আমরা যারা ফরেক্স করি, তাদের বেশিরভাগই জানি না আসলে ইন্ডিকেটর জিনিসটা কি । আমরা ভাবি ইন্ডিকেটর মানে বাই আর সেলের সিগন্যাল । আর যখনই এই সিগন্যাল কাজ করে না, তখন হয়ে যায় ইন্ডিকেটর খারাপ । আর তখন আমরা বলি প্রাইস অ্যাকশানের ওপরে কিছু নাই । এর কারণ হলো প্রাইস অ্যাকশান জিনিসটা আমরা বেশিরভাগ মানুষ খুব একটা বুঝি না । তাই আমরা ভাবি নিশ্চয়ই প্রাইস অ্যাকশান হোলি গ্রেইল । অবশ্যই প্রাইস অ্যাকশান ট্রেডিং ভাল, কিন্তু ভালভাবে ইন্ডিকেটর ব্যবহার করতে পারলে ইন্ডিকেটরও ভাল ফলাফল দিবে আপনাকে ।
ইন্ডিকেটর অর্থ হলো সোজা বাংলায় নির্দেশক । ফরেক্সের ভাষায় যা মার্কেটের অবস্থা নির্দেশ করে । এটা আপনাকে নির্দেশ করে মার্কেটের বর্তমান অবস্থা । একটি ইন্ডিকেটর তার হিসাব অনুসারে আপনাকে কি কি তথ্য দিতে পারে তা নিচে দেয়া হলো –
– মার্কেটের বর্তমান ট্রেন্ড ।
– ট্রেন্ডটি কতটুকু শক্তিশালী বা দুর্বল ।
– ট্রেন্ডটি শেষের দিকে কিনা।
– মার্কেটের ভোলাটিলিটি ।
– মার্কেটের ট্রেডের ভলিউম (কেমন ট্রেডার মার্কেটে অংশগ্রহণ করছে) ।
– মার্কেটে বিভিন্ন ট্রেন্ড প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি ।
সুতরাং দেখুন, ইন্ডিকেটর কি কোথাও বলেছে যে, সে সরাসরি বাই-সেল সিগন্যাল দেয় ? এটা শুধু আপনাকে মার্কেটের অবস্থা জানায় । আর আমরা এটা দিয়ে বিভিন্ন স্ট্রাটেজি তৈরি করে ট্রেড করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি । সুতরাং, এটা সরাসরি কিন্তু সিগন্যাল দিচ্ছে না, আমরাই ধরে নিচ্ছি এটা বাই বা সেল করতে বলছে ।
– Moving Average
– MACD
– Heiken Ashi
– Parabolic SAR
– Forecast Oscillator
– Linear Regression
– ADL (Advance Decline Line)
– Bollinger Bands
– ADX (Average Directional Index) ইত্যাদি ।
ইন্ডিকেটর অর্থ হলো সোজা বাংলায় নির্দেশক । ফরেক্স বা ট্রেড (শেয়ার) ব্যবসার ভাষায় যা মার্কেটের অবস্থা নির্দেশ করে । এটা আপনাকে নির্দেশ করে মার্কেটের বর্তমান অবস্থা ।
ইন্ডিকেটর আমাদের যেই তথ্যগুলো প্রদান করে, সেগুলো ব্যবহার করেও কিন্তু চমৎকারভাবে ট্রেড করা সম্ভব । আগে দেখে নেই ইন্ডিকেটর কয় ধরনের হয়ে থাকে –
১. ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর
২. ভোলাটিলিটি ইন্ডিকেটর
৩. মোমেনটাম ইন্ডিকেটর
৪. ভলিউম ইন্ডিকেটর
৫. সাইকেল ইন্ডিকেটর
৬. বিল উইলিয়ামস ইন্ডিকেটর
ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরগুলো মার্কেটে বিভিন্ন ট্রেন্ডের উপস্থিতি নির্দেশ করে । মার্কেট এখন কোন ট্রেন্ডে আছে – আপট্রেন্ড, ডাউনট্রেন্ড না সাইডওয়ে ট্রেন্ডে সে সম্পর্কে আপনি ধারনা পাবেন ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরগুলোর মাধ্যমে । এছাড়াও ট্রেন্ডটি কতটুকু শক্তিশালী বা দুর্বল অথবা ট্রেন্ডটি শেষের দিকে কিনা তা জানতে পারবেন এসব ইন্ডিকেটর থেকে । কিছু জনপ্রিয় ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর হলো –
– Moving Average
– MACD
– Heiken Ashi
– Parabolic SAR
– Forecast Oscillator
– ADX (Average Directional Index) ইত্যাদি ।
ভোলাটিলিটি ইন্ডিকেটরগুলো মার্কেটে প্রাইসের উঠা-নামার পরিমান নির্দেশ করে । মার্কেটে কি পরিমান ট্রেড হচ্ছে এবং ভোলাটিলিটি কম না বেশি সে সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় এই সকল ইন্ডিকেটর থেকে । কিছু জনপ্রিয় ভোলাটিলিটি ইন্ডিকেটর হলো –
– Bollinger Bands
– Trading Bands (Envelope)
– Volatility Chaikin’s
– ATR (Average True Range) ইত্যাদি ।
মোমেনটাম ইন্ডিকেটরগুলো ট্রেন্ড কি শক্তিশালী না দুর্বল, Over-bought না Over-sold ইত্যাদি তথ্য নির্দেশ করে । কিছু জনপ্রিয় মোমেনটাম ইন্ডিকেটর হলো –
– RSI (Relative Strength Index)
– Stochastic Oscillator ইত্যাদি ।
ভলিউম ইন্ডিকেটরগুলো মার্কেটে কি পরিমান ট্রেডার অংশগ্রহণ করছে তা নির্দেশ করে । কিছু জনপ্রিয় ভলিউম ইন্ডিকেটর হলো –
– Acceleration Bands
– Volume Rate of Change (ROC)
– Demand Index
– Chaikin Money Flow (CMF)
– Money Flow Index (MFI) ইত্যাদি ।
সাইকেল ইন্ডিকেটরগুলো মার্কেটে বিভিন্ন প্যাটার্নের পুনরাবৃত্তি নির্দেশ করে । কিছু জনপ্রিয় সাইকেল ইন্ডিকেটর হলো –
– Elliott Waves
– Fibonacci Time Zones
– Cycle Lines ইত্যাদি ।
বিল ইউলিয়ামস নামের এক ব্যক্তি বিশ্বাস করতেন যে, বিভিন্ন ধরনের অ্যানালাইসিসের (টেকনিক্যাল এবং ফান্ডামেন্টাল) ওপর দৃঢ় বিশ্বাসের কারনেই ট্রেডাররা লস করে । তাই তিনি মার্কেটের গঠনের ওপর ভিত্তি করে কিছু ইন্ডিকেটর প্রকাশ করেন । ইন্ডিকেটরগুলো হলো –
– Fractal (Space)
– The driving force (Power)
– Acceleration / deceleration (Power)
– Zones (Strength and Power)
– Balance Line (Balance)
এছাড়াও আরও কিছু ইন্ডিকেটর আছে যেগুলো আপনাকে আপনার অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিবে । যেমন – ব্যালেন্স, ইকুইটি, লট সাইজ, লিভারেজ, ক্যানডেল শেষ হবার সময়, স্প্রেড ইত্যাদি ।
একটা ব্যাপার মনে রাখা জরুরি । তা হলো, ইন্ডিকেটর কখনও আপনাকে সরাসরি বাই-সেল এর নির্দেশ দিবে না । আপনি ইন্ডিকেটর দিয়ে মার্কেটের বিভিন্ন অবস্থা জানতে পারবেন । আর তার ভিত্তিতেই আপনার ট্রেডিংকে আরও উন্নত করতে পারবেন ।
Relative Strength Index বা RSI হলো Momentum Group অন্তর্ভুক্ত Technical Indicator সমূহের মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত এক জনপ্রিয় Indicator । যা মুদ্রার Overbought ও Oversold অবস্থা নিরুপন করে ।
আমেরিকান মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মিঃ জে ওয়েলস উইল্ডার (J. Welles Wilder) যিনি পরবর্তীতে একজন টেকনিক্যাল অ্যানালিষ্ট হিসেবে বিখ্যাত হয়েছিলেন, ১৯৭৮ সালে তার রচিত গ্রন্থ “New Concept in Technical Trading System” এ প্রথম RSI এর বর্ণনা দেন ।
একটি পেয়ারের অবস্হা কি সেটা সেটা অনেকটাই বোঝা যায় RSI ইন্ডিকেটর এর সাহায্যে । পেয়ারটি Overbought নাকি Oversold সে সম্পর্কে আপনি ধারনা পেতে পারেন RSI ইন্ডিকেটর থেকে । তবে শুধু Overbought and Oversold দেখেই ট্রেড না দেয়া ভাল । আপনি যদি ইন্ডিকেটর ব্যাবহার করতে চান ট্রেড সম্পর্কে নিশ্চিত হবার জন্য আপনাকে ব্যাবহার করতে হবে কয়েকটি ইন্ডিকেটর । শুধু একটি ইন্ডিকেটর দেখেই ট্রেডের সিদ্ধান্ত নিবেন না । ইন্ডিকেটরগুলো শুধু অাপনাকে মার্কেটের বিভিন্ন পরিস্হিতি আপনাকে বর্ননা করে । তাই মার্কেটের পরবর্তী গতিবিধি সম্পর্কে আপনি ইন্ডিকেটর থেকে ধারনা পেতে পারেন । কিন্তু যদি মনে করেন শুধু ইন্ডিকেটর দেখেই ট্রেড দিয়ে যাবেন নিজের এ্যানালাইসিস ছাড়া তাহলে ভুল করবেন লসের সম্ভাবনাই বেশি হতে পারে ।
চার্টে 70 এর যে লেভেল লাইনটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি হচ্ছে ওভারবট লাইন । এর উপর RSI এর লাইনটি থাকলে ধরে নেয়া হয় মার্কেট ওভারবট । অর্থাৎ মার্কেটে বায়ারদের সংখ্যা বেশি । প্রাইস বাড়ছে কিন্তু পেয়ারটি অতিরিক্ত মূল্যায়িত হচ্ছে । শেয়ার মার্কেটে থেকে এটি ভালো বুঝা যায় । ধরুন কোনো শেয়ারের দাম 100 থেকে বেড়ে হঠাৎ 170 হয়ে গেল । 170 এ যখন প্রাইস , তখন শেয়ারটি তার তুলনায় অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে । তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেথা যায় Buyer রাই বাই ট্রেড ক্লোজ করে দিয়ে সেল ট্রেড দেয় । তাই প্রাইস কমে যায় । মার্কেট যখন ওভারবট থাকে ,তখন বাই ট্রেড ক্লোজ এর জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করে সেলের জন্য ভালো পয়েন্ট খোজা শুরু করে বেশিরভাগ বুদ্ধিমান ট্রেডাররা । কিছু কিছু ট্রেডার আছে যারা 70 এর পরিবর্তে 80 লেভেলটি ব্যাবহার করেন ।
চার্টে ৩০ এর যে লেভেল লাইনটি দেখতে পাচ্ছেন, সেটি হচ্ছে ওভারসোল্ড লাইন। এর নিচে RSI এর লাইনটি থাকলে ধরে নেয়া হয় মার্কেট ওভারসোল্ড। অর্থাৎ, মার্কেটে সেলারদের সংখ্যা বেশি। পেয়ারটির প্রাইস তার তুলনায় অনেক বেশি কমে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মার্কেট ওভারসোল্ড অবস্থায় থাকলে দেখা যায় পরবর্তীতে শীঘ্রই প্রাইস আবার বাড়তে শুরু করে। তাই মার্কেট যখন ওভারসোল্ড থাকে, তখন সেল ট্রেড ক্লোজের জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করে বাইয়ের জন্য ভাল পয়েন্ট খোজা শুরু করে বেশিরভাগ বুদ্ধিমান ট্রেডার। কিছু কিছু ট্রেডার অবশ্য ৩০ এর পরিবর্তে ২০ লেভেলটি ব্যবহার করেন।
কিছু কিছু ট্রেডাররা অবশ্য ৭০ এবং ৩০ ছাড়াও একটি অতিরিক্ত ৫০ ভ্যালুর RSI লেভেল ব্যবহার করেন। এই ৫০ লেভেলটি সাধারনত বাই বা সেলের কনফার্মেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়। ট্রেডের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য RSI না ব্যবহার করাই উত্তম। আপনি বাই বা সেল করতে চাইলে, সেক্ষেত্রে ট্রেড এন্ট্রি সঠিক হচ্ছে কিনা তা বোঝার জন্য অন্যান্য ইন্ডিকেটরের পাশাপাশি আপনি RSI এর সহযোগিতা নেবেন।
RSI ইন্ডিকেটরে ২টি সমান্তরাল লাইন থাকে। এদের আলাদা আলাদা ২টি ভ্যালু রয়েছে। সংখ্যাগুলো হচ্ছে ৩০ এবং ৭০. RSI এর লাইনটি যখন ৭০ ক্রস করে ওপরে উঠে যায়, তখন তাকে ওভারবট বলা হয় এবং তখন বাই করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। এই অবস্থা থেকে প্রাইস আবার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই এখান থেকে সেল করলে লাভের সুযোগ থাকে। আবার যখন RSI এর লাইনটি যখন ৩০ ক্রস করে নিচে নেমে যায়, তখন তাকে ওভারসোল্ড বলা হয় এবং তখন সেল করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। এই অবস্থা থেকে প্রাইস আবার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই এখান থেকে বাই করলে লাভের সুযোগ থাকে।
৫০ ভ্যালুর RSI লাইনটি চার্টে থাকে না। আপনাকে এটি অতিরিক্তভাবে যোগ করে নিতে হবে। Charts > Indicator list > Relative Strength Index > Edit > Levels > Add > 50 ভ্যালু দিন। তাহলে আপনি নিচের মত আপনার RSI চার্ট উইন্ডোতে দেখতে পাবেন ।
বাস্তবে ট্রেড করতে গেলে সিদ্ধান্ত নেয়া অতটা সহজ নয়। কারন RSI এর লাইনটি ৩০ এর নিচে চলে আসলেই বাই করার জন্য তা নিরাপদ নয়। কারন ওভারসোল্ড অবস্থায় প্রাইস আরও কমতে পারে এবং অনেক সময় ওভারসোল্ড অবস্থায় অনেকদিন থাকতে পারে। তাই আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে RSI এর রেখাটি কখন ৩০ এর লাইনটি ব্রেক করে আবার ওপরে উঠবে। ৩০ ব্রেক করে উপরে উঠতে থাকলে আপনি বাই করতে পারেন। কিন্তু ৫০ ক্রস করে ওপরে উঠলে বাই করে প্রফিট করার সুযোগ বেশি থাকে । RSI দিয়ে সেলের সিদ্ধান্ত । RSI এর লাইন 70 এর উপর চলে আসলেই সেল করার জন্য তা নিরাপদ নয় । কারন ওভারবট অবস্হায় প্রাইস আরো বাড়তে পারে । এবং অনেক সময় ওভারবট অবস্হায় অনেকদিন থাকতে পারে । তাই আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে RSI এর রেখাটি কখন 70 এর লাইনটি ব্রেক করে আবার নিচে নামবে । 70 ব্রেক করে নিচে নামতে থাকলে আপনি সেল করতে পারেন । কিন্তু 50 ক্রস করে নিচে নামলে সেল করে প্রফিট করার সুযোগ বেশি থাকে ।
Stochastic Oscillator হলো এমন একটি ইন্ডিকেটর যা দিয়ে আপনি কোন কারেন্সি পেয়ারের Overbought ও Oversold অবস্থা বুঝতে পারবেন । এটি আমাদের কখন ট্রেন্ডের সমাপ্তি হতে পারে তাও বুঝতে সাহায্য করে ।
Stochastic Oscillator এ মুলত ২টি লাইন থাকে । একটি সবুজ ও অন্যটি লাল ডটেড লাইন । সবুজ লাইনটি কে বলে “%K” এবং লাল লাইনটিকে বলে “%D” । লাল লাইনটি সবুজ লাইনের মুভিং অ্যাভারেজ লাইন । এখানে %K হলো হলো Stochastic বের করতে যতগুলো পিরিয়ড নেয়া হয় তার সংখ্যা । আর %D হলো %K এর মুভিং অ্যাভারেজ বের করার টাইম পিরিয়ডের সংখ্যা ।Stochastic Oscillator আরও দুইটি সমান্তরাল লাইন ৮০ এবং ২০ দ্বারা চিহ্নিত করা থাকে । যার ফলে Stochastic Oscillator ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত সমগ্র অঞ্চলটি ৩টি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে । উপরের অংশে থাকে ১০০ থেকে ৮০, মাঝের অংশে থাকে ৮০ থেকে ২০ এবং নিচের অংশে থাকে ২০ থেকে ০ পর্যন্ত ।
Stochastic আমাদের বলে দেয় কখন মার্কেট Overbought এবং কখন মার্কেট Oversold । যখন Stochastic লাইন ৮০’র ওপরে থাকে তখন বুঝতে হবে যে মার্কেট এখন Overbought । আর যখন Stochastic লাইন ২০’র নিচে থাকে তখন বুঝতে হবে যে মার্কেট এখন Oversold । আর মার্কেট যখন Oversold থাকে তখন আমরা বাই করি এবং মার্কেট যখন Overbought থাকে তখন সেল করি ।
Stochastic ইন্ডিকেটরের বেসিক কার্যপ্রণালী এটাই । অনেক ট্রেডার Stochastic কে অন্যভাবেও ব্যবহার করেন । কিন্তু মার্কেটের Overbought অথবা Oversold অবস্থা বোঝাতেই Stochastic ইন্ডিকেটরটি মূলত ব্যবহৃত হয় ।
মার্কেট ভোলাটিলিটি অনুধাবন করার জন্য Bollinger Bands ইন্ডিকেটরটি ব্যবহার করা হয় ।এই ছোট টুলসটি আমাদের বলে দিবে যে, মার্কেট কি এখন শান্ত না অশান্ত । যখন মার্কেট শান্ত থাকে তখন ব্যান্ড ২টি সংকুচিত হয়ে যায়, আর যখন মার্কেট অশান্ত থাকে তখন ব্যান্ড ২টি প্রশস্ত হয়ে যায় ।
১৯৮০ সালের প্রথম দিকে আমেরিকার অর্থনীতিবিদ এবং টেকনিক্যাল অ্যানালিষ্ট John Bollinger (জন বলিঙ্গার) Bollinger Bands নামে একটি Standard Deviation Channel উদ্ভাবন করেন । যা একটি শেয়ারের মূল্যের স্বাভাবিক বিচ্যুতি (Volatility) বা উত্থান-পতন সীমারেখা নির্দেশ করে । এ কারণেই Bollinger Bands কে একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর হিসেবে ধরা হয় ।
Bollinger Bands এর গঠন খুবই সহজ । এর ৩টি অংশ – Upper Band, Middle Band এবং Lower Band । Middle Band হিসেবে সাধারণভাবে ২০ দিনের Simple Moving Average নেয়া হয় । ২০ দিনের Standerd Deviation বের করে তাকে ২ দিয়ে গুণ করে তা ২০ দিনের SMA এর সাথে যোগ করে Upper Band পাওয়া যায় এবং ২০ দিনের Standerd Deviation এর সাথে ২ দিয়ে গুণ করে তা ২০ দিনের SMA এর সাথে বিয়োগ করে Lower Band পাওয়া যায় ।
– Middle Band = 20 Day Simple Moving Average (SMA)
– Upper Band = 20 Day SMA + (20 Day Standerd Deviation of Price X 2)
– Lower Band = 20 Day SMA – (20 Day Standerd Deviation of Price X 2)
এখানে উল্লেখিত Standerd Deviation হলো পরিসংখ্যানের একটি হিসাব । এটা Software নিজেই করে থাকে, তাই এটা নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামালেও চলবে । (ছবি -১)
Upper Band টি মুদ্রার দামের সর্বোচ্চ সীমা এবং Lower Band টি মুদ্রার দামের সর্বনীম্ন সীমা নির্দেশ করে । অর্থাৎ, মুদ্রার দাম Upper Band এর বাইরে চলে গেলে আমরা বিক্রয় এবং মুদ্রার দাম Lower Band এর বাইরে গেলে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারি । এখন আমরা দেখব Bollinger Bands এর ব্যবহারের সহজ কিছু কৌশল ।
Bollinger Bounce সাধারণত ৩ ভাবে হয় । যথা –
📎 (১.) Price প্রায়ই Bollinger Bands এর Upper Bands থেকে Bounce করে Lower Band এ এবং Lower Band থেকে Bounce করে Upper Band এ যায় । এটা বেশি দেখা যায় Sideway ট্রেন্ডের সময় ।
(ছবি ২) চার্টে দেখা যাচ্ছে, মুদ্রার দাম বৃদ্ধি পেয়ে Upper Band বা এর কিছু বাইরে চলে আসার সাথে সাথেই আবার ব্যান্ডের ভেতরে চলে আসছে । আপার বলিঙ্গার ব্যান্ডটি হলো মুদ্রার স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশনের আপার লিমিট । তাই লিমিটের বাইরে যাওয়া মাত্রই দাম বেশিরভাগ সময়ে আবার ডেভিয়েশন লিমিটের ভেতরে চলে আসে ।
এ রকম Bounce হবার কারন হলো Bollinger Bands এর Upper ও Lower Band ২টি ডাইনামিক সাপোর্ট এবং রেসিসট্যান্স লেভেল হিসেবে কাজ করে । আপনি যত বড় টাইমফ্রেম ব্যবহার করবেন, ব্যান্ডগুলো তত শক্তিশালি হবে । মার্কেট যখন একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ঘোরাফেরা করে এবং কোন নির্দিষ্ট ট্রেন্ড থাকে না, তখন এই স্ট্রাটেজিটি ভাল কাজ করে ।
📎 (২.) Up Trend এর সময় মুদ্রার দাম Upper Band বা এর কিছু বাইরে থেকে Bounce করে Bollinger Bands এর মাঝামাঝি আসে এবং তারপর আবার এখান থেকে Bounce করে Upper Band এ চলে যায় । এখানে লক্ষ্যণীয় যে, EMA ২২ মোটামুটিভাবে Bollinger Bands এর মাঝ বরাবর অবস্থান করে । (ছবি – ৩)
📎 (৩.) Down Trend এর সময় মুদ্রার দাম Lower Band বা এর কিছুটা বাইরে থেকে Bounce করে Bollinger Bands এর মাঝামাঝি আসে এবং তারপর আবার এখান থেকে Bounce করে Lower Band এ যায় । (ছবি -৪)
মুদ্রার দাম যখন খুব বেশি উঠানামা করে না তখন Bollinger Bands আস্তে আস্তে সংকুচিত হতে থাকে এবং এক সময় দেখা যায় Upper এবং Lower Band দুটি খুব কাছাকাছি চলে আসে । এই অবস্থাকে Bollinger Squeeze বলে ।
Bollinger Squeeze তৈরী হলে বুঝতে হবে মুদ্রার দামের উত্থান পতনের হার কমতে কমতে একেবারে স্থিতিশীল অবস্থায় চলে এসছে । এই অবস্থার পর সাধারণত দুই রকম বিস্ফোরণ ঘটতে পারে । দুইটি উদাহরণের মাধ্যমে আমরা এই ব্যাপারটা বুঝতে পারব । (ছবি -০৫)
📎 (১.) Bollinger Squeeze অবস্থায় প্রাইস যদি Upper Band ব্রেক করে উপরে উঠে যায় তাহলে সেই মুদ্রার দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে । নিম্নের চিত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি Bollinger Squeeze অবস্থার পর প্রাইস Upper Band ব্রেক করে অনেক উপরে উঠে গেছে ।
📎 (২.) Bollinger Squeeze অবস্থায় প্রাইস যদি Lower Band ব্রেক করে নিচে নেমে যায় তাহলে সেই মুদ্রার দাম অনেক কমে যেতে পারে । নিম্নের চিত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি Bollinger Squeeze অবস্থার পর প্রাইস Lower Band ব্রেক করে অনেক নিচে নেমে গেছে ।
টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের মধ্যে Moving Average (MA) নামটাই প্রথমে বলতে হয় । এটা হলো সবচেয়ে পুরানো, সহজ এবং সবচেয়ে বেশি কার্য্যকরী ইন্ডিকেটর । নতুন থেকে শুরু করে প্রফেশনাল ট্রেডার সবাই মুভিং অ্যাভারেজ টুলটি ব্যাবহার করে থাকে ।
একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরিধিতে মার্কেটের অ্যাভারেজ প্রাইস ভ্যালু কি ছিল তা বোঝার জন্য মুভিং অ্যাভারেজ খুবই জনপ্রিয় এবং সচরাচর ব্যবহারিত একটি টুল । এটি খুব সহজেই আমাদের মার্কেট ট্রেন্ডও বুঝিয়ে দেয় । মুভিং অ্যাভারেজ সাধারনভাবে সম্ভব্য সাপোর্ট এবং রেজিসট্যান্সের এরিয়া এবং গতি পরিমাপক একটি টুল হিসেবে ব্যবহারিত হয় । এই টুলটিকে রোলিং (Rolling) বা রানিং (Running) অ্যাভারেজ টুলও বলা হয়ে থাকে এবং এই মুভিং অ্যাভারেজকে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের প্রাণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ।
প্রাইস চার্টে একটি লাইনের আকারে মুভিং অ্যাভারেজ প্রকাশ করা হয়ে থাকে । এই লাইনের মাধ্যমে কোন কারেন্সির গড় মূল্য প্রকাশ করা হয় । আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে মুভিং অ্যাভারেজের মাধ্যমে কোন পেয়ারের বিভিন্ন সময়কালের যেমন ১০, ১১, ২৫, ২৬, ৫০, ১০০, ২০০ বা যেকোন সংখ্যক দিনের ক্লোজিং প্রাইসের গড় নিরুপন করা যায় । এই বিভিন্ন সংখ্যক দিনকে Period বলে । যদি কোন পেয়ারে প্রাইস বাড়তে থাকে তাহলে তার মুভিং অ্যাভারেজও বাড়তে থাকে বা উপরের দিকে যেতে থাকে আর কোন শেয়ারের দাম কমতে থাকলে তার মুভিং অ্যাভরেজও কমতে থাকে বা নিচের দিকে নামতে থাকে । মুভিং অ্যাভরেজ দেখেই বলে দেওয়া যায় এটি Up Trend না Down Trend । এ থেকেই প্রাথমিকভাবে Buy বা Sell Signal পাওয়া যায় ।
– প্রাইস ডিরেকশন (আপ ট্রেন্ড, ডাউন ট্রেন্ড নাকি সাইডওয়ে ট্রেন্ড তা বুঝতে),
– প্রাইস অবস্থান (Buy বা Sell বুঝতে),
– সাপোর্ট এবং রেজিসট্যান্স লেভেলের প্রাইস বুঝতে ।
মুভিং অ্যাভারেজ প্রধানত ৪ প্রকার । যথা –
1. Simple Moving Average (SMA)
2. Linear Weighted Moving Average (WMA)
3. Exponential Moving Average (EMA)
4. Smoothed Moving Average
(1.) Simple Moving Average (SMA) : খুব সাধারণভাবে কোন সংখ্যক দিনের Closing Price সমূহের যোগফলকে দিনের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করে Simple Moving Average পাওয়া যায় । একে SMA দ্বারা প্রকাশ করা হয় । আমরা যদি কোন পেয়ারের ১০ দিনের Simple Moving Average আজকের দিনে বের করতে চাই তাহলে আজ এবং আগের ৯ দিন মোট ১০ দিনের Closing Price গুলো যোগ করে ১০ দিয়ে ভাগ করতে হবে ।
(2.) Linear Weighted Moving Average (WMA) : SMA তে Period এর প্রত্যেকটি Closing Price কে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয় । কিন্তু Linear Weighted Moving Average (WMA) এ অতি সম্প্রতিক Closing Price কে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । কারণ একটি কারেন্সির দাম আগামীকাল কেমন হবে তা আজকে বা গতকাল এর দাম কেমন ছিল তার উপর নির্ভর করে, যতটা না নির্ভর করে ১০ দিন বা ১৫ দিন আগের দামের উপর । এই বিষয়টা চিন্তার মধ্যে রেখে WMA এর সূত্র তৈরী করা হয়েছে । গতকালের দামের Weight সবচেয়ে বেশি ধরে এবং তার আগের দাম গুলোকে ক্রমান্বয়ে কম Weight সম্পন্ন ধরে নিয়ে গড় নিরুপন করাকে Linear Weighted Moving Average (WMA) বলে ।
(3.) Exponential Moving Average (EMA) : Simple Moving Average এ কিছু সমস্যা রয়েছে । একটু ব্যাখ্যা করলে বুঝতে পারবেন । ধরুন, একটি শেয়ারের ১১ দিনের SMA হিসাব করা হচ্ছে । তাহলে প্রতিদিন একটি করে নতুন Closing Price এই ১১ দিনের Period এর মধ্যে ঢুকে ১ নম্বরে বসবে এবং গতকাল যেটা ১১তম দিন ছিল সেটা বাদ পড়ে যাবে । ব্যাপারটা তো এইরকম তাই না ? এখন হঠাৎ করে যদি একদিন শেয়ারের দাম একটু বেশি বেড়ে যায় তাহলে আমাদের SMA বেড়ে যাবে এবং Buy Signal দেবে । হ্যাঁ এটা ভালো । আমরা চাই প্রতিটি নতুন দাম বৃদ্ধির ঘটনা SMA আমাদেরকে জানিয়ে দিক, কিন্তু কোন বেশি উচ্চতার Closing Price যদি এর Period থেকে বাদ পড়ে যায় তাহলে সাথে সাথেই SMA পড়ে যাবে এবং আমাদের Sell Signal দিয়ে দেবে, এটি প্রকৃত Sell Signal যদি নাও হয় তবুও । এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা থেকেই Exponential Moving Average এর উদ্ভাবন । একে EMA দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।
(4.) Smoothed Moving Average : Smoothed Moving Average এর ব্যবহার নেই বললেই চলে । তাই এটি সম্পর্কে আর বর্ণনা করা হলো না ।
উপরের ৪ প্রকার Moving Average এর মধ্যে এক একজন এক একটি ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন । আমরা দেখলাম, SMA সাধারণভাবে শুধুমাত্র একটি Period এর মূল্য সমূহের গড় প্রকাশ করে, EMA একটি Period এর মূল্য সমূহের গড় প্রকাশ করে তবে এতে Period থেকে বাদ পড়ে যাওয়া মূল্য সমূহের কিছুটা রেশ থেকে যায় । কারণ, এতে আগের দিনের EMA বিদ্যমান, আর WMA একটি Time Frame এর মূল্য সমূহের মধ্যে সাম্প্রতিক মূল্যের Weight বেশি বিবেচনা করে গড় নির্ণয় করে । একারণে SMA এর চেয়ে EMA ও WMA ভালো কাজ করে । Analysis করার সময় আপনি এই ৩ প্রকার Moving Average এর মধ্যে যে কোন একটি ব্যবহার করে এর পার্থক্য দেখতে পারেন । তবে যেহেতু EMA অপেক্ষাকৃত বেশি নির্ভরযোগ্য Signal দেয় সেহেতু আমরা আমাদের সকল ক্ষেত্রে EMA ই ব্যবহার করব ।
MACD হলো Moving Average Convergence Divergence । এটি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের খুবই জনপ্রিয় একটি ইন্ডিকেটর । সারা পৃথিবী জুড়ে বিপুল পরিমানে ফরেক্স ট্রেডারদের অন্যতম জনপ্রিয় একটি টুল । মার্কেট ট্রেন্ড সনাক্ত করার জন্য এই ইন্ডিকেটরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আমরা অনেকেই অনেক ভালো ট্রেড করি কিন্তু শুধুমাত্র সঠিক ট্রেন্ডে ট্রেড করতে না পারার কারনে হঠাৎ ট্রেন্ড চেঞ্জের ফলে অনেকেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখিন হন । এই দিক থেকে MACD আপনাকে রাইট ট্রেন্ডে থাকতে সাহায্য করবে ।
MACD কে MAC-D (ম্যাক-ডি) বলে থাকে অনেকে । এই ইন্ডিকেটর এর মূল কম্পোনেন্ট হলো MACD Main Line এবং MACD Signal Line । MACD হলো মূলত Exponential Moving Average 12 এবং 26 পিরিয়ড এর মধ্যকার পার্থক্য । এই ক্ষেত্রে MACD 12EMA থেকে 26EMA মাইনাস করে যা পায় তাই হলো MACD Main Line । MACD এর সাথে আরও একটি Signal Line থাকে যা বায় এবং সেল সিগনাল দেয় । তবে মেইন লাইনটি সরাসরি লাইন হিসেবে না থেকে (হিস্টোগ্রাম) বার গ্রাফ হিসেবে একটি হরাইজেন্টাল লাইন (যাকে 0 লাইন বলা হয়) এর উপরে ও নিচে বায় এবং সেল সিগনাল ট্রেন্ড হিসেবে থাকে ।
চিত্র ০১টি লক্ষ্য করুন, যে লাল রেখাটি দেখা যাচ্ছে, তা হলো Signal Line এবং বার বা হিস্টোগ্রাম মিলিয়ে হলো MACD । ডিফল্টভাবে MACD Parameter 12EMA and 26EMA সেট করা থাকে । আর Signal Line ভ্যালু হিসেবে MACD এর 9SMA Period সেট করা থাকে ।
MACD = Faster EMA (12EMA) – Slower EMA (26EMA)
Signal Line = MACD (12EMA – 26EMA) এর 9SMA
অনেককেই দেখা যায় ২টি লাইনের MACD ইন্ডিকেটর ব্যবহার করতে । এটি মেটাট্রেডারে ডিফল্ট থাকে না । আলাদাভাবে সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হয় । এর ২টি লাইনের একটি হচ্ছে Main Line অর্থাৎ 12EMA থেকে 26EMA মাইনাস করে যা পাওয়া যায় তাই লাইনের আকারে প্রকাশ করে । আর অপরটি হচ্ছে Signal Line । এক্ষেত্রে Histogram হচ্ছে Main Line ও Signal Line কে বিয়োগ করে যে সকল মান পাওয়া যায়, সে সকল মানসমূহকে বারের আকারে দেখানো হয় ।
সাধারণভাবে মুভিং এভারেজ ক্রস ওভারেই বায় বা সেল সিগনাল পাওয়া যায় । যদি MACD লাইন 0 level এর উপরে থেকে 12EMA লাইন 26EMA কে ক্রস করে মার্কেট তখন বুলিশ । বিপরীতভাবে যদি MACD লাইন 0 Level এর নিচে থেকে 26EMA লাইন 12EMA ক্রস করে মার্কেট তখন বিয়ারিশ । এটা সাধারণ ফর্মূলা যা অন্য ইনডিকেটর দিয়ে ও বুঝতে পারা যায় । তাহলে MACD কেন ব্যাবহার করবো ? হ্যাঁ মজাটা এখানেই । বড় বড় ট্রেডাররা MACD ব্যবহার করেন Divergence ও Convergence নির্ণয়ের জন্য । তারা Divergence ও Convergence নির্ণয় করে ট্রেড করেন এবং এই ট্রেডের Wining রেশিও অনেক অনেক ভলো । Divergence ও Convergence নিয়ে আমিও বিস্তারিত আলোচনা করেছি স্ট্রাটেজি অংশে । Divergence ও Convergence বুঝতে MACD ইন্ডিকেটরটি কি, এর গঠন প্রণালী জানা জরুরী ছিল তাই এখানে আলোচনা করা মাত্র ।
Average Directional Movement Index বা ADX ইন্ডিকেটরটি আপনাকে বর্তমান ট্রেন্ডের দৃঢ়তা সম্পর্কে অবহিত করবে । এটা আপনাকে মার্কেট আপট্রেন্ডে না ডাউনট্রেন্ডে আছে তা বলে দিবে না, কিন্তু মার্কেট কি একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ঘুরছে না মার্কেটে নতুন কোন ট্রেন্ড তৈরি হতে যাচ্ছে তা জানতে আপনাকে সাহায্য করবে ।
এই ইন্ডিকেটরটি একটি অ্যাভারেজ ডিরেকশনাল লাইনসহ একটি প্লাস (+) ডিরেকশন এবং একটি মাইনাস (-) ডিরেকশন লাইনে তিনটি লেভেলের মাধ্যমে ট্রেডিং সিগনাল প্রদান করে ।
লাইন পরিচিতিঃ (চিত্র ১)
ADX লাইন = LightSeaGreen
+DI লাইন = YellowGreen
-DI লাইন = Wheat
👉 ADX লাইন ০-২৫ লেভেলের নিচে অবস্থান করলে – বর্তমান ট্রেন্ডটি খুবই দুর্বল বা ট্রেন্ড নাই ।
👉 ADX লাইন ২৫-৫০ লেভেলের মধ্যে মুভ করলে – বর্তমান ট্রেন্ডটি শক্তিশালী ।
👉 ADX লাইন ৫০-৭৫ লেভেলের মধ্যে মুভ করলে – ট্রেন্ড খুব শক্তিশালী ।
👉 ADX লাইন ৭৫-১০০ লেভেলের মধ্যে মুভ করলে – ট্রেন্ড সর্বোচ্চপরিমাণে ।
👉 +DI লাইন যদি –DI লাইন এর উপরে থাকে – আপট্রেন্ড পজিশন ।
👉 -DI লাইন যদি +DI লাইন এর উপরে থাকে – ডাউনট্রেন্ড পজিশন ।
আর যখন দুটি DI লাইন ক্রসিং হয় তখন ট্রেন্ড চেঞ্জ হচ্ছে বুঝতে হবে এবং তারপরেই নিশ্চিত হতে পারবেন যে পরবর্তী ট্রেন্ডটি কি হবে।
২ চিত্র মতে, -DI লাইন +DI লাইনকে ক্রস করে উপরে উঠছে যা ডাউনট্রেন্ড সিগনাল দিচ্ছে কিন্তু অন্যদিকে ADX লাইন ২০ লেভেলের নিচে চলে যাচ্ছে অর্থাৎ ট্রেন্ড সেল হলেও তা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, তাই এই অবস্থায় ট্রেড না করে ADX ভ্যালু ২০ লেভেলের উপরে উঠার জন্য অপেক্ষা করুন ।
সাধারনতঃ ADX -/+ লাইনের স্থান নির্ণয়ের মাধ্যমেই আপনাকে ট্রেডে ঢুকতে হবে । যখন ADX লাইন ২৫ লেভেল ক্রস করে এবং +DI লাইন –DI লাইন এর উপরে থাকে তখন বায় ট্রেডে ওপেন করা যাবে । বিপরীতভাবে ADX লাইন ২৫ লেভেল ক্রস করলে –DI লাইন যখন +DI লাইন এর উপরে থাকবে তখন সেল ট্রেড ওপেন করা যাবে ।
অধিকাংশ ইন্ডিকেটর আপনাকে নতুন ট্রেন্ড শুরু হবার সিগন্যাল দেয়। নতুন ট্রেন্ড চিহ্নিত করা যেমন জরুরি, তেমনি ট্রেন্ডের সমাপ্তি চিহ্নিত করাটাও ততটা জরুরী। যদি সঠিক সময়ে ট্রেড ক্লোজ না করা হয় তবে সঠিক সময়ে ট্রেড ওপেন করে খুব একটা লাভ নেই।
Parabolic SAR (Stop And Reversal) ইন্ডিকেটরটি ট্রেন্ড কখন শেষ হতে পারে সে সম্পর্কে ধারনা পেতে আমাদের সাহায্য করে। Parabolic Sar চার্টে ডট অথবা পয়েন্টের সাহায্যে ট্রেন্ডের পরিবর্তন নির্দেশ করে।
Parabolic SAR খুব সহজ এবং সাধারন একটি ইন্ডিকেটর। যখন ক্যানডেলের নিচে ডট আসে, তখন তা বাই সিগন্যাল বোঝায়। আর যখন ক্যানডেলের ওপরে ডট আসে তখন তা সেল সিগন্যাল বোঝায়।
ট্রেন্ডিং মার্কেটে এই ইন্ডিকেটরটি অনেক ভাল কাজ করবে। কিন্তু মার্কেট যখন সাইডওয়ে ট্রেন্ডে থাকে, তখন আপনি ভাল ফল পাবেন না।
কখন আপনার ট্রেড ক্লোজ করা উচিত তা আপনি Parabolic Sar এর সাহায্যে বুঝতে পারেন। নিচের EURUSD চার্টে দেখুন Parabolic Sar exit সিগন্যাল হিসেবে কাজ করেছে ডেইলি চার্টে।
৩ টি ডট দেখলেই আপনি আপনার পূর্বের ট্রেড ক্লোজ করে নতুন ট্রেন্ডের দিকে নতুন ট্রেড ওপেন করতে পারেন।
মনে করুন আপনি একটা যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করার জন্য গিয়েছেন, গিয়ে দেখলেন আপনার জন্য বহু প্রকার অস্ত্র রয়েছে । এখন আপনি কি করবেন, একজন মানুষের পক্ষে তো আর অনেকগুলো অস্ত্র চালানো সম্ভব না । নিশ্চয় আপনাকে এমন দুই-একটি অস্ত্র বেছে নিতে হবে যেগুলো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভালো কাজে দেবে এবং আপনি যেগুলো খুব ভালো চালাতে পারবেন । যুদ্ধে জেতার জন্য অনেকগুলো অস্ত্রের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধুমাত্র একটি যুৎসই অস্ত্র যার উপর আপনার ভালো দক্ষতা রয়েছে ।
টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের জন্যও এত এত ইন্ডিকেটরের প্রয়োজন নেই ।
এখানে খুব গুরুত্বপূর্ন ৯টি ইন্ডিকেটর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই ইন্ডিকেটরগুলো ব্যবহার করে যদি কোন সিদ্ধান্তে আসতে না পারেন তবে ৫০টি ইন্ডিকেটর ব্যবহার করে কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হবে না ।
কোন ইন্ডিকেটর যথাযথভাবে প্রয়োগ করে তা দিয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে হলে অবশ্যই ঐ ইন্ডিকেটরটির গঠন প্রণালী এবং কিভাবে কাজ করে সে ব্যাপারে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে । অনেকে অবশ্য এ কথাটির সাথে দ্বি-মত পোষণ করেন । তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, সাইকেল চালানো শিখতে হলে কি সাইকেল কিভাবে বানানো হয় তাও শিখতে হয় ? আমি বলব হ্যাঁ শিখতে হয় । কারণ আপনার চলার পথ সবসময় মসৃণ হবে না । প্রায়ই আপনাকে বিভিন্ন জায়গায় ধাক্কা থেতে হবে, এতে আপনার সাইকেলটির বিভিন্ন ঠিকমতো কাজ নাও করতে পারে । এই অবস্থায় আপনার যদি সাইকেলের অতি প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা না থাকে তাহলে আপনা কে রাস্তার মাঝখানে অচল সাইকেল নিয়ে বিপদে পড়তে হবে । টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস হলো ফিন্যানসিয়াল মার্কেটে সহজে দ্রুতগতিতে ছোটার জন্য একটি বাহনের মতো এবং ইন্ডিকেটরগুলো হলো এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশের মতো । আরেকটু অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয় যে, আমরা কোন ভাষা শিখতে গেলে যেমন প্রথমে শিখি বর্ণমালা তারপর শব্দ গঠন এবং তারপর শিখি বিভিন্ন ব্যাকরণ, ঠিক তেমনি টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস হলো শেয়ার বাজার বুঝতে পারার একটি ভাষা যার বর্ণমালা হলো বিভিন্ন প্রকার ক্যান্ডেলষ্টিক, এক বা একাধিক ক্যান্ডেলষ্টিক দিয়ে গঠিত প্যাটার্ণ হলো শব্দ গঠনের মতো এবং ইন্ডিকেটরগুলো হলো এই ভাষার ব্যাকরণ । তাই ইন্ডিকেটরগুলো আমরা একটু মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করব ।
ফরেক্স বা ট্রেড ব্যবসা সম্পূর্ন একটি প্রাকটিক্যাল বিষয়। এখানে কম জানা বা অল্প জ্ঞানের কোন জায়গা নাই। ফরেক্স বা ট্রেড (শেয়ার) ব্যবসা করতে হলে, পরিপূর্ন ভাবে জানতে হবে। কারন আপনার টাকা শুধু মাত্র আপনারই টাকা। আপনার টাকার মায়া আপনার না থাকলে অন্য কাহারো থাকবে না। যদি আপনি মনে করেন এই সেক্টর হতে আপনি কিছু করতে চান, তাহলে আপনাকে যে কোন মেনটরের কাছে হাতে কলমে শিখতে হবে। তাহলেই আপনি আপনার বিনিয়োগ সিকিউর করে, আপনার কাংখিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন। পরিশেষে ফরেক্স মাকের্টে সকলের সাফল্যয়তা কামনা করছি।
ধন্যবাদ