যে ভূ-খন্ডে মানুষ জন্ম নেয়? যে ভূ-খন্ডে বসবাসের স্বপ্ন দেখে? কিংবা যে ভূ-খন্ডের সঙ্গে ব্যক্তিমানুষের আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক চৈতন্যের সাযুজ্য বেশি? এ প্রশ্নের উত্তর খুবই জটিল। কিন্তু গড়পরতা হিসেবে আমার সবসময়ই মনে হয়েছে যে, এই পৃথিবীর প্রতিইঞ্চি মাটিতে প্রতিটি মানুষের অধিকার থাকা উচিত।
উৎস : প্রবাসীর কহতব্য যাহা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক ঠিকানা।
৭৮. ‘তাহলে বর্ডারগুলির কি হবে’, এক-বিশ্বের লক্ষ্যে এই প্রশ্ন কেউ আমাকে করলে আমি বলবো, ‘বর্ডারতো আমি বানাইনি; যারা বানিয়েছেন তারা এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে পরামর্শও করেননি, করলে আমি বারণ করতাম।‘
উৎস : প্রবাসীর কহতব্য যাহা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক ঠিকানা।
৭৯. ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে কোনো বিরোধ আগেও ছিল না, এখনো নেই। এদেশের ধর্ম-প্রাণ মানুষেরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। অতি অল্প-সংখ্যক লোকই তখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে - কেউ ইসলামের নামে, কেউ স্বার্থের কারণে।
উৎস : কওমী মাদ্রাসার সনদ-স্বীকৃতি ও রাজনীতির তাপ-পরিতাপ : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৮০. জামায়াতে ইসলামী একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত হলেও বৃহৎ অর্থে এটি একটি এনজিও। চাকরি ও ঋণ দিয়ে তারা অধিকাংশ কর্মীকে বেঁধে রেখেছে। ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসাপাতি, ইসলামী হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বা কোচিং সেন্টারের গাইড বইয়ের মতো ইসলামও তাদের কাছে রাজনৈতিক হাতিয়ার ছাড়া আর কিছু নয়। সে কারণে ক্ষমতার জন্য কথিত সেকুলার আওয়ামী লীগের পদাঙ্ক অনুসরণে যেমন তাদের আপত্তি নেই, তেমনি আপত্তি নেই কথিত জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধায়। আবার মওদুদী-ওয়াহাবী জামায়াত-শিবিরের চিরবৈরী কওমী-ওয়াহাবীদের সঙ্গ পেতে বা তাদের ব্যবহার করতেও ওদের আপত্তি দেখা যাচ্ছে না। এককালের বহু কমিউনিস্ট-বামকে খাম সরবরাহেও তাদের দ্বিধা নেই।
উৎস : কওমী মাদ্রাসার সনদ-স্বীকৃতি ও রাজনীতির তাপ-পরিতাপ : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৮১. আমেরিকা স্বপ্নের দেশ, অভিবাসীর দেশ এ কথা সত্য।
কিন্তু এগুলি একদিককার সত্য।
আরেক দিকের সত্য বড় রূঢ়, বড় করুণ, বড় মর্মস্পর্শী
বিশেষ করে কোনো কোনো অভিবাসীর জন্য।
উৎস : উপন্যাস, আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট।
৮২. বাংলাদেশের মানুষ ধর্ম-প্রাণ, কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। ধর্ম ব্যবসায়ীদেরও তারা সুনজরে দেখেন না। তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য শুনে কাঁদেন, তাদের কেউ কেউ আবার পালাগান শুনেও কাঁদেন। বাঙালি মধ্যবিত্ত একই পাঞ্জাবী পরে জুমার নামাজ আদায় করে, আবার সেটি পরেই যায় সঙ্গীতানুষ্ঠান বা পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে। অনার্য অধ্যুসিত এই দেশের বাঙালি মুসলমান আধা গেরস্ত আধা সন্ন্যাসী। যখন ঘর-সংসার করে তখনো তার মন হু হু করে বের হয়ে যাওয়ার জন্য। সাধারণ মানুষ চিরকালই অসাম্প্রদায়িক।
উৎস : কওমী মাদ্রাসার সনদ-স্বীকৃতি ও রাজনীতির তাপ-পরিতাপ : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৮৩. এরশাদ প্রকৃত ক্ষমতা হারাবার প্রায় এক সপ্তাহ পর সাহাবুদ্দীন সাহেবের হাতে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তখন এরশাদ তা-ই হস্তান্তর করেন যা তার হাতে ছিল না, ছিল জনগণের হাতে। এ ক’দিন সংবিধান বরং জনগণের পেছনে ছুটতে ছুটতে চিৎকার করেছিল ‘আমাকে এডজাস্ট করো, আমাকে এডজাস্ট করো।’
উৎস : উপন্যাস, আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট।
৮৪. ভারতের অনেক কাজের সমালোচনার অবকাশ যেমন আছে, তেমনি ভারতের কাছে অনেক কিছু শেখারও আছে; বিশেষ করে যে-কোনো অবস্থায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা, জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে সব দলের ঐক্য, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন, আমলাতন্ত্রের নগ্ন দলীয়করণ থেকে বিরত থাকা, শিক্ষা ও চিকিৎসার মানসহ অনেক ক্ষেত্রেই ভারত অনুসরণযোগ্য। অসংখ্য বাজারী ছবি-সিরিয়ালের পাশাপাশি সেখানে নির্মিত হয় অনেক আন্তর্জাতিক মানের ধ্রুপদী ছবি-নাটকও। কিন্তু বাংলাদেশের বহুলোক ওদের খারাপটাই নেন, ভালোটা অনুসরণ করেন না। আমি ভারতের দাদাগিরির প্রতিবাদের পাশাপাশি ওদের ইতিবাচক কাজের প্রশংসা করতে কখনো পিছ পা হইনি।
উৎস : চরের ও পরের জীবন-পরম্পরা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/ ইউএসনিউজডটকম/সাপ্তাহিক জন্মভূমি।
৮৫. যে-সব লেখক মনে করেন, ভারতের কোনো কাজের সমালোচনা করলে, ফারাক্কা-তিস্তা-ফালানী ইস্যুতে প্রতিবাদ করলে বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিরোধিতা করলেই উৎস : উপন্যাস, আম-আমেরিকার এক্সরে রিপোর্ট। ' প্রগতিশীলতার' কাতার থেকে নাম কাটা যাবে, আমি তাদের দলে নেই। আবার যারা মনে করেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সমুন্নত রাখার প্রত্যয় প্রকাশ করলে, অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে বললে বা জঙ্গিবাদ ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে লিখলে কিংবা জাহানারা ইমামকে সম্মান জানালে 'জাতীয়তাবাদীর' কাতার থেকে নাম কাটা যাবে, আমি তাদের দলেও নেই। এমন যারা মনে করেন তাদের দুইপক্ষকেই আমি খুব তুচ্ছ জ্ঞান করি।
উৎস : চরের ও পরের জীবন-পরম্পরা : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/ ইউএসনিউজডটকম/সাপ্তাহিক জন্মভূমি।
৮৬. ক্লিওপেট্রা অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে তিরস্কার করে ছিলেন জুলিয়াস সিজারকে, সিজারের সৈন্যরা মিশরের পাঠাগারের একাংশ ধ্বংস করেছিল বলে। সিজার মাথা নুইয়ে অপমান সহ্য করেন। নালন্দা-বিক্রমশীল পাঠাগার বা বাগদাদের পাঠাগার ধ্বংসকারীরা যেমন ইতিহাসের ঘৃণা থেকে রেহাই পায়নি তেমনি নব্যযুগের বই প্রতিবন্ধীরাও ইতিহাসে সমালোচিত হবে সন্দেহ নেই। বই প্রতিবন্ধীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক আন্দোলনের বিকল্প নেই।
উৎস : বই-প্রতিবন্ধীদের রাগিয়ে দিন : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৮৭. একটি ভাষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেই ভাষাটি কারা বলছে, কাদের মাতৃভাষা সেটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলে। কিন্তু তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা সত্ত্বেও ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ, ইংরেজি এখন শুধু একটি ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ইংরেজি এখন প্রযুক্তিরও অংশ।
উৎস : প্রবাসে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৮৮. জামায়াত ধর্মকে ব্যবহার করে, আর আওয়ামী লীগ জামায়াতকে ব্যবহার করে। এটা তারা করে কৌশলে, আর বিএনপি জামায়াতকে ব্যবহার করে বা ব্যবহৃত হয় নগ্নভাবে।
উৎস : সফেদ সত্যের বিরুদ্ধে রঙিন প্রচার : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৮৯. স্বদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা আর রাজনৈতিক মতপার্থক্যের মধ্যে তফাত আকাশ-পাতাল। বাংলাদেশে কেউ গণতন্ত্র চান, কেউ সমাজতন্ত্র চাইতে পারেন, কেউ ইসলামী ব্যবস্থাও দাবি করতে পারেন। এগুলি রাজনৈতিক অধিকার, রাজনৈতিক মতপার্থক্য। কিন্তু একাত্তরে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে বেঈমানী করেছে, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা-লুটতরাজ-ধর্ষণে শত্রুবাহিনীকে সহায়তা করেছে বা নিজেরা সে-সব অপকর্ম করেছে, তারা গুরুতর অপরাধী। কিন্তু এখন বিষয় দুটিকে গুলিয়ে ফেলার একটা প্রচারণা চলছে দেশে-বিদেশে। এই প্রচারণা বিশেষ করে চলছে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে বিতর্কিত ও লঘু করে দেখানোর জন্য। কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীও কৌশলে এহেন মতলবপূর্ণ প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ ইনিয়ে-বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেন যে, ওরা 'আদর্শিক কারণে পাকিস্তান রক্ষা' করতে চেয়েছে ইত্যাদি.....। এ ধরণের প্রচারকরাও অপরাধী এবং পাপী সন্দেহ নেই।
উৎস : সফেদ সত্যের বিরুদ্ধে রঙিন প্রচার : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৯০. কাউকেই মালাউন বলা উচিত নয়, কারণ মালাউন অর্থ অভিশপ্ত। কোনো মানুষই অভিশপ্ত নয়, অভিশপ্ত হতে পারে না। কারণ, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। যবন বলে গালি দেওয়া হতো ইউনানী গ্রীকদের। বলা হতো ইসলাম-পূর্ব আরব ব্যবসায়ীদেরও। প্রাচীন ভারতের পশ্চিম দিকের কিছু অংশ বহুকাল গ্রীকদের দখলে ছিল। গ্রীক মঞ্চনাটকের প্রভাব ছিল ভারতীয় মঞ্চনাটকে। যারজন্য নাটকের শেষে বলা হতো 'যবনিকা পতন'। ইউনান গ্রীসের প্রাচীন নাম। মুসলমানরা ভারতবর্ষে আসার বহু আগে থেকেই যবন শব্দটি প্রচলিত ছিল।
উৎস : ফেসবুকের স্ট্যাটাস থেকে।
৯১. আমাদের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ করেছে অকাম্য রক্তপাত। আমাদের বীরদের আমরা খুঁজে খুঁজে হত্যা করেছি। এমনকি স্বপরিবারেও। হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, শহীদ জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, জেনারেল মঞ্জুর, ক্যাপ্টেন হায়দার, সিরাজ শিকদার, ন্যাভাল শিরাজ, সিদ্দিক মাস্টার, মোশাররফ হোসেন, কামেল বখত্ ও মোফাখ্খারসহ অসংখ্য বীর-বিপ্লবী। সামরিক আদালতে বিচারের নামে হলেও কর্ণেল তাহেরকে হত্যাকান্ডই বরণ করতে হয়েছিল। দেশপ্রেমিকদের আমরা আখ্যা দিয়েছি তাঁবেদার; বিপ্লবীদের অপবাদ দিয়েছি সন্ত্রাসীর। এই তো আমাদের শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নমুনা।
সব রক্তই কথা বলে এবং কথা বলে চলেছে।
উৎস : ইতিহাসের সঙ্গে রসিকতার খেসারত : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৯২. ইতিহাসে দেখি, পৃথিবীর বহু জাতি ভারত আক্রমণ করে বিজয়ী হয়েছে, ভারতে স্থিতু হয়েছে, কেউ বা লুটপাট করে চলে গেছে। কেউ কেউ শাসক হয়েছে। ভারত যুগে যুগে যুদ্ধে হেরেছে। ভারত-বিভক্তির পর একাত্তরে জিতেছে আমরা সঙ্গে ছিলাম বলে।
উৎস : উচিত কথার উচিত সময় : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৯৩. একাত্তরে আমরা আমাদের দেশের স্বাধীনতা চেয়েছি আর ভারত তার চির-বৈরী পাকিস্তানকে ভাঙতে চেয়েছে। একাত্তরে আমাদের ও ভারতের স্বার্থ এক জায়গায় এসে মিলেছে। আমরা স্বার্থ উদ্ধারে ভারতকে সাহায্য করেছি আর ভারত পাকিস্তান ভাঙতে আমাদের সাহয্য নিয়েছে। এখানে দান-উদারতার তেমন কোনো ব্যাপার নেই। ভারত তাদের স্বার্থের কথা গোপনও রাখেনি। ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা কেন্দ্রের তৎকালীন পরিচালক কে সুভ্রাম্মনিয়াম স্পষ্ট করেই বলেছেন, 'ভারতকে উপলব্ধি করতে হবে যে আমাদের স্বার্থেই পাকিস্তানকে ভেঙ্গে দেওয়া উচিত এবং এবারে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি সে ধরনের সুযোগ আসার আসু আর কোনো সম্ভাবনা নেই।'
উৎস : উচিত কথার উচিত সময় : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৯৪. কিছু লোক আবার ভারত ও আওয়ামী লীগের উগ্র বিরোধিতা করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেও কথাবার্তা বলে ফেলেন। এটাকে আরো উষ্কে দেন তারা, স্বাধীন বাংলাদেশকে যারা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। আবার কিছু লোক ‘ভারতের সবই মহান’ বলে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টাও করে আসছেন। ভারতের বাংলাদেশ-বিরোধী পদক্ষেপ বা ভারতীয় কিছু লোকের আপত্তিকর কথাবার্তা তাদের বিচলিত করে না।। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের কোনো কোন মহলের ধৃষ্টতাপূর্ণ মন্তব্যও তাদের গায়ে লাগে না।
উৎস : উচিত কথার উচিত সময় : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
৯৫. সৃজনশীলতাকে অবশ্যই রাজনীতিমনষ্ক হতে হবে, কারণ কোনো কিছুই রাজনীতির বাইরে নয়। কিন্তু সৃজনশীলতা দলমন্য হলেই বিপজ্জনক এবং আরো বিপজ্জনক এটা উচ্ছিষ্টের অনুগামী হলে। বাংলাদেশে সেই বিপদই হয়ে পড়েছে স্বাগতিক। এর অন্যতম কারণ, দলকানা সৃজনশীলদের অনেক সুবিধা। এতে কড়ির সঙ্গে আসে প্রচার, ভ্রমণ, পদক প্রভৃতি।
উৎস : ইতিহাসের জেরার মুখে আমাদের সৃজনকাল : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ/অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা
৯৬. দলকানা হলে দুই লাইন লিখে, দুই পঙক্তি গেয়ে, দুই কদম নেচে, দুই পোচ এঁকে বা দুই হাঁক দিয়েই অতি বিখ্যাত ও বিত্তবান হওয়া যায়। যারা কোনো উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেননি বা সারা জীবনে উদ্ধৃতিযোগ্য দুটি লাইনও লেখেননি, তারাও বিভিন্ন পদক ভাগাভাগির কারণে বিরাট প্রতিভা। এবং সেটা অবশ্যই বরকন্দাজীর জন্য। সে কারণেই আমাদের সৃজনকাল অনেকটাই বন্ধ্যা; আমাদের সৃজনশীলরা প্রতিভার সংজ্ঞায় ঊন-মানুষ, কেউ বা আধা মানুষ। পরিপূর্ণ মানব কেউ নয়।
উৎস : ইতিহাসের জেরার মুখে আমাদের সৃজনকাল : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ/অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা
৯৭. একাত্তরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকার শাহবাগ ও পরীবাগের মাঝামাঝি যে মহল্লায় বাস করতাম, সেখানে আমরা, বাঙালী মুসলমানরা ছিলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। প্রথম শ্রেণীর নাগরিক ছিলেন মহল্লার পাঞ্জাবী ও উর্দুভাষী মোহাজেররা। মহল্লার হিন্দুরা ছিলেন তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আমাদের প্রতি অবাঙালীদের অবজ্ঞা, বিদ্রুপ ও অত্যাচার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দ্রুত অর্জনের আকাক্সক্ষা আমাদের মধ্যে ছিল আরো প্রবল। দেশ আমাদের, অথচ বাস করছি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো - এ যন্ত্রণা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না।
উৎস : বিজয়ের আলোয় আলোয় : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৯৮. ওয়ান ইলেভেনের নায়করা মঞ্চে এসেছিলেন কোনো রুটিন-ওয়ার্ক না করে। এ জন্য সিলেবাসও ঠিক করতে পারেননি। অনেকগুলি ফ্রন্ট তারা এক সাথে খুলে নাস্তানাবুদ হয়েছেন। দশ কেজির ব্যাগ হাতে বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র কিনেছেন চল্লিশ কেজি। তাদের হটকারিতায় বাংলাদেশের বহু ভালো মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
উৎস : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
৯৯. বাংলাদেশের রাজনীতি ও নেতৃত্বের যে বিকৃত বিকাশ ঘটেছে তাতে শাসনক্ষমতা হয়ে পড়েছে ফুটবলের মতো; একদল লাথি মেরে সেই বল পাঠিয়ে দেয় অন্য দলের কোর্টে। এটাই আজকের বাংলাদেশের নিয়তি। এখানে কে কার সঙ্গে জোট করল তা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিজ দল ভুল করলে জোট তাকে রক্ষা করতে পারে না। মূল দলগুলোর রাজনীতি বা কৌশলই এখানে প্রধান।
উৎস : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০০. বাংলাদেশের ইতিহাসে যাদের স্থান নায়ক-মহানায়কের, আমরা তাদের অনেকের লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি অত্যন্ত অসম্মানজনক অবস্থায়। কারো কারো লাশ আমরা দেখেতে পেয়েছি সিঁড়িতে, খোলা মাঠে, সার্কিট হাউজের রক্তে ভাসমান কক্ষে, সিএমএইচে, সেনানিবাসের রাস্তায় কিংবা পিলখানার দরবার হলে ।
উৎস : অন্য বিচারগুলি কি রোজ হাসরের ময়দানের জন্য তোলা থাকবে : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০১. বাংলাদেশের যাত্রাপথটাই রক্তাক্ত। সে কারণে আমাদের ন্যায্য বিকাশের গতি শম্বুক-শ্লথ। বিচারহীনতাই হত্যাকান্ডকে সম্ভাবিত করছে। বিচার কিছু হচ্ছে বটে, তবে সব হত্যাকান্ডের নয়। কিছু বিচার হচ্ছে, বাকীগুলিকে যেন তুলে রাখা হচ্ছে রোজ হাসরের ময়দানের জন্য। এটা জাতির আরেক দুর্ভাগ্য। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা সুবিদিত সুবিচারক। কিন্তু তিনি তার বান্দাকেও নির্দেশ দিয়েছেন দুনিয়াতে হত্যাকান্ডের বিচার ও কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্য।
উৎস : অন্য বিচারগুলি কি রোজ হাসরের ময়দানের জন্য তোলা থাকবে : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০২. রক্ত, গুজব আর ঘোলাপানিতে প্রায়ই ভাসে বাংলাদেশ। রক্তপাতের মানচিত্রে লাশের জোগানদার-চলনদারেরা ক্লান্তিহীন। লাশ জুগিয়ে চলছে সরকার ভায়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনীতিবিদ, ধর্মগুরু ও ধর্ম ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন কেন্দ্র।.. লাশের জন্য ছড়ানো হচ্ছে গুজব। ছড়াচ্ছেন তারাও, যাদের আলো ছড়ানোর কথা। রক্ত-অশ্রু-বারুদের যৌগ মিশ্রণে বাংলাদেশের নদ-নদীর সব পানিই যেন ঘোলা হয়ে উঠছে। সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টায় লিপ্ত চতুর শিকারীরা … জীবনের কি করুণ অপচয়।
উৎস : অন্য বিচারগুলি কি রোজ হাসরের ময়দানের জন্য তোলা থাকবে : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০৩. ইতিহাসে তাজউদ্দিন আহমদের মূল্যায়ন প্রয়োজন। এ দাবি অত্যন্ত যুক্তিসংগত। আরো অনেকের মতো তাজউদ্দিন আহমদের জন্য যথাযোগ্য স্থান করে দিতে হবে। তিনিও ছিলেন আমাদের ক্রান্তিকালের বড় কান্ডারি। ছোট একটা গলি তার নামে আছে বটে, কিন্তু তার তো পাওনা রাজপথ।
উৎস : কানু ছাড়াও আছে গীত : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০৪. আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সশস্ত্র পর্ব চলেছে পৌনে ৯ মাস। এতো অল্প সময়ের মধ্যে ত্রিশলাখ মানুষের জীবনদানসহ কোটি-কোটি মানুষের বলীয়ান আত্মত্যাগের নজির পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মায়ের গর্ভ থেকে একটি শিশুর জন্ম নিতে যেখানে ৯ মাসের বেশি সময় লাগে, সেখানে পৌনে ৯ মাসে একটি দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে সাফল্য লাভের নজিরও ইতিহাসে বিরল।
তবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সশস্ত্র পর্বে ভারত সরাসরি সহায়তা না করলে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ না হলে স্বাধীনতা অর্জনে আরো অনেক বেশি সময় লাগতো এবং জীবন ও সম্পদহানি হতে আরো অনেক বেশি। .. ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান ১৭ দিনের যুদ্ধে পাকিস্তান যেখানে প্রায় সমানে-সমানে লড়েছে, সেখানে আমেরিকা ও মুসলিম বিশ্বের ঢালাও অস্ত্র-অর্থ পাওয়া সত্ত্বে সে দেশ ছয় বছর পর ১৩ দিনের যুদ্ধে বেদড়ক মার খেয়েছে ভারতের হাতে - বাংলাদেশ পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে ছিল বলে, মুক্তি ও মিত্র বাহিনী একসাথে যুদ্ধ করেছে বলে। মিলিত বাহিনীর সেই মারে পাকিস্তান হারায় তার নৌবাহিনীর অর্ধেক, (তারিক আলীর হিসাবে অবশ্য এক-তৃতীয়াংশ), বিমান বাহিনীর এক-চতুর্থাংশ এবং সেনাবাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ। ভারত পশ্চিম পাকিস্তানের জায়গা দখল করে ৬৫-র যুদ্ধেরও প্রায় তিনগুণ বেশি।
উৎস : ভারতপন্থিতা ও বিরোধিতা নিয়ে কথা : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০৫. বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতিকেরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে দেশের মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করে এক অংশের গায়ে ভারতের সিলমোহর ও অন্য অংশের গায়ে পাকিস্তানের তকমা লাগিয়ে দিয়েছেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, প্রতীকিভাবে একথা বলা চলে যে, আওয়ামী লীগ ভোটে জিতলে যেন বা ক্ষমতায় আসে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র, আর বিএনপি ভোটে জিতলে যেন বা ক্ষমতায় আসে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তারা লোম বাছতে গিয়ে ইতোমধ্যেই কম্বল উজার করে ফেলেছেন। জনগণ রাজনীতিকদের তরফ থেকে এমন ধারণাই পাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের মানুষ শুধুমাত্র বাংলাদেশপন্থী।
উৎস : ভারতপন্থিতা ও বিরোধিতা নিয়ে কথা : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০৬. ভারতের একটি শ্রেণী মধ্যযুগে অখন্ড-ভারতে প্রায় সাত শ' বছরের মুসলমান শাসনের ও তার বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য এখনকার মুসলমানদের প্রতিও ক্ষিপ্ত। বাবরী মসজিদ বা এজাতীয় বিতর্ক সেগুলিতে আরো ইন্ধন জোগায়। অথচ, ভারতে শুধু তুর্কী-মোঘল-পাঠানরাই বাইরে থেকে আসেনি, বাইরে থেকে এসেছে আবীর, কুষাণ, গ্রীক, ইংরেজ প্রভৃতি। আর্যরাও বাইরে থেকেই এসেছে, বৈদিক ধর্ম তাদেরই দান। অন্য আর কারো প্রতি যদি ক্ষোভ না থাকে, মুসলমানদের প্রতি থাকা উচিত নয়। .. বাংলাদেশে আরেকটি কৌতূহল-উদ্দীপক বিষয় লক্ষণীয় যে, ক্ষমতায় যখন কথিত ভারতপন্থিরা থাকে, সাধারণ মানুষ তখন ভারতের প্রতি থাকে সন্দিহান, আর যখন কথিত ভারত-বিরোধীরা ক্ষমতায় থাকে, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দেয় ভারতের প্রতি সহানুভূতি। এরও নিশ্চয়ই কারণ আছে। সুসম্পর্ক স্থায়ী ও সর্বব্যাপী করতে চাইলে এসবের কারণও অনুসন্ধান প্রয়োজন।
উৎস : ভারতপন্থিতা ও বিরোধিতা নিয়ে কথা : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০৭. আমাদের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি যদি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিত, নিদেনপক্ষে শিক্ষা নিত ১৯৮৬ ও ৮৮-র নিরর্থক ও প্রহসনের নির্বাচন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা-হাস্যকর নির্বাচন এবং ২০০৭ সালের হাস্যকর-একতরফা-নির্বাচনী প্রচেষ্টার করুণ পরিণতি থেকে, তাহলেও এই সংকট তৈরি হতো না। তারা ভুলে গেছেনে যে, এ ধরনের নির্বাচন সব সময়ই নির্বাচনকে পরিণত করে প্রহসনে, প্রার্থীদের পরিণত করে ফেলে ডাস্টবিনে এবং ভোটকে পরিণত করে আবর্জনায়।
উৎস : ইতিহাসের সঙ্গে রসিকতার খেসারত : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০৮. বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অসৎ অংশ হচ্ছে পার্টটাইম দস্যু আর আমলা-বণিকদের অসৎ অংশ হচ্ছে ফুলটাইম তস্কর। সাংবাদিকদের অসৎ অংশ ব্ল্যাক-মেইলিং ও হলুদ সাংবাদিকতা করে। শিক্ষকদের অসৎ অংশ প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। অসৎদের এসবই করার কথা। কিন্তু তারাই বাংলাদেশ নয়।
উৎস : ইতিহাসের সঙ্গে রসিকতার খেসারত : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১০৯. স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ বাহাত্তরের অনবদ্য সংবিধান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সুস্থভাবেই। কিন্তু সংবিধানের মলাট শুকোবার আগেই শুরু হয় বিকৃতি। দ্বিতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, অষ্টম প্রভৃতি সংশোধনী বাংলাদেশের সৃষ্টি-পর্বের আদর্শ-অঙ্গীকারের বিচ্যুতি। সামরিক শাসনও বড় ধরনের বিকৃতি। আবার নির্বাচিত স্বৈর-শাসনও বিকৃতিরই নামান্তর । এতোগুলি এবং এতো ধরনের বিকৃতি মোকাবেলা করতে হয়েছে, হচ্ছে বাংলাদেশ ও তার জনগণকে এর সবগুলিই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন-চেতনার প্রতিপক্ষ। সে কারণে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে গিয়ে বার বার খাবি খাচ্ছে।
উৎস : ইতিহাসের সঙ্গে রসিকতার খেসারত : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১১০. একাত্তরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকার শাহবাগ ও পরিবাগের মাঝামাঝি যে মহল্লায় বাস করতাম, সেখানে আমরা বাঙালী মুসলমানরা ছিলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। প্রথম শ্রেণীর নাগরিক ছিল মহল্লার পাঞ্জাবী ও উর্দুভাষী মোহাজেররা। মহল্লার হিন্দুরা ছিল তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আমাদের প্রতি অবাঙালীদের অবজ্ঞা, বিদ্রুপ ও অত্যাচার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দ্রুত অর্জনের আকাক্সক্ষা আমাদের মধ্যে ছিল সমধিক। দেশ আমাদের, অথচ বাস করছি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো - এ যন্ত্রণা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবে না।
উৎস : বিজয়ের আলোয়-আলয় : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১১১. আমরা একটি বড় ক্যানভাস পেয়েছিলাম। রঙ-তুলি সবই ছিল, কিন্তু কালজয়ী কোনো ছবি কেউ আঁকলেন না। সর্বত্রগামী রচনার জন্য কালি-কলমের অনটন কখনো দেখা যায় নি, শুধু অভাব দেখা গেছে উদযোগ ও সাহসের। আমরা একটি বহতা নদী পেয়েছিলাম, কিন্তু কুয়ো থেকে বেরই হতে চাইলাম না। আমরা পেয়েছিলাম একটি সঙ্গীতময় উদার দিগন্ত, কিন্তু মানুষের মুক্তির মিছিল নিয়ে যাওয়া হয়নি সেদিকে।....ভবিষ্যতে তখনকার প্রজন্ম যখন ক্যানভাসের ফাঁকা জায়গাগুলি দেখবেন, জানতে চাইবেন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি সম্পর্কে, প্রয়োজনীয় তথ্য না পেয়ে তারা হতাশ হওয়ার পাশাপাশি হবেন ক্রুদ্ধও। আমাদের কালের সৃজনী-প্রতিভার কাপুরুষতার জন্য ধিক্কার জানাবেন নিশ্চয়। তাই আমাদের গোটা সৃজনকাল ইতিহাসের জেরার মুখে। সদুত্তর দেওয়ার জন্য ইতিহাস কাঠগড়ায় তুলবে আমাদের কালের সৃজনশীল সবাইকে। এমন কি ঘটনাচক্রে বাংলাদেশের কোনো সাহিত্যিক যদি আগামী বছর নোবেল পুরস্কারও পেয়ে যান, তাকেও মলিনবদনে উঠতে হবে সেই কাঠগড়ায়; কারণ তিনিও অনুপম-দুর্লভ সেই ক্যানভাসের সদ্ব্যবহার করেন নি, তারও সময় গেছে কাপুরুষতায়, দ্বিধায় কিংবা গ্লানিতে..
উৎস : ইতিহাসের জেরার মুখে আমাদের সৃজনকাল : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ/অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
১১২. বাঙালী মধ্যবিত্ত আরো বিচিত্র । তারা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে খোঁজে বাস্তবের নয়, আইডিয়ার জীবন - যে জীবন হতে পারতো কিন্তু হয়নি। শিল্প-সাহিত্য যারা রচনা করেন; বিশেষ করে মেধাবী-খ্যাতিমান যাঁরা, তাঁদের মধ্যেও বাঙালী মধ্যবিত্ত আইডিয়ার জীবনই খোঁজে। নাটক-সিনেমার নায়ক-নায়িকাতো বটেই, এরা এমন কি তাদের রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেও খোঁজে আইডিয়ার জীবন। আমাদের সমাজে যে লোকটি অহরহ দুর্নীত করে, ঘুষ খায়, সেও চায় উপন্যাস-নাটক-সিনেমার নায়কেরা যেন ঘুষ না খায়, দুর্নীতি না করে। গল্পকার, উপন্যাসিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্রকাররা যেন অতি সৎ হয়। তাদের রাজনৈতিক নেতারা যেন সৎ হয়। যে লোক দুশ্চরিত্র সেও চায় তার আইডিয়ার নায়ক-নেতারা যেন চরিত্রবান হয়। প্রচন্ড দুর্মুখ-বাচাল-মিথ্যাবাদীরাও চায় তাদের নায়ক-নেতারা যেন পরিমিতিবোধ সম্পন্ন হয়।
উৎস : হুমায়ূন আহমেদ ও আইডিয়ার জীবন : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১১৩. সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে প্রভাবিত হওয়ার ক্ষমতা মেধাবীদেরই আছে; মেধাহীনরা করে নকল। এ ধরনের প্রভাবিত হওয়ার সাক্ষ্য বাংলা সাহিত্যেই অনেক আছে। মাইকেল মধুসূদন প্রভাবিত হয়েছেন হোমার দ্বারা। রবীন্দ্রনাথে প্রভাব রয়েছে লালন-বিহারীলালের। এমন কি বাংলাদেশের যে জাতীয় সঙ্গীত, সেটিতেও গগন হরকরার একটি গানের ছায়া রয়েছে। প্রভাবিত হয়েছেন জীবনানন্দ দাস। ভারতে এখন বঙ্কিম চন্দ্রের যে বন্দে মাতরম গান নিয়ে নতুন করে মাতামাতি শুরু হয়েছে সেটিতেও কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের দ্বিতীয় খন্ডের একটি শ্লোকের ছায়া রয়েছে।
উৎস : হুমায়ূন আহমেদ ও আইডিয়ার জীবন : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১১৪. পৃথিবীতে জীবনের আবির্ভাবের পরই রহস্যভেদ করতে মানুষ তাকিয়েছে আকাশের দিকে। পশু চড়ানো, চাষাবাদ করা, ঋতুর আগমন বার্তা উপলব্ধির জন্য তাকাতে হয়েছে আকাশের দিকে। রাতে দূরের পথে যেতে তারকারাজি পালন করেছে পথ-প্রদর্শকের ভূমিকা। আজো পাখিরা এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে যখন উড়ে যায়, তারকারাজিই গতিপথ দেখায় তাদের। লাখ লাখ বছর ধরে মানুষ তার প্রেমের- সৌন্দর্যে-বীর্যের প্রতিচিত্র অংকন করেছে তারাকে ঘিরে। আদিম গুহা আবিষ্কারের পর সেখানে দেখা গেছে আকাশ ও তারার ছবি আঁকা রয়েছে। সেই তারকামন্ডলে মানুষ এখন বসবাস করতে চাইছে। মানুষ অসীম সম্ভাবনাময় প্রাণী। তার কাছে আজ যা কল্পনা কাল তা বাস্তব। একদিন হয়তো মানুষ তারার রাজ্যেই বাস করবে, জন্মাবে সেখানে, অন্তিম শয়ানও হবে সেখানেই। একদিন হয়তো পেয়ে যাবে কোথাও নতুন প্রাণের সন্ধান। তখন তারায়-তারায় গড়ে উঠবে মিতালী। এই মহাবিশ্বের প্রতিটি নক্ষত্র-গ্রহ-উপগ্রহ-ধুমকেতু মিলেই একদিন হয়তো গড়ে উঠবে একটি পরিবার।
উৎস : মানব-মনীষা কলিং-বেল টিপছে মহাকাশে : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১১৫. হে শিশুরা, আমরা তোমাদের অগ্রবাহিনী হিসেবে তোমাদের কানে কানে কয়েকটি কথা বলে রাখতে চাই যাতে এখানে এসেই হোঁচট না খাও। তোমাদের জানিয়ে রাখতে চাই যে, তোমাদের জন্মের সময়টি পৃথিবীতে একই সঙ্গে চূড়ান্ত শুভ ও অশুভ সময় চলছে। তোমাদের সময়টি সম্পদে-জ্ঞানে-বিজ্ঞানে-প্রযুক্তিতে পৃথিবী খুবই সমৃদ্ধ। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এতো সম্পদ আর কখনো দেখা যায়নি। কিন্তু পাশাপাশি এই তথ্যটি তোমাদের না জানালে নয় যে, পৃথিবীতে মানুষে মানুষে এমন প্রবল পার্থক্যও কখনো আর দেখা যায়নি। মানুষকে হত্যার জন্য মানুষের দ্বারা এমন মারণাস্ত্র তৈরির নজিরও আগে দেখা যায়নি। সারা পৃথিবীকে ১৫ বার ধ্বংস করার ক্ষমতা এখন যুদ্ধবাজ মানুষের হাতে।
উৎস : শিশুদের কানে কানে : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১১৬. হাইস্কুলে পড়ার সময় একদিন দেখলাম ঢাকার বলাকা সিনেমা হলের পাশের বিশাল বইয়ের দোকানটি জুতোর দোকান হয়ে গেল। এটি ছিল একটি অভিজাত বইয়ের দোকান। তখন আমি বই না কিনে ভাড়া নিতাম। নিউমার্কেটের উত্তর-পশ্চিম দিকের ফুটপাতে একজন চট বিছিয়ে বই বেচতেন, ভাড়াও দিতেন। দস্যু বাহরাম, বনহুর, কুয়াশাসহ নীহার-নিমাইদের লেখা বই দুই দিনের জন্য চার আনা। বলাকার অভিজাত দোকানের খরিদ্দার না হলেও মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম, পণ্য হিসেবে বই খুবই দুর্বল। লক্ষ্মী এসে হাঁক দিলেই সরস্বতি গুটিয়ে নেয় নিজেকে। একটি দোকানে বইকে হটিয়ে জুতোর আগমন বইকে জুতো-পেটা করার মতোই অপমানজনক মনে হয়েছিল।
উৎস : বই নিয়ে কথা আছে বৈকি : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।
১১৭. মোস্তান ভাই বলেছিলেন, ‘ধরে নেন আমাদের সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে এবং জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের দন্ড হিসেবে লিখতে নির্দেশ দিয়েছে। আমি সেটাই মনে করি। আপনারাও দুই হাতে লিখুন। এই স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে হবে। এক্ষেত্রে সাপ্তাহিকগুলির ওপরই নির্ভর করতে হবে।‘
প্রায় সবগুলি দৈনিক ও প্রভাবশালী সাপ্তাহিক এরশাদের অনুগত বা তার নির্যাতনের ভয়ে ভীত ছিল। তখন কিছু সাপ্তাহিকই সাহস নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। এগিয়ে এসেছিলেন তরুণেরা । কয়েকটি পত্রিকা এরশাদ সরকার নিষিদ্ধও করেছিল। এরশাদের পতন হলেও শরীর মোস্তান ভাইকে ক্ষমা করেনি। এক সময় নিজে প্রকাশ করলেন সাপ্তাহিক রাষ্ট্র। তার স্ট্রোক হওয়ার পর আমরা শুধু তার ক্ষুরধার লেখা থেকেই বঞ্চিত হলাম না, সাপ্তাহিক রাষ্ট্রের মতো একটি ভবিষ্যত-প্রসারী স্বাপ্নিক পত্রিকার প্রকাশনাও রুদ্ধ হয়ে গেল। নাজীমউদ্দিন মোস্তান দিনমজুর-সাংবাদিক ছিলেন না, ছিলেন ফেরিওয়ালা সাংবাদিক - স্বপ্ন ফেরি করতেন তিনি। আমি মোস্তান ভাইয়ের মতো একাধারে মেধাবী-সৎ-অঙ্গিকারবদ্ধ-পরিশ্রমী লেখক-সাংবাদিক আর দেখিনি।
উৎস : স্বপ্নের ফেরিওয়ালা এক সাংবাদিকের কথা : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন
১১৮. সাংবাদিকরা হচ্ছেন সেই মানুষ যারা ম্যারাডোনাকে ফুটবল শেখান, সোফিয়া লোরেনকে অভিনয় শেখান, চলচ্চিত্র শেখান ডিসিকাকে, লতা মুঙ্গেশকরকে গান শেখান কিংবা মাইক্রোক্রেডিট শেখান ড. ইউনূসকে। মওলানা ভাসানী বেঁচে থাকলে তাকেও হয়তো বাৎলাবার চেষ্টা করতেন সরল জীবন-যাপনের পন্থাটা। কিছু সংখ্যক ব্যতিক্রম ছাড়া, সাংবাদিকরা সবকিছু সম্পর্কেই অল্প-বিস্তর জানেন, কিন্তু কোনো কিছুই ভালো করে জানেন না। সেটা জানা সম্ভবও নয় এবং তার প্রয়োজনও নেই। কিন্তু নিজের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে সজাগ থাকা জরুরী; কোথায় গিয়ে থামতে হয় সেই কান্ডজ্ঞান থাকা প্রয়োজন যা অনেকের নেই।
উৎস : স্বর্গরাজ্যে অপদেবতার ছড়াছড়ি ও অন্যান্য : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
১১৯. প্রয়োজনের তুলনায় সবধরনের প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকের সংখ্যা অনেক বেশি। এ সংখ্যা সমস্ত পরিমিতিবোধ ছাপিয়ে গেছে। কেউ-কেউ গাড়ি-বাড়ি-বাগানবাড়ি, দামী কুকুর ইত্যাদির সঙ্গে পত্রিকা বা টিভি চ্যানেল থাকাটাও দরকারী মনে করে মিডিয়া নামক ব্যাঙের ছাতার সংখ্যা বাড়াচ্ছেন। কেউ কউ আবার সেলিব্রেটিদের ‘ঘ্রাণ’ নেওয়ার জন্যও মিডিয়া করেন। কেউ-কেউ মিডিয়া করেন নিজের অপরাধ আড়াল, অনার্জিত সম্পদের হেফাজত ও দুষ্কর্ম নির্বিঘেœ চালিয়ে যাওয়ার জন্য। চুরি-ডাকাতি-প্রতারণা-লুটপাট বা দুর্নীতি করে বিপুল অর্থের মালিক হয়ে এরা মিডিয়া করেন নিজেরা ‘জাতে ওঠা’র জন্যও। মূলত এরাই হলুদ সাংবাদিক ও অপসাংবাদিকতার জনক-মহাজন। এখন এই অপ ও অপরিমিতির সংখ্যাগুলি মানুষের কাছে সাক্ষাৎ উৎপীড়ন ও বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে।
উৎস : স্বর্গরাজ্যে অপদেবতার ছড়াছড়ি ও অন্যান্য : অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
১২০. ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের সঙ্গে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কোনো পার্থক্য আছে কী? দু’বার দু’দলই সংবিধান ঠিকা নিয়েছিল। ঠিকা একজন টিকাতে পেরেছেন আরেকজন পারেননি। কিন্তু জনগণ কারো কাছেই সংবিধান ঠিকা দেয়নি।
১২১. সরস্বতীর বরপুত্র আমাদের সৃজনকালের প্রতিভাবানদের অনেক রকম-ফের দেখেই চলেছি। তারা তাদের নিজেদেরকে কেউ ভাবেন বাঙালি, কেউ ভাবেন বাংলাদেশি। কেউ ভাবেন তারা অমুকের সৈনিক, কেউ ভাবেন তমুকের সৈনিক, কিন্তু নিজেকে পূর্ণ মানুষ ভাবেন না। তারা কিছু দেখেন কিছু দেখেন না, কিছু লেখেন কিছু লেখেন না, কিছু বলেন কিছু বলেন না। মনে-মনে অবশ্য ভাবেন সবই। কিন্তু প্রকাশে তারা অর্ধ-মানব, কেউ বা সিকি মানব। চিন্তার এই বামুনত্বের জন্যও আমাদের কেনো কিছুই বিশ্ব-মাপের হয়ে ওঠে না, এমন কি হয়ে ওঠে না মানসম্মত বা রুচিসম্মতও। এবং অভিন্ন কারণেই দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষের প্রপঞ্চগুলি নির্মোহভাবে তুলে ধরার কাউকে আমরা দেখি না।
উৎস : ইতিহাসের জেরার মুখে আমাদের সৃজনকাল : দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ/অনলাইন দৈনিক আমাদের সময়/সাপ্তাহিক বর্ণমালা।
১২২. আমি যখন হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়ি বা নাটক-সিনেমা দেখি, মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম ভালবাসার উত্তাপটা টের পাই। সেই ভালবাসা কাগজের পাতায় ও পর্দায় নিখুঁতভাবে লেপে রেখে গেছেন তিনি।
উৎস : হুমায়ূন আহমেদ ও আইডিয়ার জীবন : যেমন দেখেছি ওয়ান ইলেভেন।