ভারতীয় উপমহাদেশের সিভিল সার্ভিসের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সার্ভিস হলো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস, যা বর্তমানে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার। এখানে মাঠ প্রশাসন তো বটেই, কেন্দ্রীয় প্রশাসনেও সবচেয়ে বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তাই বিসিএস প্রার্থীদের অনেকেরই প্রথম পছন্দ থাকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলিসহ সব বিষয় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা মাঠ প্রশাসনে সহকারী কমিশনার> সিনিয়র সহকারী কমিশনার/উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা/অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক> জেলা প্রশাসক> বিভাগীয় কমিশনার এবং কেন্দ্রীয় প্রশাসনে সহকারী সচিব> সিনিয়র সহকারী সচিব> উপসচিব> যুগ্ম সচিব> অতিরিক্ত সচিব> সচিব> সিনিয়র সচিব হয়ে থাকেন।
একজন সহকারী কমিশনার (৯ম গ্রেড) জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দক্ষতা অনুসারে তাঁকে সাধারণ শাখা, রাজস্ব শাখা, শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা, ট্রেজারি ও স্ট্যাম্প শাখা, নেজারত শাখাসহ ডিসি অফিসের যেকোনো শাখার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
শাখা অনুযায়ী পদের নাম ও দায়িত্ব নির্ভর করে। যেমন নেজারত শাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর বা এনডিসি বলা হয়। একজন এনডিসি জেলায় আসা প্রটোকল ও বিশিষ্ট অতিথিদের ভ্রমণ সূচি অনুযায়ী কার্যক্রম, রাষ্ট্রীয়, সরকারি ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা, সার্কিট হাউস, রেস্টহাউস, ডাকবাংলো ইত্যাদি ব্যবস্থাপনাসহ জেলা প্রশাসকের দেওয়া দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা, নির্বাচন পরিচালনাসহ বিভিন্ন কাজে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হতে পারে। যোগদানের দুই বছর পর চাকরি স্থায়ী হলে সহকারী কমিশনারদের পর্যায়ক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয় এবং পদের নাম হয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড। একজন এসিল্যান্ড উপজেলা ভূমি অফিসের দপ্তরপ্রধান হিসেবে জমির রেকর্ড, হুকুম দখল, মিউটেশনসহ যাবতীয় ভূমিসংক্রান্ত কাজ তদারক করেন।
পদোন্নতির পর প্রথমে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে এবং পরবর্তী সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কাজ করতে হয়। একজন ইউএনও উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা পরিষদের নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে উপজেলা চেয়ারম্যানকে সহায়তা প্রদান করা, সমন্বিত উপজেলা উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ উপজেলা পর্যায়ে সব প্রশাসনিক/উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধান, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারার অধীন ইউএনও ক্ষমতা প্রয়োগসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। একটি জেলায় পাঁচ থেকে ছয়জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) থাকেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিসি পদমর্যাদাসম্পন্ন) ফৌজদারি মামলা ও আপিল–সংক্রান্ত কাজ, প্যারোল–সংক্রান্ত কাজসহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (জেলা প্রশাসক) অর্পিত দায়িত্বগুলো পালন করে থাকেন। এ ছাড়া এডিসি (জেনারেল), এডিসি (শিক্ষা), এডিসি (রাজস্ব)–সহ অন্য এডিসিরা নিজস্ব দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
একজন উপসচিব জেলা প্রশাসক (ডিসি), ডিডিএলজি (উপপরিচালক-স্থানীয় সরকার), প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও-জেলা পরিষদ) হিসেবে মাঠ প্রশাসনে অথবা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব বা সমপদমর্যাদাসম্পন্ন পদে বিভিন্ন দপ্তরে পদায়ন পেতে পারেন। একজন যুগ্ম সচিব মাঠ প্রশাসনে বিভাগীয় কমিশনার এবং মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য দপ্তরে যুগ্মসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (দ্রষ্টব্য: ঢাকা বিভাগের কমিশনার অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদা)। অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব মন্ত্রণালয় ও সমমর্যাদায় বিভিন্ন দপ্তরে পদায়ন পেয়ে থাকেন।
কাজের বৈচিত্র্য এই ক্যাডারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ক্যাডারদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ডেপুটেশনে যাওয়ার সুযোগ সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় প্রশাসনে উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি দপ্তর (যেমন-পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, এফডিসি, বিদেশি দূতাবাস), ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার, বিভিন্ন দপ্তরের উপপরিচালক, পরিচালক, মহাপরিচালক, কমিশন/বোর্ডগুলোর সদস্য ও চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই ক্যাডারে নিজ জেলায় পদায়ন করা হয় না। তবে প্রথম পর্যায়ে অন্য বিভাগে পদায়ন হলেও পরবর্তী সময় নিজ বিভাগের কাছাকাছি জেলায় পদায়ন পাওয়া যেতে পারে।
যোগদানের পর প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অন্যান্য ক্যাডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) ৬ মাস মেয়াদি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ (এফটিসি) গ্রহণ করেন। এরপর চাকরিকালে বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ৫ মাস মেয়াদি আইন ও প্রশাসন কোর্স, সাভারে ৫২ দিন মেয়াদি ল্যান্ড সার্ভে ট্রেনিং, ক্যান্টনমেন্টে মিলিটারি ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিংসহ দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন। এ ছাড়া সরকারি বৃত্তি নিয়ে দেশ-বিদেশে মাস্টার্স এবং পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে।
জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুসারে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা ৯ম গ্রেডে ২২,০০০ টাকা মূল বেতনে চাকরি জীবন শুরু করে থাকেন। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩,১০০ টাকা। এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০ শতাংশ, অন্যান্য বিভাগে ৪৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৫০ শতাংশ), ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষা সহায়ক ভাতা, ঈদ/পূজাতে উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এই ক্যাডারে প্রমোশন, আবাসন ও ট্রান্সপোর্ট সুযোগ-সুবিধা ভালো। দায়িত্ব পালনের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের জন্য গেজেটেড অফিসারস ডরমিটরি এবং সরকারি বাসভবনের ব্যবস্থা আছে। কেন্দ্রীয় প্রশাসনে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে দায়িত্বকালে সময়ে সরকার কর্তৃক প্রণীত অন্যান্য সুযোগ–সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব এই ক্যাডারের কর্মকর্তা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক সরাসরি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকার ফলে এই ক্যাডারে থেকে সরাসরি সরকারের নীতিনির্ধারণ, বাস্তবায়ন ও ফিডব্যাক দেখাশোনা করার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে এখানে কাজের ক্ষেত্র ও পরিধি বেশি হওয়ায় অফিস সময়ের আগে ও পরে, এমনকি সরকারি বন্ধের দিনেও বিভিন্ন দায়িত্ব ও প্রটোকলের ব্যস্ততা থাকতে পারে। দায়িত্বের পরিসর বিস্তৃত হওয়ায় ঈদের ছুটিতেও আপনাকে কর্মস্থলে থাকতে হতে পারে। এখানে বিভিন্ন ধরনের চাপ রয়েছে। ফলে ভুলের প্রভাবটাও বেশি। তাই ক্যাডার পছন্দক্রমে রাখার আগে বিস্তারিত জেনে নিন।
বিসিএসে পুলিশ ক্যাডার চাকরিপ্রার্থীদের কাছে অন্যতম পছন্দের ক্যাডার। কেউ এটিকে পছন্দক্রমের শীর্ষে, কেউবা দ্বিতীয় বা তৃতীয় অবস্থানে রাখেন। পছন্দক্রমের যেখানেই রাখুন না কেন, বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অথবা বিপদ-আপদের প্রয়োজনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী এই সংস্থা সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকা প্রয়োজন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলিসহ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
চাকরির শুরুতে পুলিশ ক্যাডারের পদের নাম সহকারী পুলিশ সুপার। এরপর ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত ডিআইজি, ডিআইজি, অতিরিক্ত আইজিপি ও আইজিপি পর্যন্ত হওয়া যায়। তবে মেট্রোপলিটন এলাকায় পদায়ন হলে পদের নাম হয় সহকারী পুলিশ কমিশনার। এরপর ধাপে ধাপে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার, উপপুলিশ কমিশনার, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি/ডিআইজি পদমর্যাদা) পদে পদোন্নতি হয়।
পুলিশ ক্যাডারের এক কর্মকর্তাকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে যোগদান করতে হয়। একই দিনে তাঁকে মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ন্যস্ত করা হয়। ফাউন্ডেশন ও বেসিক ট্রেনিংয়ের পর একজন শিক্ষানবিশ এএসপিকে যেকোনো একটি জেলা পুলিশ থানায় দুই মাস, সার্কেলে এক মাস ও অন্যান্য জেলা পুলিশ কার্যালয়ে বিভিন্ন মেয়াদেসহ মোট ছয় মাস সংযুক্ত রেখে হাতে-কলমে সব কার্যক্রম দেখানো হয়। এরপর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে (যেমন ডিটেকটিভ ব্র্যাঞ্চ—ডিবি, ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট—সিআইডি ইত্যাদি) পদায়ন করা হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশে পদায়ন পেলে পদের নাম হবে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি)।
চাকরির তিন বছর পর এএসপিদের পর্যায়ক্রমে সার্কেলে পদায়ন শুরু হয় (কয়েকটি থানা মিলে একটি সার্কেল)। সার্কেলের অপরাধ দমন ও আইন বাস্তবায়ন, অধীনস্থ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যের কাজ তদারকি, প্রশাসনিক প্রটোকল ইত্যাদি সার্কেল এএসপির মূল কাজ।
প্রমোশনের পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রেড-৬) হিসেবে প্রথমে সার্কেল অফিসে (জেলার বড় ও পুরোনো সার্কেল) দায়িত্ব পালন করেন এবং ২-৩ বছর পর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অপরাধ/তদন্ত/প্রশাসন প্রভৃতি বিভাগে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জেলা পুলিশ সুপারের কাজে সহায়তা করতে হয়।
পুলিশ ক্যাডারের গ্রেড-৫ কর্মকর্তার পদ পুলিশ সুপার। আমরা অনেকেই ভুল করে পুলিশ সুপার পদটিকে জেলা পুলিশ সুপার মনে করি। একটি জেলায় কয়েকজন পুলিশ সুপার থাকেন। এর মধ্যে একজন জেলা পুলিশ সুপার। অন্যরা ইন-হাউস ট্রেনিং সেন্টার, পিবিআই, হাইওয়ে পুলিশ ইত্যাদি বিভিন্ন ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি (গ্রেড-৪) এবং ডিআইজি (গ্রেড-৩) রেঞ্জ পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যাটালিয়ন পুলিশে (যেমন র্যাব, এপিবিএন, এসপিবিএন) ইউনিটপ্রধান হিসেবে অতিরিক্ত ডিআইজি/ডিআইজি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আইজিপি) দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অতিরিক্ত আইজিপিরা হেডকোয়ার্টার এবং বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বে থাকেন। বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক বা ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি)।
যোগদানের পর পুলিশ ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে (বিপিএটিসি) ছয় মাস মেয়াদি বনিয়াদি প্রশিক্ষণ (ফাউন্ডেশন ট্রেনিং—এফটিসি) সম্পন্ন করেন। বনিয়াদি প্রশিক্ষণের পর রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয় এবং প্রশিক্ষণ শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ইন পুলিশ সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ ছাড়া সাভারে ৫২ দিন মেয়াদি ল্যান্ড সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট ট্রেনিং, ক্যান্টনমেন্টে ৪২ দিনব্যাপী মিলিটারি ওরিয়েন্টেশন কোর্স, সিলেটের জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে হেলিকপ্টারে সামরিক প্রশিক্ষণ, যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই গ্র্যাজুয়েশন, নর্থ ক্যারোলাইনার ব্ল্যাক ওয়াটার ট্রেনিং একাডেমির কমান্ডো ট্রেনিংসহ দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে হতে পারে।
সরকারি বেতন স্কেল-২০১৫ অনুসারে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা ২২,০০০ টাকা মূল বেতনে চাকরিজীবন শুরু করেন। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩,১০০ টাকা। এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০ শতাংশ, অন্যান্য বিভাগে ৪৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৫০ শতাংশ), ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষাসহায়ক ভাতা, ঈদ/পূজায় উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন।
পুলিশ সার্ভিসে হরতাল অবরোধ প্রভৃতি ডিউটির জন্য জেলা শহরে ও ঢাকায় দৈনিক ভাতা, র্যাবে চাকরিকালীন ভাতাসহ দায়িত্ব ভেদে বিভিন্ন ধরনের ভাতা পাওয়া যায়। ৪ সদস্যের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় রেশন সুবিধা, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের সমৃদ্ধ এবং আন্তরিক সেবা, চাকরিজীবনে মিশন থেকে একটি বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা এই ক্যাডারের বিশেষ প্রাপ্তি।
সার্কেলের দায়িত্ব পালনকালে ডাবল কেবিন পিকআপ, মুঠোফোন বিল, কোয়ার্টার আর গানম্যান পুলিশ সার্ভিসের প্রফেশনাল কাজকে সহজ করে। প্রশাসন ক্যাডারের মতো পুলিশ ক্যাডারেও কাজের বৈচিত্র্য আছে। পুলিশিং ভালো না লাগলে আপনি ট্রেনিং একাডেমিতে শিক্ষকতা করতে পারবেন, ইউনিফর্ম ভালো না লাগলে সাদা পোশাকে সিআইডিতে কাজ করতে পারবেন, গবেষণা থেকে আইটি, পুলিশ হাসপাতালের দায়িত্ব থেকে বোম্ব ডিসপোজাল ডিউটি, ডেস্ক জব থেকে রোড ডিউটি—সবকিছুর ফ্লেভার পাবেন পুলিশ সার্ভিসে। এপিবিএন, সোয়াট, র্যাবে , ইউএন মিশন প্রতিটি ইউনিটের আলাদা আলাদা পোশাক আপনার রুচির ভিন্নতা এনে দেবে। পুলিশ ক্যাডারে নিজ জেলায় পদায়ন করা হয় না। তবে নিজ জেলার আশপাশের জেলায় পদায়ন করা হতে পারে।
এ ক্যাডারে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা ডিউটি বলে কিছু নেই। রাতে ঘুম থেকে উঠে দুর্ঘটনাস্থলে যেতে হবে। সমাজের অন্ধকার দিক—ডাকাতি, হত্যা, ফাঁসি ইত্যাদি নিয়েই থাকতে হতে পারে। ঈদে অন্যরা যখন বাড়িতে যাবে, আপনি হয়তো তখন রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবেন। তাই চাকরিক্ষেত্রে প্রচুর শারীরিক, মানসিক পরিশ্রম ও রাজনৈতিক চাপ সামলানোর মানসিকতা থাকতে হবে।
Source: https://www.prothomalo.com/chakri/chakri-news/9i1ct1sxyr
রাষ্ট্রদূত হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা ও দেশের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে পররাষ্ট্র ক্যাডার অনেক বিসিএস প্রার্থীরই প্রথম পছন্দ। এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক পদায়ন, পদোন্নতি, বদলিসহ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকেন।
এই ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিদেশে বাংলাদেশের মিশন, ফরেন সার্ভিস ট্রেনিং একাডেমিসহ সরকারের যেকোনো দপ্তরে পদায়ন করা হতে পারে। তবে পররাষ্ট্র ক্যাডারের একটি স্বাতন্ত্র্য হলো মিশন পোস্টিং। প্রয়োজন অনুসারে একটি দেশে মিশন নির্ধারণ করা হয়। কোনো দেশে মিশন থাকে না, কোনো দেশে ছোট মিশন থাকে আবার কোনো দেশে একাধিক মিশন থাকে (যেমন ভারতে বাংলাদেশের সাতটি মিশন রয়েছে)। সাধারণত চাকরি স্থায়ী বা দুই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি সম্পন্ন হলে ছয় বছরে দুটি মিশন সম্পন্ন করতে হয় এবং আবার দুই বছরের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়।
অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও বিনিময়; আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন; বিভিন্ন ধরনের সমঝোতা স্বাক্ষর ও চুক্তি; অন্য দেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা; রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ ও অন্য দেশের প্রধানদের বৈদেশিক সফর ব্যবস্থাপনা ও প্রটোকলসংক্রান্ত কাজ; অন্য দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করাই পররাষ্ট্র ক্যাডারদের প্রধান কাজ।
পররাষ্ট্র ক্যাডারের মূল পদসোপান হলো সহকারী সচিব>সিনিয়র সহকারী সচিব>পরিচালক>মহাপরিচালক>অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব>সচিব/পররাষ্ট্রসচিব (মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রযোজ্য)। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দায়িত্বে কয়েকজন সচিব রয়েছেন। সচিবদের মধ্যে যিনি সিনিয়র, তিনি পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমান পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে একজন সিনিয়র সচিব দায়িত্ব পালন করছেন। মিশনের পদসোপান হলো, ৩য় সচিব>১ম/২য় সচিব>কাউন্সিলর>মিনিস্টার>অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনার। ৬ষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতির পর প্রথমে ২য় সচিব এবং পরে ১ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। মিনিস্টার পদমর্যাদার কর্মকর্তা অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পালনকালে ডেপুটি চিফ অব মিশন এবং হাইকমিশনে দায়িত্ব পালনের সময় ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনার যেকোনো গ্রেডের হতে পারেন। মিশনের পরিসর ও গুরুত্ব বিবেচনায় অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। যে গ্রেডের কর্মকর্তাকে এই পদে পদায়ন করা হবে, তিনি সেই গ্রেডের অ্যাম্বাসেডর/হাইকমিশনার হবেন।
যোগদানের পর পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) ৬ মাস মেয়াদি বনিয়াদি প্রশিক্ষণ ফাউন্ডেশন ট্রেনিং (এফটিসি) সম্পন্ন করেন। এরপর এই ক্যাডারের কর্মকর্তাকে চাকরিকালীন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ১২ মাস মেয়াদি স্পেশালাইজড ডিপ্লোমেটিক ট্রেনিং কোর্স (এসডিটিসি)–সহ দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। অন্যান্য ক্যাডারের মতোই সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স ও পিএইচডি পড়াশোনার সুযোগ পাওয়া যায়।
সরকারি বেতন স্কেল-২০১৫ অনুসারে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা ২২,০০০ টাকা মূল বেতনে চাকরিজীবন শুরু করেন। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩,১০০। এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০%, অন্যান্য বিভাগে ৪৫%, ঢাকা বিভাগে ৫০%), ১৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষাসহায়ক ভাতা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ঈদ/পূজায় উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিদেশের মিশনে পদায়নকালে পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তারা সে দেশের মর্যাদা অনুসারে বেতন ও অন্যান্য কূটনৈতিক সুবিধা পাবেন।
পদোন্নতি সুবিধা ভালো। অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার মতো সরকারি কোয়ার্টারে আবাসনের সুবিধা আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য অফিস গাড়ি সুবিধা আছে। অন্যান্য গ্রেডের কর্মকর্তারাও শেয়ারিং ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মতো এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা কূটনৈতিক পাসপোর্ট (রেড পাসপোর্ট) পেয়ে থাকেন। অন্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অধিদপ্তরে চাকরি করলেও পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রথম থেকেই মন্ত্রণালয়ে চাকরি করে থাকেন।
Source: https://www.prothomalo.com/chakri/employment/c9v3rd6o4v
সরকারি ব্যয় কার্যক্রম পরিচালনা এবং এর সঙ্গে জড়িত জবাবদিহি নিয়ে অডিট করাই হলো বিসিএস নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডার কর্মকর্তাদের কাজ। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় বিসিএস (নিরীক্ষা ও হিসাব) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন, পদোন্নতি, বদলিসহ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
হিসাব ও নিরীক্ষা ক্যাডারের দুটি বিভাগ হলো—অডিট অধিদপ্তর ও অ্যাকাউন্টস বিভাগ। অ্যাকাউন্টস বিভাগের তিনটি সার্কেল/উইংস হলো সিভিল, ডিফেন্স এবং রেলওয়ে। এই দপ্তরগুলোয় ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়।
দেশের যেখানেই সরকারি টাকার কার্যক্রম, সেখানেই অডিট ক্যাডারের কাজ। এমনকি সরকারি টাকা যদি দেশের বাইরেও যায়, সেখানেও অডিট ক্যাডার কাজ করে। সরকারের বাজেটের টাকা খরচ করা হয় অ্যাকাউন্টস বিভাগের মাধ্যমে, একে প্রি-অডিট বলা হয়। খরচ হওয়ার পর সেটির সত্যতা ও শুদ্ধতা যাচাই করা হয়, একে পোস্ট বা স্ট্যাটাটরি অডিট বলা হয়। পোস্ট-অডিটের যে অংশে সঠিক রুলস ও প্রসিডিউর অনুযায়ী খরচ হয়েছে কি না (অর্থাৎ যেখানে যতটুকু খরচ করা নিয়ম, সেখানে ততটুকু করা হয়েছে নাকি বেশি করা হয়েছে) সেটি দেখা হয়, তাকে কমপ্লায়েন্স অডিট এবং যে অংশে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের (যেমন বন বিভাগ, ওয়াসা ইত্যাদি) কন্ট্রিবিউশন মূল্যায়ন করা হয়, তাকে পারফরম্যান্স অডিট বলা হয়।
সারা বিশ্বেই সরকারি অডিট প্রতিষ্ঠানকে সুপ্রিম অডিটরি ইনস্টিটিউশন বলা হয় এবং এই প্রতিষ্ঠান যে স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে তাকে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অব সুপ্রিম অডিট ইনস্টিটিউশন (আইএসএআই) বলা হয়। মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)—নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের সাংবিধানিক প্রধান হলেও তিনি মূলত ফর্মস অ্যান্ড ম্যানার দেখে থাকেন। তাঁকে সহায়তা করার জন্য একজন ডেপুটি সিএজি সিনিয়র রয়েছেন। হিসাব (সিভিল, ডিফেন্স ও রেলওয়ে) এবং নিরীক্ষা বিভাগের আলাদা আলাদা প্রধান আছেন, যাঁরা প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে দেশে ১৭টি অডিট অধিদপ্তর আছে। একজন মহাপরিচালক প্রতিটি অধিদপ্তরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অধীনে পরিচালক, উপপরিচালক এবং সহকারী পরিচালক রয়েছেন। ক্যাডার সার্ভিসের বাইরে এই অধিদপ্তরগুলোয় অ্যাকাউন্টস অফিসার, সুপারিনটেনডেন্ট, অডিটর এবং জুনিয়র অডিটর রয়েছেন।
অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের হিসাব (সিভিল) বিভাগে পোস্টিং হলে ঢাকা এবং বিভাগীয় শহরে পদায়ন হতে পারে। পদায়নের ওপর ভিত্তি করে পদনাম নির্ধারিত হয়। ঢাকার হিসাব ভবন অফিসে কন্ট্রোলার জেনারেল অব অ্যাকাউন্টস (সিজিএ) অফিস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অধীনে অ্যাডিশনাল সিজিএ, ডেপুটি সিজিএ, অ্যাসিস্ট্যান্ট সিজিএ বণ্টন করা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আবার ঢাকায় মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ৫২টি আলাদা চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স (সিএএফও) অফিস আছে, যেখানে সিএএফও অফিস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর অধীনে ডেপুটি সিএএফও, অ্যাসিস্ট্যান্ট সিএএফও বণ্টন করা দায়িত্ব পালন করেন। বিভাগীয় পর্যায়ে (আট বিভাগে আটজন) ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস (ডিসিএ) অফিস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাঁর অধীনে ডেপুটি ডিসিএ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিসিএ বণ্টন করা দায়িত্ব পালন করেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অডিট ক্যাডারের পদায়ন দেওয়া হয় না। জেলা ও উপজেলায় জেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার (ডিএএফও), উপজেলা অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার (ইউএএফও), সুপারিনটেনডেন্ট, অডিটর এবং জুনিয়র অডিটর প্রভৃতি পদে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন।
ঢাকা হেড অফিসে কন্ট্রোলার জেনারেল অব ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ) এ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অধীনে জয়েন্ট সিজিডিএফ, ডেপুটি সিজিডিএফ এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সিজিডিএফ বণ্টন করা দায়িত্ব পালন করেন। হেড অফিসের অধীনে ঢাকায় আর্মি/নেভি/এয়ারের তিনটি এজেন্সি অফিস আছে, যেখানে সিনিয়র ফাইন্যান্স কন্ট্রোলার (এসএফসি) অফিসপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসএফসির অধীনে ডেপুটি এসএফসি এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট এসএফসি বণ্টন করা দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার এসএফসি অফিসের অধীনে বিভিন্ন বিভাগে এরিয়া ফাইন্যান্স কন্ট্রোলার আর্মি/নেভি/এয়ারের আলাদা অফিস রয়েছে।
ঢাকা রেলভবনে অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এডিজি) ফাইন্যান্স এই বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অধীনে ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডি) ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর (এডি) বণ্টন করা দায়িত্ব পালন করেন। রেলভবনের অধীনে রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে আলাদা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার অ্যান্ড চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার (এফএসিএও) অফিস প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর অধীনে ডেপুটি ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার (ডিএফএ) এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার (এএফএ) কাজ করেন।
যোগদানের পর নিরীক্ষা ও হিসাব ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিপিএটিসি) ছয় মাস মেয়াদি বনিয়াদি প্রশিক্ষণ (ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স—এফটিসি) সম্পন্ন করেন। এরপর প্রফেশনাল দক্ষতা অর্জনের জন্য ঢাকার মিরপুরে ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট একাডেমিতে (ফিমা) এক বছর মেয়াদি বিভাগীয় প্রশিক্ষণ নিতে হয় তাঁকে। এ ছাড়া দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। অন্য ক্যাডারের মতো সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিভিন্ন দেশে মাস্টার্স এবং পিএইচডি পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
এ ক্যাডারের একটি বিশেষ দিক হলো সব সরকারি কর্মচারী ভোটেড এক্সপেনডিচার (বেতনের জন্য সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়) থেকে বেতন উত্তোলন করলেও আপনার পদায়ন অডিট অধিদপ্তরে হলে আপনি চার্জড এক্সপেনডিচার (সাংবিধানিক সংস্থা) থেকে বেতন পাবেন। সরকারি বেতন স্কেল–২০১৫ অনুসারে সব ক্যাডারের কর্মকর্তা ২২ হাজার টাকা মূল বেতনে চাকরিজীবন শুরু করেন। যোগদানের সময় একটি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর মূল বেতন হয় ২৩ হাজার ১০০ টাকা। এ ছাড়া মূল বেতনের নির্দিষ্ট হারে বাড়িভাড়া (জেলা শহরে ৪০ শতাংশ, অন্যান্য বিভাগে ৪৫ শতাংশ, ঢাকা বিভাগে ৫০ শতাংশ), ১ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, সন্তানের জন্য শিক্ষাসহায়ক ভাতা, ঈদ বা পূজায় উৎসব ভাতা, বৈশাখে নববর্ষ ভাতা, সরকারি দায়িত্ব ও যাতায়াতের জন্য টিএ/ডিএ ভাতাসহ সরকারি সব আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এ ক্যাডারে মোটামুটি ভালো ডেপুটেশন–সুবিধা আছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বিভিন্ন প্রজেক্ট (মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু), সিটি করপোরেশন ইত্যাদিতে অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে লিয়েন ও ডেপুটেশন দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে মিশন অডিটের (৪০ দিন) মাধ্যমে আর্থিকভাবে উপকৃত হওয়ার সুযোগ আছে। মিশন অডিটে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় সেবা ও বিদেশ ভ্রমণ হয়, অন্যদিকে আর্থিক সচ্ছলতাও সম্ভব। প্রমোশন-সুবিধা তুলনামূলক ভালো। ৯ম ও ৬ষ্ঠ গ্রেডে কর্মরত থাকলে শেয়ারড ট্রান্সপোর্ট এবং ৫ম গ্রেড থেকে অফিস ট্রান্সপোর্ট-সুবিধা রয়েছে। সাধারণ সরকারি কর্মকর্তাদের মতো কোয়ার্টার সুবিধার পাশাপাশি ডিফেন্স ও রেলওয়েতে কর্মরত থাকাকালে নিজ নিজ কোয়ার্টার ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এই ক্যাডারের পদায়ন নেই। ঢাকা ও অন্যান্য বিভাগে সিভিল অফিস, ডিফেন্স ও রেলওয়েতে পদায়ন করা হয়। রাষ্ট্রীয় হিসাবের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানের সুযোগ ও ভালো কর্মপরিবেশের জন্য অনেক চাকরিপ্রার্থী এ ক্যাডারকে বিসিএসে পছন্দক্রমের প্রথম দিকে রাখেন।
Source: https://www.prothomalo.com/chakri/chakri-news/axrpguusbn