অরিগামি: কাগজের ভাঁজে মোহনীয় শিল্প
শৈশবে কাগজ ভাঁজ করে নৌকা কিংবা প্লেন বানায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তখন কি কেউ জানতেন যে এটিও একটা শিল্প? কাগজ এবং সৃজনশীলতার মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই শিল্পই হলো অরিগামি।
অরিগামি একটি জাপানী শব্দ। অরি মানে ভাঁজ আর গামি অর্থ কাগজ। সোজা বাংলায়, একটি বর্গাকার কাগজকে কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই নানান ভাঁজে ভাঁজ করার মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি জিনিসের আকৃতি প্রদান করাই হলো অরিগামি। এটি মূলত একটি জাপানী ঐতিহ্য। আধুনিক অরিগামি মূলত এই কাজে কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া, আঁঠার ব্যবহার এমনকি কাগজে কোনো মার্কিং করাকে অনুৎসাহিত করে। জাপানে ঠিক এমনই আরেকটি শিল্প আছে, যাকে কিরিগামি বলা হয়ে থাকে।
যেভাবে অরিগামির শুরু :
অরিগামির শুরু বেশ পূর্বে। আকিরা ইয়োশিযাওয়া মাধ্যমে এই শিল্পের বিকাশ শুরু হয়। তাকে বলা হয় অরিগামির গ্র্যান্ডমাস্টার। ঐতিহ্যবাহী জাপানিজ অরিগামির সময় ধরা হয় ১৬০৩-১৮৬৭ সময়কালকে। বিশ শতকের আগ পর্যন্ত এই অরিগামি শিল্প আলাদাভাবে ছিল চীন, জাপান এবং ইউরোপে। ১৮৬০ এর দিকে জাপান তাদের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেয় আধুনিকায়নের জন্য। ধীরে ধীরে ইউরোপের অরিগামির কৌশল ঢুকে পড়ে জাপানীদের মধ্যে, সেখানে নানা বিধিনিষেধ চলে আসে। ১৯০০ সালের গোড়া থেকে আকিরাসহ সহ বেশ কয়েকজন নামকরা অরিগামি শিল্পী অরিগামির প্রাচীন সকল কলাকৌশল সংরক্ষণ করা শুরু করেন। আকিরার বিশাল অবদান আছে এই অরিগামি জগতে। তিনি ‘ওয়েট ফোল্ডিং’, ‘যোশিসাওয়া-র্যান্ডলেট ডায়াগ্রাম কৌশল’ সহ নানা ধরনের কলাকৌশল আবিস্কারের মাধ্যমে অরিগামির এক নবযুগের সৃষ্টি করেন।
বিভিন্ন অরিগামির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ধরন হচ্ছে :
অ্যাকশন অরিগামি
মডিউলার অরিগামি
ওয়েট ফোল্ডিং
পিওরল্যান্ড অরিগামি
চৌখুনি অংকন অরিগামি ইত্যাদি।
গাণিতিক অরিগামি :
গাণিতিকভাবেও যে অরিগামি করা যায়, তার কৌশলটি আকিরার আবিস্কার, যা কিনা পরবর্তীতে বিজ্ঞানের অনেক কাজে সাহায্য করে। টেকনিক্যাল অরিগামিকে জাপানী ভাষায় বলা হয় ‘অরিগামি সেক্কেই‘, যা ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। কোনোকিছু বানানোর আগে তার একটি প্যাটার্ন তৈরি করার পাশাপাশি সেখান থেকে ত্রুটি বের করতেও এই টেকনিক্যাল অরিগামি দরকার হয়।
ওয়েট ফোল্ডিং অরিগামি :
প্রয়াত অরিগামি মাস্টার আকিরা ইয়োশিযাওয়া একটি অন্যতম আবিস্কার ওয়েট ফোল্ডিং অরিগামি। অন্যান্য অরিগামির থেকে এটি একটু ভিন্ন, কারণ এটি ভেজা কাগজ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। হোয়াং তিয়েন কুয়েত বর্তমানে অরিগামির এই ঘরানার অন্যতম একজন শিল্পী। তার বানানো বেশ কিছু শিল্পকর্ম নিয়ে জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান সহ নানান দেশে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তিনি কিন্তু অরিগামি নিয়ে দুটি বইও লিখে ফেলেছেন।