সুকান্ত নন্দী সুকান্ত আমার কান্ত । তার বংশীয় নাম নন্দী । সে বেশ ভাল ছেলে । তার হাসি দেখে তাকে আমার বেশ সরল মনে হয় । আসলেও সে শ্রেণির অন্য অনেকের তুলনায় সরলমনা । তার একটা দাঁত বার করা আকর্ণবিস্তৃত(চওড়া) হাসি দেখেছিলাম একবার । অতিশয় মায়াবী মনে হল ।
সে একজন শিল্পী । কেবল পেশাদারিটা নেই । এছাড়া শিল্পীর তাবৎ বৈশিষ্ট্য তার মাঝে উপস্থিত কিন্তু অপ্রকাশিত । দুবার মাত্র তাকে গাইতে শুনেছি । প্রথমবার তার সাথে ঘনিষ্ঠতা তখনও হয় নি । সে গেয়েছিল ‘আমার পরান যাহা চায়’। চেতনা দুর থেকে চেয়ে রইল , আরিফ পাশে দাঁড়িয়ে নাড়ল মাথা আর আমি দাঁড়িয়ে রইলাম মাথা নিচু করে । কারণ বলা মুশকিল । সেদিনের পর থেকে তার সাথে জমে উঠেছে সম্পর্ক । গান শুনেই আমি তার নিকটবর্তী হয়েছিলাম কিনা মনে নেই। তবে তার গান তার প্রতি আমার ভালবাসায় ভূমিকা রেখেছে বটে । দ্বিতীয়বার গান শুনলাম ৬০১ এর সামনে দাঁড়িয়ে । সে গাইল জানালায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আর আমি রইলাম বাতাসে হেলান দিয়ে , ধারণ করলাম আমার মোবাইলে ৩০ সেকেন্ডের সুরছন্দ । ‘ওরে নীল দরিয়া’ থেকে কিছুটা গেয়েছিল । ওই গান এর আগে জানা থাকলেও সেদিনের আগে জন্মায় নি আকর্ষণ । আজ তাকে রোধ করতে পারলাম না । পিয়াসকে পরে শুনিয়েছিলাম । শুনে সে খুব প্রশংসা করল । আর গানটা যে সুকান্ত গেয়েছে তা বিশ্বাসই করতে পারল না প্রথমে । সুকান্ত গান শিখেছে ছায়ানটে । ৩ বছর । ১ বছর গলা সেধেছে , আর দু’বছর ছিল নজরুলকে নিয়ে । রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে বললে বলে , আমি তো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাই না। আমি গাই নজরুলসঙ্গীত । অথচ নজরুলই এখন অশ্রুত রয়ে গেছে । কারণ তার ভোকাল কর্ডে সমস্যা । চিকিৎসক কিছুদিনের জন্য উচ্চ আওয়াজে গলা সাধতে করেছেন মানা ।
সে থাকে মিরপুরে । তার পরিবারের সাথে । এক বড় ভাই আছে । বিয়ে করেছে । কান্তের বাবার খবর জানি না তেমন । তবে মায়ের কথা জানি কিছুটা । অন্যসব ছেলের সঙ্গে একাত্ন হয়ে সে তার মাকে ভীষণ ভালবাসে । কিন্তু তার মত ভালবাসার প্রকাশ আমি আমাদের শ্রেণিতে আর দেখি নি । হয়ত সুযোগ হয় নি । ফ্যামিলি ছাড়া জীবন কাটিয়েছি ক’দিন - এ নিয়ে কথা উঠলে কামরান বলল , আমি মনে হয় তিনদিন আব্বু-আম্মু ছাড়া কাটাইছি । সুকান্ত বলল, আমি একদিনও কাটাই নাই । আর একবার গানের প্রসঙ্গে বলেছিল গানই আমার লাইফ । তারপরেই বলল ২য় লাইফ । বললাম, ১ম ? “মা”, বলেই হেসে দিল । হাসিতে ভেঙ্গে না পড়লেও আমার মনে গড়ে তুলল মা সম্পর্কের গভীরতা । সে হাসিই আমার দেখা তার সবচেয়ে সুন্দর হাসি । মায়ের কথা বলছিল কিনা । সেই প্রথম আমি দেখেহিলাম মায়ের ব্যাপারে তার অনুভূতির প্রথম প্রকাশ । বর্তমানে তার মুখবইয়ের মুল ছবি তার মায়ের সঙ্গে । পাশে লেখা —
“যার হাসিতে সর্বদা প্রাণবন্ত আমি
মা ।”
কান্ত ছেলে ভাল । *(তার রমণীচিন্তা ভাল । সে তাকেই ভালবাসবে , যে তাকে ভালবাসবে । সে ক্লাসে ওইসব ছেলেদের মধ্যে একজন , যারা মেয়েদের সাথে কথা প্রায় বলেই না । এখন অবশ্য তাকে দু’একজনের সাথে হাল্কা-পাতলা বাৎচিত করতে দেখা যায় । বিয়ের ক্ষেত্রে তার চিন্তা ভাল । সে লাভ ম্যারেজে বিশ্বাসী । তবে বাবা-মার সম্মতি নিয়ে । অর্থাৎ লাভ-অ্যারেঞ্জ দুইয়েরই কম্বিনেশন । তার এই চিন্তাধারা আমার বেশ পছন্দ । নারীর বিষয়ে সুকান্তের বাণী — “নারীকে সম্মান করলেই সেও তোমাকে সম্মান করবে । নারীরা মায়ের জাত । মন থেকেই তাদের আমি সম্মান করি । কিন্তু নারীদের কষ্ট বেশি । সন্তান জন্ম দিতে কষ্ট , লালন-পালনে কষ্ট , ফ্যামিলি maintain করতে কষ্ট । So every person should respect woman and try to love a woman in thousand ways.”)
কথা সত্য । আমিও সেই সম্মান করারই চেষ্টা করছি । কিন্তু ভালবাসার সহস্র পন্থার কথা শুনে মাথা গেছে গুলিয়ে । ভাবছি এখন খাতা-কলম নিয়ে টেবিলে বসতে হবে । তারপর হিসেব করতে বসব । বছরে ২০টা পন্থা বের করা হবে আমার লক্ষ্য । ফলে মাত্র ৫০ বছরের মাথায় আমি ১০০০ পন্থা বের করে ফেলতে পারব । তারপর ভালবাসা শুরু । অতএব , আমার বয়স ৭০ বছর হলেই আমি নারীকে ভালবাসা শুরু করতে পারব ।
সে নিয়মিত ব্যায়াম করে । ১৯ মিনিটের ব্যায়াম । পেশি বাড়ে না বলে তার আক্ষেপ । কিন্তু চর্বি যে কমছে তা লক্ষ্য করা গেছে । তার ভাইয়ের পেশি বেশি , সাথে আছে মেদের বাহুল্য । অতএব দু’ভাইয়ের অবস্থা বিপরীত ।
সুকান্ত ২য় বার গান শেষে বলেছিল , গান গাইতে হয় দরদ দিয়ে । নয়ত হয় না । তা সে যে পরিমাণ দরদ দিয়ে গান গায় , তার চাইতে বেশি ছাড়া কম দরদ দিয়ে সে আমায় বন্ধু বানায় নি । এটা অবশ্যই আমার ধারনা । আমি তাকে অত্যন্ত ভালবাসি ।
*() -- সুকান্তের সরবরাহকৃত তথ্য
পরবর্তী লেখাঃ Kamran Hasan