অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের লক্ষণ দেখা দিলে উপেক্ষা না করে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগের লক্ষণ দেখা দিলে উপেক্ষা না করে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ফুসফুসের রোগগুলোর মধ্যে অনেক দেখা যায় এমন একটি রোগ হল অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ। যেকোনো বয়সের মানুষই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। হাঁপানি সাধারণত ছোটবেলা থেকে শুরু হয়, তবে প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরেও অনেকের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মত হাঁপানি শুরু হতে পারে।
হাঁপানি রোগ সম্পূর্ণভাবে নির্মূলের উপায় এখনো চিকিৎসাবিজ্ঞানের অজানা। তবে এর কিছু সহজ চিকিৎসা আছে। এই চিকিৎসাগুলোর মাধ্যমে আপনি হাঁপানির উপসর্গগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন যাতে রোগটি আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।
প্রধান লক্ষণগুলো হল:
শ্বাসকষ্ট
শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় শিস্ দেওয়ার মত শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া (wheezing)
বুকে চাপ লাগা – মনে হতে পারে যেন কোন বেল্ট বুকের চারপাশে আঁটসাঁট হয়ে আছে
কাশি
লক্ষণগুলো ক্ষণস্থায়ীভাবে খারাপ হয়ে যেতে পারে। তখন এটাকে বলা হয় অ্যাজমা অ্যাটাক।
হাঁপানি ছাড়াও অন্যান্য রোগের একই রকম লক্ষণ থাকতে পারে। তাই সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা নেয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি মনে হয় আপনার বা আপনার বাচ্চার হাঁপানি রোগ আছে, তাহলে আপনি একজন ডাক্তারের সহায়তা নিবেন। ডাক্তার সাধারণত লক্ষণগুলো শুনে নিয়ে এবং কিছু সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে হাঁপানি রোগ নির্ণয় করতে পারবেন।
হাঁপানি রোগ সাধারণত ইনহেলার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। ইনহেলার একটি ছোট যন্ত্র যা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ওষুধ শরীরে প্রবেশ করায়।
ইনহেলার প্রধানত দুই ধরণের হয়। যেমন:
প্রশমণকারী (reliever) ইনহেলার – হাঁপানির লক্ষণগুলো দ্রুত সারিয়ে ফেলতে এই ইনহেলার ব্যবহৃত হয়। এর কার্যকারিতা স্বল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়।
প্রতিরোধক (preventer) ইনহেলার – হাঁপানির লক্ষণগুলো যাতে দেখা না দেয়, সেজন্য এই ইনহেলার প্রতিদিন ব্যবহৃত হয়।
কিছু রোগীর ইনহেলারের পাশাপাশি ওষুধও খেতে হতে পারে।
ফুসফুসে বাতাস আনা নেওয়া করে যে শ্বাসনালীগুলো, সেগুলোর (প্রদাহের কারণে) ফুলে ওঠার কারণে হাঁপানি হয়। শ্বাসনালীগুলো অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে পরে এবং সাময়িকভাবে সরু হয়ে যায়।
কিছু কিছু জিনিস হাঁপানি উদ্রেক করতে পারে। সচরাচর দেখা যায় এমন কিছু কারণ হল:
অ্যালার্জি। যেমন পশুর লোম, ফুলের রেণু, ধূলিকণার পোকা ইত্যাদির প্রতি অ্যালার্জি
ধোঁয়া বা পরিবেশ দূষণ
ঠাণ্ডা হাওয়া
শারীরিক ব্যায়াম
সর্দিকাশির মতো অসুস্থতা বা ভাইরাস সংক্রমণ
হাঁপানি উদ্রেকের এই কারণগুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো এড়িয়ে চললে লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
হাঁপানি অনেকের জন্যই একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, বিশেষ করে যাদের এই রোগ প্রাপ্তবয়স্ক হবার পরে শুরু হয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে হাঁপানি অনেকসময় ভালো হয়ে যায় বা বয়ঃসন্ধিকালে অবস্থার উন্নতি হয়। তবে জীবনের পরবর্তী সময়ে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে।
উপসর্গুলো সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। বেশিরভাগ মানুষই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে যারা তুলনামূলকভাবে গুরুতর হাঁপানির রোগী, তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে রোগটি ব্যঘাত ঘটাতে পারে।
যদিও হাঁপানি সাধারণত নিয়ন্ত্রণ এর মধ্যে রাখা যায়, তবুও মনে রাখতে হবে এটি একটি জটিল রোগ যা নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।এজন্য নিচের দুটি কাজ করা জরুরি:
নিয়মমাফিক চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চলা
লক্ষণগুলো খারাপ হতে থাকলে সেগুলো কোনোভাবেই উপেক্ষা না করা
অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানি রোগ বেশ কিছু সমস্যা করতে পারে। যেমন:
সবসময় ক্লান্ত লাগা
মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষন্নতা
ফুসফুসের সংক্রমণ (নিউমোনিয়া)
বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা বা বয়ঃসন্ধিতে দেরি হওয়া
কর্মক্ষেত্র বা স্কুলে অনুপস্থিতি বা আগের চেয়ে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া
হঠাৎ করে হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ায় দৈনন্দিন কাজ ও অবসর ব্যহত হওয়া
কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক অ্যাজমা অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে, যা প্রাণঘাতীও হতে পারে।
লিখেছেন ডা. ইমা ইসলাম