অমৃত:৩৬

০৩/০৯/১৯৬১, ভূপেন বসু এভিনিউ,  শ্যামবাজার, কলিকাতা

“ ...হাতিকে না খেতে দিয়ে যদি বেঁধে রাখা যায় সে হাঁস-ফাঁস করতে থাকবে। মনের খোরাক এইসব হাটবাজার, হা-হুতাশ, চাকরি-বাকরি দিয়ে ভরানো যায় না।

০৩/০৯/১৯৬১ (১৫ই ভাদ্র ১৩৬৮)

জপ সম্বন্ধে জানতে চেয়েছো। এই যে জপ, যে মন্ত্র, যে শব্দ, এই যে দেহ, দেহটাই মন্ত্র। দেহ যদি মন্ত্র হয়ে থাকে, রক্ত ও মন্ত্র, অস্থি ও মন্ত্র, শিরা উপশিরা দেহের সমস্ত কিছুই মন্ত্র। তাতেই শেষ হল না, যে যে বিষয়বস্তু দ্বারা দেহ গঠিত সেই সেই বিষয়বস্তুও মন্ত্র। এইভাবে সবটাই মন্ত্র। এই পরিদৃশ্যমান জগৎটাই মন্ত্র। যার অর্থ এত বড়। এখন সেই মন্ত্র, যেটা শব্দ, সব সময় সকল অবস্থায় যে শব্দটা ব্যবহার করি চিন্তা করার পক্ষে সুবিধার জন্য, আমরা সেটাকেই দাম দিয়েছি। যেটা সকল অবস্থায়, সকল জীবের ভিতর, সকল সত্তার ভিতর হতে আপনি বহির্গত হয়, যে শব্দকে আশ্রয় করে এই জীব জগৎ সৃষ্টি হয়েছে, সেই যে শব্দ, সেই শব্দটা যে প্রকারের হোক, যার উপর নির্ভর করে এই সৃষ্টি হয়েছে, সেই যে ধ্বনি সেটাই জপ। যে শব্দটা আছে, যেটা অহর্নিশ বয়ে চলেছে, যে ধ্বনিকে আশ্রয় করে এটা হচ্ছে, একটা শব্দ অনুস্বর, বিসর্গ যাই হোক না কেন, হ, য, ব, র, ল যাই হোক। যে কোন শব্দ কেন হল? দেখতে গেলে একটা আশ্রয় করে বেরিয়ে যাচ্ছে। জগৎ যার উপর, যে শব্দের উপর নির্ভর করে হয়েছে তাই মন্ত্র। ওটাকে মনের যন্ত্র দ্বারা ধরে নেওয়াই সাধনা, যার উপর নির্ভর করে আসা যায় তাতেই আবার গিয়ে পড়ে। গতি যখন শব্দকে অবলম্বন করে এসেছে, এই প্রকৃতি, এই জগৎ সেই শব্দকে আজও স্মরণ করে চলেছে। সেই শব্দের স্মরণে যদি এত অনন্ত রূপ হতে পারে। এই যে রূপান্তরিত হচ্ছে এর যা নিয়মাবলী যার উপর নির্ভর করে হচ্ছে, সেটাকেই মন্ত্র বলা হয়। ওটাকে মন্ত্র বা যে নামে অভিহিত করা হয়েছে, তাকেই সব সমস্যায় সকল সময় মনের ভিতর চিন্তা ও স্মরণ করে থাকি। যে দুধ বাট দিয়ে টেনে বার করা হয়, সেই গাভীকে ঘাস খাওয়ানো হয়। ঘাসের চেহারা আর দুধের চেহারা এক নয়। গাভী সব সময় খাবার চিন্তা করছে। খাওয়ার জুটলে গলাধঃকরণ করে তা থেকে রক্ত মাংস কত রকমারি হয়ে যায়। শরীরের ভিতর গিয়ে যে রূপ নেবে তার জন্য চিন্তা করতে হয় না, এই ডাল ভাত মেখে দলা করে তুমি তো মুখে ঢুকিয়ে দিলে তারপর কি হয় তা তো চিন্তা কর না। ভিতরটা তো একটা Factory-র মত। তুমি ঢুকিয়ে দিলে আর কোথায় যাবে ভিতরে মহা হুলুস্থুল পড়ে গেল। একবার এদিক একবার ওদিক করছে। দেখা যায় না বলে রক্ষা। ডাল-ভাতে যে রক্ত আছে তা বোঝা যায় না।

শব্দটা হচ্ছে মনের ভিতর যে গহ্বর আছে তাকে পূরণ করবার জন্য। ওরও (মনের) খাবার আছে। প্রত্যেকটি জিনিসের খাবার আছে। তোমরা ডাল-ভাত খাও। মন চিন্তার ভিতর দিয়ে ওর খোরাক পায়। মনের খোরাক হচ্ছে শব্দ ধ্বনি। এই খোরাকেই ও ফুটে ওঠে, সতেজ হয়। মন তো ফুটল, ফুটে বার হয়ে এবার বলছে, আমার খোরাকটা দাও। তার যে বেজে ওঠে; টোকা দিলেই টং টং করে বেজে ওঠে। কত শব্দ ওতে। ওতে যে অত লুকানো আছে তা দেখলে বোঝা যায় না। বাইরে অনেক শব্দ আছে, ট্রামের শব্দ, কারখানার শব্দ সবটাই তার খোরাক। নিমন্ত্রণ খাবার পর একটা পান চাই, ধোঁয়া চাই এইগুলো হচ্ছে মুখশুদ্ধি। তাই বলে একথালা দেয় না। খাওয়ার পর অল্প একটু চাই। এখানকার শব্দ হচ্ছে মুখশুদ্ধি। শুধু মুখশুদ্ধিতে তো পেট ভরে না। এত আদর করে নিমন্ত্রণ করে এলাম, তারপর বলছি দুই কৌটা মুখশুদ্ধি খান। এটা শুনতে কেমন লাগে। আসল বস্তু বাদ দিয়ে এই নিন মুখশুদ্ধি খান, এটা আমাদের কাছে হাস্যকর লাগে। কিন্তু আমরা এখানে অদ্ভুত হাস্যকর কাজই করে চলেছি। চিন্তাশীল ব্যক্তিদের কাছে অদ্ভুত লাগছে। এখানকার কাজকর্ম যা কিছু করছি, চাকরি বাজার, ঝগড়া-ঝাটি সবটাই মুখশুদ্ধি। কিন্তু আমরা এখানে এটারই দাম দিয়ে যাচ্ছি। অনেকে আছে ২৫ কাপ চা খায়। আমার তখন ৯/১০ বৎসর বয়স, চারিদিক জলে ডুবে আছে একজন মাইলখানেক সাঁতার দিয়ে যাচ্ছে চা খেতে। এখানে যা করছি, সবই চা খাওয়ার মত করে চলেছি। হাতিকে ছাগলের বাড়ীতে নিমন্ত্রণ করে, ছাগল যা খায় তার চাইতে ৮/১০ টা পাতা না হয় বেশী। দিল, তাতে ওর কি হবে? ওর তো খিদে থেকেই যাবে। আমরা এতবড় বিরাট মনকে এখানকার ছাগলের খোরাক দিয়ে ভর্তি করতে চাচ্ছি। এই সব সংসারের খোরাক এর কাছে ছাগলের খোরাকের মত। এই সংসারে যে হা-হুতাশ, মারামারি, ঝগড়া, ভাল না লাগা এতসব কেন করে? হাতিকে না খেতে দিয়ে যদি বেঁধে রাখা যায় সে হাঁস-ফাঁস করতে থাকবে। মনের খোরাক এইসব হাটবাজার, হা-হুতাশ, চাকরি-বাকরি দিয়ে ভরানো যায় না। পৃথিবীসুদ্ধ খোরাক দিলেও তার এক মুহূর্তে শেষ হয়ে যায়। মনকে উপযুক্ত খোরাক না দিতে পারলেই এই সব হা-হুতাশ, সমস্যা, দ্বন্দ্ব এগুলো আসবে। এগুলো আসবার তো আর কোন কারণ নেই। কাজ নেই কি করবে বসে বসে এই সব বানায়। এগুলো এক রকম অযথা উক্তি বললেই চলে।

যাত্রায় একজন রাজার পার্ট নিয়েছিল, তখন আমার ছোট বয়স। যাত্রা শুনতে গেছি। সেই রাজার দাদ ছিল। খুব পার্ট করছে, মধ্যরাত্রে সাধারণতঃ চুলকানি উঠে থাকে। চুলকানি উঠেছে খেয়াল নেই। বিছানায় শুয়ে পার্ট করছে, রাত হয়েছে, মনে করছে বাড়িতেই আছি বুঝি। Prompter-এর কথা শুনে বলছে আর ভীষণ চুলকাচ্ছে। কথাগুলো সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম ওটা বুঝি পার্টেরই একটা অঙ্গ। কথা বলছে আর চুলকাচ্ছে। কথা তো কেউ বুঝতে পারছে না। আমরাও সেইরকম এই সবের মাঝে পড়ে খেই হারিয়ে ফেলি। এইসব প্রেম-ভালবাসা আরও কত কি, সবই ঐ চুলকানির মত হয়ে যায়। আমাদের শরীরের লবণাক্ত জল যখন তাতে পড়ে তখন জ্বালা শুরু হয়। তখন ভাবে কেন চুলকিয়েছিলাম। সেই জ্বালায় ছট্‌ফট্ করতে থাকে। এখানে সব কিছুতেই জ্বালা। যে কাজই কর সমস্ত কাজেতেই দুঃখ, ভুল বোঝাবুঝি। অন্তর্যামিত্ব না থাকলে যদি চলতে হয় আর গোটাকতক অন্ধ যদি বলে চলো বেড়াতে যাই, এই দুটো একই কথা হয়ে পড়ে। কেউই রাস্তা পায় না। এখানে আমরা এক জাতীয় অন্ধ হয়ে আছি। কোন পথটা গ্রহণ করব ঠিক পাই না। এখানে ভুল বোঝাবুঝির মধ্যেই থাকতে হয়। কেউ যদি তোমার বাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে। কেন তাকিয়ে আছে জানলাম না, ও এদিকে কেন তাকিয়ে আছে, ও ভারি বদ বলে দিলাম। অন্ধের মত গুঁতোগুতি করতে হয়। শুধু ধারণার উপর উক্তি করে যাই। কতকগুলো অন্ধ যদি একটা ঘরে থাকে ধাক্কা তারা খাবেই। অন্তর্যামিত্বহীন হচ্ছে অন্ধের সামিল। ধারণাতো ঠিক নাও হতে পারে। এক ধারণায় একজনকে আজ ভাল বললাম কালই মন্দ বলব। আজকে যে ছিল মহৎ, কালই চোর হয়ে গেল। এই সংসারে যা সাজবে তাতেই অশান্তি। সবাইকে একটা আবরণ দিয়ে চলতে হয়। প্রত্যেকে গুপ্তভাবে চলছে। মনের কথা বুঝতে গিয়ে সে বুঝল কি না-বুঝল এই চিন্তা করে কথাও বলা যায় না। যেখানে কে কি বুঝল এই চিন্তা করে কথা বলতে হয় সেখানে ভালবাসা, প্রেম সব সম্পর্কেই মহাবিপদ। এই বিপদের কাজই করতে হচ্ছে। মনের খোরাক আর মিলছে না। কি জানি কি হবে করেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে হচ্ছে।

সকল কিছুর সমাধান হয় এই মন্ত্রে। মন্ত্র হচ্ছে ভাষা, যে ভাষার উপর জগৎ রয়ে গেছে, সেটাই গ্রন্থ। গ্রন্থ লেখে কালি দিয়ে। আর বিশ্ব-প্রকৃতির গতিই হচ্ছে গ্রন্থ। বিশ্ব-প্রকৃতি তার লেখার ভিতর দিয়ে কত খেলাই না দেখাচ্ছে। পাখির খেলা দেখাচ্ছে, সাগরের শব্দ শোনাচ্ছে, এতবড় ওস্তাদ, তার লেখায় কথা বলে, নদী বয়ে যায়, তাই পাহাড়ে বরফ জমে। প্রকৃতির গ্রন্থে প্রাণ আছে। এত বড় সাহিত্য, এই প্রকৃতির গ্রন্থে কি লেখা পাচ্ছি? যা দেখছ এগুলো জাগতিক ভাষা, যে ভাষাকে শিখলে সমস্ত শক্তির অধিকারী হতে পারা যায়। এটার নাম দিয়েছে আধ্যাত্মিকতা। সেই ভাষাকে স্মরণ করব, যাতে সব ভাষাকে আয়ত্তে আনা যায়। প্রকৃতির প্রকৃতস্থ যে রূপ যেভাবে জগৎ রয়েছে, তার যে ভাষা সেটা হচ্ছে universal ভাষা। এই সৃষ্টির ভাষাকে জেনে নিলে, দখলে আনলে আমরা সমস্ত শক্তির অধিকারী হতে পারি। সেই শক্তি আমাদের মধ্যে রয়েছে, তাই বিরাট শক্তির কথা আমাদের মনে পড়ে। বীজ আকারে আমরা রয়েছি। এই বীজই গাছ হয়ে যখন দাঁড়িয়ে যাবে, তখন তার ডাল-পালা, ফল ফুলের মত অণিমা, লঘিমা, অন্তর্যামিত্ব, সর্বব্যাপ্তমানত্ব, সর্বজ্ঞত্ব ফুটে উঠবে। সুপ্ত আকারে যেগুলো রয়েছে, সেগুলো ধ্বনির স্পর্শে জাগতে থাকবে। ডিমে যদি তাপ দেওয়ার মাত্রাটা জেনে তাপ না দেওয়া যায় তবে ডিম ফোটে না। তাকে তার সেই মাত্রায় যে মাত্রায় ফুটবে সেই মাত্রাতে তাপ দিতে হয় তবে জাগরিত হবে। যেটা লুকায়িত রয়েছে সেই মূলাধারে কুলকুণ্ডলিনী রূপে। যেটা motion বা গতিতে রয়েছে সেটাকে স্মরণ করলে দেহের যন্ত্র এমনই জিনিস, কোথায় রয়েছে কিন্তু আপনেই ফুটে ওঠে। আমাদের এখানে কোথায় London থেকে টাইপ করছে আর এখানে হাজার হাজার মাইল দূরে কেমন কাগজে ফুটো ফুটো হয়ে লেখা বার হয়ে যাচ্ছে। যদি এই সামান্য যন্ত্রের শক্তিতে এরকম হতে পারে তবে আমাদের এই দেহ যন্ত্র, জাগ্রত যন্ত্র, এতে তার মন্ত্রের স্মরণে কেন এত সব হবে না। তুমি শুধু শব্দের স্মরণ করে যাচ্ছ, কিন্তু তার কাজ ঠিকই হয়ে যাচ্ছে, ভিতরে ভিতরে। এই মন্ত্র হচ্ছে Pendulam-এর মত, স্মরণ করে যাও টক্ টক্ করে। একবার এদিক আর ওদিক শুধু এতেই দেখ, এমনভাবে adjust করা আছে ভিতরে ঠিক চলে যাচ্ছে। ভিতরে চলছে কিনা দেখবার দরকার হয় না, শুধু টক্ টক্ করলেই হল। এই মন্ত্র আজ ব্যবসায়ে পরিণত হয়ে গেছে। এই মন্ত্রের সুযোগে জাতিভেদ হয়েছে, দেশ ভাগাভাগি হয়েছে। এই মন্ত্রের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ী গুরু সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মনীতিতে ভেদাভেদ করেছে। এই মন্ত্রের ব্যাখ্যায় সমাজে সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এতে দুর্বলতা এনে দিয়েছে। চতুর্দিকে আজ বিশৃঙ্খলা। আমি এই মন্ত্র ছড়িয়ে দিয়ে যেতে চাই এই ক্ষেত্রে, পয়সা-কড়ি কিছুই চাই না, শুধু ভালবাসা। যে যেভাবে আসছে, তাকে সেইভাবে গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠা করছি এই মন্ত্রকে। কত যে রোগ সারাতে হয়েছে গুণে শেষ করা যায় না। আমার এখানে হাসপাতালকেও ছাড়িয়ে গেছে। চারিদিকে অসুখ-বিসুখ, দুঃখ-কষ্টে ছড়াছড়ি। যে যেভাবে আসছে তাদের সাথে সেইভাবে মিশে জানিয়ে দিয়ে যাচ্ছি এই মন্ত্রকে, এই তত্ত্বকে। এই মন্ত্র সমস্ত সুপ্ত শক্তিকে ফুটিয়ে তুলবে। এই মন্ত্র হচ্ছে সেই ধ্বনি যার উপরে বিশ্ব প্রকৃতি চলছে। তাকেই আমরা স্মরণ করব আহারে, বিহারে, শয়নে স্বপনে, জাগরণে।

গুরু যে নিয়মাবলী বলে দেন, যে মন্ত্র বলে দেন, দীক্ষা দেন, তাতেই তাড়াতাড়ি কাজ হয়। এই মন্ত্রের গভীরতায় ডুবে যিনি এর সমস্ত তত্ত্বকে জেনে নিতে না পেরেছেন তার পক্ষে কাজ করা সম্ভব হয় না। তিনি ক্ষেত্র দেখলেই বুঝতে পারেন কোন ক্ষেত্রে কোন বীজ লাগাতে হবে। ক্ষেত্র বুঝে বীজ লাগাতে না পারলে অসুবিধা হয়। বর্ষা আসছে, তুমি তো সরষে বীজ ছড়িয়ে দিলে গাছ হবে বটে কিন্তু বর্ষার জলে সব ধুয়ে নিয়ে চলে যাবে। সমস্ত খাটনি বৃথা হবে। যিনি এই মন্ত্রের সমস্ত কিছুকে ভাল ভাবে জেনে নিতে পেরেছেন, তাঁর পক্ষেই একমাত্র সম্পূর্ণ ভেঙ্গে যেমন খুশী তেমন করে গড়া সম্ভব হয়। কুমোর যে মূৰ্ত্তি বানায় সেই মাটিকে প্রথম পায়ের তলায় ফেলে কতরকম করে মাখে। সেই পায়ের তলাকার মাটি দিয়ে যখন মূর্তি তৈরী হয়ে যাচ্ছে তখন সেই মূর্ত্তির সামনে নিজেই হাত জোড় করছে। যখন গড়া হয়ে যাবে তখন আবার নিজের ভিতর টেনে নেবে।

জীবনভর আমরা কি করছি হবে না, হতে পারে না, অসম্ভব, তাই কি হয়। এর মধ্যে পড়ে রয়েছি। আমাদের পক্ষে চাইনিজ ভাষা শিখতে গেলে অসুবিধা হবে। কিন্তু, একটা বাচ্চা শিশুর তাতে কোন অসুবিধা হয় না। একটা বাঙ্গালী ছেলেকে যদি সেখানে রাখ দেখবে চিং-চাং আরম্ভ করে দিয়েছে। বাংলা শেখাটাই তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সে যদি বাংলা নিজে থেকে শিখতে পারত তবে বুঝতাম বাঙ্গালীর ছেলের মাহাত্ম্য আছে। আমাদেরও সেইরকম হয়েছে, এখানকার একজাতীয় ভাষা না হওয়ার ভাষা, এতেই আমরা সফলতা লাভ করেছি। হবে না এটা ভালভাবে বুঝে নিয়েছি। বাবা বলছে, মা বলছে, ঠাকুরদা বলছে তাতে এই না হওয়ার কথাতে আমরা সিদ্ধিলাভ করেছি। হবে, এই কথাটাই আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অনেক জায়গা আছে তারা হবে না, অসম্ভব এই কথাগুলো জানে না। তারা জানে আমরা জন্মগ্রহণ করেছি হওয়ার জন্য। সুতরাং হবেই। কিছু আগে আর কিছু পরে। তারা এইসব না হওয়ার কথা বুঝতেই পারে না। তারা অবাক হয়ে যায়। তারা বলে, তোমরা না হওয়াও কি করে। তাদের এই তোমাদের মত অবস্থায় আসবার জন্য সাধনা করতে হয়। তাদের আপনিই হয়ে যাচ্ছে এখানকার অবস্থাগুলো দেখলে দুঃখ হয়। তোমাদের যদি সেই চোখ থাকত এই সব দেখে না কেঁদে থাকতে পারতে না। এত সুন্দর সব মনগুলো কেমন করে পড়ে আছে। রাস্তায় দেখ না ভিক্ষে করার জন্য, ব্যবসা করার জন্য সব ভাল ভাল মানুষগুলোকে কেমন করে রেখে যায়। কারও হাতটা বেঁকিয়ে দিয়েছে, কারও পা কেটে ফেলেছে, কাউকে কুঁজো করে দিয়েছে, কারও চোখ ফুটো করে অন্ধ করে দিয়েছে নিজেদের চোখ নিজেরাই ফুটো করছে আবার বলছে দেখতে পাচ্ছি না। এইরকমভাবে থাকতেই ভাল লাগছে, এমনই সংস্কার হয়েছে।

বোঝে না তাই কেউ কাজ করলে, জপ, ধ্যান করলে হাসে। বলে পাগল হয়েছে। কিরে পাগল হয়েছিস না কি? ওসবে কিছু হয় না, ও বিয়ে করেছে ছেলে-পুলে আছে ওর হবে না, সংসারীদের হবে না—এইসব বলে বেড়ায়। সবারই যে হতে পারে, অসম্ভব যে কিছু নেই, আমরা যে ঐ অবস্থার মাঝেই আছি এটাই ভুলে গেছে। ভুলে গিয়ে কি কষ্টের মধ্যেই না পড়ে আছে। সেটা বুঝবার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছে।

  ֎