জিহাদের পরিচয়ঃ
জিহাদ' এটি আরবী শব্দ।
এর অভিধান অর্থ- সংগ্রাম, যুদ্ধ ,সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম, সাধনা, আন্দোলন ইত্যাদি।
》ইসলামী পরিভাষায় বিশ্বব্যাপী আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বাতিলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা কে বলা হয়।
☆সাধারণত প্রত্যেক মুসলমানের উপর জিহাদ ফরজে কেফায়া।
তবে ইমাম তথা আমির কর্তৃক যুদ্ধের সাধারণ ঘোষণা দেওয়ার পর তা ফরজে আইন হয়ে যায়।
(ফা. বা. 553 পৃ.)
☆ عن ابي سعيد الخدري رضي الله عنه
قال : سميت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من رأى منكم منكرا فليغيره بيده فإن لم يستطيع فبلسانه فان لم يستطيع فبقلبه وذلك أضعف الإيمان
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বলতে শুনেছি
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ দেখবে, সে যেন তার নিজ হাতে তা পরিবর্তন করে (বাধা) দেয়।
যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার নিজ জবান দাঁড়া মুখের কথা দ্বারা বাধা প্রধান করে।
যদি তাও সম্ভব না হয়
সে যেন মনে মনে তা পরিবর্তন করার পরিকল্পনা ও ঘৃণা করে।
আর এটা (মনে মনে তা বন্ধ করার পরিকল্পনা করা অন্তরে কিনা করা)
হল ঈমানের নিম্ন স্তর।
সহিমুসলিম -186 , তিরমিজি -2172, নাসাঈ -5008 ,5009 ,
আবু দাউদ -1140 , 4340, 4342
ইবনে মাযা- 1275, 4013,
মুসনাদে আহমদ -10689, 11068, 10766,11145,
দারিমী-27401, হাদিসের শব্দাবলী মুসলিমের
☆ عن ابي سعيد الخدري رضي الله عنه
قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أفضل الجهاد كلمة عدل عند السلطان جائر أو أمير جائر
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন। স্বৈরাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা হল সর্বোত্তম জিহাদ।
সহি তিরমিজি 2174 ,
আবু দাউদ-4344,ইবনে মাজাহ-4011,
আহমাদ-10759,11193
হাদিসের শব্দগুলি আবু দাউদ এর হাদীসটি সহি
পক্ষান্তরে; কোন দেশে জেহাদের প্রয়োজন না হলেও সর্বক্ষণিক অন্তরে জেহাদের নিয়ত ও তামান্না রাখা ওয়াজিব।
মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে কেউ মৃত্যুবরণ করল অথচ সে জীবদ্দশায় জেহাদ করল না, বা তার অন্তরে জেহাদের আকাঙ্ক্ষা ও নিয়ত রাখল না, সে মুনাফিক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল।
সহিঃ মুসলিম -5040,
আবু দাউদ- 2404,
নাসাঈ- 3097,
আহমাদ-8865, বায়হাকী-17720,
হাকেম -2418,
আবূ আওয়ানাহ -7451,
》জিহাদ কত প্রকার ও কি কি ?《
জেহাদ প্রথমত দুই প্রকার যথা:
1- জাহেরী তথা প্রকাশ্য
জিহাদ।
2- বাতেনী তথা অপ্রকাশ্য
জিহাদ।
( (জাহেরী জেহাদ))
সর্বোত্ত ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাফের-মুশরিক বেইমান খোদাদ্রোহী নাস্তিক ও ইসলাম এর শত্রুদের বিরুদ্দে নিজের জান ও মাল নিয়ে যুদ্ধ করার নাম যাহেরী/ প্রকাশ্য জিহাদ।
যেমনঃ আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন।
وجاهدوافى الله حق جهاده
তোমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করো যেমন জিহাদ করা উচিত।
(সুরা হজ্জ -78)
☆বাতেনী জেহাদ☆
মানুষের চরম দুশমন হচ্ছে নফসে শয়তান।
নফসের শয়তান মানুষকে ধোঁকা দিয়ে সব সময় কুপথে পরিচালনার চেষ্টা করে।
একপর্যায়ে সে মানুষকে গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট করে ফেলে।
আর্ণব সে শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নাম হচ্ছে বাতেনি জিহাদ'।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফ্স বা কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জেহাদ করাকে জেহাদে আকবর তথা বড় জেহাদ বলে অবহিত করেছেন।
একটি সহি হাদিসের এরশাদ হয়েছে
المجاهد من جاهد نفسه -
প্রকৃত মুজাহিদ ঐ ব্যক্তি যে নিজের নফসের সাথে জিহাদ করে।
বোখারী-2786,6494, ইফা- 2595,
মুসলিম -1888,
আবু দাউদ -2487,
আহমদ-11838,
বায়হাকী-142,
(হাদিসের শব্দাবলী বোখারীর)
☆জিহাদের শরয়ী বিধান☆
1- স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ অবস্থায় জিহাদ। ফরজে আইন নয় বরং ফরজে কেফায়া।
অর্থাৎ সকলের জন্য জরুরী নয় বরং সমাজের কিছু সংখ্যক লোক জেহাদে সংশ্লিষ্ট তৎপরতায় লিপ্ত থাকবে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে।
(তাফসীরে মারেফুল কোরআন -111)
2- ইমাম তথা মুসলিম আমিরের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে জেহাদের আহ্বান আসলে তখন সকলের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়। এ পর্যায়ে কিছু সংখ্যক লোক জেহাদ সংক্রান্ত তৎপরতায় জড়িত থাকলে সকলের পক্ষে থেকে তা আদায় হবে না।
বরং সকলের জন্য অংশগ্রহণ করা জরুরী।
( তাফসীরে মারেফুল কোরআন 111)
3- ইসলামের (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ফরজ। কখনো ফরজে আইন, কখনো ফরজে কেফায়া,
কেউ জিহাদকে অস্বীকার করলে নিঃসন্দেহে সে কাফের হয়ে যাবে।
অবশ্য; অস্বীকার না করে কার্যত তরক করলে কাফের হবেনা, তবে ফরজ তরকের গুনা অবশ্যই হবে।
রদ্দুল মুহতার-1/397,
মাজামউল আনহুর-1/9,
মাজ, কাও, ফিকহি-1/410,
4- কোরআন মাজিদে প্রায় পাঁচ শতাধিক আয়াত জিহাদের ব্যাপারে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর অসংখ্য হাদিস দ্বারা ফিসাবিলিল্লাহ প্রমাণিত।
তাছাড়া রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদানী জীবনে 10 বছরে প্রায় 100 টি যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। এবং তার মধ্যে 27 টি যুদ্ধের নিজেই সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুতরাং জিহাদ অস্বীকার অথবা অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই।
তদুপরি কেউ জিহাদকে অস্বীকার করলে পক্ষান্তরে আল-কুরআনের পাঁচশতাধিক আয়াত এবং অসংখ্য হাদিস এবং রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মধারা কে অস্বীকার করা হবে।
বস্তুত কোরআনের 500 আয়াত তো দূরের কথা আল কোরআনের একটি আয়াত অস্বীকার করা কাফের হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
রদ্দুল মুহতার-1/397,
নাজমউল আনহুর-1/9,
মাজ, তাও, ফিকহি-1/410,
☆জিহাদ কি সন্ত্রাস, নাকি রহমত ? ☆
অত্যন্ত উদ্বেগজনক হলেও সত্য যে, সম্প্রতি আমাদের সমাজে একটা মিথ্যা প্রপাগান্ডা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে- জেহাদ মানেই সন্ত্রাস।
নিঃসন্দেহে এটা ইসলামবিদ্বেষী আন্তর্জাতিক একটি সংঘবদ্ধচক্র মহলের ষড়যন্ত্র।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে একথা ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করা যায় যে, জিহাদ সন্ত্রাস নয়; বরং যাহা হচ্ছে সন্ত্রাস নির্মূলের সফল কার্যকর ব্যবস্থা।
আমরা জানি ইসলাম-পূর্ব যুগে ও ইসলামের প্রাথমিক যুগে জাযীরাতুল আরবে নানা ধরনের সন্ত্রাস প্রচলিত ছিল। মানুষের জান-মাল ইজ্জত-আবরুর কোন কিছুই নিরাপত্তা ছিলনা। সব সময় মারামারি হানাহানি যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত।
যাকে আজও আইয়ামে জাহেলিয়া বা জাহেলী যুগ বলা হয়।
তদুপরি ইতিহাস সাক্ষী যে চরম অন্ধকার যুগে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাত্র 10 বছরে মাদানী জীবনে জেহাদের মাধ্যমে সেই জাহেলিয়্যাত ভয়াবহ সন্ত্রাস নির্মূল করে তদানিন্তন আরব কে বিশ্বের সবচেয়ে সভ্য শান্তিপ্রিয় ও সর্বাধুনিক মডেল রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। যাকে আদর্শ ও মানবতার এক চরম ধন্য তার যুগেও মানুষ আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে অনুসরণ করে থাকে। সুতরাং সর্বজ্ঞ বুঝতে হবে জিহাদ মানে সন্ত্রাস নয় বরং জিহাদ হচ্ছে সন্ত্রাস নির্মূল ও শান্তি প্রতিষ্ঠার রক্ষাকবজ ।
রাষ্ট্র ও সমাজে যারা নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে অস্ত্র ও বিপর্যস্ত করে তোলে তাদের বিরুদ্ধেই জিহাদ।
#বর্তমানে জিহাদের হুকুম কি রহিত হয়ে গেছে ?#
জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত কখনো বন্ধ হবে না।
( সুনানে আবু দাউদ)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ
الجهاد ماض الى يوم القيامة -
অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে
(আবু দাউদ 2532)
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন
আল-আনফাল 39
وَقَٰتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ كُلُّهُۥ لِلَّهِۚ فَإِنِ ٱنتَهَوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাও যে পর্যন্ত না ফিতনা (কুফর ও শিরক) খতম হয়ে যায় আর দ্বীন পুরোপুরিভাবে আল্লাহর জন্য হয়ে যায়। অতঃপর তারা যদি বিরত হয় তাহলে তারা (ন্যায় বা অন্যায়) যা করে আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
আল-বাকারাহ 216
كُتِبَ عَلَيْكُمُ ٱلْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكْرَهُوا۟ شَيْـًٔا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّوا۟ شَيْـًٔا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْۗ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
তোমাদের প্রতি যুদ্ধ লিপিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপ্রিয় কিন্তু তোমরা কোন কিছু অপছন্দ কর সম্ভবতঃ তোমাদের জন্য তা কল্যাণকর এবং সম্ভবতঃ কোন কিছু তোমাদের কাছে প্রিয় অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহ্ই জানেন, তোমরা জান না।
Follow us on Facebook