আপনার এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনার । যথাযথ প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিন:
সুযোগ পেলেই এলাকাবাসীকে করোনাভাইরাসের কারণ এবং প্রতিরোধের উপায়গুলি নিয়ে সচেতন করুন;
সঠিক তথ্য প্রদান করুন এবং এলাকাবাসীর ভুল ধারণাগুলোকে সংশোধন করুন। সঠিক তথ্যের জন্য এই গাইডলাইন এবং সরকারি ওয়েবসাইট (www.corona.gov.bd) অনুসরণ করুন;
সচেতনতা তৈরিতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের (যেমন চেয়ারম্যান, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত) সাহায্য নিন;
মানুষকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি জানানো এবং উৎসাহিত করার জন্য ফার্মেসি এবং অন্যান্য সামাজিক স্থানে পোস্টার / ব্যানার প্রদর্শনের ব্যবস্থা করুন। এলাকায় মাইকিং এর ব্যবস্থাও করতে পারেন;
এলাকাবাসীকে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে বলুন । কেউ অন্য এলাকা থেকে এসে থাকলে তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলুন;
এলাকার জনস্বাস্থ্য প্রতিনিধিদের (সিভিল সার্জন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ইত্যাদি) সাথে পরিচিত হয়ে নিন এবং তাদের ফোন নম্বর কাছে রাখুন;
ওষুধের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করুন (বিশেষত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানির মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগীদের জন্য);
অ্যাম্বুলেন্স কোন কারণে না পাওয়া গেলে রোগীদের হাসপাতালে নেওয়ার বিকল্প যানবাহন নির্দিষ্ট করে (রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি / ইজিবাইক) তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখুন;
সর্বোপরী, এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করুন যে যথাযথ পদক্ষেপ অনুসরণ করলে এই রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং আতঙ্কিত হবার কোন কারণ নেই।
কোন অবস্থাতেই বড় সমাবেশ বা সভার আয়োজন করবেন না, তাতে করোনা ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে।
যদি এলাকায় কোন ব্যক্তির মাঝে করোনাভাইরাস এর লক্ষণসমূহ চিহ্নিত হয়, তবে তাকে সাথে সাথে ৩৩৩ হটলাইন বা ঝুঁকি নির্ণয় অ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্ট করুন। সংক্রমণ রোধে অবশ্যই রোগী এবং তার পরিবারকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।
বিচ্ছিন্ন রাখার পরেও যদি রোগটি ঐ পরিবারের বাহিরে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তবে তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্যই পুরো গ্রাম, মহল্লা বা এলাকার সবাইকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করতে হবে এবং সকল প্রকার সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখতে হবে, যেমন :
ধর্মীয় সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিল, মসজিদে নামাজ ইত্যাদি
বিবাহ ও অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠান
বাজার এবং হাট
স্কুল / কলেজ
বাচ্চাদের বাইরে খেলাধূলা
চায়ের দোকানসহ যেকোন জায়গায় আড্ডা বা বিনোদনের জন্য এক জায়গায় জড়ো হওয়া
শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে যেমন – ওষুধ এবং খাবার সামগ্রী কিনবার জন্য বাইরে যাওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও:
গ্রামের/এলাকার মানুষেরা খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্য এলাকায় যাতায়াত বা ভ্রমণ করবেন না;
অন্য গ্রাম/এলাকার লোকজন যেন আপনার গ্রামে/এলাকায় আসা থেকে বিরত থাকে;
অস্থায়ী কর্মচারি, গৃহপরিচারিকা বা পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এ সময় ঘর-বাড়িতে প্রবেশ করবেন না;
এলাকায় শেষ রোগীটি চিহ্নিত হওয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন রোগী না পাওয়া গেলে স্থানীয় জনস্বাস্থ্য প্রতিনিধির সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন।
সমাজের দরিদ্র লোকেরা বিচ্ছিন্ন থাকার সময়ে দৈনিক আয়ের অভাবে ভোগান্তির শিকার হতে পারে। তাই পুরো সমাজের সুরক্ষার জন্য এই সময় বিত্তবানদের উচিত হবে অভাবীদের অর্থ এবং খাদ্য দিয়ে সহায়তা করা।
রোগীর উপসর্গগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা;
যদি নতুন উপসর্গ দেখা দেয় অথবা আগের উপসর্গের অবনতি হয় তবে সাথে সাথে হটলাইনে যোগাযোগ করুন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্রমণের সময় রোগী যেন মাস্ক পরে থাকে সেটি নিশ্চিত করুন এবং কোন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে দিবেন না;
রোগীর আইসোলেশন নিশ্চিত করুন। আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় রোগীর ব্যবহার্য জিনিস যেমন, থালা, বাসন, গ্লাস, তোয়ালে, জামা-কাপড়, বিছানার চাদর ইত্যাদি সম্পূর্ণ আলাদা করে দিন যেন একই পরিবারের আর কেউ সেটি ব্যবহার না করতে পারে| সবগুলো জিনিস প্রতিনিয়ত জীবাণুমুক্ত করতে হবে;
রোগী শিশু হলে তাকে পর্যাপ্ত খেলনা দিয়ে আইসোলেশনে রাখুন। খেলনাগুলো প্রতিনিয়ত জীবাণুমুক্ত করতে হবে;
রোগীকে ১৪ দিন অবশ্যই আইসোলেশন নিশ্চিত করুন। এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে আইসোলেশনের সময়সীমা আরো বাড়তে অথবা কমানো হতে পারে;
আইসোলেশনে থাকার সময় যেমন রোগীর মন ভালো থাকে সেটি নিশ্চিত করুন। রোগী যেন পর্যাপ্ত খাবার ও ব্যায়ামের সুযোগ পান সেটিও নিশ্চিত করুন;
বর্তমানে যিনি সুস্থ আছেন এবং উল্লেখিত কোন উপসর্গ নেই কেবল তিনিই পরিচর্যাকারী হতে পারবেন;
রোগীর সাথে বাসার অন্য কারো সরাসরি মেলামেশা করতে দিবেন না;
রোগীর পরিচর্যা করতে যাওয়ার আগে ও পরে সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে;
রোগীর পরিচর্যার সময় একবার ব্যবহারযোগ্য মেডিকেল মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করুন;
রোগীর যে কোন বর্জ্য মুক্তস্থানে ফেলবেন না, ঢাকনাযুক্ত ময়লার বিনে সব ময়লা ফেলতে হবে;
আক্রান্ত রোগীর ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র, টয়লেট প্রতিদিন অন্তত একবার করে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন;
যদি রোগীর গুরুতর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তবে তাকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিতে হবে;
রোগীকে হাসপাতালে নেবার জন্য পূর্বে ঠিক করে রাখা যানবাহনের সাথে যোগাযোগ করুন। নিশ্চিত করুন ড্রাইভার এবং রোগীর সাথে যিনি থাকবেন তিনি যেন পিপিই দ্বারা সুরক্ষিত থাকেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমিত ৫০ জনের মধ্যে ১ জনের এই রোগে মারা যাবার সম্ভাবনা রয়েছে;
সতর্কতার সাথে মৃত ব্যক্তির দাফন/সৎকার করলে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে সংক্রমণ ছড়ায় না;
স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে মৃত্যুর বিষয়ে অবহিত করে দাফন বা শবদাহের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত কর্মীর সাহায্য নিতে পারেন;
নিম্নলিখিত নির্দেশাবলী মেনে চলুন:
মৃতদেহ নিজ নিজ ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী দাফন/সৎকারের ব্যবস্থা করা যাবে;
মৃতদেহ বডি ব্যাগ অথবা সাদা রঙের প্লাস্টিক ব্যাগের মাধ্যমে আবৃত করে নিতে হবে এবং প্লাস্টিক অথবা বডি ব্যাগসহ মৃতদেহ দাফন করতে হবে;
মৃতদেহ জীবাণুনাশক দ্রবণ অথবা সাবান-পানি দিয়ে গোসল করিয়ে নিতে হবে। গোসল করানো পানি একটি গর্তের মধ্যে ফেলে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে হবে। এক্ষত্রে পানির ব্যবহার সীমিত রাখা বাঞ্চনীয়;
প্রয়োজনে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করানো যাবে;
মৃতদেহ ব্যবস্থাপনা, গোসল, তায়াম্মুম ইত্যাদি কাজে জড়িতদের অবশ্যই মাস্ক, গ্লাভস, পানি নিরোধী গাউন পরে নিতে হবে;
মৃতদেহ গোসলের পর সংশ্লিষ্টদের সাথে সাথে সাবান দিয়ে গোসল করে নিতে হবে এবং সকল জামা-কাপড় সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে;
পরিবারের সদস্যদের মৃতের মুখ দেখানো যাবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক পরে নিতে হবে এবং তিন ফুট দূর থেকে দেখতে হবে। বয়স্কদের মুখ না দেখতে দেয়াই ভালো;
মৃতদেহ বহনের কাজে আলাদা কাপড় ব্যবহার করতে হবে এবং সেটি কবরেই রেখে আসতে হবে;
মৃতদেহের ব্যবহৃত সকল সরঞ্জামাদি, বর্জ্য, গোসল ও কবরের স্থান, খাটিয়া, পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ি সবকিছু জীবাণুনাশক/ সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।