প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই সদ্ অসদ দেবাসুরের লড়াই চলছে নিয়ত | আমাদের প্রকৃতি তার গুনময়ী মায়াতে কখনো সত্ত্বপ্রধান কখনো রজ, আবার কখনো তম | তাই মানুষকে নিয়ত সদ ভাবনার মধ্যে ব্যস্ত রেখে তাদের নিত্যকর্মজীবনকে সু্ন্দর,সুরক্ষিত ও সৌহার্দ্যপূর্ণ করে জীবনের সার্থকতাকে উপভোগের উদ্দেশ্য নিয়ে , পৃথিবীর সমগ্র হিন্দু জাতির একদেহে মিলনের ঐশ্বরিক চেষ্টাই সদ্ ভাবনা |
পবিত্র সনাতন ধর্মে শঙ্খ বা শাঁখ শুধুমাত্র মঙ্গলময় প্রতীক বা উপাচার নয়, শাঁখ হিন্দুদের একটা বিরাট বড় অস্ত্র |
সনাতন ধর্মীয়রা শঙ্খকে ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক বলে মনে করেন | বিষ্ণুর অর্ধাঙ্গী হিসেবে শঙ্খের পুজো করা হয় |
সৃষ্টির শুরুতে সমুদ্রগর্ভে মহাপ্রলয়ে তৈরী হওয়া ঘুর্ণাবর্তের মধ্যে থেকে পালনকর্তা বিষ্ণু অস্ত্ররূপেই শঙ্খলাভ করেছিলেন |
শ্রীমদ্ভগ্বদগীতার প্রথম অধ্যায়ের 14 নং থেকে 18 নং শ্লোকে যুদ্ধে শঙ্খ বাজিয়ে শব্দ সৃষ্টির উল্লেখ আছে | সেখানে মাধব শ্রীকৃষ্ণ আর শিষ্য অর্জুন "দিব্যৌ শঙ্খৌ প্রদধ্নতু" - অর্থাত দিব্য শঙ্খ বাজিয়েছিলেন |
দিব্য শঙ্খ" শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ | যে শঙ্খ থেকে দৈবীগুনসম্পন্ন ধ্বনি নির্গত হয় | তাই দিব্য শঙ্খ | অর্থাত - মোহময়, শ্রুতিমধুর, মায়াবী নির্ঘোষ, যা শ্রোতাকে শ্রুতিমুগ্ধ করে, বিচলিত করে, বৈরীভাব প্রশমিত করে, ভ্রমিত বা মূর্চ্ছিতও করতে পারে |
শ্রীকৃষ্ণের মোহন বাঁশীর কথা আমরা অনেকেই জানি | বাঁশীর সুরমূর্ছনায় গোপাঙ্গনাদের মোহিত হবার কথা 'ভাগবতে' আছে |
আজকের দিনেও হাজার হাজার গানের মধ্যে বিশেষ কোন কোনটা আমরা বার বার শোনার আগ্রহ করি |
সুতরাং দৈবী ধ্বনি সৃষ্টি অসম্ভব কিছু নয় এবং অর্জুন তার অভ্যাস করেছিলেন |
শুধু অর্জুনই নয়, শ্রীগীতা বলছেন, 'সর্বশ পৃথিবীপতে' - অর্থাত রণক্ষেত্রের সব মহারথীই 'শঙ্খান দধ্নু পৃথক্ পৃথক্' -নিজের নিজের আলাদা আলাদা শঙ্খ বাজালেন |
আর সেই সেই শঙ্খনাদের প্রতিক্রিয়া কি হল ? ঠিক পরের 19নং শ্লোকে তার সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায় |
স ঘোষো ধার্ত্তরাষ্ট্রানাং হৃদয়ানি ব্যদারয়ত
নভশ্চ পৃথিবীঞ্চৈব তুমুলোহভ্যনুনাদয়ন ||
- সেই তুমুল শব্দ আকাশ ও পৃথিবীতে প্রতিধ্বনিত হয়ে ধৃতরাষ্ট্র পুত্রদের এবং তদপক্ষীয় সৈন্যদের হৃদয় বিদীর্ণ করল |
শঙ্খের এই শক্তি- অস্ত্র হিসেবে এর ব্যবহার সনাতন ভারতীয়দের একেবারে নিজস্ব | এরকম একটা Powerful Weapon কে আজ আমরা অবহেলা করে চলেছি |
এই প্যানডেমিক 3rd world war এর সিচুয়েশনে এটা স্পষ্ট যে, আগামীতে সূক্ষাতিসূক্ষ বিজাণু বা বিষাণু অস্ত্রে ধর্মযুদ্ধ ছায়াযুদ্ধের রূপ নেবে ||বিভিন্ন ভারতবিরোধী শক্তি সনাতন শক্তিকে বিনষ্ট করতে |
আর সেক্ষেত্রে শঙ্খনাদ হতে পারে এক বিরাট প্রত্যাঘাতের মহান অস্ত্র |কেননা এখনো অহিন্দুরা এর ব্যবহারিক গুরুত্ব অনুভব করতে পারেনি |
আসুন প্রস্তুত হই | সকল সনাতন ধ্রমীয় অনুষ্ঠানে নিয়ম করেশাঁখ বাজায় |- একটা দুটো নয়, প্রত্যেকে নিজের নিজের এক একটা - দেখি সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার চক্রান্তকারীদের হৃ দয় বিদীর্ণ করতে পারি কি না !
দেবতার সম্পদ
কিভাবে মানুষ দেবতা হয়ে উঠবে ? কি কি গুণাবলী মানুষকে দেবতায় পরিণত করে ? অর্থাত মানুষ কে দেবতা হতে গেলে কি কি গুণ থাকা বা কি কি গুণের অনুশীলন প্রয়োজন ?
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন মানুষের অন্তর্নিহিত দেবত্বকে বিকশিত করার নামই ধর্ম | ধর্ম আর কিছুই নয়, পশু থেকে মানুষে এবং মানুষ থেকে দেবতায় উত্তোরণ |
শ্রীমদ্ভগবদ গীতা 16 অধ্যায়ের প্রথম তিনটি শ্লোকে মানুষ থেকে দেবতা হয় ওঠার 26 টি গুন বর্ণণ করা হয়েছে |যেগুলি দেবতার সম্পদ | যে কেউ সাধনার দ্বার এই সম্পদের অধকারী হতে পরাে
অভয় গুণ
গীতার 16 অধ্যায়ের প্রথম তিন শ্লোকে 26টি দৈবী সম্পদ বা সাত্ত্বিক গুণের কথা বলা হয়েছে | দৈবী প্রকৃতির সেখানে বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে |
পরমাত্মাই হলেন দেব | পরমাত্মার গুণই দৈবী সম্পদ | এই পরমাত্মা 'এক' হয়েও 'বহু' বিভাজিত প্রাণীতে বিভক্তের ন্যায় অবস্থিত | তাঁরই মূলা প্রকৃতিতে তিনি নিজেই চেতনরূপ বীজ স্থাপনা করেছেন এবং পৃথক পৃথক যোনিতে সত্ত্ব-রজ-তম গুণের কম-বেশী করে উপভোগ করছেন | আর সৃৃষ্টি থেকে প্রলয় পর্যন্ত "সম্পদম্ অভিজাতস্য" জীবাত্মা পরমাত্মায় মিলিত হবার চেষ্টা করে চলেছে |
অতএব যে সাধনা পরমাত্মাকে প্রাপ্তি করার জন্য হয়, সেই সাধনাকেই বলা হয় দৈবী সম্পদ | মানুষ থেকে দেবতা হয়ে উঠতে চাইলে এই গুণের সাধনা আমাদের করতেই হবে | এই ভাবেই আসুরী প্রকৃতির সংশোধন হবে |
2 6টি দৈবী সম্পদের 1মটি "অভয় "|এই গুণ কিভাবে আহরণ ও সঞ্চয় করা যায় - এ ব্যাপারে সর্বোতকৃষ্ট ও সর্বাঙ্গসুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন পরমপুরুষ পরমহংস পরমগুরু ঁশ্রী শ্রী স্বামী উত্তমানন্দ দেব | তাঁর উত্তম গীতা য় তিনি বলেছেন, অভয় অর্থাত ভয়াভাব বা ভয়শূণ্যতা হল হৃদয়ের অসংকুচিতা গতি |
প্রকৃত দেবভাবাপন্ন সাধক কাহারও নিকট এমনকি মৃত্যুর সম্মুখেও সংকুচিত নহেন |
একজন পাষাণহৃদয়, অসুর প্রকৃতিসম্পন্ন দস্যুও নির্ভয় হতে পারে, কিন্তু সাধকের ভয়শূণ্যতা সেরূপ নহে | সে নির্ভয়তা কোমল পবিত্রতার সহিত একাকারে মিলিত এবং সে ক্ষমাআর্জবদয়াতোষসত্য হইতে সমুদ্ভূত |
যখন বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে, দৃঢ়্তার সঙ্গে ভরসা করে সাধক নির্ভয়ভাবে অবস্থান করে, তখনই তার অভয় |
শ্রীরামকৃষ্ণের সেই প্রাণপাখীর মাস্তুলের গল্প | অথৈ সংসার সমুদ্রের মাঝ দরিয়ায় তিনি সাধককে অভয় গুণ অর্জনের মন্ত্র দিলেন, যেন জীবাত্মাদের বললেন, - পাখী তুই ঠিক বসে থাক, ঠিক বসে থাক রামকৃষ্ণ নামের মগডালে |
এই দৈবী সম্পদ বহু জন্মার্রজিত পূণ্যকর্মে সঞ্চয় হয় | তাই অনেক মানুষের মধ্যে আমরা সেগুলো লক্ষ্য করি - যেমন, মায়ের ডাকে, দামাল ছেলে, বিপদ-বাধা দূরে ফেলে, ঝড়ের রাতে, ভরা বর্ষার দামোদর সাঁতরে জয় মা বলে যখন বিদ্যাসাগর পার হয়ে যান - সেই অকুতোভয়তা - সেই অভয় গুণ তাঁর পূর্বার্জিত সম্পদ |
তাই শ্রীভগবান, গীতাতে দিলেন সাধন পদ্ধতি -
যঃ শাস্ত্রবিধিমুতসৃজ্য বর্ত্ততে কামকারতঃ |
ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্ || 23|| 16
তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্য্যাকার্য্যব্যবস্থিতৌ |
জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম্ম কর্ত্তুমিহার্হসি || 24 || 16
যিনি দেবভোগ্য সাত্ত্বিকী সম্পদ ভাগ করতে চান - মানুষ থেকে দেবতা হয়ে উঠতে চান - তাকে নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার সাথে জ্ঞানযোগের অভ্যাস করতে হবে |
শ্রীগীতার ষোড়শ অধ্যায়ে মানুষ থেকে দেবতা হবার তৃতীয় যে গুণের কথা শ্রীভগবান বলেছেন, তার নাম জ্ঞানযোগব্যবস্থিতি |
দেবত্বলাভের তৃতীয় এই গুন জ্ঞানযোগব্যবস্থিতি কি ? তা কিভাবে লাভ করা যায় ? আসুন তার খোঁজ করার চেষ্টা করি |
আচার্য্য শ্রীধর এবং আদিগুরু শংকরাচার্য্য জ্ঞানযোগব্যবস্থিতি বলতে জ্ঞানযোগে ঐকান্তিক নিষ্ঠাকেই বুঝিয়েছেন |
বালগঙ্গাধর তিলক একে জ্ঞান এবং কর্মের যুগপত স্থিতির কথা বলেছেন |
সুতরাং জ্ঞান, যোগ, আর অবস্থান স্পষ্ট হওয়া চাই | এই তিনটি শব্দের সমুহ ধারণা সর্বাগ্রে আমাদের রাখতে হবে |
জানতে হবে এই জ্ঞান আসলে কোন জ্ঞান ? যোগ ই বা কি ? আর তাতে অবস্থানই বা কেমন করে করব ?
এই জ্ঞান, দিব্যজ্ঞান| পারমার্থিক জ্ঞান | সেই পরমাত্মা, যিনি আদি-মধ্য-অন্ত রহিত | যিনি সতও নন, অসতও নন | সর্বত্রই যাঁর হাত-পা-মুখ-মাথা-চোখ-কান| সবকিছু পরিব্যপ্ত করে যার অবস্থান | দূরেও তিন, নিকটেও তিনি| অতীতও তিনি, বর্তমানও তিনি, আবার ভবিষ্যতও তিনি | সৃষ্টির আগেও তিনি ছিলেন,এখনও রয়েছেন, বিনষ্টির পরেও তিনিই থাকবেন| স্থাবর-জঙ্গম, চর-অচর,প্রাণ-জড়,ইন্দ্রিয়-অতীন্দ্রিয়, ধারক-পালক, তিনি ব্যতীত সত্তা নাই| গুণও তিনি,নির্গুণও তিনি| স্থুলও তিনি, সূক্ষ্মও তিনি, কারণও তিনি |
পরমপুরুষ স্বামী উত্তমানন্দদেব এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা তাঁর উত্তম গীতায় দিয়েছেন | বলেছেন, আমি এ শরীর নই, শরীর বলতে শুধু রক্ত-মাংসের শরীর নয়, যে স্বপ্নে ক্রিয়া করে, আমি সেই সূক্ষ্ম শরীরও নই| এমনকী সুষুপ্তির অতিচেতনের কারণ শরীরও নই | নির্মল সত্ত্বসংশুদ্ধ আত্মাই আমার স্বরূপ| এই ভোগানুবৃত্তি, কর্মানুবৃত্তি - সমস্তই ভগবানের মায়া কর্তৃক সংঘটিত হচ্চে - এই বিচারই হল জ্ঞান |
জ্ঞান তো মোটামুটি বুঝলাম| যোগ টা কি ? শ্রীগীতা বলছেন, "যোগঃকর্মসু কৌশলম", কর্মের কৌশলই যোগ| কিন্তু কোন কর্ম ? আর তা করার কৌশল কোনটা ?
স্বামী উত্তমানন্দদেব বলছেন, সাধন বা প্রচেষ্টা দ্বারা নিজ দেহাভিমানমুক্ত নির্মল সত্তাকে ভগবতসত্তাতে যুক্ত করা, যুক্ত করে পরমানন্দময়ী অচঞ্চলা শান্তিকে অনুভব ও উপভোগ করা এবং এই শান্তিময়ী স্থিতির স্মৃতিকে স্বতঃসিদ্ধভাবে হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করা - ই জ্ঞানযোগ|
ভারতবর্ষের প্রাচীন মুনিঋষিরা কিসের নেশায়, কিসের আশায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, নিশ্চল-নির্বিকার-ধ্যানস্থ থেকেছেন মহাবিশ্বের মহান শক্তির সঙ্গে| বিশ্বের প্রতিটি উপাদানের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে নিতে নিতে তাঁরা পৌঁছেছেন পরমব্রহ্মে|
ঠিক যেমন একটা গাছ লাগিয়ে তার যত্ম নিতে নিতে তার বৃদ্ধির সাথে সাথে গাছের ভালো-মন্দের সঙ্গে আমরা নিজেদের জড়িয়ে ফেলি| |শিশু গাছটার সাথে ধীরে ধীরে এতটাই একাত্ম হয়ে যাই, যে কোন কারণে গাছ আক্রান্ত-রোগগ্রস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে, আমরা কষ্ট পাই, অন্যদিকে গাছটা ফুলে-ফলে ভরে উঠলে আমাদের মনও খুশীতে ভরে ওঠে|
দুটি ভিন্ন রাসায়নিক ভৌতিক উপাদানের মধ্যে এক অভিন্ন এই যে সূত্রনির্মান- এরই নাম যোগ |
গৌতম বুদ্ধ তাই বলতে পারেন, প্রকৃতির গাছ-ফুল-ফল-পাখী-চাঁদ-তারা-সূর্য-পৃথিবী-ঝর্ণা-পাহাড়-নদী-সমুদ্র-শিশু-প্রজাপতি,এমনকি একটা পিঁপড়ের সঙ্গেও এই একাত্মতা তৈরী করা সম্ভব এবং এর মধ্যে দিয়েই মানবাত্মা মানব মনের ভাব সবার সাথে যোগ করে দিয়ে -সেই পরমাত্মায় গিয়ে মিলিত ও স্থিত হতে পারে|
স্বামী রামসুখদাসও বলেছেন, এই জ্ঞানকে ঠিকভাবে জানলে, নিরন্তর তাঁর মনন করতে পারলে, সংসারেই থাকি, আর নির্জনেই থাকি, যোগযুক্ত থাকা যায়|
জ্ঞানযোগে অবস্থিত সাধক তখন নির্লিপ্তভাবে কর্তব্যসকল সম্পাদন করতে করতে প্রারব্ধকে অতিবাহিত করতে থাকেন| স্বাভাবিকরূপে দেবতার তৃতীয়গুন "জ্ঞানযোগব্যবস্থিতি" মানব এভাবেই আয়ত্ত করেন|
অতএব এই জ্ঞানযোগে অবস্থানের জন্য ধ্যানযোগ শেখা, ধ্যানযোগের জন্য নিষ্কাম কর্মযোগ,আবার কর্মকে নিষ্কাম করতে অভ্যাসযোগ, আবার অভ্যাসেও যদি অসমর্থ হই, গাতার দ্বাদশ অধ্যায়ের নিদান, মদর্থমপি কর্মানি কুর্বন - ভগবানের প্রীতির জন্য কর্ম করা, তাও না পারলে, মদযোগমাশ্রিত - অর্থাত সর্বকর্ম সমর্পণরূপ কর্মযোগ আশ্রয় করে, সমস্ত কর্মফল ত্যাগ করা|
পরমাত্মার দৈবী গুনগুলি নিয়ে আমরা চর্চা করছি| এবং সেগুলি কিভাবে প্রাপ্ত করা যায় - তার কি কি পথ রয়েছে, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সাপেক্ষে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করছি |
ইতিমধ্যে অভয়, সত্ত্বসংশুদ্ধি ও জ্ঞানযোগব্যবস্থিতি - তিনটি গুন সম্পর্কে জেনেছি| এবার চতুর্থ গুন দান সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব |
আমরা সবাই জানি, কেউ কাউকে কিছু দিলেই দান করা হয়| এবং জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে আমরা প্রত্যেকেই কম-বেশী দান করে থাকি |
সুতরাং প্রত্যেকেই এই দৈবী গুনটির সাথে পরিচিত |আমরা এই দাবীও বুক ঠুকে করতে পারি যে স্বল্প হলেও - এই দৈবী গুণ আমি অর্জন করেছি | কিন্তু বাস্তবিক কি তাই-ই|
সনাতন ধর্মের বিভিন্ন গ্রন্থে দানব-মানব বড় বড় রাজা-রাজড়াদের মহান মহান দানের গল্প ছড়িয়ে আছে |কথাতেই আছে "দানে বদ্ধ বলী রাজা" কিংবা "দানবীর কর্ণ" - ইত্যাদি ইত্যাদি |
স্বভাবতঃই প্রশ্ন জাগে মনে, দৈবী দান কোনটা ? কোন দানে বা কেমনভাবে দান করলে আমরা পরমাত্মার সাথে একাত্ম হতে পারব ? সেটা সম্পর্কে নিশ্চিত হলে, তবেই এই গুনের প্রকৃত অনুশীলন করা সম্ভব হবে | এবং এই দৈবী গুন আমরা অর্জন করতে পারবো |
আসলে দানের সঙ্গে আত্মাভিমান এতো লেপ্টে লেপ্টে থাকে যে, স্থান-কাল-পাত্র অনুসারে দানের সূক্ষ্ম পার্থক্য অনেক সময় আমরা ধরতে পারি না | আর তাই, অনেক গুরুত্বপূর্ণ দান করেও আমাদের নিষ্ফল হতে হয় |
কোন দান প্রকৃত দান ? কোন দান কে দৈবী গুন বলে ? এ ব্যাপারে একটা যাচাই করার কষ্টিপাথর শ্রীভগবান শ্রীমদ্ভাগবত গীতার সপ্তদশ অধ্যায়ে দিয়েছেন | সেখানে 20, 21 আর 22 নং শ্লোকে তিন প্রকার দানের কথা রয়েছে| সেগুলি বিশ্লেষণ করলে এবং আমাদের দান কর্ম মিলিয়ে নিলেই আমরা কে কেমন দানী বুঝতে পারব |
শেষ থেকে শুরু করলে বুঝতে সুবিধে হবে | কেন না বেদ আমাদের উপদেশ দিয়েছেন - অসতোমাসদ্গময় - অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আমাদের যাত্রা - এখানে তাই তামসিক থেকে রাজসিক এবং রাজসিক থেকে সাত্ত্বিক উত্তোরণে আমরা চলার পথ খুঁজে পাবো |
তামসিক দান -
" অদেশকালে যদ্দানমপাত্রেভ্যশ্চ দীয়তে |
অসতকৃতমবজ্ঞাতং তত্তামসমুদাহৃতম্ || " (17/22)
দেশ কাল বিবেচনা না করে অপাত্রে, অর্থাত বিদ্যাহীন, তপহীন, অলস, লোভী, ধূর্ত, পাষণ্ড প্রবঞ্চকদের অশ্র্দ্ধা -অবজ্ঞা বা ঘৃণার সাথে যে দান করা হয়, তা তামসিক দান | এই দান দাতার কোন মঙ্গলই সাধন করে না |
রাজসিক দান -
"যত্তু প্রত্যুপকারার্থং ফলমুদ্দিশ্য বা পুনঃ |
দীয়তে চ পরিক্লিষ্টং তদ্দানং রাজসং স্মৃতম্ ||" (17/21)
প্রতি উপকার পাবার আশায়, শুভ ফল লাভের আকাঙ্খায় কিংবা অনিচ্ছাসত্তেও কোন কারণবশত বাধ্য হয়ে, কিংবা অতিমানে, আমি মহাকুলীন আমার মতো আর কে আছে ? আমি আড়ম্বরপূর্ণ দান করব, এমন যেন আর কেউ না পারে | চিত্তক্লেশ সহকারে প্রদত্ত সেই দানকে রাজসিক দান বলে | রাজসিক দানের প্রধান লক্ষণই হল দানকারীর দ্বিধা |
সাত্ত্বিক দান -
"দাতব্যমিতি যদ্দানং দীয়তেহনুপকারিণে |
দেশে কালে চ পাত্রে চ তদ্দানং সাত্ত্বিকং স্মৃতম্ ||" (17/20)
অবশ্যকর্তব্যজ্ঞানে, প্রত্যুপকারে অসমর্থ, প্রতিদান দিতে অক্ষম ব্যক্তিকে - সাধু, সন্ন্যাসী, দেশহিতৈষী,নিতান্ত দরিদ্র, দুঃখী, বিদ্যাবান ব্যক্তিদের ও শ্রেয় সম্পাদনদ্বারা রক্ষাকর্তা ব্যক্তিকে পূণ্যক্ষেত্রে পূণ্যকালে প্রদত্ত যে দান, তাকেই সাত্ত্বিক দান বলে মনে করা হয় |
সাত্ত্বিক দানে বৈগুণ্য পরিহারের জন্য ওঁ-তত্-সত্ ব্রহ্মের এই তিন নাম স্মরণ করে উপযুক্ত পাত্রে নিঃস্বার্থভাবে দান করতে নির্দেশ করেছেন, পরমহংস পরমপুরষ পরমগুরু দশনামী ঠাকুর শ্রী শ্রী উত্তমানন্দ |
পৌরাণক দিলীপ মুখোপাধ্যায় , " নিজের সত্ত্ব নিবৃত্তি করিয়া পরের সত্ত্ব উতপত্তি "র জন্য সাত্ত্বিক দান করতে বলেছেন |
তাই আমরা কিছু দেবার সময় এই বিষয়টাকে মাথায় রেখে দান করতে পারলেই মানুষ থেকে দেবতা হয়ে ওঠার চতুর্থ দৈবীগুন "দান" কে আয়ত্ত করতে পারবো |
কিভাবে ইন্দ্রিয় দমন করবেন ? আত্মসংযম কাকে বলে ?
সাধারণ মানুষ থেকে দেবতা হয়ে উঠতে যে যে দৈবী গুণগুলি অনুশীলন করে আমাদের অর্জন করতে হবে, তার পঞ্চম টি দম বা ইন্দ্রিয় সংযম বা আত্ম সংযম
আগামী তিনটি পর্বে এই দম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানব এবং অভ্যাস করব
মানুষ নিজ ইন্দ্রিয় গুলি শাসনে রাখতে পারলে দেবত্বে উত্তীর্ণ হতে পারবে |ইন্দ্রিয় বলতে চোখ,কান,নাক,জিভ বা ত্বক পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় আর তার প্রয়োগকারী মুখ,হাত,পা,পায়ু , উপস্থ নয়| তদুপরি মন, আবার মনের নিয়ন্ত্রক চিত্ত, বিবেক-বুদ্ধি |
মানুষ ইন্দ্রিয়ের দাস | আমরা ইন্দ্রিয়গুলুর পরিচালক নই, ইন্দ্রিয়গুলিই আমাদের পরিচালনা করে |
নিজের ইচ্ছা অনুসারে ইন্দ্রিয়গুলি পরিচালনা করতে পারাকেই দম বা সংযম বলে|
সাপুড়ে যেমন সাপকে পোষ মানায়, দৈবীগুণের অনুশীলনকারী মানুষ সেভাবে ইন্দ্রিয়গুলি ব্যবহার করে|
কচ্ছপ যেমন তার হাত-পা-মাথা খোলসের মধ্যে ঢকুয়ে রাখে, আবার প্রয়োজনে ব্যবহার করে|
নির্লিপ্ত ও অনাসক্ত চিত্তে সংসারে স্বীয় কর্তব্যপালনের নির্দেশ সনাতন শাস্ত্র দিয়েছে | রামকৃষ্ণদেব বলেছেন, নৌকা জলের উপর ভেসে থাকে, নৌকার ভিতর জল ঢুকলে ডোবে |
পাহাড়ে চড়তে পরিশ্রম লাগে, উতরাইএ কষ্ট নেই | কঠোর অনুশীলন যেমন ইন্দ্রজিত করে, তেমনি মনকে একটু আলগা করলেই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় |
রামকৃষ্ণদেব সুন্দর উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন, ছুতোর মেয়েরা চিড়ে কুটতে কুটতে ভাজনা খোলা নাড়ে, তাতে জ্বাল ঠেলে দেয়, ছেলে কাঁদলে স্তন দেয়, আবার এক হাতে ঢেকিতে চিড়া উল্টে দেয় - মনের বারোআনাই কিন্তু ঢেকিতে থাকে|
সংস্কৃত শাস্ত্রেও উদাহরণ রয়েছে, মাথায় হাড়ি নিয়ে নর্তকী যখন নাচে, হাত-পা সব নাড়ে , কিন্তু মন থাকে মাথার কলসীতে |
কি করে তা সম্ভব ! ঈশ্বরে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে | সর্বকামনা ত্যাগ, ইন্দ্রিয় সংযম, আত্মাভিমান বিসর্জন ও মমত্ববুদ্ধি বর্জন করে আত্মচিন্তায় বা ঈশ্বরে একনিষ্ঠ থাকতে পারলে চিত্তপ্রসাদপুষ্ট গভীর প্রশান্তি লাভ হয় |
তখন চারিদিক থেকে জলপূর্ণ নদী এসেও যেমন সমুদ্রকে চঞ্চল করতে পারে না , তেমনি সংযমী ব্যক্তির নিকট সংসারের নানা ভোগ্য সামগ্রী উপস্থিত হলেও, চিত্তে কোন বিক্ষেপ তৈরী হয় না |
তিনি ভবিষ্যতের অনুসন্ধানে বা অতীতের রোমন্থনে কালক্ষেপ না করে বর্তমান সময়টি হাসতে হাসতে যাপন করেন |আর নিজের অজান্তেই গীতোক্ত পঞ্চম দৈবী সম্পদ "দম্" এর অধিকারী হন |
তর্পণ
🌿 মহালয়ার দিন তর্পণের জন্য প্রসিদ্ধ বিবেচিত।🍁,
এসময় প্রয়াত পুর্বপুরুষের আত্মা সর্বনিম্ন স্তরে অর্থাৎ পৃথিবীর খুব কাছে বিরাজ করে। এসময় যদি তর্পন করা হয় তবে তর্পনের উদ্দেশ্য সফল হয়।
তর্পণ কাহাকে বলে ?
তর্পণঃ “তর্পণ" শব্দটি এসেছে “ত্রুপ” থেকে। “ত্রুপ” কথার মানে “সন্তুষ্ট করা”। ঈশ্বর, ঋষি ও পুর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশ্যে জল নিবেদন করে তাদের সন্তুষ্ট করাকে তর্পণ বলা হয়। শাস্ত্রোক্ত মতে কার্য্য দ্বারা অপরের তৃপ্তি হয়, তাহাই তর্পণ(অপরের প্রীতার্থে জল দান) ।
তর্পনণের উদ্দেশ্য বা কেন করিতে হয় ?
- তর্পণের সময় ঈশ্বর, পুর্বপুরুষের আত্মার নাম উচ্চারন পুর্বক তাদের কাছে সুখ শান্তি কামনা করা হয়। মানুষ জীবন রক্ষার্থে, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রাণীয়াদি হিংসা করিয়াই বধ করিয়া থাকে । ইহা ব্যতিত ও অন্যান্য অপকর্মের দরুন শাস্ত্রমতে পাপগ্রস্থ হইতে হয় । এই পাপ মোচনার্থে সনাতন শাস্ত্র মতে তর্পণ করিতে হয় ।
তর্পণ মন্ত্র অর্থঃ- ব্রক্ষা হইতে তৃণ শিখা পর্যন্ত সমস্ত জীব জগৎ মদ্দত্ত জল দ্বারা তৃপ্ত হউক, এই প্রার্থনা ।
বিঃদ্রঃ পিতা-মাতা জীবিত থাকা কালিন প্রেত তর্পণ ভিন্ন অন্য তর্পণ করিতে নাই । তর্পণ করিবার পূর্বে জল শুদ্ধি করিবেন ও উক্ত জলে কুরুক্ষেত্রের মন্ত্র পাঠ করিয়া শুদ্ধি করিবেন । এই জিল দিয়া তর্পণের কার্য্য করিবেন
তর্পণ করিতে কি কি লাগে ?
- কুশিতে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জল, চন্দন, তিল, তুলসী পত্র ওঁ ত্রিপত্রী দিয়ে তর্পণ করিতে হয় ।
জেনে রাখুন, পিতৃ ও মাতৃ তর্পনের সময় জল, তিল,চন্দন, তুলসী পত্র ও ত্রিপত্রী আর অন্যন্য তর্পণের সময় তিলের পরিবর্তে ধান্য বা যব লাগিবে ।চন্দন, তিল, যব না থাকিলে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জলে তুলসী পত্র দিয়া তর্পণ করিবেন ।
তিল তর্পণঃ
তিল তর্পণ মানে জল ও তিল একসাথে করে পুর্বপুরুষের আত্মার উদ্দেশে নিবেদন করতে হবে। পিতৃতর্পণের সময় অবশ্যই তিল ব্যবহার করতে হবে। তিল ২ রকম- সাদা ও কালো তিল। শ্রাদ্ধের সময় কালো তিল ব্যবহার করা উচিত। যত জনের জন্য শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে প্রত্যেকের উদ্দেশে আলাদা আলাদা করে তিল অর্পন করতে হবে। তিল না থাকিলে শুধু কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠের জলে তুলসী পত্র দিয়া তর্পণ করিতে পারিবেন ।
তিল তর্পণ করার উদ্দেশ্যঃ
তিল ব্যাবহারের মাধ্যমে নেতিবাচক ও আসুরিক শক্তি শ্রাদ্ধকারির মাঝে প্রবেশ করতে পারেনা। স্রাদ্ধের দিন ঘরে তিল ছিটিয়ে দিতে হয়। জলের সাথে তিল মিশিয়ে শ্রাদ্ধে আগত ব্রাহ্মণদের খেতে দিতে হয়। শ্রাদ্ধ শেষে তিল দান করতে হয়।
তর্পণ প্রকার :
১) পিতৃ তর্পণ ।
২)মাতৃ তর্পণ।
৩) গুরু তর্পন ।
৪) ঋষি তর্পন ।
৫) দিব্য পিতৃতর্পণ ।
৬) মনুষ্য তর্পণ।
৭) যম তর্পণ।
৮) ভীষ্ম তর্পণ ।
৯) রাম তর্পণ ।
১০)লক্ষণ তর্পণ।
"মৃত্যুর পর পরলোকে জীবের গতি"
মৃত্যুর পর পরলোকে জীবের গতির দুটি প্রধান পথের কথা শাস্ত্রে বলা আছে। (১) দেবযান বা উত্তরমার্গ, (২) পিতৃযান বা দক্ষিণমার্গ। সগুণ ব্রহ্মের উপাসক, নিষ্ঠাবান ব্রহ্মচারী, বানপ্রস্থী ও পঞ্চাগ্নির জ্ঞানসম্পন্ন গৃহস্থরা মৃত্যুর পর দেবযান বা উত্তরমার্গে যান। প্রথমে এঁরা অগ্নিলোকে যান, তার পরে শুক্ল পক্ষ, ছয় মাস উত্তরায়ণ, দেবতা, বায়ু, সূর্য প্রভৃতি বিভিন্ন লোক ভ্রমণ করে সব শেষে ব্রহ্মলোকে বা সত্যলোকে উপস্থিত হন। সেখানে আত্মজ্ঞান পেয়ে মুক্তি লাভ করেন। তাঁদেরকে আর সংসারে ফিরে আসতে হয় না। এর নাম ক্রমমুক্তি।
আর যে সব গৃহস্থ সংসারে থেকে অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞ এবং ঈষ্ট পূজা ও অন্যান্য পূণ্যকর্মের অনুষ্ঠান করেন তাঁরা পিতৃযান বা দক্ষিণমার্গে যান এবং পরে চন্দ্রলোকে উপস্থিত হন। সেখানে তাঁরা পূর্বজন্মের পূণ্যকর্মের ফল ভোগ করেন। ভোগশেষে সমস্ত পূণ্যকর্ম শেষ হলে আবার এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই ভাবে তাঁরা সংসারে বার বার যাতায়াত করেন।
সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী, যেহেতু পিতৃপক্ষে প্রেতকর্ম (শ্রাদ্ধ) , তর্পণ ইত্যাদি মৃত্যু-সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, সেই হেতু এই পক্ষ শুভকার্যের জন্য প্রশস্ত নয়। দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসবের পরবর্তী পূর্ণিমা (ভাদ্রপূর্ণিমা) তিথিতে এই পক্ষ সূচিত হয় এবং সমাপ্ত হয় সর্বপিতৃ অমাবস্যা, মহালয়া অমাবস্যা বা মহালয়া দিবসে। উত্তর ভারত ও নেপালে ভাদ্রের পরিবর্তে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষকে পিতৃপক্ষ বলা হয়।
পুরাণ অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যুদেবতা যম । তিনিই সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন এবং পরমাত্মায় (ঈশ্বর) লীন হন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঊর্ধ্বে উঠে যান। এই কারণে, কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মেরই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে; এবং এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
সনাতন মহাকাব্য অনুযায়ী, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এই সময় পূর্বপুরুষগণ পিতৃলোক পরিত্যাগ করে তাঁদের উত্তরপুরুষদের গৃহে অবস্থান করেন। এর পর সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে, তাঁরা পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান। পিতৃগণের অবস্থানের প্রথম পক্ষে সনাতনীদের পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশ্যে তর্পণাদি করতে হয়।
মহালয়া পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা।
সর্বপিতৃ অমাবস্যা দিবসে তিথির নিয়মের বাইরে সকল পূর্বপুরুষেরই শ্রাদ্ধ করা হয়।যাঁরা নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ করতে ভুলে যান, তাঁরা এই দিন শ্রাদ্ধ করতে পারেন। আশ্বিন শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে দৌহিত্র মাতামহের তর্পণ করেন।
মহাভারত অনুযায়ী, প্রসিদ্ধ দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তাঁর আত্মা স্বর্গে গমন করলে, তাঁকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন, কর্ণ সারা জীবন স্বর্ণই দান করেছেন, তিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কোনোদিন খাদ্য প্রদান করেননি। তাই স্বর্গে তাঁকে স্বর্ণই খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। কর্ণ বলেন, তিনি যেহেতু তাঁর পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না, তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃগণকে স্বর্ণ প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে ষোলো দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়। এই কাহিনির কোনো কোনো পাঠান্তরে, ইন্দ্রের বদলে যমকে দেখা যায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাঙালীর শ্রেষ্ঠ উতসব দুর্গা পূজা বেশ্যা গৃহের মাটি ছাড়া নাকি হয় না | দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরী করতে বেশ্যাগৃহের মাটি প্রয়োজন হয় | এটি সম্পূর্ণ একটি ভ্রান্ত ধারণা |
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ বেদ-এ দুর্গা দেবী চন্ডী রূপে পূজিতা | বেদের সিংহভাগ উপাসনা আগুন জ্বেলে মন্ত্রোচ্চারণ করে যজ্ঞে আহুতি দিয়ে করা হত | সূর্য্যের আর এক রূপ হিসেবে দেবী চন্ডীর আরাধনাও বেলকাঠে আগুন জ্বেলে চন্ডীস্তব পাঠের মাধ্যমে যজ্ঞে ৭00 টি আহুতি প্রদানের মধ্যে দিয়ে করা হত |
প্রায় ৬৫০০ বছর আগে আগুন খুব সহজে জ্বলত না | ঋকবেদের বর্ণনানুযায়ী কাঠে কাঠে ঘষে খুব পরিশ্রম করেই আগুন জ্বলত |
তাই সুবিধার্থে আলাদা ঘরে আগুন সংরক্ষণ করে রাখা হত | বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় তাকে বলা হত বেশ্ম, "অগ্নি বেশ্ম" |
পরে পরে আগুন জ্বালানোর সহজ পদ্ধতি আবিষ্কারের সাথে সাথে বেশ্ম শব্দের প্রকৃত অর্থ হারিয়ে বেশ্যা" তে পরিণতি পায় |
আরো পরে ইংরেজ প্রভাবে বাংলায় নবজাগরণের সময় নারীস্বাধীনতাকে মান্যতা দিতে গিয়ে সমাজপতিরা এটি প্রচলিত প্রথায় পরিণত করেন |
আর ষষ্ঠির দিন বেলগাছের একটি ডাল কেটে এনে বেলবরণ অনুষ্ঠান দিয়ে দেবীর বোধনও সেই বেলকাঠে যজ্ঞের ডি.এন.এ বহন করছে |
ইসলাম ত্যাগ করে আদিধর্ম সনাতন ধর্মে প্রত্যাবর্তন
# ইসলাম রিলিজিয়ন ত্যাগ করে সনাতন ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা সুকর্ণের কন্যা সুক্মবতী সুকর্ণপুত্রী।
# ইন্দোনেশিয়া, প্রাচীন হিন্দু সভ্যতার এক অভূতপূর্ব নিদর্শন। এখনো সে দেশের জাতীয় প্রতীক হিন্দু মিথোলজির গরুড় পাখি। রামায়ণ মহাভারত সে দেশের সংস্কৃতিতে এতই জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী যে এগুলো সেখানে প্রায় জাতীয় গ্রন্থের মতো।
আর সেই ইন্দোনেশিয়ার জাতির পিতা সুকর্ণের কন্যা সুক্মবতী সুকর্ণপুত্রী সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের বর্তমান রিলিজয়ন ইসলাম ত্যাগ করে আদিধর্ম সনাতন ধর্মে প্রত্যাবর্তনের। মজার বিষয় হলো সুকর্ণের নামকরণও করা হয়েছিল মহাভারতের অঙ্গরাজ কর্ণের নাম অনুসারে, এতটাই প্রভাব সে দেশে মহাভারত রামায়ণের।
# আগামী ২৬ শে অক্টোবর সুকর্ণের মেমোরিয়াল Bali Agung Singaraja এর কাছে অনুষ্ঠিত এক শুদ্ধিযজ্ঞে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করবেন তিনি। উল্লেখ্য তার বড় বোন মেঘবতী সুকর্ণপুত্রী ইন্দোনেশিয়ার প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
# মূলত সুক্মবতীর ঠাকুরমা Ida Ayu Nyoman Rai Srimben সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং তিনিই সুক্মবতীকে উদ্বুদ্ধ করেছেন সনাতন ধর্ম গ্রহণে। সুক্মবতীর পরিবার এই ঘটনাকে তাদের পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
# ইতিমধ্যে সুকর্ণ সেন্টার অব বালির চেয়ারম্যান বিষয়টি অবহিত করে ইন্দোনেশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও ক্যাবিনেটের সবাইকে চিঠি দিয়েছেন। বালিতে সুকর্ণ পরিবারের প্রধান আর্য বেদকর্ণ এই বিষয়ে অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করেন।
আগামী ২৬ শে অক্টোবর তাঁর ৭০ তম জন্মদিনে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শুদ্ধিযজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সনাতন ধর্মে প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছেন সুক্মবতী সুকর্ণপুত্রী।
শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতার ষোড়শ অধ্যায়ে ভগবান ষষ্ঠ দৈবী গুন হিসেবে যজ্ঞের উল্লেখ করেছেন |
বেদের ব্রাহ্মণ ভাগে বহুপ্রকার যজ্ঞের বর্ণনা রয়েছে | ঐতরেয় ব্রাহ্মণ মূলতঃ পাঁচপ্রকার প্রধান যজ্ঞের কথা বলেছে - অগ্নিহোত্র,দর্শপূর্ণমাস, চাতুর্মাস্য, পশুযাগ এবং সোমযাগ |
শ্রীগীতা পৌরাণিক মহাভারতের অংশ এবং উপনিষদের রসে জারিত | সেখানে পূর্বোক্ত বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞের সংক্ষিপ্তসার করে ভগবান ১২ টি যজ্ঞের নির্দেশ দিয়েছেন |
গীতাতে যজ্ঞকেই জগচ্চক্রের মূল কারণ হিসেবে দেখিয়ে বলেছেন, যজ্ঞের ধোঁয়া থেকে মেঘ উতপন্ন হয়, মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়, ধরিত্রী শস্য-শ্যামলা হয়, অন্ন-ফল-গোদুগ্ধ-ওষধি পুষ্টিলাভ করে, যা দিয়ে মানুষ সুখলাভ করে |
মনুস্মৃতিতেও পিতৃযজ্ঞ,দেবযজ্ঞ,ব্রহ্মযজ্ঞ, ভূতযজ্ঞ ও নৃযজ্ঞ - পাঁচপ্রকার যজ্ঞের কথা আছে |শতপথ ব্রাহ্মণেও বলেছে - যজ্ঞ বৈ শ্রেষ্ঠতমং কর্ম |
কিন্তু গীতা প্রদত্ত যজ্ঞগুলি আমাদের আলোচ্য |
১৴যাতে সমস্ত করণ,উপকরণ,সামগ্রী,ক্রিয়,কর্তা সব ব্রহ্মস্বরূপ হয়ে ওঠে, তাকে ব্রহ্মযজ্ঞ বলে |
২৴ যখন সকল পদার্থ,ক্রিয়া ইত্যাদি ভগবানকে অর্পণ করা হয়, তখন হয় ভগবদর্পণরূপ যজ্ঞ |
৩৴ যে যজ্ঞে সাধক ব্রহ্মের সাথে একাত্মতা অনুভব করে, নিজেই নিজেকে ব্রহ্মের সাথে এক করে দেন, তাকে অভিন্নতারূপ যজ্ঞ বলে |
৪৴ ইন্দ্রিয়গুলিকে সংযত করে স্ব স্ব বিষয় থেকে সরিয়ে আনা হল সংযমরূপ যজ্ঞ |
৫৴ যখন অনুরাগ-আসক্তি-দ্বেষ বর্জিত হয়ে ইন্দ্রিয়গুলির সাহায্যে বিষয় উপভোগ করা হয়, তখন হয় বিষয়হরণরূপ যজ্ঞ |
৬৴ অন্যের উপকারার্থে নিজ দ্রব্য ব্যয় করলে হয় দ্রব্যযজ্ঞ |
৭৴ প্রসন্নতা ও নিষ্ঠার সাথে কষ্টস্বীকার করেও নিজ ধর্মপালন করাই তপোযজ্ঞ |
৮৴ কর্মফলের বিষয়ে উদাসীন থেকে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিতে নির্বিকার থাকাকে যোগযজ্ঞ বলেছেন |
৯৴ প্রাণ,ইন্দ্রিয় এবং মনের ক্রিয়া রুদ্ধ করে, বুদ্ধিকে সজাগ রেখে নির্বিকল্প হওয়াকে সমাধিরূপ যজ্ঞ বলে |
১০৴ শাস্ত্র পাঠ ও প্রয়োগের চেষ্টা - স্বাধ্যায়রূপ জ্ঞানযজ্ঞ|
১১৴ পূরক,কুম্ভক,রেচক পূর্বক প্রাণায়ামরূপ যজ্ঞ |
১২৴ নিয়মিত ও পরিমিত আহারের মাধ্যমে প্রাণাদিকে নিজ নিজ স্থানে রুদ্ধ করে রেখে স্তম্ভবৃত্তি প্রাণায়াম |
কোন যজ্ঞ করে মানুষ দেবতা হয়ে উঠবে ?
যজ্ঞের ইতিহাস হিন্দুধর্মের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস | প্রথম থেকেই বৈদিক ক্রিয়ার দুটি অর্থ লক্ষ্য করা গেছে - একটা বাহ্যিক, অন্যটা আভ্যন্তরীন আধ্যাত্মিক | বাইরের অনুষ্ঠানটি ভেতরের গূঢ় আধ্যাত্মিক তত্বেরই প্রতীকমাত্র |
বাস্তবগীতা 9 এ আমরা বিভিন্ন প্রকার যজ্ঞের একটা সংক্ষিপ্তসার পেয়েছি | দেখেছি বৈদিক পশুযাগ বা দ্রব্যযজ্ঞের প্রাধান্য পরবর্তী ঔপনিষদিক কালে ব্রহ্মচিন্তায় লীন হয়ে যেতে | জ্ঞানযজ্ঞ প্রাধান্য পেতে | সেই যজ্ঞে জ্ঞান অগ্নি, মন হোতা, প্রাণ স্তোত্র, আর সর্বস্বত্যাগ হল দক্ষিণা |
আরও পরে এল ভাগবত ধর্ম | ভক্তি মার্গ | জপযজ্ঞ পেল প্রধান মর্যাদা | শ্রীগীতা বললেন, যজ্ঞের মধ্যে আমি শ্রেষ্ঠ জপযজ্ঞ | নামসংকীর্ত্তণ হল ক্রিয়া | শ্রীচৈতণ্যের আবির্ভাবে তা ছড়িয়ে পড়ল আগুনের মতো | প্রতিদিন তিনলক্ষের বেশী জপকারী ঠাকুর হরিদাসকে পবিত্র সিলমোহর দিলেন | ভাগবত বললেন কলিতে কৃষ্ণনাম মুক্তির পথ - কলের্দোষনিধেঃ রাজন্নস্তিহ্যেকো মহান গুণঃ \ কীর্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তবন্ধঃ পরং ব্রজেত |
যদিও বৈদিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অয়ন-চলন তত্ত্বের তোয়াক্কা না করে ভুল যুগবিভাগ করে ভুল সময়কালকে কলিযুগ বলে চালালেন পৌরাণিকগণ |
সনাতন ধর্মে নামের দার্শনিক তত্ত্বটি আধুনিক জড়বিজ্ঞান বা মনোবিজ্ঞান উভয়ই মান্যতা দিয়েছেন | যেখানে বলা হয়েছে মানুষের মনে যখন কোন ভাবের জন্ম হয়, নাম-রূপ ব্যতীত তা প্রকাশ পেতে পারে না | তাই যত প্রকার ভাব আছে তার প্রতিরূপ নাম বা শব্দ অবশ্যই থাকবে | সব ধর্মেই এই শব্দ ব্রহ্মের স্বীকৃতি দিয়েছে |
আদি ওঁকার থেকে বৈদিক বা পৌরাণিক দেবাতাদের নামগুলি এসেছে ইন্দ্র -বরুন-মিত্র-রাম -কৃষ্ণ লক্ষ্মী ইত্যাদি | প্রতিটি নাম একটি বিশেষ কালখন্ডে বিশেষ ফল প্রদান করেছে | রাম নামে শিলা জলে ভেসেছে, কৃষ্ণ নাম নিয়ে রাজ্য পুণরুদ্ধার করা গেছে, লক্ষ্মী নামে ধনৈশ্বর্য পাওয়া গেছে ইত্যাদি \
জ্যোতিষশাস্ত্রী তপন আচার্য্য গবেষণা করে তাঁর ঈশ্বরচেতনা ও মানব জীবনে তার প্রভাব গ্রন্থে প্রাক্ বৈদিক -বৈদিক থেকে বর্তমান পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রাপ্ত নামগুনির সুন্দর বর্ণনা করে 1998 সাল থেকে নতুন নাম অজনের ভজনার নির্দেশ দিয়েছেন | এবং আগামী 1000 বছর এই নাম পৃথিবী শাসণ করবে বলে দাবী করেছেন |
ভাবের তারতম্যে যজ্ঞেরও তারতম্য ঘটে | বিধিশূণ্য, মন্ত্রহীন, অন্নদানহীন, দক্ষিণাবিহীন , শ্রদ্ধাশূণ্য তামস যজ্ঞের ফল একরকম, আবার মহত্ব বা দম্ভ প্রকাশার্থ, নির্দিষ্ট ফলাকাঙ্খায় করা রাজসিক যজ্ঞের চেয়ে ফলাকাঙ্খা না করে অবশ্য কর্তব্যবোধে শাস্ত্রবিধি অনুসারে শান্ত চিত্তে সাত্ত্বিক যজ্ঞ করাকেই ভগবান দৈবী গুণের মর্যাদা দিয়েছেন |
৯৯ শতাংশ বৈদিক ক্রিয়াকর্মের দুটি দিক দেখতে পাই, একটি বাইরের অনুষ্ঠান, অন্যটি ভেতরের আধ্যাত্মিকতা |বাইরের অনুষ্ঠানটি আসলে কোন আধ্যাত্মিক তত্বেরই রূপক বা প্রতীক |
সনাতন ধর্মে বিভিন্ন পূজা আচার অনুষ্ঠানে ধান দূর্ব্বার ব্যবহারের অন্তর্নিহিত গভীর তাতপর্য আছে |গণেশ পূজায় দূর্ব্বার মালা দেয় | রামায়ণে দেখতে পাই, লব-কুশ জন্ম নেওয়ার পর মহর্ষি বাল্মিকী দূর্ব্বা দিয়ে তাদের আশীর্ব্বাদ করলেন | সামাজিক বিবাহ ইত্যাদি সমস্ত অনুষ্ঠানে ধান দূর্ব্বা দিয়ে আশীর্ব্বাদ তিলক করা হয় |
ধান দূর্ব্বা দিয়ে আশীর্ব্বাদ নিছকই একটি সাধারণ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানমাত্র নয়, প্রাচীন আর্যসমাজে ধান ছিল ধন বা ঐশ্বর্যের প্রতীক | ভারতবর্ষ আজও কৃষিপ্রধান | আজও কোন কোন জায়গায় ধান দিয়ে বিনিময় হয় |
আর দূর্ব্বা হল দীর্ঘায়ুর প্রতীক | দূর্ব্বা মরে না | রোদে পুড়ে, বর্ষায় পচে - আবার গজিয়ে ওঠে, তাই তার আর এক নাম অমর | অন্যদিকে দূর্ব্বার প্রচুর ভেষজগুন আছে | দূ্র্ব্বার মেডিসিনাল ব্যবহার বিজ্ঞানসম্মত |
ধান দূর্ব্বা মাথায় দিয়ে আশীর্বাদ করে আশীর্বাদক আসলে যাকে আশীর্বাদ করলেন তার ধন,ঐশ্বর্য আর দীর্ঘ জীবন কামনা করলেন |
কিন্তু উভয়েই এর অর্থ যদি না জানেন, বোঝেন, অন্তরের শুভেচ্ছা যদি ধান-দূর্ব্বার সাথে যুক্ত না হয়, তবে সেই অনুষ্ঠান প্রাণহীন,অর্থহীন, ধর্মহীন এক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় |
দিনটা ছিল ১৭০৫ সালের ১৩ই ডিসেম্বর। ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় মুঘল ফৌজদার উজির খান গুরু গোবিন্দ সিংয়ের দুই যুবক পুত্রকে জীবন্ত ইট মেরে হত্যার নির্দেশ দেন। তাদের মারা যাওয়ার খবরে , তাদের অশিতিপর ঠাকুরমা শোকে মারা যান।
মুঘলরা শহিদদের অপমান করার জন্য শ্মশানের অনুমতি দিতে চায়নি। তারা শর্ত দিয়েছিল,যে ক্রেতা স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে যতটুকু জায়গা ঢেকে রাখতে পারবে কেবল ততটুকু জায়গা নিতে পারবে।
সমস্ত শিখ প্রধানরা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
তখন হরিয়ানার আগ্রওয়াল সম্প্রদায়ের এক হিন্দু ব্যবসায়ী টোডর মল 7,800 স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করেছিলেন এবং গুরুর দুই পুত্র এবং মায়ের মৃতদেহ দাফন করার জন্য মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে 4 গজ জমি কিনেছিলেন। আজকের মূল্যে সেই 7,800টি স্বর্ণমুদ্রার মোট মূল্য প্রায় 180 কোটি টাকা।
এই ছিল ভারতের হিন্দু ব্যবসাদার। যাদের আপনারা পুঁজিপতি বলেন। তাদের ভূমিকা।
দিনটা ছিল ১৭০৫ সালের ১৩ই ডিসেম্বর। ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানোয় মুঘল ফৌজদার উজির খান গুরু গোবিন্দ সিংয়ের দুই যুবক পুত্রকে জীবন্ত ইট মেরে হত্যার নির্দেশ দেন। তাদের মারা যাওয়ার খবরে , তাদের অশিতিপর ঠাকুরমা শোকে মারা যান।
মুঘলরা শহিদদের অপমান করার জন্য শ্মশানের অনুমতি দিতে চায়নি। তারা শর্ত দিয়েছিল,যে ক্রেতা স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে যতটুকু জায়গা ঢেকে রাখতে পারবে কেবল ততটুকু জায়গা নিতে পারবে।
সমস্ত শিখ প্রধানরা অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
তখন হরিয়ানার আগ্রওয়াল সম্প্রদায়ের এক হিন্দু ব্যবসায়ী টোডর মল 7,800 স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করেছিলেন এবং গুরুর দুই পুত্র এবং মায়ের মৃতদেহ দাফন করার জন্য মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে 4 গজ জমি কিনেছিলেন। আজকের মূল্যে সেই 7,800টি স্বর্ণমুদ্রার মোট মূল্য প্রায় 180 কোটি টাকা।
এই ছিল ভারতের হিন্দু ব্যবসাদার। যাদের আপনারা পুঁজিপতি বলেন। তাদের ভূমিকা।