ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, যা ইনফেক্টেড স্ত্রী এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি টাইপ (DEN-1, DEN-2, DEN-3, DEN-4) রয়েছে। একবার হলে সারাজীবনের জন্য সুরক্ষা হয় না বরং পরবর্তীবার আরও জটিল রূপ নিতে পারে।
ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণগুলো কী?
-হঠাৎ করে উচ্চ মাত্রার জ্বর (১০৩-১০৫°F)
-তীব্র মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা
-সারা শরীর, জয়েন্ট ও হাড়ে ব্যথা (breakbone fever)
-শরীরে লালচে র্যাশ
-বমি বা বমিভাব
-দুর্বলতা, ক্লান্তিভাব
-নাক, মুখ বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া (গম্ভীর লক্ষণ)
-প্রস্রাব কমে যাওয়া
ডেঙ্গু সাধারণত তিনটি পর্যায়ে হয়:
১. Febrile Phase (জ্বরের ধাপ):
-প্রথম ২-৭ দিন তীব্র জ্বর, মাথা ও গায়ে ব্যথা, বমি
-পানি শূন্যতা হতে পারে
২. Critical Phase (গুরুতর ধাপ):
-জ্বর কমে যাওয়ার ২৪-৪৮ ঘণ্টা সবচেয়ে বিপজ্জনক
-এই সময় ব্লিডিং, শক, অর্গান ফেইলিউর দেখা দিতে পারে
৩. Recovery Phase (উপশম ধাপ):
-সাধারণত জ্বর চলে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর
-ধীরে ধীরে উন্নতি হতে থাকে
ডেঙ্গু হলে করণীয় কী?
১. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার:
-ORS
-ডাবের পানি
-স্যুপ, স্যালাইন, ফলের রস (কমলালেবু, আপেল)
-তরল খাবারই ডেঙ্গু রোগীর প্রধান ওষুধ
২. জ্বর কমাতে:
-শুধু Paracetamol (চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী)
-Ibuprofen, aspirin, diclofenac একদম নয় (রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে)
৩. বিশ্রাম:
-সম্পূর্ণ বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
-শারীরিক পরিশ্রম, দৌড়াদৌড়ি, ঘোরাফেরা এড়াতে হবে
৪. প্লেটলেট মনিটরিং:
-প্লেটলেট গণনা (CBC) ২–৩ দিনে একবার করা দরকার
-তবে শুধু প্লেটলেট কমলেই ভয় পাবেন না, ক্লিনিকাল অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ
কখন হাসপাতালে যেতে হবে:
-জ্বর কমে গেলেও দুর্বলতা বাড়ছে
-একাধিকবার বমি
-পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া
-রক্ত পড়া (নাক, মুখ, প্রস্রাবে বা পায়খানায়)
-প্রস্রাব একদম কমে যাওয়া
-চোখ বা মুখ ফুলে যাওয়া
-শ্বাসকষ্ট বা বুক ধড়ফড়
এসব লক্ষণ Critical Phase নির্দেশ করে। দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করান।
কিছু সাধারণ ভুল যা করবেন না:
-নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করা
-দোকান থেকে যেকোনো পেইনকিলার কিনে খাওয়া
-একবার জ্বর কমলে চিকিৎসা বন্ধ করে ফেলা
-রক্ত দেওয়া/না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিজেরা নেওয়া
-“প্লেটলেট কম” শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়া (শুধু সংখ্যা নয়, লক্ষণই মুখ্য)
চিকিৎসা কোথায় নেবেন?
-সরকারি হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিট বা মেডিসিন বিভাগে
-বেসরকারি মেডিকেল সেন্টার, যেখানে প্লেটলেট মনিটরিং ও সাপোর্ট সুবিধা আছে
-চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করুন
প্রতিরোধে জোর দিন:
-জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন
-মশা নিধন ও প্রতিরোধে স্প্রে ব্যবহার করুন
-ফুলদানি, ফ্রিজের ট্রে, ড্রাম – সবখানে পানি জমে থাকছে কি না দেখুন
-ফুলহাতা জামা, লম্বা প্যান্ট পরুন
-দিনে ঘুমালেও মশারি ব্যবহার করুন
সতর্ক হোন, বাঁচুন – ডেঙ্গু হলে ভয় নয়, সঠিক ব্যবস্থা নিন।
লিখেছেন- বন্ধু মেরিট (এমবিবিএস )
সতর্কতা অবলম্বন করুন।
বাংলাদেশে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলছে দাবদাহ, যাতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গরম যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে ততই বাড়ছে অসুস্থতা। প্রচন্ড গরমে নানারকম অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে গরমের সময়টা একটু বেশিই বিপজ্জনক। অতিরিক্ত গরমে প্রায়ই দেখা যায় হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারন মানুষ ।
প্রচন্ড এই গরমে প্রায়ই হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটছে। দ্রুত এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা সেবা না পেলে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির ব্রেইনসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গসমূহ পুরোপুরি অকেজো হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই হিট স্ট্রোক সম্পর্কে প্রত্যেকেরই কমবেশি কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাহলে চলুন হিট স্ট্রোক কি, এর লক্ষন এবং হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায় সর্ম্পকে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে তৈরি একধরনের জটিলতার নাম হিট স্ট্রোক। মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা গড়ে ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। এটি ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের চেয়ে বেশি হলেই হিট স্ট্রোক হতে পারে। এ সমস্যায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। হিট স্ট্রোক হলো এমন একটি চিকিৎসাগত জরুরি অবস্থা যার ফলে শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায়। একথা কে না জানে যে গরম একা আসে না, সঙ্গে নিয়ে আসে এমন কিছু সমস্যা যা বাস্তবিকই ভয়ের বিষয়। রুগীর যে কোন অঙ্গই এসময় বিকল হয়ে যেতে পারে, সাথে থাকে প্রচন্ড ক্লান্তি এবং পেশিতে ক্র্যাম্প লাগার মতো আসুবিধা।
এই গরমে খোলা জায়গায় এমনকি ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকলেও শরীরের অন্দরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে পানি এবং লবণের পরিমাণ কমে গিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে হার্ট বিট বেড়ে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা, বমি ভাব, ত্বক গরম হয়ে যাওয়া, চোখের সামনে বারে বারে অন্ধকার হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি প্রভৃতি লক্ষণগুলির বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে ঠান্ডা জায়গায় বসিয়ে পানি খাওযাতে হবে। প্রয়োজনে সারা গায়ে পানি ঢাললেও আরাম মিলতে পারে। এই অবস্থায় সূর্যের প্রখর তাপ সরাসরি শরীরে লাগার পর, শরীর তার স্বাভাবিক তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না। সাধারণত, উচ্চ-তাপমাত্রায় শরীর স্বাভাবিকভাবে নিজেকে ঠান্ডা করে রোমকূপের মাধ্যমে ঘাম বের করে দিয়ে, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে শরীর তার সেই স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে পারে না। তাপজনিত এই সমস্যা গ্রীষ্মকালে খুব সাধারণ ব্যাপার। যা অত্যাধিক তাপের সংস্পর্শে আসার ফলে বাচ্চা ও বয়ষ্কদের উপরেই বেশি প্রভাব ফেলে। যারা বাইরে কাজ করেন, তাঁরাই বেশী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। যদি হিট স্ট্রোকের পর অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এটা শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রতঙ্গকে নষ্ট করে দিতে পারে এবং তা থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
> করণীয় ঃ-
* ঠান্ডা পরিবেশে থাকুন : ঘরে ভিতরে যথাসম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে অবস্থান করুন। অপ্রয়োজনীয় কারণে দিনে, বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বাইরে বের না হওয়াই ভালো। বের হলে অবশ্যই ছাতা সাথে নিবেন। গরমে কালো রঙের ছাতা পরিহার করুন।
* প্রচুর পানি ও তরল পান করুন : সারা দিন প্রচুর পানি পান করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় পানি সাথে নিন। দিনে কমপক্ষে তিন লিটার পানি পান করুন।
* আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন : গরমে আরামদায়ক পোশাক পরিধান করুন। বাচ্চাদের জন্য সুতির হাল্কা রঙের কাপড় নির্বাচন করুন। খুব গরমে কালো রঙ পরিহার করুন।
* মৌসুমী ফল গ্রহণ করুন : প্রচুর পরিমাণে ফল ও ফলের জুস খান। গরমের সময় টক ফল খুবই ভালো। কিন্তু যাদের নিম্ন রক্তচাপ, গরমের সময় তারা অতিরিক্ত টক খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
* সবুজ সালাদ বা সবজি খান : প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবুজ সালাদ বা সবজি রাখুন। এতে শরীরে পানি ও খনিজের ঘাটতি হবে না এবং শরীর ঠান্ডা থাকবে।
> বর্জনীয় ঃ-
* সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন : অতিরিক্ত গরমে সফট অথবা হার্ড ড্রিঙ্কস নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। ড্রিঙ্কস শরীরের পানিকে নিরূদিত করে যা শরীরে পানি স্বল্পতা তৈরী করে। এছাড়াও ঘন ঘন পানি পিপাসা পায় এবং গলা শুখিয়ে আসে। তাই গরমে সাময়িক তৃষ্ণা মেটাতে অবশ্যই ড্রিঙ্কস না।
* পানি পানের সময় সতর্ক থাকুন : গরমের কারণে যেকোনো জায়গা থেকে পানি পানে বিরত থাকুন। দূষিত পানি থেকে পানিবাহিত রোগ হতে পারে। এজন্য পানি পান করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। বাইরে পানি পান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই মিনারেল ওয়াটার গ্রহণ করুন।
* ফাস্টফুডকে না বলুন : ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবারকে না বলুন। ফাস্টফুড এবং তেল চর্বি জাতীয় খাবার শরীরের জন্য খারাপ। গরমে তেলে ভাজা বা রিচ ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। গরমে এ জাতীয় খাবার যত বেশী খাবেন, তত বেশী গরম লাগবে। সুতরাং এ ধরনের খাবার না খাওয়াই ভালো। স্ট্রীট ফুড বর্জন করুন অতিরিক্ত এই গরমে।
* স্যালাইন খাওয়ার সময় সতর্ক থাকুন : গরমের কারণে ঘরে থাকতে চাইলেও সবার জন্য তা সম্ভব নয়, অনেকেই আছেন একটু আয়ের জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেন। তাদেরকে কাজের জন্য বাইরে যেতেই হয়। অনেকেই আছেন দিন আনেন দিন খান। সেক্ষেত্রে যেন শরীরে পানি বা লবণের স্বল্পতা না হয় এই জন্য স্যালাইন খেতে পারেন। বাইরে চলাচলের সময় কাছে স্যালাইন রাখতে পারেন। যদি শরীর দুর্বল মনে হয়, সেক্ষেত্রে সাথে সাথে স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন। এতে দুর্বলতা কমবে। প্যাকেটের গায়ে নির্দেশিত পরিমাণ পানির চেয়ে কম পানি দিয়ে স্যালাইন খাবেন না। শুধু স্যালাইন গুড়া খেলে বা কম পানি দিয়ে স্যালাইন খেলে লবণের ঘনত্ব বেড়ে কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
> পরামর্শঃ- এই গরমে নিজের পাশাপাশি পরিবারের যত্ন নিন। বাইরে চলাফেলার সময় বয়স্ক এবং শিশুদের দিকে খেয়াল রাখুন এবং তাদেরকে অগ্রাধিকার দিন যানবাহনে চলাচলের ক্ষেত্রে। কেউ অসুস্থ হলে সচেতনতার সাথে সিদ্ধান্ত নিন।
এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মুখের ত্বকের পাশাপাশি চুল, ঠোঁট, হাত ও পা শুষ্ক হয়ে পড়ে। যত্নের অভাবে অনেক সময় ফেটে যায়। শীতকালে খাবার থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহার্য প্রসাধন—সবকিছুতেই পরিবর্তন আনতে হবে।
শীতের নানা সবজি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এগুলোতে আছে বায়োটিন, কোলাজেনসহ চমৎকার সব উপাদান। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবজি রাখুন।
হালকা কুসুম গরম পানিতে হাত–মুখ ধোয়া ও গোসল করা উচিত। তবে খুব গরম পানির ব্যবহার ত্বক আরও শুষ্ক করে দেয়।
শীতে পিপাসা কম লাগলেও যথেষ্ট পানি পান করুন। প্রয়োজনে গরম পানি মিশিয়ে পান করুন। সঙ্গে শীতকালীন তাজা ফল, সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
সব বয়সীদের, বিশেষ করে শিশুদের গরম শীতবস্ত্রের পাশাপাশি হাতে ও পায়ে মোজা পরা ভালো।
দিনে কয়েকবার লোশন, তেল ও গ্লিসারিন ব্যবহার করা ভালো।
শৈত্যপ্রবাহ ছাড়া ঘরের দরজা–জানালা খুলে দিন, যাতে স্বাভাবিক নির্মল আলো–বাতাস থাকে।
সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন ১০-১৫ মিনিট শীতের মিষ্টি রোদ উপভোগ করুন, যা থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সঙ্গে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
যাঁদের ত্বক খুব শুষ্ক, তাঁরা সপ্তাহে এক দিন মুখে মধু কয়েক সেকেন্ড মালিশ করে ১৫-২০ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিন। নারকেল তেল ত্বকের জন্যও ভালো। দামি ময়েশ্চারাইজার কিনতে না চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন। চাইলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারের আগে অলিভ অয়েল বা আলমন্ড অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন সকালে ও রাতে যেকোনো ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগানোর আগে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ডের সিরাম ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করুন।
ঠান্ডায় চুলের বাড়তি যত্ন নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। শ্যাম্পুর সঙ্গে নারকেল তেল বা গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করুন, যা প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে।
ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলির পাশাপাশি গ্লিসারিন ব্যবহার করুন। যাঁরা লিপস্টিক বেশি ব্যবহার করেন, তাঁরা সপ্তাহে ২-৩ দিন চিনি ও লেবু দিয়ে স্ক্রাব করুন।
রাতে ঘুমানোর আগে হাত–পায়ের গোড়ালিতে অবশ্যই গ্লিসারিন, ভ্যাসলিন, পেট্রোলিয়াম জেলি বা ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করুন।
ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়, তাই সেই ঘাটতি পূরণে প্রচুর পানি খেতে হয়। যেমন–স্যালাইন, জুস, ডাবের পানি ইত্যাদি সহ যেকোনো তরল খাবার।
কিন্তু শুধু তরল খাবারে কারো শরীর শক্তির চাহিদা পূরণ হয় না, সেকারণে তরল খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে শক্ত বা অর্ধতরল খাবারও।
ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সঠিক খাদ্যগ্রহণ চালিয়ে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে নরম, সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে, যেমন খিচুড়ি,
পানি পানি ডাল, দধি, কলা, মুরগির মাংস ইত্যাদি। এর বাইরেও প্রচুর তরল পদার্থ খাওয়াতে হবে যেমন–লেবুর শরবত, ভাতের মাড়,
লাচ্ছি, ডাবের পানি, কম লিকারের চা, ইত্যাদি।
যদি শিশু বুকের দুধ খায়, তাহলে বুকের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে হবে। ডায়রিয়া বন্ধ হওয়ার পর শিশুকে এক বেলা বেশি
খাওয়ানো উচিত, তাতে করে শরীরে শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সহজ হয়।
শিশুর ডায়রিয়া হলে যা খাওয়ানো ভালো–
১। প্রচুর শক্তি সমৃদ্ধ খাবার:
চর্বি, দই আর সিরিয়ালের মতো প্রচুর শক্তি সমৃদ্ধ খাবার বেশি উপকারী। এগুলো ডায়রিয়ার সময়ও বেশ ভালোই শোষণ হয় আমাদের শরীরে।
তাই অল্প অল্প করে, সুলভে পাওয়া যায় এমন উচ্চ শক্তি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। যেগুল খাবারগুলো আপনার শিশুর পছন্দ বা
পরিচিত সেগুলো বারবার খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। চাইলে ভাত বা রুটির সাথে সামান্য ভেজিটেবল অয়েল মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে
যাতে খাবারে শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
২। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার:
যেসব খাবারে পটাশিয়াম বেশি সেগুলো খাওয়া খুবই জরুরি, কারণ এতে করে ডায়রিয়ার কারণে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পটাশিয়াম আবার পুনস্থাপিত হবে।
মসুর ডাল, কলা, আম, আমারস, পেঁপে, নারিকেলের দুধ এবং টক জাতীয় ফলের মধ্যে আছে প্রচুর পটাশিয়াম।
৩। প্রোবায়োটিক:
পরিপাকতন্ত্রকে ডায়রিয়াজনিত সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করতে একটা চমৎকার পথ্য হলো প্রোবায়োটিক। এই পথ্যে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়া থাকে,
যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা করে তাদের খাদ্যে ঘাটতি সৃষ্টি করে। এতে করে সংক্রামক জীবাণুগুলো মরে যায়। দই একটি প্রোবায়োটিক।
এছাড়া ডাক্তারের পরামর্শে ফার্মেসি থেকেও কিনে প্রোবায়োটিক খাওয়াতে পারেন।
শিশুর ডায়রিয়া হলে যা খাওয়ানো উচিত না:
ডায়রিয়ার সময় কিছু কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে–
১। প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার যেমন–তুলনামূলক শক্ত ফল বা শাক সবজি, হোল গ্রেইন সিরিয়াল।
২। বেশি মশলা দেওয়া খাবার।
৩। অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবারও ডায়রিয়াকে বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪। মায়ের দুধ ব্যতীত অন্য কোনো দুধ; সরাসরি না খাওয়ানোই ভালো, দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবার দেওয়া যেতে পারে।
ডায়রিয়ায় শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময়ে তাই শরীরে শক্তি ফিরিয়ে আনাটা জরুরি। সেই কারণে স্যালাইন ও অন্যান্য তরলের
পাশাপাশি যথাযথ শক্ত খাবার খেতে থাকাটাও জরুরি। তাতে দ্রুত শক্তি ফিরে পেয়ে ত্বরান্বিত হবে সুস্থ হওয়া।
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রতিটি দেশে আজ এই রোগটি ব্যাপক আকার ধারন করেছে। তাই এটি থেকে মুক্তি পেতে নিয়ম মেনে চলার বিকল্প নেই । তাই আসেন আমরা সবাই নিয়ম মেনে চলি আর উচ্চ রক্ত চাপকে বিদায় জানাই । নিজে সুস্থ থাকি অপরকে এই সম্পর্কে সচেতন করি ।
মোঃ হাসান মিয়া , এমবিবিএস (ফাইনাল ইয়ার) রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়