(Bangla) Neutral Election Assessment Commission, NEAC: নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি নতুন নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা, যার প্রধান যোগ্যতা হবে সর্বজনীন স্বীকৃতি
17 August 2023
১৯৭১ সালে আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করে, তবে তারপরেও বহুবার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পরিবর্তন হয়েছে। কখনো ছিল আমাদের দেশ রাষ্ট্রপতি শাসিত আবার কখনো প্রধানমন্ত্রী শাসিত, এছাড়াও আমাদের দেশে বহুবার সামরিক শাসন হয়েছে।
তবে, সর্বশেষ সামরিক শাসক এরশাদের পতনের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে তৎকালীন বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করে যার নাম তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা।
মূলত, এ ব্যবস্থা প্রণয়নের মূল লক্ষ্য ছিল দলীয়করণ মুক্ত একটি সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, কেননা উভয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই জানতেন যে দলীয় কোন নির্বাচন প্রায় সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
সর্বপ্রথম তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচনে বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া জয় লাভ করেন, কিন্তু তিনি বিজয় লাভ করার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে প্রায় বাতিল ঘোষণা করেন।
তখন তিনি তিনার বিভিন্ন বক্তব্যে বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসংবিধানিক, তবে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের প্রবল আন্দোলনের মুখে বিএনপি বাধ্য হয় আবারো পুনরায় একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দিতে, এবারের ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার নির্বাচনে সর্বপ্রথম বারের মতন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হন।
পরে অবশ্য ২০০১ সালে সুষ্ঠু পরিবেশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার কাছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের Incumbent ন্যাচারের জন্য তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল বুঝে গিয়েছিল, যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে কারাপটেড না করলে পুনরায় ক্ষমতার টিকে থাকা যাবে না।
এ লক্ষ্যে সর্বপ্রথম বিরোধী দল বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধি করে (৬৭ করে), যার ফলে তাদের অনুগত্য বিচারপতির তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার পথ খুলে যায়।
তবে, তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের প্রবল আন্দোলনে এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, এবং তৎকালীন বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হতে অপারগতা প্রকাশ করেন, পর্যায়ক্রমে একটা সংকট তৈরি হয় যা এক এগারোর ফখরুদ্দিনের অধীনের একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্ম দেয়।
এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রধান ফখরুদ্দিন থাকলেও তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান মইনুদ্দিন আহমেদই সব ধরনের কলকাঠি নারতেন।
এই এক এগারোর সরকার আসার পর, উভয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়। এক এক করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে এরেস্ট করা হয়, উভয় দলের শত শত কর্মীদেরকেও এরেস্ট করা হয়।
মূলত, এই এক এগারোর সরকারের কিছু সাফল্য থাকলেও প্রধান কোন সাফল্য ছিল না, তারা একেবারে অসংবিধানিকভাবে তিন মাসের বেশি প্রায় দুই বছর ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন, যার ফলে উভয় দলই কখনো আর এক এগারোর সরকার পুনরায় চায় না।
তবে, এক এগারোর সরকার উভয় দল না চাইলেও, উভয় দলের কর্মকর্তা, বিদেশীরা সবাই একটা জিনিস চায় আর সেটা হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন।
পরে ২০১১ সালে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অসংবিধানিক হওয়ায় এবং এক এগারোর মতন তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে তৎকালীন সরকার।
আমরা অবশ্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি চাই না, তবে আমরা সবাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, সেটা আপনি যে মতাদর্শেরই হোন না কেন সবাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
সে স্বার্থে আমরা একটা নতুন ব্যবস্থার প্রণয়ন চাচ্ছি, যে ব্যবস্থার মাধ্যমে এক এগারোর মতন কোন সরকার গঠিত হবে না কিন্তু একটি দিনশেষে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
In-depth NEAP বা Neutral Election Assessment Commission, NEAC:
এটা হবে একটা নিরপেক্ষ কমিশন, যাদের মূল দায়িত্ব হবে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে তথা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া।
আমরা জানি, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য কাগজে-কলমে কমিশন গঠন করলেই হবে না তাকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও কর্মশীল হতে হবে, যেমনটা পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিলো।
নেত্র নিউজের এডিটর তাসনিম খলিলও আমার মতন একটা ব্যবস্থার উপদেশ দিয়েছিলেন, তিনি এমন একটা ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন যেটা হবে প্রধানমন্ত্রীহীন, তবে প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিপরিষদ বহাল থাকবে এবং একটি নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রী থাকবেন।
এটার সাথে আমি একমত এই জন্যই নয়, কেননা বাংলাদেশের সংবিধানে সার্বক্ষণিক রাষ্ট্রপতির থাকার কথা বলা হয়েছে তবে প্রধানমন্ত্রী হীনতার কথা উল্লেখ না থাকলেও বাংলাদেশ একটা প্রধানমন্ত্রী শাসিত দেশ তাই আমাদের অবশ্যই একটা প্রধানমন্ত্রী থাকতেই হবে, প্রধানমন্ত্রীহীন অবস্থায় থাকলে আরো বৃহৎ সমস্যা আসতে পারে।
মূলত এ সরকার ব্যবস্থায়, প্রধানমন্ত্রী যিনি পূর্বে ছিলেন তিনিই বহাল থাকবেন (একপ্রকার নামমাত্র হলেও)। এই নাম মাত্র প্রধানমন্ত্রীর মূল দায়িত্বই হবে এক এগারোর মতন একটা সরকারকে ঠেকানো এবং এমন সকল সংস্থা যাদের নির্বাচনের সাথে কোন সম্পৃক্ততা প্রায় নেই তাদেরকে গভর্ন করা, যেমন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আজকের সরকারের এক এগারোকে নিয়ে যে যৌক্তিক উদ্বেগ রয়েছে তা মিটবে যেমন, তেমনি বিরোধীদলের সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যে উদ্বেগ রয়েছে তাও মিটবে।
এ ব্যবস্থায়, রাষ্ট্রের যত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে যারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত তারা সবাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার তিন মাস পূর্বে এই নিরপেক্ষ কমিশনের অধীনে চলে আসবে, যেমন পুলিশ, র্যাব ইত্যাদির নিয়ন্ত্রক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইত্যাদি।
মূলত, এই ব্যবস্থা একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মতনই হবে, তবে এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী অধীনে থেকেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যাতে এক এগারোর মতন কোন ঘটনা পুনরায় না ঘটে।
তবে অবশ্যই, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত প্রত্যেকটা কর্মকর্তাকে নিষ্ঠাবান হতে হবে, তারা যদি নিষ্ঠার সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালন না করেন অবশ্যই তাদেরকে অব্যাহতি দিতে হবে এই কমিশনকে।
তাছাড়াও, কমিশনের একটা প্রধান উপদেষ্টা থাকবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতন। এই প্রধান উপদেষ্টাকেও প্রধান রাজনৈতিক-দলরা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন করবেন যেটা পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতনই হবে।
এছাড়াও এ ব্যবস্থা প্রণয়নের আরেকটা কারণ হচ্ছে, বিচার বিভাগে রাজনীতির প্রভাব কমানো। পূর্বে আমরা দেখেছি তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি বিচারপতিদের বয়স বৃদ্ধির মাধ্যমে একটা খেলা খেলার চেষ্টা করেছিল, তবে তা সময়ের সাথে বানচাল হয়ে যায়।
যাইহোক, একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হলে অবশ্যই প্রধান রাজনৈতিক দলদেরকে নিজেদের মধ্যে ধৈর্য ও সংবেদনশীলতা প্রকাশ করতে হবে, নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি সংলাপ করতে হবে তা না হলে কোন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কোন কিছু ঘটবে না, যা জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে।
এছাড়াও নিজেদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষের চরম রাজনীতি ত্যাগ করতে হবে, সবাইকে দেশের স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঐক্যমত গঠন করতে হবে, যেমন:
ক. বর্তমান সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিতব্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় নতুন একজন রাষ্ট্রপতির বিষয়ে ঐক্যমত্য;
খ. নিরপেক্ষ কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন সে বিষয়ে ঐক্যমতয়;
গ. সার্বক্ষণিক সংলাপের সুব্যবস্থা তৈরিতে ঐক্যমত্য;
আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে প্রতিটা দলের আমলেই এই দলীয়করণ হয়েছে যার জন্য নির্বাচন ব্যাহত হয়, যা থেকে আমাদের অবশ্যই বেরিয়ে আসতে হবে। যার ব্যতিক্রম নয় বিরোধী দল-বিএনপিও, যার দৃষ্টান্ত ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের অবস্থা।
তাই শুধুমাত্র সরকারের নরম হলেও হবে না বিরোধী দলকেও এগিয়ে আসতে হবে, মহাসড়ক অবরোধ করা যাবে না, ভাঙচুর করা যাবে না কেননা ওগুলো সব কিছুই জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ, আমাদেরকে এটা সর্বক্ষণিক মাথায় রাখতে হবে, যে এই দেশটা আমাদের, দিনশেষে এদেশে আমি এবং আপনি থাকবো। বিদেশীরা যারা আমাদেরকে fueling করে তারা থাকবে না, তো আমার এবং আপনার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদেরকে অবশ্যই ধৈর্যের সাথে প্রতিটা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন অবশ্যই আমার মতামতকে যোগ্যতা প্রদান করবেন। তবে, আমার তথ্য যদি তিনার কাছে নাও পৌঁছায়, তিনি তার নিজের মত থেকে সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তটাই দেশের জনগণের স্বার্থে নিবেন।
Suggested Citation: Mahdi, T. (2024, May 7). Why are there delays in Bangladesh's research and development in the space program? Available at: Sites.google.com/view/t-mahdi/articles-and-proposal-based-on-feedback/neutral-election-assessment-commission-neac