”ট্রেন্ড ইজ মাই ফ্রেন্ড” অর্থ্যাৎ আমাকে সর্বদাই ট্রেন্ড দেখে বুঝে ট্রেন্ডের সাথে সাথে ট্রেড করতে হবে। কখনোই ট্রেন্ডের বিপরীতে ট্রেড নেওয়া উচিত নয়। ফরেক্স বা ট্রেড (শেয়ার) ব্যবসার লফের একটি মূল কারন হলো ট্রেন্ড পরিস্কার ভাবে না বুঝে ট্রেন্ডের বিপরী তে ট্রেড এন্ট্রি নেওয়া। ফরেক্স বা ট্রেড (শেয়ার) ব্যবসার গুরু জনের সব সময় একটি বিষয় পরিস্কার ভাবে সর্তক করে দিয়েছে – টেকনি ক্যাল এনালাইসিস এর সময় সর্ব প্রথম সঠিক ট্রেন্ড সঠিক ভাবে বুঝে শুনে তারপর ট্রেড করা। তাই সব সময় এই কথাটি মাথায় রাখতে হবে – “ট্রেন্ড ইজ ইউর ফ্রেন্ড”।
ট্রেন্ড হলো মার্কেটের একটি স্বাভাবিক গতিবিধি (মুভমেন্ট), একটি মার্কেট ট্রেন্ড কখনো স্ট্রেট (সোজাসুজি) গতিতে চলে না । মার্কেট সব সময় প্রগতিশীল অর্থাৎ কখনও ঊর্ধ্বমুখী কখনও নিম্নমুখী আবার মাঝে মাঝে সমান্তরাল । যদি প্রত্যেক ক্রমানুযায়ী আপ মুভমেন্ট আগের নিম্নমুখী ট্রেন্ডের আরো নিচের দিকে মোড় নিতে শুরু করে তখন মার্কেটের নিম্নক্রম প্রবনতা বলে ধরা যায় । আবার প্রত্যেক ক্রমানুযায়ী ডাউন মুভমেন্ট আগের ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ডের আরো উপরের দিকে মোড় নিতে শুরু করে তখন মার্কেট এর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বলে ধরে নেওয়া হয় । এটাই আসলে মার্কেটের প্রকৃত চিত্র ।
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের সবচেয়ে প্রচলিত এবং জনপ্রিয় একটি টুল হলো ট্রেন্ড লাইন । ট্রেন্ড সনাক্তকরণ, ট্রেন্ড নিশ্চিত হওয়া এবং ট্রেন্ড ইন্টেনসিটি পরিমাপের জন্য ট্রেন্ড লাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টুল ।
ট্রেন্ড লাইন সহজেই বোঝা যায় । ট্রেন্ড লাইন যদি সঠিকভাবে আঁকা যায় তবে তা অন্য যেকোনো মেথড থেকে ভাল ফলাফল দেয় । কিন্তু অধিকাংশ ট্রেডার সঠিকভাবে ট্রেন্ড লাইন আঁকতে পারে না এবং জোর করে ট্রেন্ড লাইন আঁকে যার ফলে তা কার্যকর হয় না ।
ট্রেন্ড লাইন আঁকার জন্য মেটাট্রেডার এর টুলস থেকে ট্রেন্ড লাইন টুল দিয়ে লাইন টানতে হয় । লো পয়েন্টগুলো একটি ট্রেন্ড লাইনের মাধ্যমে কানেক্ট করতে হয় এবং হাই পয়েন্টগুলো একটি ট্রেন্ড লাইনের মাধ্যমে কানেক্ট করতে হয় । সঠিক ট্রেন্ডলাইন ড্র’র মাধ্যমে সঠিক এবং নিখুঁত ট্রেড করতে পারা যায় ।
যদি কোন ক্যান্ডেল ট্রেন্ড লাইন ক্রস করে ওপরে বা নিচে চলে যায়, তখন বুঝতে হবে ট্রেন্ড লাইন ব্রেক হয়েছে ।
১. আপট্রেন্ড (বুলিশ)
২. ডাউনট্রেন্ড (বিয়ারিশ)
৩. সাইডওয়ে ট্রেন্ড (সমান্তরাল)
আপট্রেন্ড (বুলিশ) : আপট্রেন্ডে মার্কেট মানে ঊর্ধ্বমুখী মার্কেট । আমরা জানি আপট্রেন্ড মার্কেটে আপনি বাই করতে পারবেন বা বাই করাই উত্তম সিন্ধান্ত । ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ডের দুই বা তার অধিক লো পয়েন্টগুলোকে একটি লাইনের মাধ্যমে কানেক্ট করতে হয় ।
চিত্র লক্ষ্য করুন, এক দিনের চার্টে ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ডে অনেকগুলো Higher Lows কে একটি লাইন এর মাধ্যমে কানেক্ট করা হয়েছে ।
ডাউনট্রেন্ড (বিয়ারিশ) : ডাউনট্রেন্ডে মার্কেট মানে নিম্নমুখী মার্কেট। আমরা জানি ডাউনট্রেন্ড মার্কেটে আপনি সেল করতে পারবেন বা সেল করাই উত্তম সিন্ধান্ত । নিম্নমুখী ট্রেন্ডের দুই বা তার অধিক হাই পয়েন্টগুলোকে একটি লাইনের মাধ্যমে কানেক্ট করতে হয় । চি্এ লক্ষ্য করুন এক দিনের চার্টে নিম্নমুখী ট্রেন্ডে সবগুলো Lower Highs কে একটি লাইন এর মাধ্যমে কানেক্ট করা হয়েছে ।
সাইডওয়ে ট্রেন্ড (সমান্তরাল) : সাইডওয়ে ট্রেন্ডে মার্কেট একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ঘুরতে থাকে । তাই সাইডওয়ে ট্রেন্ডে ট্রেড না করাই ভাল । এটি মূলত মার্কেটের তেমন কোন মুভমেন্ট ছাড়া সমান্তরাল একটি গতি । ছোট ছোট ঢেউ এর মত একটি গড় সমান্তরাল মিনি ট্রেন্ড । অনেক ট্রেডাররা সাইডওয়ে ট্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করে মার্কেটে প্রবেশ করার জন্য, কারন সাইডওয়ে ট্রেন্ড হচ্ছে পরবর্তী যে কোন লং ট্রেন্ডের টার্ন পয়েন্ট ।
“Trend is your friend” এটি পুরাতন কিন্তু অত্যন্ত জরুরী একটি কথা । অর্থাৎ ট্রেন্ড যে দিকের ফলোয়ার আপনিও সেই দিক ফলো করবেন । ট্রেন্ড লাইন আলাদা কোন টেকনিক নয় বরং আপনি যে সব স্ট্রাটেজি জানেন সেগুলো কার্য্যত করবেন সঠিক একটি ট্রেন্ড লাইন আঁকার মাধ্যমে । সাপোর্ট এবং রেজিসট্যান্স এ আপট্রেন্ড, ডাউনট্রেন্ড এবং রেঞ্জবাউন্ডসহ সকল অর্ডারকে নিশ্চিত করার জন্য ট্রেন্ডলাইন ব্যাবহার খুবই দরকারি ।
ট্রেন্ড লাইন আঁকার পর যখন দেখবেন ৩-৪ টি করে টপ-বটম বাউনসিং করে ফেলেছে তখন অপেক্ষায় থাকবেন ট্রেড রিভার্সেল এর জন্য । অর্থাৎ ট্রেন্ড যখন তার ক্রমাগত গতি থেকে বের হয়ে যায় বা ক্রমাগত গতি পরিবর্তন করে আরেকটি নতুন ট্রেন্ড শুরু করে । আপট্রেন্ড লাইন ব্রেকে সেল করতে পারেন এবং ডাউন ট্রেন্ড লাইন ব্রেকে বায় করতে পারেন । তবে অর্ডারের আগে নিশ্চিত হয়ে নিন ট্রেন্ড লাইন ব্রেক করেছে কিনা ।
– অন্তত ২টি টপ (Top) অথবা বটম (Bottom) পয়েন্ট সংযুক্ত করে ট্রেন্ড লাইন আঁকতে হয় । তবে ৩টি পয়েন্ট হলে ট্রেন্ড লাইন কনফার্ম হয় ।
– সাপোর্ট এবং রেসিসট্যান্স লাইনের মতো যতই প্রাইস ট্রেন্ড লাইনগুলোকে টেস্ট করবে, ট্রেন্ড লাইনগুলো ততো শক্তিশালী হবে ।
– জোর করে ট্রেন্ড লাইন আঁকার চেষ্টা করবেন না কেননা সেক্ষেত্রে তা ভ্যালিড ট্রেন্ড লাইন হবে না ।
Divergence Trading শুরু করার আগে, আপনাকে এই ট্রেডিং এর প্রধান সাতটি সূত্র মনে রাখতে হবে। আজকে আমারা এই সূত্র গুলো নিয়ে আলোচনা করবো। একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা আজকে যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো সেগুলো আপনার অবশ্যই ভালো করে বুঝতে হবে। আমরা আগেই ডাইভারজেন্স ট্রেডিং এর মূল বিষয় নিয়ে আপনাদেরকে জানিয়েছি, কিন্তু আপনি যদি সঠিক ভাবে ডাইভারজেন্স ট্রেডিং শিখতে কিংবা করতে চান তাহলে আজকের এই সাতটি প্রধান সূত্র আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
ভয় পাবার কিছুই নেই! আমরা এখানে কোনও প্রকারের ডাক্তারি টেস্ট এর কথা বলছি না। আমরা এখানে বোঝাতে চেয়েছি, ডাইভারজেন্স ট্রেডকে ভালো করে চিহ্নিত করতে পারা। অনেক সময় আমরা খুব তারাতারি কোনও ট্রেন্ড চিহ্নিত করার চেষ্টা করি যা আমাদের জন্য মাঝে মাঝে সর্বনাশের কারন হয়ে থাকে। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে- “Little learning is a dangerous thing” একটি সঠিক ডাইভারজেন্স ট্রেড হবার জন্য মার্কেট প্রাইসকে অবশ্যই নিম্নোক্ত যেকোনও একটি বৈশিষ্ট্যের দরকার পরবেঃ
১) পূর্বের হাই (high) এর থেকে মার্কেট প্রাইসের হাইয়ার-হাই (higher high)
2) পূর্বের লো (low) এর থেকে মার্কেট প্রাইসের লোয়ার-লো (lower low)
3) ডাবল টপ (double top)
4) ডাবল বোটম (double bottom)
যদি আপনি আপনার চার্টে, উপরের চারটি বৈশিষ্ট্যের যে কোনও একটি বৈশিষ্ট্য দেখতে পান তাহলে আপনার ইন্ডিকেটরের দিকে তাকানোর কোনও দরকার নেই। যদি দেখতে না পান, তাহলে বুঝবেন প্রাইসে কোনও ডাইভারজেন্স ট্রেড গঠিত হয়নি। আপনি মরিচিকার পিছনে ছুটছেন এবং খুব দ্রুত একজন ভালো চোখের ডাক্তারের কাছে চলে যান, কারন আপনার দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
সঠিক ডাইভারজেন্স ট্রেন্ড ছবি ১
ভুল ডাইভারজেন্স ট্রেন্ড ছবি ২
এখন আপনাকে মার্কেট প্রাইস একশন এর উপর নজর রাখতে হবে। মনে রাখবেন, আপনার চার্টে আপনি একটি higher high, একটি flat high, একটি lower low, অথবা একটি flat low এগুলোর যেকোনো একটি দেখতে পারেন।
এখন আপনি চার্টে- পূর্ববর্তী হাই (high) কিংবা লো (low) থেকে মার্কেট প্রাইসের হাইয়ার-হাই (higher high) অথবা মার্কেট প্রাইসের লোয়ার-লো (lower low) বরাবর একটি লাইন আঁকুন, যেটা একটি প্রধান tops/bottom হবে।
সঠিকভাবে যুক্ত টপ ছবি নং ৩
ভুল ট্রেন্ডলাইন আকার চেষ্টা ছবি নং ৪
আপনি এখন সম্পূর্ণভাবে প্রাইসের দুইটি টপ/Top অথবা দুইটি বোটম/Bottom কে যুক্ত করে একটি ট্রেন্ড লাইন এঁকে ফেলেছেন। এখন আপনি আপনার ইন্ডিকেটরের দিকে লক্ষ্য করুন (যেটা আপনি ব্যবহার করতে পছন্দ করেন) এবং মার্কেট প্রাইসের টপ/Top অথবা বোটম/Bottom এর সাথে ইন্ডিকেটরের টপ/Top অথবা বোটম/Bottom এর তুলনা করুন।
বিঃ দ্রঃ শুধুমাত্র ইন্ডিকেটরের টপ/Top অথবা বোটম/Bottom এর দিকে লক্ষ্য করুন, এছাড়া বাকি সবকিছু ভুলে যান।
ছবি নং ৫ দেখুন
যদি আপনি মার্কেট প্রাইসের দুইটি হাই (high) কে যুক্ত করে একটি লাইন এঁকে থাকেন, তাহলে আপনাকে সেই সাথে অবশ্যই ইন্ডিকেটরের ও দুইটি হাই (high) কে যুক্ত করে একটি লাইন আঁকতে হবে। লো (low) এর ক্ষেত্রেও একই কাজ করবেন। যদি আপনি মার্কেট প্রাইসের দুইটি লো (low) কে যুক্ত করে একটি লাইন এঁকে থাকেন, তাহলে আপনাকে সেই সাথে অবশ্যই ইন্ডিকেটরের ও দুইটি লো (low) কে যুক্ত করে একটি লাইন আঁকতে হবে।
ছবি নং ৬
এক কথায়, মার্কেট প্রাইস এবং ইন্ডিকেটরের টপ/বোটম এর মধ্যে Perfect Match হতে হবে।
ছবি নং ৭ দেখুন
আপনি ইন্ডিকেটরের যে হাই অথবা লো খুজে পাবেন সেটা অবশ্যই মার্কেট প্রাইসের দিকে ঊর্ধ্বমুখী (vertical) ভাবে একই স্থানে হাই অথবা লো নির্দেশ করবে। নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন।
ছবি নং ৮ দেখুন
Divergence Trading তখনি হবে- যদি ইন্ডিকেটরের টপ/বোটম (top/bottom) কে যুক্তকারী স্লোপ-লাইন, মার্কেট প্রাইসের টপ/বোটম (top/bottom) কে যুক্তকারী স্লোপ-লাইনের থেকে ভিন্ন হয়। এই স্লোপ-লাইন গুলো হয়
ছবি নং ৯
যদি আপনি আপনার চার্টে একটি Divergence Trading চিহ্নিত করতে পারেন কিন্তু যদি দেখেন মার্কেট আগেই বিপরীত-দিকে চলে গিয়েছে তাহলে মনে করবেন এবারের মতন ডাইভারজেন্স ট্রেন্ড হয়ে গেছে এবং আপনি এবারের মতন বাস মিস করে ফেলেছেন।
হতাশ হবার কিছুই আবার পরের ডাইভারজেন্স ট্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করুন।
ছবি নং ১০
Divergence Trading সবচেয়ে ভালো কাজ করে লম্বা টাইম ফ্রেমে। বেশি টাইম-ফ্রেমে ট্রেড করলে ভুল সিগন্যাল পাবার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। অর্থাৎ, কম ট্রেড করা কিন্তু আপনি যদি ভালো করে আপনার ট্রেডের কৌশল ঠিক করতে পারেন তাহলে কম ট্রেড করেও আপনি ভালো পরিমান প্রফিট করতে পারবেন। ছোট টাইম-ফ্রেমে ডাইভারজেন্স ট্রেন্ড অনেক বেশি পরিমাণ দেখা যায় কিন্তু এটার বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক কম থাকে।
আমরা আপনাকে দিব কমপক্ষে ১-ঘণ্টা অথবা তার বেশি সময়ে ডাইভারজেন্স ট্রেন্ড চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন। অন্য অনেক ট্রেডার আছেন যারা, ১৫ মিনিটের অথবা তার থেকেও কম টাইম ফ্রেমে ডাইভারজেন্স ট্রেড করে থাকেন।
মোটকথা, আপনি যদি আমাদের দেয়া এই নয়টি নিয়ম মেনে ডাইভারজেন্স ট্রেড করে থাকেন তাহলে আস্তে আস্তে আপনার ডাইভারজেন্স ট্রেন্ড চিহ্নিত করা এবং এই ট্রেড থেকে প্রফিট করার সম্ভবনা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। আর যদি আপনি এই নিয়ম উলো মেনে না চলেন তাহলে আমাদের আশা আপনাদের বার বার আমাদের এই পেজে আসতে হবে এবং বার বার আমাদের আর্টিকেল গুলোকে মুস্খস্ত করতে হবে।
ফরেক্স বা ট্রেড ব্যবসা সম্পূর্ন একটি প্রাকটিক্যাল বিষয়। এখানে কম জানা বা অল্প জ্ঞানের কোন জায়গা নাই। ফরেক্স বা ট্রেড (শেয়ার) ব্যবসা করতে হলে, পরিপূর্ন ভাবে জানতে হবে। কারন আপনার টাকা শুধু মাত্র আপনারই টাকা। আপনার টাকার মায়া আপনার না থাকলে অন্য কাহারো থাকবে না। যদি আপনি মনে করেন এই সেক্টর হতে আপনি কিছু করতে চান, তাহলে আপনাকে যে কোন মেনটরের কাছে হাতে কলমে শিখতে হবে। তাহলেই আপনি আপনার বিনিয়োগ সিকিউর করে, আপনার কাংখিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন। পরিশেষে ফরেক্স মাকের্টে সকলের সাফল্যয়তা কামনা করছি।
ধন্যবাদ