Dr Debabrata Sinha, born in Chaibasa Jharkhand, is a retired medical practitioner. After earning his medical degree from Kolkata in 1956, he spent most of his professional life in Chaibasa. A widely travelled person with a deep interest in literature, art, culture and social activities. Outside of his medical profession- he is known as an amateur magician, an educator, a philanthropist, a social worker and more. He spends his leisure time writing articles, playing with his grandchildren, teaching them Bengali literature as well as magic tricks.
স্মৃতি রোমন্থন
ডাঃ দেবব্রত সিংহ, চাইবাসা
কিছু কিছু ঘটনা জীবনের সায়াহ্নে এসেও আমালিন থাকে, থাকে আয়নার মত ঝকঝকে পরিষ্কার। আলোচ্য ঘটনাটি আমার কৈশোরে ঘটা । তখন আমার বয়স কতই বা হবে? পনের কিংবা ষোল। আজ ছিয়াশি বছর বয়সে এসেও, সত্তর বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা মনে হলেই কেমন একটা রোমাঞ্চ এনে দেয়। আমার জন্ম আর বেড়ে ওঠা এক ছোট মফঃস্বল সহর চাইবাসায়। দুটি হাইস্কুল থাকলেও এখানে তখনও কোনও কলেজ ছিল না। সঙ্গত কারনে মেট্রিক পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য আসতে হোত কলকাতায়। ১৯৫৪ সালে ১২ ঘণ্টার ট্রেনযাত্রার পর এসে পৌছালাম কলকাতায়। ইতি মধ্যে আমার বড় দাদা (সাত বছরের বড়) উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় এসেছেন অনেক আগেই। আমি থাকি মানিকতলার কাছে চালতাবাগানে আর দাদা থাকেন ধর্মতলা স্ট্রিটে নীলরতন সারকার মেডিকেল কলেজের হস্টেলে। পিতৃ আদেশে দুএকদিন ছাড়াছাড়িই বড়দা আসতেন আমার খবরা খবর নেওয়ার জন্য।
ছোট বেলা হতেই আমার ম্যাজিক শেখা এবং দেখানর প্রতি দুর্বার আকর্ষণ ছিল। চাইবাসায় সীমিত সুযোগের মধ্যেই চলছিল আমার ম্যাজিক শেখা। এ ছাড়াও দেব সাহিত্য কুটীর প্রকাশিত পি সি সরকারের লেখা ম্যাজিকের বইগুলি নিয়ে আমার ম্যাজিকের ভাণ্ডার ধিরে ধিরে সমৃদ্ধ হতে লাগল, বইগুলি সত্যিই আমার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছিল আর এভাবেই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাদুকর কখন আমার মনের গভিরে ঐশ্বরিক স্থান করে নিয়েছে আমি নিজেও টের পাইনি।
যা বলছিলাম, একদিন বড়দা বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর দেখালেন- “A.I.M.C (All India Magicians Club) এর মাসিক বৈঠক আগামী ……… তারিখ মাসের তৃতীয় শনিবার সন্ধ্যা ৭ টায় ১২/৩ এ জামির লেনে অনুষ্ঠিত হইবে। সভায় পৌরোহিত্য করিবেন ক্লাবের সভাপতি (President) শ্রী প্রতুল চন্দ্র সরকার (P.C. Sarkar) মহাশয়”।
কলকাতায় এসেছি এক মাসও হয়নি। রাস্তাঘাট, বাস নং কিছুই জানিনা, চিনিনা। এদিকে মিটিং এ যাওয়ার আদম্য কামনা । শেষ পর্যন্ত নিরুপায় বড়দা গন্তব্যে যাওয়ার রাস্তা বুঝিয়ে দিলেন- “বিবেকানন্দ রোডে Double decker 2B বাস ধরে Last Stoppage এ নেবে বাঁ দিকে জামির লেন। ঐ রাস্তার বাঁ হাতে বালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো। ডান দিকে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের হেড অফিস (রাস বিহারি এ্যভিনিউ)। এর পাশের বাড়ি টাই পি সি সারকারের।
বলা বাহুল্য সাঠিক সময়ে পৌঁছে দোতালার হলে গিয়ে মেঝেতে পাতা সতরঞ্জি তে বসলাম। ইতি মধ্যে বেশ কয়েকজন জাদুকর পৌঁছে গেছেন। ঠিক ঘড়ির কাঁটায় ৭ টা, প্রবেশ করলেন পি সি সারকার। সভায় সাবলীল ভঙ্গীতে প্রত্যেকের খোঁজ খবর নিলেন, ম্যাজিক সম্বন্ধীয় নানা প্রশ্নের উত্তর এবং আলোচনা চলল। সভা শেষে সচিব (Secretary) শ্রী রবি ভট্টাচার্যের নিকট ক্লাবের সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রাকাশ করলাম। তিনি একটু মুচকি হেসে উপস্থিত সদস্য দের দেখিয়ে বললেন, এঁদের দেখেছ ? এখন পড়াশুনো কর, পরে সদস্য হবে। এবার লক্ষ্য করি উপস্থিত প্রায় সকলেই পক্ক কেশ, প্রতিষ্ঠিত জাদুকর। আর আমি হাফ প্যান্ট পরিহিত কৈশোরের মাত্র গোঁফের রেখা দেখা দেওয়া এক পড়ুয়া। অগত্যা নিরাশ হয়ে বাড়ি ফেরা। পরের মাসে ৩ য় শনিবার যথারীতি মাসিক সভায় যোগ দেওয়া। এবারেও আমার আনুরোধ বিফল হল। আমার সদস্য হওয়ার কামনা আরও তিব্র হল। নিরুপায় হয়ে অন্য পন্থা অবলম্বন করলাম। নির্দিষ্ট সময়ে পি সি সারকার সাধারন মানুষের সঙ্গে দেখা করতেন। কয়েক দিনের মধ্যেই বেলা ১১ টার সময়ে গিয়ে পৌঁছলাম জামির লেনে। প্রবেশ দ্বারে টুলের ওপর বসে নেপালী দারোয়ান। দেখা করার কথা জানাতে সে এগিয়ে দিল ওনার নাম ছাপান ছোট একটি প্যাড। আমার নাম আর দেখা করার কারন লিখিয়ে আমাকে অপেক্ষা করতে বলে কাগজটি নিয়ে সে ভেতরে চলে গেল। মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ফিরে এসে আমাকে সঙ্গে নিয়ে ভেতরে ঢুকল। তিন তলার অফিস ঘরে বসেছিলেন জাদুসম্রাট। দরজায় পৌঁছে দিয়ে নেপালী দারয়ান ফিরে গেল। তিনি আমাকে ভেতরে আসতে বললেন। ছিমছাম ঘর। পিছনের দেওয়াল ঘেঁসে টেবিল চেয়ার। দরজার দিকে মুখ করে বসে আছেন। অনার চেয়ারের ডান পাশে একটি চেয়ার, আমাকে ঈশারায় ঐ চেয়ারে বসতে বললেন। টেবিলের ওপর রাখা আছে একটি ছোট টাইপ রাইটার মেসিন, কিছু কাগজপত্র, আর কয়েকটি ফাইল ব্যশ। বাঁদিকের দেওয়ালে লোহার ব্রাকেটর উপর সাবেকি কাল রং এর ফোন রিসিভার। ডান দিকের দেওয়ালে কাঁচ লাগান একটি র্যাক ঝুলছে। দুটি তাকের উপরের টিতে flat file এ পুরো তাকটি ঠাশা। প্রাতিটি ফাইল এর গায়ে নামী, আনামী এবং কিছু বিদেশি জাদুকরদের নাম লেখা। ইতিমধ্যে কিছু কিছু জাদুকরের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছ যারা স্কুলে, ক্লাবে বা ছোটখাটো অনুষ্ঠানে ম্যাজিক দেখান এবং তাঁদের নামও জেনেছি। পরে জেনে ছিলাম প্রত্যেকের খুঁটিনাটি এবং খবরের কাগজে বেরন খবরের পেপার কাটিং তাদের ফাইলে সুরক্ষিত থাকে। উপলব্ধি করলাম উনি কেন জাদুসাম্রাট, কেন উনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাদুকর আর এই বিদ্যাকে কতখানি ভালবাসেন। ওনার মত ব্যাক্তিতের ছোট খাট জাদুকরের খোঁজ রাখার কথাই নয়।
যাক এবারে আমার কথায় আসা যাক। ক্লাবের সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রাকাশ করতে- জিজ্ঞাসা করলেন, “কি কি ম্যাজিক জান?” শুদ্ধ পূর্ববঙ্গীয় ভাষায়। মফঃস্বল শহরে সুযোগের অভাব স্বিকার করলাম। সঙ্গে দু চারটি পকেট ম্যাজিক নিয়ে গিয়েছিলাম এবং সাহস সঞ্চয় করে দেখিয়েও দিলাম। যিনি দেশে বিদেশে অজস্র মানুষের সামনে ম্যাজিক দেখিয়ে আনন্দ দিয়ে এসেছেন, আজ আমি তাঁকে একলা ঘরে ম্যাজিক দেখালাম। আমার ম্যাজিক দেখার পর উনি কি ভাবলেন জানিনা। আর কোনও প্রশ্ন না করে টেবিলের ড্রয়ার হতে সদস্যতা ফর্ম বার করে দিলেন। এরপর ঐ মাসের তৃতীয় শনিবার বৈঠকে সচিব রবি ভট্টাচার্য আমার হাতে তুলে দিলেন স্বাক্ষর করা সদস্য পরিচয় কার্ডটি।