(আত্মশুদ্ধি অর্জন এবং দ্বীন-দুনিয়ার শান্তি ও মঙ্গলের লক্ষ্যে গঠিত সকল তরিকার সালেকদের মজলিস।)
‘’পীর যার যার, তরিকত মজলিস সবার।‘’–
দান-সাদকা সম্পর্কে আল-কোরান ও হাদীসের তথ্য
আল্লাহর রাস্তায় খরচ বা দান-সাদকা করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহর রাস্তায় খরচের বর্ণনা কুরআনে পাকের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা দানকারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন-
<>যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে আরো বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা : আয়াত নম্বর ২৬১)।
<>আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিয্কদাতা। [সূরা সাবা:৩৯]
<> ‘আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় দান করো এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আর তোমরা সৎকর্ম করো। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৯৫)।
দানের বিষয়ে হাদীসঃ
<>হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহপাক বলেন, হে আদম সন্তান, তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করব।’ (সহীহ বুখারী : ৭/৫৩৫২)।
<>রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “সাদকা করলে কোন মানুষের সম্পদ কমে না।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।
<>আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন মানুষ মরে যায় তখন তার আমাল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিন প্রকার ব্যতীত: সদকায়ে জারিয়া অথবা এমন ইলম যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান যে তার জন্য দুআ করে।’(বর্ণনায় মুসলিম)
<>রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন –মানুষ বলে আমার সম্পদ আমার সম্পদ অথচ তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু তার। যা খেয়ে শেষ করেছে, যা পরিধান করে নষ্ট করেছে এবং যা দান করে জমা করেছে- তাই শুধু তার। আর অবশিষ্ট সম্পদ সে ছেড়ে যাবে, মানুষ তা শুধু নিয়ে যাবে।” (মুসলিম)।
<>আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, “প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন দানকারীর জন্য দু’আ করে বলো, হে আল্লাহ দানকারীর মালে বিনিময় দান কর। (বিনিময় সম্পদ বৃদ্ধি কর)” আর দ্বিতীয়জন কৃপণের জন্য বদ দু’আ করে বলেন, হে আল্লাহ কৃপণের মালে ধ্বংস দাও।” (বুখারী ও মুসলিম)।
<>দানের ফলে বিপদ আপদ দূর হয়। হাদিস শরিফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, দান মানুষের বিপদকে দূরীভূত করে দেয়।
দান করলে যে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া এরকম অনেক ঘটনা আমাদের আকাবিরদের জীবনীতে রয়েছে। তাযকেরাতুল আম্বিয়া থেকে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। হজরত সুলাইমান আ. সব প্রাণীর ভাষা বুঝতেন। একদিন এক পাখি এসে বিচার দিলো যে, আমার বাসা থেকে অমুক ব্যক্তি ডিম নিয়ে যায়। যখনই আমি ডিম দিই, তখনই সে ডিম নিয়ে যায় এবং খেয়ে ফেলে! সুলাইমান আ. লোকটিকে ডেকে নিষেধ করে দিলেন যে, আর কোনদিন তার বাসা থেকে ডিম পারবে না! পরের দিনই ওই লোকটি হজরত সুলাইমান আ. এর নিষেধ অমান্য করে ডিম খেয়ে ফেলল। পাখিটি বিরক্ত হয়ে পুনরায় হজরত সুলাইমান আ. এর নিকট অভিযোগ করলো। এবার সুলাইমান আ. এক জিনকে নির্দেশ দিলেন- লোকটি যখন ডিম নিতে গাছে চড়বে, তখন খুব জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে, যাতে লোকটি আর কোনো দিন গাছে চড়তে না পারে! যেই কথা সেই কাজ। জিন প্রস্তুত আজকে এলেই তাকে মাটিতে ফেলে দেবে। নিষেধ অমান্য করে ডিম খাওয়ার স্বাদ বুঝাবে। পরের দিন লোকটি যখন পাখির ডিমের জন্য গাছে উঠতে যাবে, এমন সময় এক ক্ষুধার্ত ভিক্ষুক এসে হাঁক দিল বাবা! কিছু সাহায্য দিন। ওই লোকটি ক্ষুধার্ত ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করলো। তারপর গাছে উঠলো। জিন আগে থেকেই প্রস্তুত। যখন জিন তার হুকুম পালনার্থে তাকে ফেলে দেবে ঠিক সেই মুহূর্তে তাকে দুই দিক থেকে দুই ফেরেস্তা এসে ধরে ফেললো। লোকটি আরাম মতে ডিম নামিয়ে খেয়ে ফেললো। পাখিটি এবার একটু নারাজ হয়েই সুলাইমান আ.-এর কাছে এসে বললো, আপনি কি বিচার করেন। আজও আমার ডিম নিয়ে খেয়ে ফেলেছে। সুলাইমান আ সেই জিনকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে কি হুকুম দিয়ে ছিলাম! কেন করলে না? তখন জিন জবাব দিল, আমি আপনার নির্দেশ পালন করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম এবং নির্দিষ্ট স্থানে অপেক্ষাও করছিলাম। কিন্তু আমি যখনই তাকে নিক্ষেপ করার জন্য হাত বাড়ালাম। এমন সময় পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুজন ফেরেস্তা এসে আমাকে ধরে ফেললো। সুলাইমান আ. বিস্মিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, জিনটি বলল, আমি দেখলাম, লোকটি গাছে ওঠার আগে জনৈক ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করল। সম্ভবত এর বরকতে আল্লাহপাক তাকে আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। সুলাইমান আ. বললেন, হ্যাঁ সদকা বালা-মুসিবত দূর করে। আর এ কারণেই সে তখন মহাবিপদ থেকে বেঁচে গেছে। উল্লিখিত হাদিস ঘটনা দ্বারা আমরা সুস্পষ্ট বুঝতে পেলাম বাস্তবিকই দান সদকা বিপদ আপদ দূর করে দেয়।
সুতরাং প্রতিদিন প্রত্যহ সামান্য হলেও কিছু দান করুন-আপনার জীবনে মঙ্গল ও কল্যাণ বয়ে আসবে-ইনশাল্লাহ্।