(আত্মশুদ্ধি অর্জন এবং দ্বীন-দুনিয়ার শান্তি ও মঙ্গলের লক্ষ্যে গঠিত সকল তরিকার সালেকদের মজলিস; যা আশেক সংস্থার সুফীজম প্রোগ্রামের অধিন পরিচালিত ।)
‘’পীর যার যার, তরিকত মজলিস সবার। হক তরিকত মজলিস আত্মশুদ্ধির বাগান, যে বাগানে বসলে ইমান সজিব হয়। আর সজিবতাই সফতলার পূর্বশর্ত। নির্জিবতা নীরব পরাজয় । যে ইমানের সজিবতা ও নির্জিবতা অনুভব করতে পারেন, তিনিই প্রকৃত ইমানদার।‘’–শাহসূফী খন্দকার হারুন অর রশিদ।
দ্বীন-ইসলাম
‘‘ দ্বীনি এলেম সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে, এলেম দু’প্রকার (১) লিসানী বা জবানী এলেম। এটা হলো আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে আদম সন্তানদের প্রতি দলীলস্বরূপ। (২) ক্বালবী এলেম। এটা হলো উপকারী এলেম। (মিশকাত শরীফ)। ’’
সুতরাং পরিপূর্ণ দ্বীন-ইসলামে প্রবেশ করার জন্য দু’প্রকার এলেম আবশ্যক।
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্যে, অগণিত দুরূদ ও সালাম তাঁর প্রিয় হাবীবের তরে। এক অধম বান্দা হিসাবে আমি দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে কোরআন হাদীসের আলোকে কিছু আরজ পেশ করার ইচ্ছা প্রকাশ করছি। প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমার, দ্বীন ইসলাম কি, তা জানার জন্য আমাদের ইমান ও ইসলাম এই সম্পর্কে সাম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। তা জানা না থাকলে সরল পথ হারিয়ে বক্র পথই হবে আপনার জীবন চলা। সরল পথের সন্ধানে ইমান ও ইসলাম সম্পর্কে আলোচনায় এই অধমের সামান্য প্রয়াস-যাহা আমার এবং আমার প্রিয় দ্বীনি ভাই-বোনদের জীবনকে সঠিক পথে, সরল পথে চলতে সহায়ক হবে-এই মর্মে আমি আশাবাদী। আসুন, ইমান ও ইসলাম সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
ইমান আরবী শব্দ। যার অর্থ হলো আস্থা বা বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাস হলো অর্ন্তগত বিষয় । “ইসলাম” আরবী শব্দ যার অর্থ “আনুগত্ত করা বা আত্মসমর্পণ করা”; যাহা বাহ্যিক বিষয়।
এখানে উল্লেখ যে আকীদার কিতাবসমূহে পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, যখন ইসলাম শব্দটি এককভাবে ব্যবহার করা হয়, তখন এর অর্থ দ্বীন ইসলাম। আবার ইমান কথাটিও যদি একক ভাবে ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থও দ্বীন ইসলাম; এমতাবস্থায় এখানে ইমান ও ইসলাম শব্দের কোন পার্থক্য থাকে না।
যেমন- হাদীস শরীফে এসেছে ইমানের সত্তর উর্ধ্ব অথবা ষাট উর্ধ্ব শাখা রয়েছে, সবচেয়ে উত্তম শাখা শাখা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সবচেয়ে নিন্মস্তরের শাখা রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো এবং লজ্জাও ইমানের শাখা।
এখানে ইমান শব্দটি ইসলামের বাহ্যিক ও অন্তর্গত আমলের সমস্টিকে বুঝানো হয়েছে।
তবে ইমানের শাখা-প্রশাখা মুলত বাহ্যিক আমল ও অন্তর্গত আমলের সমস্টি। আর এক্ষেত্রে বাহ্যিক আমলকে ইসলাম এবং অন্তরের আমলকে ইমান বলা হয়।
যেমন-বেদুঈনরা বলল, আমরা ইমান আনলাম। আপনি বলুন, তোমরা ইমান আন নি; বরং তোমরা বল আমরা আত্মসমর্পণ করলাম। আর এখন পর্যন্ত তোমাদের অন্তরে ইমান প্রবেশ করে নি (সুরা আল-হুজরাত, আয়াতঃ ১৪)। উক্ত আয়াতের অর্থে দেখা যায়, ইসলাম মুনাফিক থেকেও প্রকাশ পায়, তবে সে বাহ্যিকভাবে মুসলিম, যদিও অভ্যন্তরীনভাবে কাফির।
একজন মুসলমানের বাহ্যিক আমল ও অর্ন্তগত আমলের সমস্টিই হলো- ইমানের শাখা-প্রশাখা; যাহা কুরআন এর বিভিন্ন আয়াত ও নবীজির হাদিসের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। মুহাদ্দিছিনে কেরাম সেগুলোকে একত্রিত করেছেন। মুসলমান হিসাবে প্রত্যেকে উক্ত শাখা-প্রশাখা গুলো সম্পর্কে সাম্যক জ্ঞান থাকা একান্তই প্রয়োজন-যাতে করে বাহ্যিক ও অর্ন্তগত আমলের মধ্যেমে কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের ত্রুটি রয়েছে তাহা বুঝা যাবে। উল্লেখ্য ক্বালব বা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত ইমানের শাখা ৩০; যাহা তাসাউফ (আত্নশুদ্ধ) শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া জবান ও দেহ সম্পর্কিত (শরীয়তে জাহেরা) ৪৭টি; যাহা ফিকাহ শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। সর্বমোট ইমানের শাখা-প্রশাখা ৭৭টি; নিম্মে প্রদান করা হলোঃ
অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত ইমানের শাখা-প্রশাখা ৩০টি (নং ০১ থেকে নং ৩০ পর্যন্ত)
০১) আল্লাহ পাকের উপর ইমান আনা। (এই একীন রাখাও উহার অন্তর্ভুক্ত যে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র সত্তা এক অদ্বিতীয়। তাঁহার কোন শরীক নাই। )
০২) আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অনা সবই তাঁরই সৃষ্টি এর প্রতি বিশ্বাস
০৩) ফেরেশতাদের প্রতি ইমান আনা।
০৪) সকল আসমানী কিতাবসমূহের উপর ইমান আনা ।(অবশ্য বর্তমান কোরান ছাড়া অন্যান্য কিতাবের হুকুম বিদ্যমান নেই)
০৫) আল্লাহর প্রেরিত সকল নবী-রাসূলের প্রতি ইমান আনা ।
০৬) তাকদীরের ভাল-মন্দের ওপর বিশ্বাস।
০৭) কেয়ামত ও আখেরাতের উপর ইমান/বিশ্বাস আনা।
০৮) জান্নাতের উপর একীন ও বিশ্বাস ।
০৯) জাহান্নামের অস্তিত্বে একীন ও বিশ্বাস ।
১০) আল্লাহ পাকের সহিত উন্স (মহব্বত) রাখা ।
১১) কাহারও সহিত আল্লাহর জন্যই মহব্বত রাখা এবং আল্লাহর জন্যই কাহারও সহিত দুশমনী রাখা।
১২) রাসূল(সঃ)-কে ভালোবাসা (রাসূল(সঃ)-এর পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কিরাম, আনসার ও মুহাজিরদেরকে ভালবাসা, সম্মান ও অনুসরণ করা।)
১৩) ইখলাস (একনিষ্ঠতা-প্রত্যেক কাজ আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে এবং সন্তুষ্টির জন্য করা।)
১৪) তওবা।(অর্থাৎ কৃত গোনাহের উপর লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় ওয়াদা করা। )
১৫) আল্লাহকে ভয় করা (অরা-উচ্চস্তরের পরহেযগারী। তাকওয়া এর অর্ন্তরভুক্ত । আল্লাহর ভয় ও তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাবতীয় অপরাধ, অন্যায় ও আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ, কথা ও চিন্তা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নাম তাকওয়া। উচ্চস্তরের পরহেযগারী বান্দার মাঝে তাকওয়া থাকে।)
১৬) আল্লাহর রহমতের আশা করা। (এনাবাত-আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। অর্থাৎ মুমিন যখন সুখী তখনও আল্লাহকে ভোলে না, যখন দুঃখী তখনও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না।)
১৭) হায়া/লজ্জা (আল্লাহ ও রসুলের নীইতর বিরুদ্ধ কাজে সংকোচন বোধ করে তা পরিত্যাগ করা।)
১৮) শোকর বা কৃতজ্ঞতা আদায় করা (আল্লাহর প্রদত্ত নিয়ামতে কৃতজ্ঞ থাকা।)
১৯) অঙ্গীকার পুরণ করা। (বৈধ ওয়াদা পূরন করা।)
২০) ধৈর্য্য ধরা। (ছবর-আল্লাহ তায়ালার তরফ হতে কোন বালা-মুছিবত, রোগ-শোক আসলে ধৈয্য ধারণ করা।)
২১) বিনয়।
২২) সৃষ্টির প্রতি দয়া ও করুনা।
২৩) আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা। (তসলীম-আল্লাহ যাবতীয় হুকুম সন্তুষ্টচিত্তে মানিয়া নেওয়া অর্থাৎ তকদীরের উপর রাজী থাকা)
২৪) আল্লাহর ওপর ভরসা করা । (তাওয়াক্কুল-প্রত্যেক কাজে আল্লাহর ওপর ভরসা করা।)
২৫) দুনিয়ার ভালোবাসা পরিহার করা। (যোহদ-দুনিয়ার প্রতি অনাশক্তিঃ পার্থিব ক্ষনভঙ্গুর সুখ-সম্ভোগ ও বিষয়বস্তুর প্রতি আসক্ত না হইয়া পরকালের প্রতি মগ্ন থাকার নাম যোহদ অর্থাৎ দুনিয়ার প্রতি অনাশক্তিই হলো যোহদ।)
২৬) অহংকার, গর্ব, আত্মগৌরব না করা। অহংকার না করা।
২৭) হিংসা না করা করা।
২৮) বিদ্বেষ (পরশ্রীকাতরতা, অন্যের ভালো দেখতে না পারা) পরিহার করা
২৯) ক্রোধ (রাগ, উত্তেজনা ) পরিত্যাগ করা।
৩০) অকল্যানকামী না হওয়া। (অন্যের অনিষ্ট সাধন ও প্রতারনা না করা।)
জবান ও দেহ সম্পর্কিত ইমানের শাখা-প্রশাখা ৪৭টি (নং৩১থেকে নং ৩৭নং পর্যন্ত জবান এবং ৩৮নং থেকে ৭৭ পর্যন্ত দেহ সম্পর্কিত)
৩১) তাওহিদ বা একাত্ববাদের কালিমা পাঠ করা (কালেমা তাইয়্যেবা পাঠ করা।)
৩২) কুরআন পাক তিলাওয়াত করা।
৩৩ দ্বীনি এলেম শিক্ষা করা।
৩৪) অপরকে দ্বীনি এলেম শিক্ষা দেওয়া।
৩৫) দুআ করা ।(নিজের ও অপরের মুক্তির জন্য দুআ করা।)
৩৬) যিকির করা (আল্লাহর যিকর, ইস্তাগফার, দোয়া-দুরুদ ইত্যাদি তসবীহাত আদায় করা।)
৩৭) অনর্থক(বেকার), বা অন্যায় কথা থেকে বিরত থাকা।
৩৮ পবিত্রতা অর্জন করা। শরীর, পোশাক, জায়গা, এই সবকিছু পবিত্র রাখা ইহার অন্তর্ভুক্ত। শরীর পবিত্র রাখার মেধ্যে ওজু, হায়েজ, নেফাস ও জানাবাতের গোছলও অন্তর্ভুক্ত।
৩৯) নামাজ কায়েম করা। এর মধ্যে ফরয, নফল ও কাযা নামাজ অন্তর্ভুক্ত।
৪০) সাদকা, ফিতরা, যাকাত আদায় করা। মানুষকে খাওয়ার খাওয়ানো, মেহমানকে সম্মান করা এর অন্তর্ভুক্ত।
৪১) ফরয ও নফল সিয়াম (রোজা) পালন করা।
৪২) হজ্জ ও উমরা আদায় করা।
৪৩) ইতিকাফ করা। শবে কদর তালাশ করাও ইহার অন্তর্ভুক্ত।
৪৪) দ্বীন হিফাজতের জন্য হিজরত করা।
৪৫) আল্লাহর তায়ালার নামে কোন জায়েয কাজে কসম করলে তা যদি গুনাহের কাজ না হয় তবে তা পূরণ করা।
৪৬) আল্লাহ তায়ালার নামে মান্নত করলে তা পূরণ করা করা।
৪৭) কাফফারা আদায় করা। আল্লাহ তায়ালার নামে কসম করে ভঙ্গ করলে তার কাফফারা আদায় করা।
৪৮) নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ঢেকে রাখা ও পর্দা করা।
৪৯ কুরবানী আদায় করা।
৫০) মৃত ব্যক্তিকে গোসন করানো, কাফন পরানো ও দাফন করা।
৫১) ঋন পরিশোধ করার দৃঢ় ইচ্ছা রাখা।
৫২) লেনদেনের ক্ষেত্রে সততা রক্ষা করা এবং শরীয়তবিরোধী কারবার থেকে বেঁচে থাকা।
৫৩) গোপন না করে সত্য সাক্ষ্য দেওয়া।
৫৪) বিবাহ করে চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা।
৫৫) পরিবার-পরিজনের হকের প্রতি লক্ষ্য রাখা এবং উহা আদায় করা। কর্মচারী ও খাদেমের হকও উহার অন্তর্ভুক্ত।
৫৬) মাতা-পিতার সাথে সদ্ববাবহার করা। নম্র আচরণ করা ও তাঁহাদের কথা মানিয়া চলা।
৫৭) সন্তান-সন্ততির লালন পালন (ইসলামী জ্ঞান, আদব-কায়দা, হালাল গ্রহণ ও হারাম বর্জন ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া)।
৫৮) আত্মিয় -স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক রাখা।
৫৯) মনিবের আদেশ নিষেধ মান্য করা ।
৬০) ইনছাফের সহিত বিচার করা।
৬১) মুসলমানদের জামাআতের আনুগত্য করা।
৬২) শাসনকর্তার অনুগত করা
৬৩) মানুষের মাঝে সন্ধি স্থাপন করা । এর মধ্যে খারেজী সম্প্রদায় ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে লাড়াই করাও অন্তর্ভুক্ত। কারণ, ফিৎনা দুর করা সন্ধির একটি উপায়।
৬৪) সৎ/নেক কাজে সহযোগীতা করা।
৬৫) সৎ কাজের আদেশ করা ।
৬৬) মন্দ কাজে বাধা দেওয়া।
৬৭) জিহাদ করা ও সীমান্ত রক্ষা করাও ইহার অন্তর্ভুক্ত।
৬৮) আমানতদারী রক্ষা করা
৬৯) মানুষকে করজে হাসানা দেওয়া।
৭০) প্রতিবেশির হক আদায় করা ও তাহাদের সহিত সদ্ব্যবহার করা।
৭১) লেনদেন সঠিকভাবে করা। (অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন না করা।)
৭২) সম্পদকে সঠিক ভাবে ব্যয় করা। বেহুদা খরচ, অপব্যয় ও কৃপণতা হইতে বাঁচিয়া থাকাও ইহার অন্তর্ভুক্ত।
৭৩) সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর দেওয়া।
৭৪) কেউ হাঁচি দিলে আলহামদুলিল্লাহ বললে উহার জবাবে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা।
৭৫) মানুষের সাথে ক্ষতিকর ও কাষ্টদায়ক আচরণ না করা।
৭৬) অনর্থক ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা।
৭৭) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু যেমন-কাঁটা, ঢিলে ইত্যাদি সরিয়ে ফেলা ।
তথ্যসূত্রঃ ফরুউল ইমান, লেখক- হাকীমুল উম্মাত মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.এবং কিতাবুল ঈমান, সংকলক-মাওলানা মনসূরুল হক।
পরিশেষে ইমানের শাখা-প্রশাখার আলোকে পরিপূর্ণ দ্বীন ইসলামে দাখিল হওয়ার তৌফিক আল্লাহপাক আমাদেরকে দান করুক-আমিন।
পরিশেষে হে মুমিন মুসলামান ভাই ও বোনেরা আমার, সঠিক তথা পরিপূর্ণ ইসলাম কি? আশাকরি তাহা আপনারা বুঝতে পেরেছেন। ইসলাম মূলতঃ অন্তরগত ও বহিরগত কর্ম ও বিশ্বাস, আমল ইত্যাদির সমস্টি। তাই ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন বিধান বলা হয়।
এলমে ফিকাহ এর সাথে সাথে এলমে ক্বালব বা তাসাওউফ (আত্মশুদ্ধি) এর জ্ঞান প্রয়োজন। ফিকাহ শাস্ত্রের জ্ঞান মুফতী, মোহাদ্দেস, সাইখুল হাদীস, হাফেজ, কারীদের থেকে শি ক্ষা নিতে পারবেন, অন্য দিকে এলমে ক্বালব বা তাসাওউফ (আত্মশুদ্ধি) জ্ঞান হক্কানী আলেম ও পীর মাশায়েখদের দিকনির্দেশনায় অর্জন করতে সক্ষম হবেন। আপনাদের সদয় অবগতির বলছি যে, ইসলামের প্রথম যুগে ফিকাহ ও এলমে ক্বালব বা তাসাওউফ একক আলেম থেকেই অর্জন করা সম্ভব হতো। সময়ের পরিক্রমায় তা দুভাবে বিভক্ত হলেও দ্বীন ইসলাম অনুযায়ী কাজ, কর্ম, আমল, আখলাক ঠিক রাখার জন্যই এলমে ফিকাহ এর সাথে সাথে এলমে ক্বালব বা তাসাওউফ (আত্মশুদ্ধি) এর জ্ঞান আবশ্যক অর্থাৎ শরিয়তে আমলের সাথে সাথে এলমে ক্বালব বা তাসাওউফ (আত্মশুদ্ধি) জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর তাসাওউফ জ্ঞান অর্জনের পূর্বশর্তই হলো আল্লাহর যিকির; সেটা যিকিরে জলি(স্বশব্দে) অথবা যিকিরে খফি (নিঃশব্দ) যাই হোক না কেন; তাহা মূলতঃ আপনার তাসাওউফের ওস্তাদ,পীর, শায়েখের শিক্ষা পদ্ধতির উপর নির্ভর করবে। আল্লাহর যিকির যার মাঝে নাই, তিনি শয়তান কর্তৃক প্ররোচিত হন, যদিও লোক দেখানো কিছু আমল করে নিজেকে হেদায়েত প্রাপ্ত মনে করেন; যাহা নিম্নের আয়াতদ্বয়ের অর্থ থেকে বুঝে নিন-
অর্থাৎ যে ব্যক্তি যিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার উপর শয়তান চাপিয়ে দেই । আর শয়তান তার সঙ্গী হিসাবে থাকে । শয়তান তাদেরকে হিদায়েতের রাস্তা থেকে দূরে রাখে। অথচ তারা নিজেদেরকে হিদায়েত প্রাপ্ত বলে মনে করে । (সূরা যুখরূফ্ঃ আয়াত ৩৬,৩৭)
মুসাফিরের জিন্দেগী সময় চলে যায় ভাই ও বোনেরা আমার। কখন যে জীবনের ঘড়ির কাঁটা বন্ধ হতে চলবে , মালাকুল মওত হাজির হয়ে যাবে, আমরা কেউ জানি না। জীবন চলার পথে কতটুকু সময় আল্লাহর যিকির (স্মরন)-এ থাকতে পারেন, নিজেকে নিজেই নিরুপন করুন। হাঁ, যদি দুনিয়াবী বিষয় আপনার মনের উপর বেশি প্রভাব ফেলে, তা হলে অবশ্যই একজন হক্কানী আলেম/পীর এর ছহোবত গ্রহণ করুন। ইনশাল্লাহ্-আপনার মাঝে আল্লাহর যিকির (স্মরন)- বেশি বেশি অনুভব হবে, ফলশ্রুতিতে আপনার সকল কাজ-কর্ম ইমানের শাখা-প্রশাখার আলোকে আলোকিত হবে এবং সালেহীন বান্দা হিসাবে আল্লাহপাকের দরবারে কবুল হবেন। হে মহান রাব্বুল আলামীন ক্ষমা করিও হেদায়েতের উপর রাখিও, পথহারাদের পথের সন্ধান দিও-আমিন।
সংকলনে- সূফী খন্দকার হারুন অর রশিদ।