মহাস্থানগড় ভ্রমণ
১৬-০৫-২৪
বন্ধুদের সাথে পরিকল্পনা করেছি ঘুরতে যাব ,তা কোথায় যাব? ঠিক করলাম মহাস্থানগড় যাব যেটা কিনা সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী। সবই ঠিক হল মে মাসের ১৬ তারিখ অর্থাৎ বৃহঃস্পতিবার।সেদিন ছুটিও আছে , কিন্তু বাধ সাধলেন ক্লাস । অর্থাৎ স্যার বৃহঃস্পতিবারেই অতিরিক্ত ক্লাস নেওযার ঘোষনা দিয়ে দিলেন ,তাই ভাবলাম ভ্রমণ বুঝি আর হল না! সন্ধায় হতাশাচিত্তেই ফোন করলাম মোমিনকে,মোমিন আমার বন্ধু। সেই ভ্রমণের মূল পরিকল্পনাকারী, তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সদর্থক কোনো উত্তর পেলাম না, এইবার ভ্রমনের আশা প্রায় ত্যাগই করলাম। রাতে অবসন্নচিত্তে মেসেন্জারে আসলাম ,এসে দেখি ভাগ্য খুলে গেছে , সি আর গ্রুপ থেকে মেসেজ এসেছে “ ক্লাসটি ক্যান্সেল!” আনন্দের আর সীমা রইল না । এবার তো তবে হতাশা আবসানের পালা । অর্থাৎ সফর তবে সফল হবেই । রীতিমতো বন্ধুরা ভ্রমন পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে । অনলাইনে মিটিং ও পারিকল্পনা শেষ হলো রাত ১২ টায়, সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলা হল।এবার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে এলার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর ৪ টা ৩০ মিনিটে এলার্ম বেজে উঠল ,উঠে পড়লাম।
এরপর স্নানাদি সেরে ,ব্যাগ,পানির বোতল ইত্যাদি নিয়ে ৫টা ১০ মিনিটে পার্ক মোর আসলাম।
যাব ট্রেনে, তবে রংপুর রেল স্টেশন থেকে সকালে বগুড়ার উদ্দেশ্যে কোনো ট্রেন নেই তাই যেতে হবে কাউনিয়া রেল স্টেশন। সেখানে ৬.৩০ মিনিটে ট্রেন আছে যা দিয়ে বগুড়া যেতে পারব তারপর বগুড়া থেকে মহাস্থানগড় বাসে যাব এই নিয়ত করে কাউনিয়ার উদ্দেশ্যে মোমিন,আরিফ,সাকিব,ওসমান, গোলাম ফারুক,রুহুল,আরেফিন ও অমিত মাহমুদসহ আমি বাসে উঠে পড়লাম । কাউনিয়া বাজার পেীছানোর পর স্টেশনরোড ধরে কাউনিয়া মডেলমসজিদ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পেরিয়ে স্টেশনে গেলাম। নাস্তা করে,টিকিট কেটে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম ট্রেন আসল । উঠে পরলাম বগুড়ার উদ্দেশ্যে ,,, ট্রেন চলছে,আমরা বন্ধুরা মিলে গান গল্প করতে থাকলাম।অনেক নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হল ,বেশ ভালো লাগল । এরই মধ্যে আমরা বিকল্প রাস্তার সন্ধান পেলাম যার মাধ্যমে বগুড়া সদর না গিয়েই মহাস্থানগড় যেতে পারব। বেশ ভালো লাগল তাই যদি হয় তবে আরও ভালো। নেমে পড়লাম সোনাতলা স্টেশনে । সেখান থেকে সি এন জি নিয়ে গেলাম মোকামতলা । মোকামতলায় অটো নিয়ে চলে গেলাম মহাস্থানগড় বাজার,সেখান থেকে ২ মিনিট সামনে হেটে গেলাম মহাস্থানগড় মাজার গেটে এবং প্রথমেই শাহ সুলতান বলখির মাজার দর্শন করলাম , তারপর গেলাম জিয়ত কুন্ড (মানকালী কুন্ড) এরপর পরশুরাম প্রাসাদ,শীলাদেবীর ঘাট,মহাস্থান শ্মশান, এর পর মহাস্থান প্রাচীর দিয়ে হাটতে হাটতে প্রকৃতির অপরুপ শোভা দর্শন করলাম। হাটতে হাটতে হাপিয়ে যাওয়ায় বটবৃক্ষের নিচে একটু অবসর নিলাম তারপর নাস্তা ও পানি নিয়ে এসে জলপান করলাম। এবার আবার হাটতে লাগলাম ,এত হাটছি তবুও যেন সেই প্রাচীর দূর্গ শেষই হয় না । এরপর মহাস্থান পর্যটন পার্কে গেলাম সেখানে, অনেক বিদেশিদের ভিড় লক্ষ করলাম যেখানে ১৪ জন বিদেশিদের দেখা মিলল। তারা চীন থেকে এসেছে তাদের সাথে সৌজন্য বিনিময় করলাম ,তারা বলল , “ উই আর ভেরি হ্যাপি টু বি হেয়ার”
আমরা বললাম, থ্যাংক ইউ, হেভ আ নাইস ট্রিপ!
তারা থ্যাংক ইউ সো মাচ বলে চলে গেল দর্শন করতে ।
আমরাও চলে এলাম।
সেখান থেকে একটু দূরেই গোবিন্দ ভিটা।
আমরা এবার আবার টিকিট কেটে গেলাম গোবিনদ ভিটায় ,এটি একেবারে করতোয়া নদী ঘেষে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্বিক স্থান।
যেটি দেখতে খুব সুন্দর । ভিটাটি ছোট ছোট কক্ষ দ্বারা পরিপূর্ণ ।কোনো কোনো কক্ষের দৈর্ঘ্য প্রস্থ আনুমানিক ৬ঃ৬ কোনোটা বা ১০ঃ৪ ফুট। কোনো কোনোটা এর বেশি বা কমও আছে । সবমিলিয়ে করতোয়ার কাছে অসাধারন লাগছিল ,যেন ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ি।
এরপর গেলাম মহাস্থান জাদুঘরে যেখানে ঢুকার পর দেখলাম অনেক সুন্দর সুন্দর দরজার ফ্রেম যার ভিতর দিয়ে প্রবেশ করলাম। সেখানে পাথর দিয়ে খচিত দরজার ফ্রেম এর দেখা মিলল সেখানে দেখলাম অনেক বড় বড় মূর্তি যা কষ্ঠি পাথরে খচিত,
যেখানে আছে বিষ্ণু , দূর্গা ,সরস্বতী সহ অনেক মূর্তি যা অসাধারণ। এছাড়াও রয়েছে গনেশের মার্বেল পাথর দিয়ে সুন্দর একটি মূর্তি , আরও রয়েছে একটি সুবিশাল কলস যেখানে অনায়াসে দুইজন মানুষ এই গরমের দিনে ঢুকে থাকতে পারবে ।
কলসিটা আকারে এত বড় যে মাথা উচিয়ে দেখতে হয় তার ভেতরের কলেবর!
এছাড়াও মহাস্থান জাদুঘরে রয়েছে অনেক নথি ,বিভিন্ন সময়ের পাথর চিত্রকল্প, রয়েছে শিবলিঙ্গ , শাসকদের মূর্তিও সেখানে কষ্ঠিপাথরে খোদাই করা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকারের প্রত্নতত্ব দিয়ে ভরপুর এই জাদুঘরটি।
জাদুঘর দেখার পর গেলাম বেহুলার বাসর ঘরে ।সেটা জাদুঘর থেকে ৬-৮ কি .মি দূরে অবস্থিত । বেহুলার বাসর ঘর এর জায়গাটি সমতল থেকে অনেক উচুতে।যেখানে ছোটবড় অনেক কক্ষ দেখলাম। দেখলাম অসাধারণ নৈপুন্যে সাজানো সেই ঘর । জায়গাটি অনেক মনোহর যেখানে গেলে মন ছুয়ে যায় । কি অসাধারণ সব শিল্প ।মুহুর্তেই যেন অন্য পৃৃথিবীতে চলে গেলাম। কিভাবে তৈরি করেছিল তা ,সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয় ।
বেহুলার বাসর ঘর দর্শন করেও অসাধারন অনুভুতির সঞ্চার হল।এরপর সেখান থেকে অটো করে মহাস্থানগড় বাজারে এসে সবাই পেটপুরে খেলাম অতঃপর রাত ৭ টায় বাসে করে রংপুর মর্ডানে আসলাম ৯ টা ৩০মিনিটে ।
তারপর সবাই সবার মেসে,বাসায় চলে গেলাম।
এরপর ক্লান্ত শরীরে রাতের খাবার খেয়ে গভীর ঘুমে নিমগ্ন হয়ে গেলাম বৈকি !