কবিতা

করোনাকালে সিয়ামের প্রার্থনা

এ কে আজাদ


পুড়ছে যখন এই পৃথিবী ভীষণ রকম দহনে,

জমছে কেবল ব্যথার পাহাড় এই হৃদয়ের গহনে,

তখন এলো মাহে রমজান পঙ্কিলতা করতে সাফ,

প্রার্থনা এই - হে রহমান! সবাইকে আজ দাও করে মাফ।


করোনাতে কাঁপে হৃদয় তোমার ভয়ে কাঁপেনি,

তাই বলে আজ তোমার আরশ দয়া কি গো মাপেনি?

বনীআদম কাঁদে শত আজকে দ্যাখো চেয়ে গো!

আবার ধরা উঠুক হেসে তোমার দয়া পেয়ে গো!


রহম, ক্ষমা, নাজাত দেবে এই সিয়ামে শুনি গো,

তাই তো অধম তোমার নামে তাসবিহ্ শত গুনি গো!

এত কাঁদি - দাও না ক্ষমা মানব জাতির তরেতে।

অশ্রু মুছাও, শান্তি ফেরাও সব মানুষের ঘরেতে।

জান্নাত দেবে পরকালে, এই কালেও শান্তি চাই।

তোমার ক্ষমায়, অসীম দয়ার একটুখানি কান্তি পাই।


এত ভালবাসার মানুষ গড়েছো যে তুমি গো,

থমকে গেছে তোমার প্রিয় সেই মানুষের ভূমি গো!

তুমি মালিক তুমি কাদির তোমার অসীম শক্তি গো!

রহম কর তোমার গুণে, নাই বা দেখাক ভক্তি গো!


এই করোনার কি বা শক্তি তোমার "কুন" এর কাছে!

তোমার প্রিয় আশরাফেরা তোমার দয়া যাচে!

কত চোখের কত পানি যাচ্ছে ধরা ভেসে গো!

রহিম নামের বদৌলতে একবার ওঠো হেসে গো।


জানি প্রভু - সইছো অনেক অত্যাচারীর খড়গরে!

নরক করে তুলছে যারা এই আরামের স্বর্গরে।

যাদের দাপট বিশ্বটারে জ্বালিয়েছিল খুব,

তারাই এখন ঘরের কোণে চুপ মেরেছে ডুব!

যাদের ধোঁয়ায় গাছের পাতা নিরবেতে কেঁদেছে,

নিঠুর যারা সখের লীলায় পশু পাখি বেঁধেছে;

কেমনে করবে তাদের তুমি নিঃশর্তে আজ ক্ষমা!

মানুষ মেরে সাফ করেছে যাদের নিদয় বোমা!

ড্রোনের অনল যাদের এমন বিশ্বটারে পুড়েছে,

রকেট হামলায় তোমার জমিন যারা এমন গুঁড়েছে;

হাওয়ার গতি ঘুরিয়ে যারা তোমার সাথে পাল্লা দেয়,

নিরীহ সব মানুষ মেরে যারা এমন কাল্লা নেয়;

সাগর জুড়ে যাদের জাহাজ বিষিয়ে দেয় অথৈ জল,

শক্তি দিয়ে হাওয়ায় ওড়ে জীবন-মারা যাদের কল;

তাদের ক্ষমা করতে গেলে জানি তোমার কষ্ট হয়!

পাষাণগুলোয় করতে ক্ষমা তোমার রহম নষ্ট হয়!


তবুও দেখো ঘরে ঘরে এক জীবাণুর কানাকানি,

থেমে গেছে বিশ্বজুড়ে মানুষ-মারা হানাহানি!

অদৃশ্যের এক তাড়া খেয়ে সবাই এখন ঘরেতে!

থেমে গেছে দম্ভ তাদের, কাঁপছে তারা জ্বরেতে!

নিত্য দিনই পাখি মেরে করতো যারা ভূরিভোজ,

তারাই এখন ঘরের কোণে অনাহারে কাঁদছে রোজ!


যাদের বিমান ভাঙতো আকাশ মানুষ মারার নামেতে!

কিনছে বাতাস, ভেন্টিলেটর তারাই চড়া দামেতে!

মানুষ মারার হোলি খেলায় মাততো যারা উৎসবে,

জীবন দিয়ে শ্মশান ঘাটে তারাই এখন ভূত সবে!

অস্ত্র যাদের ঝনঝনিয়ে কাঁপাতো এই বিশ্বরে!

দেখছি ভীষণ করুণ চোখে তারাই এখন নিঃস্ব রে!

কেউ পারেনি থামাতে যেই মানব খেকো দানোদের,

থামালো আজ করোনা তায়, বন্ধু হয়ে মানবের।


ইচ্ছে হলেই আকাশ ফুঁড়ে করতো যারা হামলা!

তাদের গলায় বাঁধা এখন মৃত্যু ভয়ের গামলা!

সাবমেরিনের দাপট যাদের ফেনায় তুলতো সাগর ঢেউ,

চুপসে গেছে দম্ভ তাদের, ফণা তোলার নেই তো কেউ!

যাদের পাপে শুকিয়ে গেছে বিশ্বপ্রেমের গোলাপ ফুল,

তাদের দোষে কাঁদছে দেখো নিরীহ এই মানবকুল।


অত্যাচারের প্রতিবাদে গর্জে ওঠার শক্তি নাই,

তাই বলে আজ ভেবো না গো- তোমার প্রতি ভক্তি নাই।

ভক্তি আছে শক্তি নাই গো, আমরা অধম বিশ্বাসী,

তাই বলে আজ কেড়ো না গো - বেঁচে থাকার নিশ্বাসই।


অত্যাচারে যারা প্রভু বিশ্বটারে তাড়াতো,

প্রকৃতিকে পরিয়ে শিকল ইচ্ছে মত নাড়াতো;

নারী শিশুর কান্নায় যাদের একটু হৃদয় টলেনি,

মানুষ মেরেও যাদের বিবেক একটু কথা বলেনি,

ইয়া নাফসি জপে তারাই ইঁদুর গর্ত খুঁজে নেয়,

ভয়ে থাকে - মৃত্যু বুঝি এবার হিসেব বুঝে নেয়।

বিশ্ববিবেক যা পারেনি, এই করোনায় পেরেছে,

যাদের ভয়ে কাঁপতো বিশ্ব, তাদের ঘরে তেড়েছে।


নিপীড়কদের কম মারেনি এই করোনার বড়শি গো,

তাদের সাথে মরেছে যে নিপীড়িত পড়শি গো!

বনীআদম তোমার নাকি অনেক প্রিয় সৃষ্টি গো,

অনেক হলো দাও না এবার তোমার রহম বৃষ্টি গো।

আর পারিনা সইতে প্রভু থামাও এবার করোনা,

আজরাইলকে থামাও এবার, থামাও মৃত্যু-পরোনা।


মানুষ যতই দম্ভ দেখাক, হোক না যতই দড়,

এই করোনা করলো প্রমাণ- তুমিই প্রভু বড়।

অত্যাচারীর শক্তি প্রভু তোমার চেয়ে বড় নয়,

তাই তো প্রভু তোমার দ্বারে মজলুমেরা জড় হয়।

এবার তোমার রহম দিয়ে থামাও তুমি করোনা,

এই সিয়ামে মাফ করে দাও, ভুল ত্রুটি আর ধরো না।

রহম দিয়ে শীতল করো অগ্নিজ্বলা দুনিয়া,

নিরব তুমি থেকো না গো, এত কান্না শুনিয়া।


মরলে সবাই তোমার নামে তাসবি পড়ার থাকবে কে?

এই জমিনে তোমার নামে রোজা বল রাখবে কে?

এই অধমের প্রার্থনা আজ - শোন তুমি আল্লাহ,

মানব তরে ভারী করো তোমার রহম পাল্লা।

#

২৯/০৪/২০২০