বাজে-বেয়াড়া
-----------------------------------------------
"এই ব্যাস্ত শহরে - অপরিচিত ভিড়ে - হঠাৎ মনে পড়ে যায়
পুরোনো দিন - কত রঙ্গিন - তাকে আটকে রাখি মায়ায়
হয়তো আমরা বহুদূর - ইশকুলের চৌকাঠ পেরিয়ে
এখনও একই মানুষ - এখনও বন্ধু ............."
গানটা শুনতে শুনতে মনে হলো, ভূবন কেমন আছে? অনেকদিন ভূবন এর সাথে সেই অর্থে কোন যোগাযোগ নেই। মাঝে একবার ফেইসবুক মেসেঞ্জার এ দু-এক লাইন কথা হয়েছিল, কিন্তু ওই টুকুই শেষ। ও বলেছিলো নেটওয়ার্ক খুব খারাপ, তাই ফেইসবুক বা ফোনে কথাবলা একটু প্রবলেমের, জানি না সত্যি কি মিথ্যা! আসলে মানুষ যেমন আজীবন কাল ধরে সন্দেহ-বাতিক তেমনি সে সদা পরিবর্তনশীলও, কে যে কখন বদলে যায় বলা খুব মুশকিল। হয়তো ভূবন সত্যিই বলেছিলো, আমার মন মিছে সন্দেহ-বাতিক হচ্ছে।
ডিজিট্যাল রেভোলুশন সবার পকেটে টেলিফোন ভরে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এখনও ভারতবর্ষের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলই, এই ডিজিট্যাল থাবার আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে। একজন ভূতাত্ত্বিক হবার সুবাদে আমাদের নানান প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাতায়াত আছে সেই সুবাদেই বিষয়টা আমার কাছে নতুন না। ভূবনও একজন ভূতাত্ত্বিক, প্রেসিডেন্সিতে আমারই সহপাঠী ছিল, আমরা একসাথে ৫ বছর কাটিয়েছি, তারপর ভূবন কলকাতার পাটচুকিয়ে মুম্বাই চলে যায়, না সিনেমা-টিনেমায় নামতে না, আই আই টি মুম্বাই থেকে এম-টেক করতে, কারণ আই-আই-টি তে পড়াশোনা করেলে ভবিষ্যত শক্ত করার অনেক সুযোগ পাওয়া যায়।
দু-বছরের কোর্স ভূবনের, এদিকে আমিও তত দিনে হিন্দুস্তান জিঙ্ক কাটিয়ে পুণেতে চলে এসেছি, তখন এক-দুবার ভূবনকে ফোন করেছিলাম, বেশ কয়েক ঘন্টা টানা কথা হয়েছিল প্ল্যান ও হয়েছিল কিছু। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বৃষ্টি-স্নাত ডেকান দেখা, আর সেটা এ-বছরই কারণ পরের বর্ষায়, ভূবন হয়তো মুম্বাই এ থাকবেনা, ওর কোর্স শেষ হয়ে যাবে। তারপরও কিছু সময় বেঁচে থাকলে আমরা পশ্চিমঘাট পর্বতের কিছু দ্রষ্টব্য স্থানও ঘুরে দেখবো। দুজনেরই ইগ্নেয়াস পেট্রোলজি (ভূতত্ত্বের একটি বিশেষ শাখা, যেখানে আগ্নেয়-শিলা নিয়ে গবেষণা করা হয়)-তে ইন্টারেস্ট থাকায় উত্তেজনা তুঙ্গে, কারণ ডেকান-তো আমাদের রক্তে মিশে গেছে সেই কবেই, তখনও আমরা বি. এস-সি.-র গন্ডি ছাড়াইনি।
কিন্তু ভূবন কথা রাখেনি। যাওয়া হয়নি আমাদের ডেকান দেখতে, দেখাও হয়নি পশ্চিমঘাট।
~পম'স !
পুনে,
২২-এ চৈত্র, ১৪২৫
ভূবন চরিত্রটি আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধুর সৃষ্টি।
বাজে-বেয়াড়া (প্রথম ভাগের পর)
----------------------------------------------------------------------------------------
কেন কথা রাখলো না ভূবন সেটা আমি জানি না, জিজ্ঞাসাও করিনি, কারণ, তার পর তো ভূবন ভুবনডাঙায় পোস্টিং নিয়ে উধাও হল। জিজ্ঞাসা করারও ইচ্ছে নেই আমার আর, হতে পারে সেও চেয়েছিলো কথা রাখতে, হেরেছে সে পরিস্থিতির কাছে, জানিনা। ও, হ্যাঁ, আই-আই-টি এর পর ভূবন কোল-ইন্ডিয়া নামক এক সরকারি সংস্থায় যোগদান করে। শুধু একটা মেসেজ এ জানিয়ে ছিল সেই সুখবরটা, সাথে আরও কিছু লিখেছিলো বটে কিন্তু তা, একান্তই ব্যক্তিগত, গল্পে তা উল্লেখের প্রয়োজন বোধকরি না।
সেদিন মহেশ কথা প্রসঙ্গে ভূবন এর কথা তুলতে, জানতে পারি যে ভূবন নাকি মহেশকেও একই গল্প শুনিয়েছে।
তাহলে কি ভূবন নতুন জীবন এ খুশি নয়? পারিবারিক বা সামাজিক চাপে অনেকেই যেমন নিজের স্বপ্নকে খুন করে, ভূবনও কি তাই করলো নাকি? যদিও ভূবনকে কতটা চিনি তাতে সন্দেহ আছে আমার নিজেরই কিন্তু তাও, আসলে ভূবন বরাবরই একটু বেশিই ইন্ট্রোভার্ট, নিজেকে লুকিয়ে রাখতেই বেশি ভালোবাসে, বা হয়তো নিজেকে এক্সপোসে করতে ভয় পায়।
প্রায় সপ্তাহ খানেক পর, একদিন ফোন এ ভূবনকে ধরতে না পেরে ফেইসবুক এ লিখি, কি অবস্থা, কেমন আছে, কোথায় আছে? উত্তর এসেছিলো, তবে বেশ কটা দিন পরে। কিন্তু ভূবনের দিক থেকে তেমন উষ্ণতার আঁচ না পেয়ে আমিও আর কথা বাড়ায়নি, ভবিষতের কোন এক দিনের অপেক্ষায় আছি, হয়তো ভূবন আবার একদিন সকালে মেসেজ পাঠাবে বা পড়ন্ত বিকেলে ডুবে যাওয়া সূর্য দেখতে দেখতে ফোনে কথা বলবে, তখন আকাশে আমাদের সম্পর্কের চাঁদটাও আরও কিছুটা উপরে উঠে জ্বলজ্বল করবে। ভূবন ভালো থেকো, দেখা হবার প্রত্যয় রইলো।
বিঃ দ্রঃ - সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক না, তাই কারো বাস্তব জীবনের কোন ঘটনার সাথে যদি কোন মিল পাওয়া যায় তা নিতান্তই ইচ্ছাকৃত। তবে এই গল্প লেখার কারণ নিতান্তই মজা করা, সেটা গল্পের নামটা পরেই বোঝা যায়, তারপরও কেউ যদি কোন ভাবে ব্যাথিত হন এই লেখা পরে তার জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি।
~এ পম।
পুনে,
২৩-এ চৈত্র, ১৪২৫।