গত শতাব্দির শেষের দিকের কথা। একটা ক্যামেরা তৈরির কোম্পানি ছিল, যাদের ক্যামেরাতে পৃথিবীর ৮৫ ভাগ ছবি তোলা হত। ১৯৯৮ সালেও কোম্পানিটিতে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার লোক কর্মরত ছিল। কোম্পানিটির নাম KODAK। গত কয়েক বছরে মোবাইল ক্যামেরার এমন বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় এমন অবস্থা হয় যে KODAK কোম্পানিটাই উঠে যায়। এমন কি KODAK সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে পড়ে এবং এদের সমস্ত কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছাটাই করতে হয়। ওই একই সময়ে কতগুলো বিখ্যাত কোম্পানি তাদের ঝাঁপ পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়। যেমন - HMT (ঘড়ি), BAJAJ (স্কুটার), DYNORA (TV), MURPI (Radio), NOKIA (Mobile), RAJDOOT(Bike), AMBASSADOR (গাড়ি)।
এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে কারুই কোয়ালিটি খারাপ ছিল না। তবুও কোম্পানিগুলো উঠে গেল কেন??
কারণ এরা সময়ের সাথে নিজেকে বদলাতে পারে নি। এখনকার সময়ে দাঁড়িয়ে হয়তো আমরা ভাবতেও পাচ্ছি না যে সামনের ১০ বছরে পৃথিবী কতটা পাল্টে যেতে পারে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে পুরো বিশ্বেরই টালমাটাল অবস্থা। বলা হচ্ছে --" The world-economy after Corona and before will never be the same"
সামাজিক দূরত্ব, জাতীয়তাবাদী চেতনা, ওয়ার্ক ফ্রম হোম কনসেপ্ট, তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আজকের ৭০%-৯০% চাকরিই সামনের ১০ বছরে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতে চলেছে। আমরা ধীরে ধীরে ঢুকে পড়েছি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে। আমরা যদি আজকের বিখ্যাত কোম্পানিগুলোর দিকে তাকাই Uber কেবল মাত্র একটি software এর নাম। না, এদের নিজস্ব কোন গাড়ি নেই। তবু আজকের বিশ্বের বৃহত্তম ট্যাক্সি-ভাড়ার কোম্পানি হল Uber। Airbnb হল আজকের দুনিয়ার সবথেকে বড় হোটেল কোম্পানি। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর একটি হোটেলেও তাদের মালিকানায় নেই। আজকাল আমেরিকায় সদ্য পাশ করা উকিলদের জন্য কোন কাজ নেই। কারণ IBM Watson নামের একটি আইনি software যে কোন নতুন উকিলের থেকে অনেক ভালো ওকালতি করতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম কি? ফুটবল! হয়তোবা। কেউ যদি PUBG বলে তাকে ভুল বলার সুযোগ নেই। অথচ এটি কোন মাঠে খেলার খেলা নয়, কেবল মাত্র একটি software। এইভাবে চলতে থাকলে পরের ১০ বছরে প্রায় ৯০% আমেরিকানদের আর কোন চাকরি থাকবে না। বেঁচে থাকবে খালি ১০%, এই ১০% হবে বিশেষ বিশেষজ্ঞ।
ভেবে দেখ, আজ থেকে ৫-১০ বছর আগেও কথা বলার জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে দোকানে লেখা থাকতো "এখানে মোবাইলে কথা বলা যায়, প্রতি মিনিট ২ টাকা"। দেশে মোবাইল বিপ্লব আসার পর সবার হাতে হাতে পৌছে গেল মোবাইল ফোন, সেই সব দোকান তাদের পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হলো।যেগুলো টিকে রইলে, তারা হয়ে গেল মোবাইল রিচার্জের দোকান। এখন চলছে মোবাইল রিচার্জে অনলাইন বিপ্লব। ঘরে বসেই অনলাইনে লোকে মোবাইল রিচার্জ শুরু করেছে। অচিরেই এই দোকানগুলোকে আবার বদল আনতে হবে। টাকার সংজ্ঞাও পাল্টে যাচ্ছে। এক সময়ের নগদ টাকা আজকের প্লাটিকের টাকায় পরিণত হয়েছে। ক্রেডিট কার্ড,ডেবিট কার্ডের যুগ পরিয়ে আমরা এখন চলে এসেছি ক্যাশলেস মোবাইল ওয়ালেটের যুগে।
যারা যুগের সাথে তাল মিলাতে পারে না যুগ তাদের সরিয়ে দেয়। প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রায় আমরা যদি অগ্রযাত্রী হতে না পারি আমরাও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব।
তবে আমাদের হাতেই আছে ভবিষ্যৎ কে জয় করার অসীম সম্ভবনা। এটা নিশ্চিত প্রযুক্তি যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে। কেউ যদি আগামী দিন গুলোতে বেকার বসে থেকে আফসোস করতে না চায় তার উচিত প্রোগ্রামিং এ আরো বেশি মনোযোগী হওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা। হয়তো প্রোগ্রামিং এ কারো ধর্য্য থাকে না, করতে ভালো লাগে না, বুঝতে ভালো লাগে না। কিন্তু কেউ যদি লেগে থাকে এটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ তাকে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে না। একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করছি ---
"In the end, it all comes down to 0 and 1" - Vineet Goel
হ্যাপি কোডিং
Shoaib Islam