অনন্ত মহাকাশ থেকে এক ধরনের কনিকা অনবরত পৃথিবীর দিকে ছুটে আসছে।দিন ও রাত মিলিয়ে প্রতি মিনিটে প্রায় 1000 কনিকা প্রতি সেকেন্ডে 98 মাইল (175 km) বেগে আমাদের দেহ এফোড় ও ফোড় করে বেরিয়ে যাচ্ছে,যা আমরা মোটেই বুঝতে পারি না।এই বুঝতে না পারার কারন এই কনা গুলো এতই ক্ষুদ্র যে সবচেয়ে শক্তিশালী অনুবীক্ষন যন্ত্র দিয়ে ও এদের দেখা যায় না। এই কনা গুলো আলোর গতির কাছাকাছি বেগে চলাচল করে।মহাকাশের এই রহস্যময় কনিকা গুলিকে বলা হয় কসমিক-রে (Cosmic ray) বা মহাজাগতিক রশ্নি।
1900 সালে পদার্থবিদরা আবিস্কার করলেন পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিমন্ডলে ইলেকট্রোস্কোপ ও আয়োনাইজেশন চেম্বার নামক দুটি পদার্থ বিশ্লেষনকারী যন্তে একটি রহস্যময় রশ্নির উপস্হিতি,এই রশ্নি 10 সেঃমিঃ পুরু সীসার পাত ভেদ চলে যেতে পারে।বিজ্নানীরা ভাবলেন পৃথিবীর কোন তেজস্ঞিয় ধাতব এবং আবহাওয়া মন্ডল থেকে, এই রশ্নি আসে।1909 সালে পরীক্ষা করার জন্য বেলুনের সাথে আয়োনাইজেশন চেম্বার যুত্ত করে আকাশে ছেড়ে দিল। এবং তারা দেখলেন বেলুন যত উপরে উঠে এই রশ্নির তীব্রতা তত বাড়ে। 1915 সালে অষ্ট্রিয়ার ভিক্টর এফ হেস এবং জার্মানীর ওয়ার্নার কোলস্টার এই রশ্নির তীব্রতা নিভূর্ল ভাবে মাপতে সক্ষম হন।সমতল মাটির চেয়ে 6 মাইল ওপরে এই রশ্নির তীব্রতা 30 গুন বেশী।হেস তখন বললেন,এই রশ্নি পৃথিবীর ভিতর থেকে আসছে ন।,আসছে অসীম মহাশূন্য থেকে।
এই কসমিক রশ্নি দুই প্রকার প্রাইমারী ও সেকেন্ডারি।এই রশ্নি যখন মহাকাশে চলাচল করে তখন বলা হয় প্রাইমারি কসমিক রে, আবার পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের সয় বাতাসের অনুর সাথে সংঘর্ষের পর যে অবস্হার সৃস্টি হয় তখন থাকে সেকেন্ডারি কসমিক রে বলে। 1928, 1929, ও 1952 সালে কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রমান করেন এই সেকেন্ডারী কসমিক রে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ও বিদুৎ আবিস্ঠ কনা বহন করে।আর প্রাইমারি কসমিক রে শতকরা 90% ভাগ ধনাত্নক চার্জ যুত্ত কনিকার সমাহার।সেকেন্ডারি রে প্রধানত দুই ভাগের উপাদান দ্বারা গঠিত, একটি হলো কম শক্তীশালী যা 13 সেঃমিঃ পুরু সীসার প্লেট দ্বারা সম্পূর্ন বাধা প্রাপ্ত হয়।অন্য অংশটি এতই শক্তিশালী যে 40 সেঃমিঃ পুরু সীসার প্লেট দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় না।এই দুই রকম ধর্ম রহস্য বিজ্ঞানীরা অনেকদিন পর্যন্ত ভেদ করতে পারেনি।পরবর্তীতে 1936 সালে এন্ডারসন এস,এইচ মায়ার ও ইসি স্টিভেনস নামের আমেরিকার বিজ্নানীরা এর সমাধান বের করেন,যে এই রশ্নির মধ্যে অন্য একটি উপাদান আছে,যা ইলেকট্রন ও প্রোটনের মধ্যবর্তী ভরের কনা। তারা এই কনার নাম দিলেন মেসেট্রন বা মেসন।পৃথিবীর কোন পরমানুতে এই রকম কোন কনা দেখা যায়নি। এরা সব জিনিস ভেদ করে চলে যেতে পারে।প্রচন্ড শক্তির অধিকারী এই কনা।ইউরোনিয়ামের পরমানু ভান্গতে যত খানি শক্তির দরকার একটা মেসন কনার শক্তি তার চেয়ে ও হাজার গুন বেশী। তবে এর শতকরা এক ভাগ আবহাওয়া মন্ডলে থাকে ও সমুদ্র পৃস্ঠ পর্যন্ত পৌছাতে পারে।এই মেসন কনা আবার দুই রকম, একটির নাম হলো পাই মেসন অন্যটির মিউ মেসন।প্রাইমারি কসমিক রে এর মেসন কনা বায়ুমন্ডলে সংঘর্সের সময় ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকার ফলে মিউ মেসন কনার সৃস্টি হয়।পাইমারি কসমিক রে বায়ুমন্ডলের 17 কিঃমিঃ পর থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে। এই মিউ মেসন কনা সমৃদ্ধ রশ্নিকে বলা যায় সেকেন্ডারি কসমিক রের প্রকৃত অবস্হা।
এই রশ্নির তেজ প্রচন্ড,মোটা সীসার দেয়াল বা 32 ফুট পানি ভেদ করে গিয়ে ও এই রশ্নির তেজ অর্ধেক বাকী থাকে। সমুদ্রের পানির দুই হাজার ফুট নীচে ও এই রশ্নির সন্ধান পাওয়া গেছে,তবে তেজ খুব সামান্য। পাথুরে মাটি এই রশ্নির তেজ অনেকখানি শুষে নেয়। ডাচ বিন্জানী জ্যাকব ক্লে আবিস্কার করেন এই রশ্নি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেএ দ্বারা প্রভাবিত।এ রশ্নির বিভিন্ন রুপ হলো গামা-রে, বিটা-রে ইত্যাদি।এই রশ্নি মাপার একক হলো গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট।বিজ্ঞানীরা পরিমাপ করে দেখছেন,যে পরিমান রশ্নি আমাদের শরীর ভেদ করে তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। যদি ও জীবদেহে এই রশ্নির ক্ষতি করার ক্ষমতা খুব বেশী।যদি এই রশ্নির পরিমান 30 থেকে 300 শত গুন বাড়ে,তাহলে কোষে অবস্হিত জ্বীনে বিরুপ প্রভাব সৃস্টি করবে যার ফলে জম্নগত বিকলান্গতা ও ক্যান্সারের মত ভয়াবহ রোগের সৃস্টি করতে পারে।বিজ্ঞানীরা এই রশ্নি শনান্ত করার জন্য “কুয়াশা ঘড়” নামের এক ধরনের পদ্বতি তৈরী করেছেন,এর ভিতর দিয়ে কসমিক রশ্নি গেলে তার ছাপ রেখে যায়, এবং সাথে সাথে এই ছাপের ছবি তুলে রাখে।
মহাকাশের কোথা থেকে এই রশ্নি আসে? আর কি ভাবে এই রশ্নি এত ক্ষমতা অর্জন করলো? কোন কোন বিজ্ঞানীদের মতে, যে বিস্ফোরন থেকে মহাবিশ্বের সৃস্টি হয়েছিল তারই একটি ক্ষুদ্র অংশ হলো এই রশ্নি।
যদি তাই হয়,তবে প্রাইমারি ক্ষমতা অর্জন করেছে।কিন্ত যদি বিস্ফোরনে সৃস্টি হত তাহলে এর নিউক্লিয়াস চূর্ন বিচূর্ন হয়ে যাবার কথা।আসলে এই রশ্নির আধান আমাদের ও অন্যান্য ছায়াপথ (Galaxy)।অন্তত 80 ভাগ কসমিক রে আমাদের ছায়াপথে সৃস্টি হয়,বর্তমান প্রমান পএ তাই বলে।এই রশ্নির সর্ব্বোচ্চ জীবন কাল 20 লাখ বছর।সুপারনোভা জাতীয় তারকা থেকে এই রশ্নির সৃস্টি হয়।সুপারনোভার অভ্যন্তরের চৌম্বক ক্ষেএ থেকে এই রশ্নি আলোর গতিতে বাইরে বেরিয়ে আসে।1054 সালে চায়নীজ জ্যোতির্বিদ প্রথম একটি সুপারনোভার কথা লিখে যান এর নাম বৃষ (Taurus) মন্ডলের কাঁকড়া (Crab nebula) নীহারিকা।এটি কসমিক রশ্নি তৈরীর একটি বিরাট কারখানা।সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্নি আসে দিনের বেলায় কিন্ত এই রশ্নি আসে দিনে রাতে সবসময়।
1957 সালের পর থেকে উপগ্রহের কল্যানে এই রশ্নি গবেষনায় অনেক সুবিধা হয়েছে।এবং এই প্রথম আন্তর্জাতিক একটি টিম এই কাজে Very Energetic Radiation Imaging Telescope Array System (VERITAS)ব্যাবহার করে, এটি Fred Lawrence Whipple Observatory একটি অংশ এটি আমেরিকার আ্যরিজোয়ানার এমাডোতে অবস্হিত।এগুলো 12 মিটার প্রতিফলক দুরবীনের একটি সারি এগুলি মহাকাশ থেকে আগত 100 গিগাইলেকট্রনভোল্ট এবং 10 টেরাইলেকট্রনভোল্টের গামা রশ্নি শনান্ত করতে পারে।the Fermi Gamma-ray Space Telescope ফার্মি মহাকাশ দুরবীন 11 jun 2008 সালে পৃথীবির কক্ষপথে ছাড়া হয়। এই গুলো ব্যাবহার করে তারা সুপার নোভা থেকে কসমিক রশ্নির সৃস্টির পক্ষে জোড়ালো প্রমান পেয়েছেন। সামনের দিন গুলিতে এই রশ্নি সর্ম্পকে আরো অজানা তথ্য জানা যাবে।প্রথম ছবি বেলুনের সাথে আয়োনাইজেশন চেম্বার জুড়ে দিয়ে কসমিক রে শনান্ত করন এবং প্রাইমারি কসমিক রে।দ্বিতীয় ছবি কাকঁড়া নীহারিকা (Super nova) এবং কিভাবে এই নহারিকা শনান্ত করবেন তার ম্যাপ।তৃতীয় ছবি VERLTAS দুরবীনের এবং এর তোলা M82 গ্যালাস্কীর ছবি যা কসমিক রের বিশাল আধান।চতুর্থ ছবি ফার্মি মহাকাশ দুরবীন ও এর তোলা ছায়াপথের গামা রশ্নি বিকিরনের ছবি।গ্যালাস্কীর বিস্ফোরনের ছবি গামা রশ্নির আর ও একটি আধান।
লিখেছেন: nebula morshed | বিভাগ: আবিষ্কার | ৩০ বার পঠিত
আন্টার্কটিকার কথা কল্পনা করেছিলেন প্রাচীন গ্রীকরা দ্বিতীয় শতাদ্বীতে টলেমির যুগেই।তাদের বর্ননা থেকে পাওয়া যায় যে উওর গোলার্ধের মহাদেশগুলির সাথে সমম্নয় রক্ষার জন্য দক্ষিনেও একটি মহাদেশ আছে।তারা সেটির নাম দিয়েছিলেন আন্টারটিকোস (Antartikos) যার মানে হলো Opposite the Bear(Ant=opposite, arktik=Bear) (Antartikos),Bear হলো উওর গোলার্ধের নক্ষএপূঞ্জ যাকে আমরা বাংলায় বলি সপ্তর্ষীমণ্ডল।যেহেতু দক্ষিনের এই মহাদেশ থেকে সপ্তর্ষীমন্ডল দেখা যাবে না তাই এই নামকরন।এইজন্যই উওর মেরুর নাম Arktik বা arctic যা কিনা সপ্তর্ষীমন্ডলের দিকে।দ্বিতীয় শতাদ্বীতেই দক্ষিন মহাদেশের অস্তিত্বের কথা মানূষের ধারনায় এসেছিল কিন্তূ দূর্গম মহাদেশে মানুষের পা ফেলতে আরও প্রায় দু হাজার বছর লেগে গেল।
আন্টার্কটিকা হচ্ছে পৃথিবীর শীতলতম,শূস্কতম,উচ্চতম,এবং দূর্গমতম মহাদেশ।উওরের সব মহাদেশ থেকে আন্টর্কটিকাকে বিচ্ছন্ন করে রেখেছে বিশাল মহাসমুদ্রের বিস্তার।প্রতিবেশী সাউথ আমেরিকার দক্ষিনতম অংশ থেকে এর দূ্রত্ব হাজার কিলোমিটারেরও বেশী।এই মহাদেশের আয়তন অস্ট্রেলিয়ার দ্বিগুন।এই মহাদেশের আয়তন চোদ্দ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার,যার আটানব্বই শতাংশই দুই থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার পূরু বরফের তলায় চাপা পরে আছে।আর এই বরফ ভেদ করে মাথা উচু করে জায়গায় জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ পাহাড়।যার সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া সেন্টিনেল রেঞ্জের উচ্চতা প্রায় পাঁচ হাজার দুশ মিটার(17,000) ফুট।এই মহাদেশকে ঘিরে আছে প্রশান্ত,আটলান্টিক,ও ভারত মহাসাগরের দক্ষিন অংশ,সমুদ্রের এই দক্ষিন অংশ বছরের বেশির ভাগ সময় বরফ জমা থাকে,বাকিটায় সর্বদাই প্রচন্ড ঝড় বইতে থাকে।
এই লেখাটিতে আমি এই মহাদেশ সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করবো,প্রথমেই এই মহাদেশ আবিস্কার হলো কিভাবে সেই সর্ম্পকে জানবো,পরবর্তীতে জানবো এর ভৌগলিক গঠন,এবং সবশেষে জানবো এখানকার প্রান ও উদ্ভিদ সর্ম্পকে।
আবিস্কারঃ গ্রীকদের মত পলিনেশিয়ানরাও জানতো দক্ষিনে কোন মহাদেশ আছে।এবং দক্ষিন সমুদ্রের দিকে সর্বপ্রথম তারা অভিযান চালায়, 650 খ্রীঃ উই-তে-রান-গিয়েরা নামের এক রাজকু্মার তে-ইভি-ও-আতিরা নামের জাহাজ নিয়ে,দক্ষিন সমুদ্র পাড়ি দিয়েছিলেন।তারা কতদুর পর্যন্ত গিয়েছিলেন তা জানা যায় না।তবে বর্ননায় বরফের পাহাড়ের কথা জানা যায়।টলেমির ধারনা ছিল এই মহাদেশের বিস্তৃতি দক্ষিন আমেরিকা-আফ্রিকা থেকে মালয় উপদ্বীপ অবধি।
এরপর দক্ষিন সমুদ্র অভিযানের যে বর্ননা পাওয়া যায় তা বেশিরভাগই ইউরোপীয় নাবিকদের কাছ থাকে।1531 সালে ওরোনটিয়াস পৃথিবীর একটি মানচিএ প্রকাশ করেন।সেই একই মানচিএ 1538 মারকাটে প্রকাশ করে,তাতে আন্টার্কটিকার যে মানচিএ আঁকা হয়েছে তার সাথে আজকের আধূ্নিক ম্যাপের প্রচুর মিল রয়েছে,শুধু তা আসল আয়তনের তিনগুন।এরপর 1498 সালে ভাস্কো-ডা-গামার দক্ষিন আফ্রিকার উওমাশা দ্বীপ আবিস্কার,1578 সালে ফ্রান্সিস ড্রেকের দক্ষিন আমেরিকার দক্ষিনতম অংশ,এবং 1642 সালে আবেল টাসমানের নিউজিল্যান্ড ও সলোমন দ্বীপের আবিস্কারের পর ধীরে ধীরে দক্ষিনের এই মহাদেশ সম্পর্কে ধারনা পাল্টে যায়।
1750 খ্রীঃ আগে কেউই 50 ড্রিগ্রী দক্ষিন অক্ষাংশের দক্ষিনে যায়নি।কারন বরফ জমা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে কেউই ওইদিকে যেতে পারেনি।ফরাসী নেভীর বুভে দ্য লজিয়ার 1739 আবিস্কার করেন বুভে দীপ,কারগুলাঁ ও দুফ্রঁস কারগুলাঁ ও আরো কতগুলি ছোট ছোট দ্বীপ।তবে এরা কেউই কুমেরূর বাইরে দক্ষিনে যেতে পারেনি।
কুমেরু হলো সাড়ে 66 দক্ষিন অক্ষাংশ বরাবর,একটি অক্ষরেখা যার দক্ষিনে গ্রীস্মকালে একদিন সূর্য অস্ত যাবে না,আর শীতকালে অন্তত একদিন সূর্য উদয় হবে না।এই অক্ষরেখার যত দক্ষিনে যাবেন গ্রীস্মকালের মধ্যরাতের সূর্যালোকিত দিনের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকবে,এবং ভৌগোলিক দক্ষিন মেরুতে বছরের ছয় মাস সূর্য অস্ত যাবে না।এবং উওর মেরুতে সেই সময় চলবে শীতকাল ও ছয় মাস দীর্ঘ রাত।আবার সূর্য যখন উওরায়নে প্রবেশ করবে তখন কুমেরুতে শুরু হবে রাত।
1772 বিখ্যাত নাবিক জেমস কুক্ সর্ব প্রথম কুমেরু বৃত্তের দক্ষিনে যান,কিন্ত অনেক চেস্টা করেও তিনি বরফ জমা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আন্টার্কটিকায় পৌছাতে পারেননি,এবং 1772 থেকে 1775 সাল পর্যন্ত তিনি আন্টার্কটিকা মহাদেশকে পরিক্রমন করেন।1774 সালের 30 শে জানুয়ারি কুক 71 ডিগ্রী 10`দক্ষিন অক্ষাংশে পৌছেছিলেন,এটা ছিল সর্বদক্ষিনের শেষ সীমানা।
কুক কিন্ত আন্টার্কটিকা মহাদেশ দেখতে পায়নি,তবে সে আন্দাজ করেছিলেন দক্ষিন মেরুতে যদি কোন মহাদেশ থেকেও থাকে তবে তার আয়তন যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে কম,এবং বরফ ঢাকা এই মহাদেশের সাথে উওরের ভূ-খন্ডের কোন যোগাযোগ নেই।কুক এর লেখা “এ ভয়েজ টুওয়ার্ডস দি সাউথ পোল” বইতে এই বর্ননা পাওয়া যায়।1790 থেকে 1820 সাল পর্যন্ত দক্ষিন সমুদ্রে মোট 19 টি অভিযান পরিচালিত হয়ছে,এর একটি অভিযান ছিল অস্ট্রেলিয়ার,নয়টি বৃটিশ ও দশটি আমেরিকার।কিন্ত এই অভিযানের কোনটিই আন্টার্কটিকার মূল ভূ-খন্ডে পৌছতে পারেনি।
ভস্টক ও মিরণী জাহাজ নিয়ে রাশিয়া 1819 থেকে 1821 সাল পর্যন্ত দক্ষিন সমুদ্রে অভিযান পরিচালনা করে।ভস্টকের ক্যাপ্টেনের নাম ছিল বেলিংসহাওসেন এবং মিরনীর ছিল ক্যাপ্টেন লাজারেভ।কিন্ত এরাও কেউ আন্টার্কটিকার মূল ভূ-খন্ডে পৌছাতে পারেনি,এরাও আন্টার্কটিকা পরিক্রমন করেন,এই পরিক্রমনের সময় তারা দুটি দ্বীপ আবিস্কার করেন এবং এর নাম দেন পিটার ও আলেকজান্ডার দ্বীপ।মনে করা হয় বেলিংসহাওসেন মূল ভূ-খন্ড দেখেছিলেন 2 ডিগ্রী পশ্চিম অথবা 16 ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাতে।এই সময় অনেকেই দাবি করেন যে তারা আন্টার্কটিকার মূল ভূ-খন্ডে পদার্পন করেছেন,কিন্ত এই দাবির পক্ষে তখন তেমন কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। কুমেরু অভিযানের ইতিহাসে সবথেকে বেশি অবদান হচ্ছে স্কটিশ ক্যাপ্টেন জেমস্ ওয়ডেল এবং বৃটিশ অভিযাত্রী ক্যাপ্টেন জেমস্ ক্লার্ক রসের।1823 সালে ওয়েডেল “জেমস্” এবং “বোফয়” নামের দুটি জাহাজ নিয়ে 74ডিগ্রী দক্ষিন অক্ষাংশের নীচে পৌছান এবং তারা যে সমুদ্রে পৌছান পরে তার নাম রাখা হয় “ওয়েডেল সী”।
তিনি সীল মাছের একটি নতুন প্রজাতি আবিস্কার করেন এর নাম ও রাখা হয় তার নামে “ওয়েডেল সীল”।
1830 থেকে 1832 সালে জন বিস্কো “টুলা ও “লাইভলি” নামের দুটি জাহাজ নিয়ে তৃতীয় বারের মতো আন্টার্কটিকা প্রদক্ষিন করেন।তিনি 50 ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় একটি পার্বত্য এলাকা আবিস্কার করেন এবং তার নাম দেন এন্ডেরবি ল্যান্ড।
1833 সালে আরেকজন ক্যাপ্টেন পিটার কেম্প গ্রাহাম ল্যান্ড,কেম্প কো্সট, এবং হার্ড দ্বীপ আবিস্কার করেন।
এরপর থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন দেশের জাতীয় অভিযান।এর মধ্যে ব্রিটেন,আমেরিকা,ও ফ্রান্স তিনটি গুরুত্বপূর্ন অভিযান চালায়।
এর মধ্যে ব্রিটিশ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর চৌম্বক মেরুর অনুসন্ধান।জেমস্ ক্লার্ক রস 1831 সালে সর্বপ্রথম উওর চৌম্বক মেরুতে পৌছান।এবং ফ্রেডরিক গাউস দক্ষিন চৌম্বক মেরুর অবস্হান গননা করে বের করেন।কিন্ত বিঞ্জানীরা পরিক্ষা করে দেখেন যে এই চৌম্বক মেরূ একজায়গায় অবস্হান করে না,গাউসের গননায় এই চৌম্বক মেরুর অবস্হান হলো 66 ডিগ্রী দক্ষিন- অক্ষ ও 146 ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাতে।এখানে উল্লেখ্য যে উওর ও দক্ষিন মেরুতে কম্পাসের কাঁটা কাজ করে না,কম্পাসের কাটা সেখানে উল্লম্ব অবস্হায় থাকে।1839 সালে জেমস্ ক্লার্ক রস “এরবুস” ও টেরর” নামের দুটি জাহাজ নিয়ে দক্ষিন চৌম্বক মেরুর সন্ধানে রওনা দেন।এদিকে এই একই উদ্দেশ্যে নিয়ে দ্যু মঁ দ্যরভিল “অ্যাস্ট্রোলোব” ও “জিলি নামের দুটি জাহাজ নিয়ে 1938 সালে ফ্রান্স থেকে রওনা দেন।দ্যরভিল 140 ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাতে আন্টার্কটিকার নতুন একটি অংশ আবিস্কার করেন এবং তার নাম দেন “তের অ্যাডেলি”।এছাড়াও তিনি নতুন একজাতের পেঙ্ঘুইন দেখেন এর নাম দেন “অ্যাডেলি”।
সিডনি থেকে চারটি জাহাজ নিয়ে উইলকিস 1839 চৌম্বক মেরুর সন্ধানে বের হন,কিন্ত খারাপ আবহাওয়ার জন্য চৌম্বক মেরুতে পৌছাতে পারেনি।কিন্ত তিনিই সর্বপ্রথম আন্টার্কটিকাকে মহাদেশ বলে চিহ্নিত করেন।এছাড়াও তিনি চৌম্বক মেরুর অবস্হান সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হন,পরে এই এলাকার নাম তার নামেই নামকরন করা হয়।
1841 সালের 27 শে জানুয়ারি জেমস্ ক্লার্ক রস দেখতে পেলেন সমুদ্রতল থেকে বারো হাজার ফুট উঁচু এক পর্বত,যা থেকে আগুন আর লাভা বের হচ্ছে,এর নাম দেয়া হলো মাউন্ট এরবুস।এর পূর্ব দিকে দশ হাজার নশো ফুট উচ্চতার আর একটি মৃত আগ্নেয়গিরি দেখতে পান,তিনি এর নাম দেন মাউন্ট টেরর।এই দুটি পর্বতের নাম রাখা হয় রসের সেই বিখ্যাত দুটি জাহাজ এরবুস ও টেররের নামে।টেররের সিনিয়র লেফটেনেন্টের নামে একটি উপসাগরের নাম রাখা হয় “ম্যাকমার্ডো” বে, টেরর জাহাজের ক্যাপ্টেন ছিলেন ক্রজিয়ার এর নামে রস দ্বীপের অন্তরীপের নাম রাখা হয় “কেপ ক্রজিয়ার”।এর পড় রস্ আবিস্কার করলেন “রস সী” এবং বিশাল এক হিমসোপান এর নামও তার নামে রাখা হয়।রস্ আর এক নতুন প্রজাতির সীল দেখতে পান তিনি এর নাম দেন রস সীল।রস্ এখান থেকে কিছু পাথরের নমুনা সংগ্রহ করেন,সম্ভবত আন্টার্কটিকাতে এটাই প্রথম ভূ-ত্বাত্তিক সংগ্রহ। রস্ আন্টার্কটিকায় প্রথম আগ্নেয়গিরি আবিস্কার করেন।রস তার লেখা বই ‘ভয়েজ টু দ্য সাদার্ন সীজ’এই সব কথা লিখে যান।
এরপর ঊনবিংশ শতাব্দীতে আর তেমন কোন অভিযান হয়নি,দক্ষিন সমুদ্র তখন তিমি শিকারিদের দখলে 1840 থেকে 1900 সাল পর্যন্ত আমেরিকা 200 অভিযান চালায় তিমি শিকারের জন্য।
আদ্রিয়ান গেরলাশের অধীণে বেলজিয়া 1897 অভিযান চালায়,এটিকে বলা হয় প্রথম আন্তর্জাতিক অভিযান,কারন এই অভিযানে অনেক দেশের বিজ্ঞানিরা এতে যোগ দেন।
আন্টার্কটিকার মূল ভূ-খন্ডে বর্চগ্রেভিঙ্ক প্রথম শীতকাল কাটান, বর্চগ্রেভিঙ্কের অভিযান থেকেই শুরু হয় কুমেরুর গৌ্রবময় যুগের।
1899 সালে বার্লিনে সপ্তম আন্তর্জাতিক ভৌগলিক কংগ্রেস সম্নেলন হয়,সেই সময় ঠিক হয় যে তিনটি দেশ তাদের জাতীয় দলকে কুমেরুতে পাঠাবে যারা কুমেরুর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা চালাবে।এর ধারাবাহিকতায় রবার্ট ফ্যালকন স্কটের নেতৃতে 1902 সালে ডিস্কভারি জাহাজ নিয়ে প্রথম অভিযানটি হয়।
1901 সালে ডিস্কোভারি জাহাজ নিয়ে স্কট আবার আন্টার্কটিকা উদ্দেশে রওনা দিলেন,পথে অনেক বাধা পেড়িয়ে 30 শে ডিসেম্ভর স্কট ও তার দল 82 ডিগ্রী 16` দক্ষিনে পৌছালেন,এর আগে এত দক্ষিনে কোন মানুষের পা পড়েনি।আন্টার্কটিকা অভিযানে স্কট-উইলসন-শ্যাকলটন এক সাথে এই তিনজনের অভিযান ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।তিন বছর স্কটের দল বিভিন্ন দিকে অনেকগুলি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তার এই অভিযানের কথা স্কটের লেখা বই “ভয়েজ অব ডিস্কোভারিতে” পাওয়া যাবে।এই সব অভিযানের সবারই একটি উদ্দেশ্য ছিল তা হলো দক্ষিন চৌম্বক মেরুতে পৌছানো,কিন্ত কেউই সফল হয়নি,অবশেষে 1909 সালের 16 জানুয়ারি ডেভিড,মসন,আর ম্যাকে পৌছালেন দক্ষিন চৌম্বক মেরুতে 72 ডিগ্রী 25 ` দঃ অক্ষ ও 155 ডিগ্রী 16` পূর্ব দ্রাঘিমাতে।যেখানে 70 বছর আগে রস্ পৌছাবার চেস্টা করেছিলেন।
এই হলো আন্টার্কটিকা আবিস্কারের ইতিহাস।
সহায়ক বইঃ James Ross.Voyage to the Southern seas।
W.Sullivan.Assault on the Unknow:The International- Geophysical Year।
R.F.Scott.Voyage of the Discovery।
আন্টার্কটিকাঃসুদীপ্তা সেনগুপ্ত।
মন্গল গ্রহ হলো সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ,সূর্য থেকে এর দুরত্ব হলো প্রায় 23 কোটি 64 লক্ষ কিঃমিঃ।এর পরের গ্রহ হলো বৃহস্পতি এর দুরত্ব প্রায় 78 কোটি কিঃমিঃ। এই দুই গ্রহের মাঝখানে বিশাল এক ফাক আছে, জ্যেতির্বিদের কাছে যা অস্বাভাবিক।তখন অনেক জ্যেতির্বিদ মনে করতেন এই দুই গ্রহের মাঝেখানে আরো একটি গ্রহ আছে।
এরপর 1772 সালে জোহান এলার্ট বোডে (1747-1826) নামক জার্মানীর বিন্জানী একটি সুএ বের করলেন। 1772 সালে আবিস্কার করা বোডের সুএ পূর্ন বাস্তবায়ন করেন আরেক বিন্জানী জোহান টাইটাস্ (1729-1796) তিনি প্রথমে সূর্য থেকে দুরত্ব অনুসারে গ্রহগুলোকে সাজান এবং প্রত্যেকটি গ্রহের নীচে তিনি প্রথমে 0, তারপরে 3, 6, 12, 24, 48, 96, 192 ইত্যাদি সংখ্যা লিখলেন এবং প্রত্যেকটি সংখ্যার সাথে 4 যোগ করলেন,এবং এতে পরপর যে সংখ্যা পাওয়া গেল এর প্রত্যেকটিকে 10 দিয়ে ভাগ করলেন।এবং এখান থেকে যে সংখ্যা গুলি পাওয়া গেল,তাহলো সূর্য থেকে প্রতিটি গ্রহের দুরত্ব (জ্যেতির্বিদ্যায় ব্যাবহত একক অনুযায়ী এই একক হলো সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যেকার গড় দুরত্ব ) এর পরিমাপ হলো 149,597,870 কিঃমিঃ অথবা 499 আলোক সেকেন্ড (499 সেকেন্ডে আলো যতটা দুরে যায়)।
বোডের নিয়ম অনুযায়ী মন্গল ও বৃহস্পতির মধ্যে যে ফাক আছে,সেখানে একটি গ্রহের থাকার কথা যার সংখ্যা হবে 24 এবং বোডের সুএ অনুযায়ী সূর্য থেকে এই গ্রহটির দুরত্ব 2.8 জ্যেতির্বিদ্যার একক হওয়ার কথা। সাথে সাথে বিভিন্ন দেশের জ্যেতির্বিদরা বড় বড় দুরবীন দিয়ে আকাশে এই গ্রহটির সন্ধান শুরু করলেন এবং যে কোন আকারের বস্ত বা গ্রহ যাই হোক না কেন মানুষের দীর্ঘ অনুস্ধানে ধড়া পরবে না এটা হতে পারে না। অবশেষে 1801 সালের 1 লা জানুয়ারী ইতালীয় জ্যেতির্বিদ পিয়াজি আকাশে নতুন একটি বস্তু দেখতে পেলেন, বস্তুটি ছিল খুব অস্পস্ট ও ছোট প্রথমে তিনি এই বস্তুটিকে মনে করলেন ধূমকেতু, তিনি তখন বস্তুটিকে খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষন করতে লাগলেন এবং তিনি দেখতে পেলেন বস্তুটি দিক পরিবর্তন করছে। এবং বোডের নিয়ম অনুযায়ী দুই গ্রহের মধ্যবর্তী যে ফাক ছিল তা পুরন করে দিল। বস্তুটি মন্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি অবস্হান করে, এবং সূর্যকে 4 বছর 8 মাসে একবার প্রদক্ষিন করে,এবং বস্তুটি সূর্য থেকে 2.8 একক দুরে। তখন বোডে আশা করছিলেন যে এটি হয়তো অস্টম মুখ্য গ্রহ হবে। কিন্ত দেখা গেল বস্তুটি কোন গ্রহ নয় ,এটি হাজার হাজার গৌন গ্রহের মধ্যে একটি।এই সব গৌন গ্রহদের কে বলে গ্রহানু (Asteroids) বা গ্রহানু পুন্জ।
পিয়াজি তার আবিস্কৃত গৌন গ্রহটির নাম দিলেন সেরেস (Ceres),এর ব্যাস 950 কিঃমিঃ এটি সবচেয়ে বড় গ্রহানু, সেরেসের ভর গ্রহানুপুন্জের সব গ্রহানুর মোট ভরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।জার্মান গনিতবিদ গাউস (1777-1855) কক্ষপথ গননার এক নতুন গানিতিক উপায় উদ্ভাবন করেন,এবং তিনিই পিয়াজি আবিস্কৃত বস্তুটির কক্ষপথ সার্থকভাবে গননা করেন।
পরের কয়েক বছরের মধ্যেই আরো তিনটি গ্রহানু আবিস্কৃত হয়,1802 সালে পালাস (Palls),1804 সালে জুনো (Juno), এবং 1807 সালে ভেস্তা (Vesta)।এই ভেস্তা সৌরজগতের দ্বিতীয় বড় গ্রহানু এর ব্যাস 530 কিঃমিঃ, এই গ্রহানুটিকে খালি চোখে দেখা যায় যদি আকাশে এর অবস্হান জানা থাকে।এরপর 1845 সালে আরো একটি গ্রহানু আবিস্কার করা হলো এর নাম এস্ট্রিয়া (Astraea),এর ব্যাস 160 কিঃমিঃ।এরপর থেকে প্রতি বছর আবিস্কারের সংখ্যা বাড়তে লাগলো।এবং দুরবীনের সাথে ক্যামেরা লাগিয়ে ছবি তোলার পরে সেই ছবিতে ঝাকে ঝাকে গ্রহানুর সন্ধান পাওয়া গেল।এখন পর্যন্ত প্রায় 3000 মত গ্রহানু আবিস্কার করা হয়েছে।পরবর্তীতে উপগ্রহের মাধ্যমে তোলা ছবিতে দেখা গেল মন্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে বিশাল একটি গ্রহানু বলয় রয়েছে।
সৌরজগতের গ্রহরা যেভাবে সূর্যকে প্রদক্ষিন করে,এইসব গ্রহানুরাও ঠিক সেই ভাবেই সূর্যকে প্রদক্ষিন করে।গ্রহানুদের কক্ষপথ উপবৃক্তাকার (Ellipse অনেকটা ডিমের খোলসের মত)।আবার কিছু গহানুর কক্ষপথ বৃত্তাকার।গ্রহানুদের প্রত্যেকের কক্ষপথের তল পৃথিবীর কক্ষপথের যে তল তার সন্গে মিলে যায়।বেশির ভাগ গ্রহানুর সেমি মেজর অক্ষ 2.3 থেকে 3.3 জ্যেতির্বিদ্যা একক।গ্রহানুদের সাইডরিয়েল সময়কাল 3.5 থেকে 6 বছর।গ্রহানুদের সজ্জার মাঝে মাঝে ফাক দেখা যায়,এই ফাঁককে বলা হয় কার্কউড (Kirk wood gap) ফাঁক।বিন্জানী কার্কউড প্রমান করেন যে বহস্পতির প্রভাবে এ ধরনের ফাঁকের সৃস্টি হয়।গ্রহানুদের নাম করনের ব্যাপারে একটি নিয়ম কঠোর ভাবে মেনে চলা হয়।অবশ্য প্রথম দিকে যেসব গ্রহানু আবিস্কৃত হয়েছিল তাদের নাম বদলানো হয়নি।বর্তমানে যদি কোন গ্রহানুর সন্ধান পাওয়া যায়,যেটি মন্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি আছে তাহলে তার নাম এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে নামের শেষে a অক্ষরটি থাকে,যেমন গ্রহানু রিসিয়া (Ricca)।এবং যেসব গ্রহানু সূর্যের কাছাকাছি এসে পড়ে তাদের নামের শেষে থাকে us।
কিছু গ্রহানু আছে যারা সূর্য এবং বৃহস্পতির সমদূরর্বর্তী এদের বলা হয় ট্রোজান (Trojan) গ্রহানু ।
1772 সালে গনিতবিদ লাগরান্জ হিসাব করে দেখান যে বৃহস্পতির কক্ষপথের কাছাকাছি দুটি বিন্দু থাকবে।যে বিন্দু দুটিতে সূর্য,বৃহস্পতি ও গ্রহানু সমবাহু ত্রিভূজ সৃস্টি করে সেই দুটিই হবে লারগান্জ নির্দেশিত বিন্দু। এই দুটি বিন্দুতে যে গ্রহানুরা আছে, তারা বৃহস্পতির সাথে একই কক্ষপথে সামনে এবং পিছন থেকে একই সময় সূর্যকে প্রদক্ষিন করে চলছে। এদের কে বলে ট্রোজান গহানু।1959 সালের মধ্যে এই রকম 14 টি ট্রোজান গ্রহানু আবিস্কার করা হয়েছে,এর একটির নাম হলো আ্যকিলিজ।বৃহস্পতির দুরত্ব খুব বেশি বলে বড় আকারের ট্রোজান গ্রহানু ছাড়া ছোট আকারের গ্রহানু আবিস্কার করা অনেক অসুবিধা জনক।এই জন্য ধারনা করা হয় যে এই কারনে অনেক ট্রোজান গ্রহানু অনাবিস্কৃত থেকে গেছে।
বেশির ভাগ গ্রহানুর গড়ে 2.66 একক দুর থেকে সূর্যের চারিদিকে ঘোড়ে।অন্য গ্রহদের মত গ্রহানুদের গতিবিধি সুশৃন্খল নয়।গ্রহদের কক্ষপথের তুলনায় গ্রহানুদের কক্ষপথ অনেক বেশী উপবৃত্তাকার।উল্টা পাল্টায় চলায় এদের জুড়ি মেলা ভার।এই গ্রহানুদের দল পৃথিবীসহ সৌরজগতের অন্যসব গ্রহদের জন্য আতন্কের বিষয়। যেমন গ্রহানু এরস্ (Eros) তার কক্ষপথে চলাকালিন এক সময় পৃথিবীর 14,000,000 মাইলের মধ্যে এসে যায়,এরসের ব্যাস 8 কিঃমিঃ এবং লম্বায় 31 কিঃমিঃ।হিদালগো গ্রহানুর কক্ষপথের ব্যাস সবচেয়ে বড় 531,000,000 মাইল যা পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাসের তিন গুন,এটি পথ চলতে চলতে শনি গ্রহের কাছাকাছি চলে যায়।সবচেয়ে ছোট গ্রহানু এডোনিস 1936 সালে পৃথিবীর 1,500,000 মাইলের মধ্যে এসে গিয়েছিল,এর ব্যাস আধামাইলের মত।
গ্রহানু হারমেস আবিস্কারের দুই দিনের মধ্যে পৃথিবীর 5000,000 মাইলের মধ্যে এসে গিয়েছিল। অনেকে মনে করেন যে হারমেস এমন একটি পথ অনুসরন করে যার ফলে,এটি যে কোন সময় পৃথিবীর 221,000 মাইলের মধ্যে এসে যেতে পারে।
সবচেয়ে ছোট গ্রহানু এডোনিসের সাথেও যদি পৃথিবীর ধাক্কা লাগে তবে কয়েকটি শহর ধংস হয়ে যাবে।আর বড় কোন গ্রহানুর সাথে পৃথিবীর ধাক্কা লাগলে তার ফল হবে পারমানবিক বোমার বিস্ফোরনের মত।তবে চিন্তা নেই নাসার আলাদা একটা বিভাগ আছে সেখান থেকে এদেরকে দিন রাত 24 ঘন্টা সবসময় পর্যবেক্ষনের মধ্যে রাখা হয়,যেই গ্রহানুগুলি পৃথিবীর জন্য হুমকি তাদের উপর।তাছাড়াও আমাদের ভাগ্যেও ভাল যখন এই গ্রহানুগুলি পৃথিবীর কক্ষপথের ভিতরে এসে পড়ে তখন পৃথিবী কক্ষপথের সেই জায়গায় থাকে না।
এরপরেও যদি পৃথিবীর সামনে কোন গ্রহানু এসে যায় তখন সেই গ্রহানুটিকে আন্ত মহাদেশীয় ক্ষেপনাস্ত্র মেরে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে হঠিয়ে দেবার ব্যাবস্হা রাখা হয়েছে। যাক পৃথিবীর মানুষ মারার কাজে এই ক্ষেপনাস্ত্র ব্যাবহার না করে ওদেরকে প্রতিহত করার কাজেই ব্যাবহার করা হোক।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে গ্রহানুদের কক্ষপথ সব সময় মন্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে থাকে না তবে কি পৃথিবীর সাথে কোন গ্রহানুর ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা আছে? বলা যায় সম্ভাবনা খুবই কম। তারপর ও যদি কোন গ্রহানু পৃথিবীর কক্ষপথে এসেই যায়,চিন্তা করার কোন কারন নেই।কারন ধারনা করা হয় অতীতে এইসব গ্রহানুরা পৃথিবী পৃস্ঠে আঘাত করেছিল এবং এদের কারনেই পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল।
আবার কোন গ্রহানু যখন পৃথিবীর কাছে চলে আসে তখন জ্যেতির্বিদরা নানা রকমের পরীক্ষা করেন। নাসা এই গ্রহানুদের সাহায্যে নিয়ে পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব ভাল ভাবে মাপা সম্ভব হয়েছে।এছাড়া ও নাসা (NASA) বড় গ্রহানু ভেস্তা ও সেরেস কে পরীক্ষা করার জন্য উপগ্রহ পাঠিয়েছে,এবং গ্রহানু পৃস্ঠে নভোচারী নামানোর চিন্তা করছে।
এই গ্রহানুদের সৃস্টি হলো কি ভাবে? এখানে দুটি মতবাদ আছে,একটি হলো অতীতে কোন এক সময় দুটি ছোট গ্রহ পরস্পরের সাথে ধাক্কা লেগে টুকরো টুকরো হয়ে যায়,এবং এই টুকরো গুলিই হচ্ছে এইসব গ্রহানুরা।
অন্যটি হলো গ্রহানুরা হলো সেই সব বস্তু কনা যাদের দিয়ে গ্রহ তৈরী হয়।কিন্ত বৃহস্পতির মাধ্যাকর্ষন শক্তির কারনে এই বস্তু কনা গুলো একসাথে সংযুক্ত হয়ে গ্রহে পরিনত হতে পারে না,তবে এই মতবাদ গুলো সবই অনুমান।
কতগুলো গ্রহানু আছে তা কেউ জানে না,তবে হিসেব করে দেখা গেছে যে প্রায় 50,000 (আনুমানিক) গ্রহানু আছে।পার্শ্ববর্তী গ্রহদের কক্ষপথের ওপর সমগ্র গ্রহানুরা কি প্রভাব সৃস্টি করছে তা অনুমান করে,গ্রহানু বলয়ে যে বস্তু আছে তাদের সামগ্রিক ভর গননা সম্ভব।তবে বিন্জানীরা হয়তো কোনদিনই জানতে পারবে না,শেষ গ্রহানুটি আবিস্কৃত হলো কিনা।
তাছাড়া এদের অস্বীকার করার কোন উপায় নেই, কারন এরাও অন্যসব গ্রহদের মতই সৌর জগতের আদি বাসিন্দা।
ছবি সৌজ্যন্যে: “NASA” ও www.landescpe.webs.com
টেকি স্টাইলে জেনে নিন বাংলা মুদ্রাক্ষরের ক্রমবিকাশ
বাংলা বর্ণগুলোকে দেখলেই আপণ আপণ লাগে।এত শান্তি লাগে বাংলা পড়তে! এই বর্ণগুলোর বিবর্তণ ও ইতিহাস কি আমরা জানি?
সময়টা খ্রিষ্টপূর্ব 3300-1200 সাল, মধ্য ব্রোঞ্জ যুগ! মানুষ তামার ব্যবহার শিখেছে, তৈরী করতে পেরেছে হাতিয়ার।ব্রোন্জ হাতের নাগালে, দৃশ্যপট অনেকটা নিচের মত।
চিত্রঃ ব্রোঞ্জ যুগের নিদর্শন
প্রয়োজন দেখা দিল চিহ্নের মাধ্যমে ভাব প্রকাশের, আর জন্ম নিল প্রোতো-সিনাইটিক স্ক্রিপ্ট (Proto-Sinaitic script) নামের নতুন লিপি। শিলা বা পাথরের উপরেই অঙ্কিত হত এই লিপি।
ব্রোন্জযুগের Proto-Sinaitic লিপির নমুনা।
এর বহুদিন পর খ্রিস্টপূর্ব 1050 সালের দিকে প্রাচীন ফিনিশীয় (Phoenicia) সভ্যতায় জন্ম নেয় ফিনিশিয়ান লিপি (Phoenician alphabet)। এই লিপি ফিনিশিয়া ভাষার জন্য নির্মিত হয়েছিল এবং এ দ্বারা শুধু ব্যঞ্জনবর্ণ প্রকাশ করা যেত। তাদের লিপিতে মোট বাইশটি ব্যঞ্জনবর্ণ ছিল। কিছুদিনের মধ্যেই ফনিশিয়ান লিপি বেশ জনপ্রিয় হয়ে যায় এবং সমগ্র ভূ-মধ্যসাগরীয় অন্ঞলে তা ছড়িয়ে পড়ে। গ্রিক ও ইহুদীরা ফিনিশীয়দের কাছ থেকে বর্ণমালার ধারণা ধার করে। গ্রিক বর্ণমালায় বর্ণের সংখ্যা ২৪। তারা ব্যঞ্জনবর্ণের পাশাপাশি স্বরবর্ণেরও প্রচলন করেছিল। পরে গ্রিকদের কাছ থেকে রোমানরা লিপির ধারণা নেয়। রোমান বর্ণমালা থেকেই পরে প্রায় সমস্ত ইউরোপের বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা তৈরি হয়।
ছবিঃ প্রাচীন ফিনিশিয়ান বর্ণমালা।
খ্রিস্টপূর্বঃ ৮০০ সালের দিকে ফিনিশিয়ান লিপি অভিযোজিত হয়ে জন্ম দেয় আরামিক লিপির (Aramaic alphabet) এই লিপি থেকেই পরবর্তীতে আধুনিক আরবী ও হিব্রু লিপি জন্ম নেয়।
চিত্রঃ আরামিক লিপি (৮০০ খ্রিপুর্ব থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ)
কোন কোন ভাষা বিশেষজ্ঞ মনে করেন ফিনিশিয়ান লিপি থেকে আরামিক লিপির সাখে অন্য একটি লিপির জন্ম হয়েছিল খিস্ট্রপূর্ব ৬০০ শতকের দিকে যার নাম ব্রাহ্মি লিপি (Brāhmī Script).। অর্থাৎ আরামিক ও ব্রাহ্মি লিপি একই মাতার সন্তান। আবার অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ব্রাহ্মি লিপির জন্ম হয়েছে আরামিক লিপি থেকে। কেউ কেউ বলেন, প্রাচীন ভারতীয়রা স্বাধীন ভাবেই এই লিপিটি আবিষ্কার করেন, এটি কারো কাছ থেকে জন্ম নেয়নি। এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ শতকে উত্তর-মধ্য ভারতের শিলালিপিতে ব্রাহ্মি লিপি নিদর্শন পাওয়া গেছে।
চিত্রঃ ব্রাহ্মি শিলা লিপি
চিত্রঃ ব্রাহ্মি বর্ণমালা
খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতক থেকে ৩৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে ব্রাহ্মি লিপি প্রচলিত ছিল। এরপর অশোক লিপি বা মৌর্য লিপিতে এর বিবর্তন শুরু হয়
চিত্র: অশোকের ব্রাহ্মি লিপি
আশোকান ব্রাহ্মি লিপি থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে জন্মনেয় গুপ্তলিপি (Gupta script) নামের নতুন লিপি। গুপ্ত রাজাদের আমলে এই লিপিতে সংস্কৃত চর্চা করা হোত।এটি চতুর্থ ও ৫ম শতাব্দীতে প্রচলিত ছিল
চিত্রঃ গুপ্তলিপি
গুপ্ত শাসনকালে অশোকের ব্রাহ্মিলিপি ভারতের পূর্বাঞ্চলে 600 খ্রিম্টাব্দের দিকে যে রূপ ধারন করেছিলো তাকে সিদ্ধাম (Siddhaṃ) লিপি বলা হয়। এতে মূলত সংস্কৃতচর্চা করা হোত। বৌদ্ধ ধর্মের অসংখ্য গাথা লিখিত হয়েছে সিদ্ধাম লিপিতে।
চিত্রঃ সিদ্ধাম লিপিতে লেখা Heart Sūtra
চিত্রঃ কুটিল লিপি
সিদ্ধাম লিপির বর্ণমালাসমূহ-
এই সিদ্ধামলিপি থেকেই একাদশ শতকের দিকে জন্মনেয় আমাদের প্রিয় বাংলা লিপি।
অনেকের মতে,সিদ্ধামলিপির বোন হিসাবে বিবেচনা করা হয় নগরীলিপিকে যারা প্রত্যেকেই কুটিল লিপির অন্তর্গত। অনেকে মনে করেন, প্রাচীন নাগরী লিপির পূর্ব শাখা থেকে ১০ম শতকের শেষভাগে এসে উৎপত্তি হয়েছে বাংলা লিপির।
মোট কথা, মূলত কুটিল লিপি থেকেই জন্ম হয় বাংলা লিপির।
চিত্রঃ সিলেটের বিখ্যাত নগরী লিপি।
১৭৭৮ সালে নাথানিয়েল ব্রাসি হালেদের লেখা A Grammar of the Bengal Language প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলা মুদ্রণশিল্পের জন্ম হয়। বইটি ইংরেজি ভাষাতে লেখা হলেও এতে বাংলা বর্ণপরিচয় ও বাংলা লেখার নিদর্শন সবই বাংলা মুদ্রাক্ষরে ছাপা হয়। এই মুদ্রণে প্রথমবারের মত "বিচল হরফ" (movable type) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
চিত্রঃ হ্যালহেডের ব্যাকরণে বাংলা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে জীবিকা অর্জনের জন্য একটি ছাপাখানাখোলেন। বিদ্যাসাগর বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের জন্য অনেকগুলি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
চিত্রঃ ঈশ্বরচন্দ্রের বর্ণপরিচয়।
ইউরোপে ১৯শ শতকের শেষ দিকে লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর চল হয়। ১৯৩০-এর দশকে বাংলা হরফও লাইনো মেশিনে ছাপানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর অনেক সুবিধা থাকলেও এর একটি অসুবিধা ছিল এতে আড়াইশো-র মত চিহ্ন রাখার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগরীয় পদ্ধতিতে হরফের সংখ্যা ছিল বিশাল। "করণ টাইপ" নামের এক পদ্ধতিতে এর সংখ্যা কমলেও তার পরেও সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০-র মত হরফের ব্লক প্রয়োজন হত। আনন্দবাজার প্রকাশনা সংস্থার সুরেশচন্দ্র মজুমদার রাজশেখর বসুর পরামর্শে বাংলা হরফের বিরাট আকারের সংস্কার সাধন করেন। তিনি স্বরবর্ণের কার-চিহ্নগুলি সকল ক্ষেত্রে একই আকারের রাখার ব্যবস্থা করলেন এবং এগুলি ব্যঞ্জন বা যুক্তব্যঞ্জনের নিচে বা উপরে না বসিয়ে সামান্য ডানে বা বামে সরিয়ে আলাদা অক্ষর হিসেবে ছাপার ব্যবস্থা করলেন। এছাড়াও তিনি অনেক যুক্তব্যঞ্জনের একই উপাদান ব্যঞ্জনাক্ষরের সাধারণ আদল আলাদা করে সেটির হরফ বানালেন, ফলে যুক্তব্যঞ্জন ছাপানোতেও হরফের সংখ্যার অনেক সাশ্রয় হল। শেষ পর্যন্ত সুরেশচন্দ্র বাংলা হরফের সংখ্যাকে চাবির ডালায় ১২৪টি এবং বিবিধ আরও ৫০টিতে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন।
চিত্রঃ আনন্দ বাজার পত্রিকা
বর্তমানে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ছাপা অক্ষরের সুদর্শন যে রূপটি সংবাদপত্র, বইপত্র, বিজ্ঞাপন, সাইনবোর্ড, গণমাধ্যম, মাল্টিমিডিয়াসহ সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায়, তা আসলে ৭০-এর দশকে সৃষ্ট এই লাইনোটাইপ বেঙ্গলিরই কোনও না কোন রূপ।
এতধাপ পেরিয়েই এসছে এই আমাদের বাংলা বর্ণমালা!
Regards,
H.B. Singh.