১) বিসিএস পরীক্ষা কি?
উত্তরঃ বিসিএস এর পুরো অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস, আর এই সিভিল সার্ভিসে চাকুরী করতে যে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা সে পরীক্ষা সেটাই বিসিএস পরীক্ষা।
২) সিভিল সার্ভিস কি?
উত্তরঃ সিভিল সার্ভিস হচ্ছে সরকারী চাকুরি। যে কোন দেশে সরকারী চাকুরি মোটামুটি দু ভাগে বিভক্তঃ মিলিটারি আর সিভিল। মিলিটারি বলতে আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স বোঝায়, আর সিভিল সার্ভিস বলতে প্রশাসন (মানে যাঁরা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলার ডিসি, মন্ত্রনালয়ের সচিব এসব হন), পুলিশ, ট্যাক্স , পররাষ্ট্র, কাস্টমস , অডিট ,শিক্ষা ইত্যাদি ২৯ টি সার্ভিসকে বোঝায়। এছাড়া জুডিশিয়াল সার্ভিস আছে, বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আছে- তাঁদের এ আর্টিকেল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
৩) বিসিএস ক্যাডার দ্বারা কি বোঝায়?
উত্তরঃ বিসিএস ক্যাডার মানে হচ্ছে কোন সুনির্দিষ্ট কাজ করার জন্যে বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি দল। সরকারী চাকুরির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে নিয়োগপ্রাপ্তদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়, তাই এদের সিভিল সার্ভিস ক্যাডার বা বিসিএস ক্যাডার বলা হয়। উল্লেখ্য, এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাদলীয় ক্যাডারের কোন সম্পর্ক নেই।
৪) বিসিএস অফিসারদেরকে প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসার বলা হয় কেন?
উত্তরঃ বাংলাদেশ সরকারের চাকুরিতে চারটি শ্রেনী আছে, যার সর্বোচ্চ শ্রেনীটাকে বলা হয় প্রথম শ্রেনী বা ফার্স্ট ক্লাস। এদের নিয়োগের সময় সরকারী গেজেট বা বিজ্ঞপ্তি বের হয়, স্বয়ং প্রেসিডেন্ট এদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় মান মর্যাদা, দায়িত্ব-কর্তব্যের পরিধি এবং সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে প্রথম শ্রেনীর গেজেটেড অফিসারগণ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকেন।
৫) ক্যাডার কত প্রকার?
উত্তরঃ বিসিএস ক্যাডার মূলতঃ দুই প্রকার। জেনারেল ( পুলিশ, এডমিন, পররাষ্ট্র ইত্যাদি) এবং টেকনিক্যাল (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সড়ক ও জনপদ ইত্যাদি)। জেনারেল ক্যাডারে যে কেউ যে কোন সাবজেক্ট থেকে পরীক্ষা দিয়ে চাকুরি করতে পারেন, কিন্তু টেকনিকাল ক্যাডারে চাকুরি করতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা লাগবে। যেমন এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ সরকারী ডাক্তার হয়ে চাকুরি করতে পারবেন না।
৬) বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার-এর মধ্যে পার্থক্য কী?
বিসিএস প্রিলিমিনারি,রিটেন,ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সার্কুলারে থাকা নির্দিষ্ট সংখ্যক পদে যারা নিয়োগ পান তাদের বলা হয় ক্যাডার। প্রিলিমিনারি,রিটেন,ভাইভা তে উত্তীর্ণ হয়েও যারা পদ পান না তাদের বলা হয় নন-ক্যাডার। সাধারণত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পদ খালি থাকা সাপেক্ষে নন-ক্যাডার দের সিরিয়াল অনুযায়ী পরবর্তীতে নিয়োগ দেওয়া হয়।
মনে করুন, ৪০তম বিসিএস-এ ২৬টি ক্যাডার ক্যাটাগরি তে মিলিয়ে মোট পোষ্ট ছিলো ২৫০০। কিন্তু প্রিলিমিনারি, রিটেন, ভাইবা তে উত্তীর্ণ প্রার্থী-র সংখ্যা ৩৫০০। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী পিএসসি (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) এর চাহিদা ২৫০০ জন! কিন্তু চাহিদার চেয়েও অধিক প্রার্থী তাদের হাতে আছে, তাদের কি হবে ?
হ্যাঁ, তারা সবাই নন-ক্যাডার ।
২৫০০ ক্যাডার কিভাবে নিয়োগ করা হয় ?
সহজ উত্তর - মেধা তালিকা অনুযায়ী ২৫০০ ক্যাডার নির্বাচিত করা হয় এবং তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে গ্যাজেট প্রকাশ করা হয় ।
ক্যাডার ও নন-ক্যাডার-এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্যগুলো হলো-
বিসিএস ক্যাডার এর সবগুলো চাকরি-ই প্রথম শ্রেণি-র, অন্যদিকে নন-ক্যাডার সব প্রথম শ্রেণি-র চাকরি না।
ক্যাডার হলে সরাসরি ও নিশ্চিত নিয়োগ হয়ে থাকে, তবে নন-ক্যাডার হলে সরাসরি নিয়োগ তো হয়-ই না (পিএসসি বিভিন্ন চাকরির জন্য সুপারিশ করবে), এমনকি চাকরি না হওয়ারও অনেক ইতিহাস আছে ।
ক্যাডারভুক্ত-রা প্রমোশন পেয়ে নীতিনির্ধারক পদে যেতে পারেন কিন্তু নন-ক্যাডারগণ যেতে পারেন না।
প্রায় সব ক্যাডার ই প্রমোশন পেয়ে গ্রেড -৩ পর্যন্ত যেতে পারেন, অন্যদিকে নন-ক্যাডার এর উপরের পোষ্ট ব্লক পোষ্ট ।
সত্যায়ন ক্ষমতাঃ রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি-ই কেবল কোন কিছু সত্যায়িত করার ক্ষমতা রাখেন, কিন্তু উনার ব্যস্ততা এবং অপারগতায় এটা সম্ভব নয় বলে উনার অনুমোদনক্রমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ (গ্যাজেটেড ) সত্যায়িত করতে পারবেন । তবে সার্কুলার এ গ্যাজেটেড কথাটি উল্লেখ না থাকলে সকল প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা-ই সত্যায়িত করতে পারবেন ।
৭) বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতা কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে, নির্দিষ্ট বয়স সীমার ভেতরে বয়স থাকতে হবে। যেকোন বিষয়ে চার বছরের অনার্স বা সমমানের ডিগ্রি থাকতে হবে। তিন বছরের অনার্স ও এক বছরের মাস্টার্স করা প্রার্থীরাও পরীক্ষা দিতে পারবেন। বিদেশে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরাও শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে তাদের ডিগ্রি বাংলাদেশের চার বছরের ডিগ্রির সমান- এই সার্টিফিকেট দেখিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
৭) বিসিএস-এ অ্যাপ্লাই করার শিক্ষাগত যোগ্যতা:
এসএসসি থেকে স্নাতক পর্যন্ত সবগুলো পরীক্ষায় যেকোন দুটিতে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমান এবং ১ টি প্রথম শ্রেনী থাকলেই হবে।
জিপিএ বা সিজিপিএর হিসাবটা দাঁড়ায় এরকম-
৮) বিসিএস (ক্যাডার) পদে নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রণীত বিসিএস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা-২০১৪ অনুযায়ী বিসিএস-এর নিম্নোক্ত ২৬টি ক্যাডারে উপযুক্ত প্রার্থী নিয়োগের উদ্দেশ্যে কমিশন কর্তৃক ৩ স্তরবিশিষ্ট পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
বিসিএস-এর ২৬টি ক্যাডারের নাম (ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে)
৯) বিসিএস এর তিনস্তর বিশিষ্ট পরীক্ষা পদ্ধতি
বিসিএস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা-২০১৪-এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের উদ্দেশ্যে সরকারী কর্ম কমিশন নিম্নোক্ত ৩ স্তর বিশিষ্ট নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করে থাকে
প্রথম স্তরঃ ২০০ নম্বরের MCQ Type Preliminary Test ।
দ্বিতীয় স্তরঃ প্রিলিমিনারি টেস্টে কৃতকার্য প্রার্থীদের জন্য ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা।
তৃতীয় স্তরঃ লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য প্রার্থীদের জন্য ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা।
প্রথম স্তরঃ ২০০ নম্বরের MCQ Type Preliminary Test
শূন্য পদের তুলনায় প্রার্থী সংখ্যা বিপুল হওয়ায় লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই-এর জন্য বিসিএস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা-২০১৪-এর বিধি-৭ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন ২০০ নম্বরের MCQ Type প্রিলিমিনারি টেস্ট গ্রহণ করে থাকে। ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষা পর্যন্ত ১০০ নম্বরে প্রিলিমিনারি টেস্ট গ্রহণ করা হতো। বিসিএস পরীক্ষা বিধিমালা-২০১৪-এর বিধানমতে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষা হতে ২০০ নম্বরের ২ ঘণ্টা সময়ে ১০টি বিষয়ের উপর MCQ Type প্রিলিমিনারি টেস্ট গ্রহণের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে।
প্রিলিমিনারি টেস্ট-এর বিষয় ও নম্বর বণ্টন