মাহদি হাসান সৌরভ
মাহদি হাসান সৌরভ । আমার মিতা । আমার হিরো । সে একটা ভালবাসা । তার সাথে আমার সম্পর্ক অতি মধুর । একদিন জবির পাঠ শেষে বেরুচ্ছিলাম । মুল ফটকের কাছাকাছি এসে দেখা গেল তাকে । মানুষ চলাচলের এক ধারে একটি বেঞ্চিতে বসে আছে । পা দোলাচ্ছিল কিনা মনে নেই । আমায় দেখে বলল - "মাহাদি, তোমারে দেখলেই মনডাত শান্তি আসে ।" এমন ব্যক্তিকে ভাল না বাসা আমার পক্ষে পাপ । সুতরাং আমি তাকে অত্যন্ত ভালবাসি । তার ভাই বোন বলতে একটিই বোন । এবার উঠেছে ৩য় শ্রেণিতে । নাম মিফতাহুল জান্নাত স্বর্ণা । এপ্রিলের ৪ তারিখে তার জন্ম । আমি তাকে বাস্তবে দেখি নি । একবার মুখবইয়ে ছবি দিয়েছিল তাকে কোলে কি পাশে নিয়ে। ‘সকল শিশুই সুন্দর’ - তাকে দেখলে একথা বিশ্বাস হবে একশ ভাগ । তার পিতা পুলিশের অফিসার । মাতা সুগৃহিণী ।
সে অতিশয় সুদর্শন ছেলে । পোশাক, সুগন্ধি, নানান ব্যবহার্য - সবই তার উন্নতমানের এবং অভিজাত রুচির পরিচায়ক । উদাহরণস্বরূপ চমৎকার রোদচশমা আর দৃষ্টিনন্দন ঘড়ির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে ।
তার নানান প্রতিভা আছে । সে গান গায় , martial art পারে - বাকিগুলো এ মুহূর্তে মনে নেই । গানটাই গায় সবচেয়ে বেশি। শ্রেণীকক্ষ শিক্ষকশূন্য থাকলে সে গলা হাঁকে -অনেক বছর আগে একটা ……
মিতা খেতে ভালবাসে । নানান রকমের খাবার তার পছন্দ । এক কথায় সে ভোজনরসিক । ইংরেজিতে যাকে বলে foodie. সে ভ্রমনপিপাসু ব্যক্তি । খেলার মধ্যে ক্রিকেটটা তার পছন্দ । খেলে নাকি বেশ ভাল । শ্রেণিতে তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের মধ্যে মুরাদ সর্বাগ্রে । তাকে বলে ভাই । এই দুই সুদর্শনের একত্রিত ছবি আমি প্রায় দেখি মুখবইয়ে । তার লেখার হাত অসাধারণ । ফেসবুকে মুরাদ এবং তার লেখা আমাদের শ্রেণিতে সবচেয়ে উচ্চমানের । তাদের পোস্টে প্রায়ই আমার জীবন ধ্বংস হয় । একবার মুরাদের একটা লেখা দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছি শুনে সে আমাকে তার একটা লেখা পাঠাল , তাতে আমার জীবনটাই ধ্বংস হয়ে গেল । আগে নাকি অনেক লিখত । কিন্তু অদ্ভুত তার মন , আর আজব খেয়াল সেই মনের ; লিখে লিখে নাকি সেই লেখা পুড়িয়ে ফেলত আগুনে । তাই ওগুলো আমার দেখার সৌভাগ্য হয় নি । খুবই দুঃখের বিষয় । আল্লাহ তার মঙ্গল করুন । আমি আশা করব , তার কিছু লেখা যেন মাঝে মাঝে গ্রুপে দেয় । তাতে নয়ন জুড়াবে ।
মেয়েদের ব্যাপারে তার চিন্তা ভাবনা অন্যরকম । তার মতে সবকিছু একজনের মাঝে পাওয়া সম্ভব না। কারও চোখ ভালো লাগে, কারও মুখ ভালো লাগে কারও বা চরিত্রের গঠন । এতো গেল তার রমণীচিন্তা , যা কিছুটা অস্পষ্ট । কিন্তু বিবাহভাবনা তার অত্যন্ত সুস্পষ্ট । শোনা যাক তার বীরোচিত ভাষণে — "বিয়ে শাদী বোকা লোকেদের জন্য। নিজে রোজগার করব, নিজের টাকা। নিজে খরচ করবো। অন্য আরেক মেয়েকে কেন আমার টাকার ভাগ দিবো? বিয়ে শাদী বাদ। ইচ্ছা নাই।"
আমার মিতা বিরাট ব্যক্তি । সে রাজনীতি করে না । নেহাত ভাল মানুষ। করার প্রয়োজনও নেই । তাকে আমি বলেছিলাম নিজের ব্যাপারে কিছু বলতে । উত্তর এলো — "নিজের ব্যাপারে যদি বলিই , কাওকে আগে যাইয়া কখনো সমস্যা করি না। কেউ সমস্যা করলে কোন ছাড়াছাড়ি নাই।" মানুষ তাকে কেমন ভাবে তার একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে । তার জন্মদিন ১৭ জানুয়ারি । সেদিন এক ছোটো (9th batch) ছেলে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে লিখেছে , আপনি পৃথিবীর সকল গুনে গুণান্বিত একজন মানুষ । এবার বোঝ ।
ক্লাসে মুরাদ তার একমাত্র ভাই এবং সবচেয়ে কাছের বন্ধু । জয় তার সবচেয়ে পছন্দের মানুষ । তার প্রিয় ফুল বকুল, বেলি , গন্ধরাজ । গোলাপ আর রজনীগন্ধা তার লাগে অসহ্য । তার প্রিয় কবি হেলাল হাফিজ । আর প্রিয় কবিতার বই অবশ্যই ‘যে জলে আগুন জলে’ । প্রিয় লেখক Henry Rider Haggard. প্রিয় বই ‘Brethren’. মানুষ হিসেবে তার আদর্শ বাবা । মনে হয় বাবার মতই বাবা হতে চায় সে । জীবনে যাওয়ার ইচ্ছা নরওয়েতে। মধ্যরাতের সূর্য আর পৃথিবীর শেষ প্রান্ত দেখতে। প্রিয় গন্ধ হচ্ছে পেট্রোল, কেরোসিন আর রঙের গন্ধ।
তার প্রিয় রং আগুনের রং । আমার দৃষ্টিতে তার নিজের রঙও তাই । He is my hero , and he is always on fire. এবং সেই আগুনেরও আছে বৈচিত্র্য । কখনো নীল , কখনো লাল , কখনো কমলা , কখনো রোদের মত ঝকমকে , কখনো সূর্যের ন্যায় দীপ্ত , তাকিয়ে থাকা দায় । অনির্বাণ শিখা তার, ভাইভা বোর্ড ছাড়া এমন কোন Fire extinguisher নেই যে তাকে নেভাতে পারে ।