অমৃত:

৩০/০৭/১৯৬১, ভূপেন বসু এভিনিউ,  শ্যামবাজার, কলিকাতা

...কান্নাকাটি করে, মাথা খুঁড়ে নমস্কার করে বেড়ালেই যদি ভগবান আসত! একজন শোকাচ্ছন্ন ব্যক্তি যে চীৎকার করে কাঁদে, ভীষণ দূরবস্থায় পড়ে যখন ভগবানকে ডাকতে থাকে তখন তাদের অত একাগ্রতা থাকা সত্ত্বেও তো ভগবান আসে না।

৩০/০৭/১৯৬১ (১৪ই শ্রাবণ, ১৩৬৮) 

এই জগৎ, এই বিশ্ব, অনন্ত বিশ্বের যাবতীয় ব্যাপার সবই বস্তু। এই আধ্যাত্মিকতার সুর হচ্ছে বস্তু। আধ্যাত্মিকতার সুর এই বিশ্বের বস্তু ছাড়া নয়। ধর্ম, সিদ্ধি, মুক্তি, নির্বাণ সবই আমাদের ভিতর ভরপুর হয়ে আছে। আমাদের ভিতর নেই বলতে পারব না। আমরা এই অনন্ত বিশ্বের অণু-পরমাণু হয়ে একই চক্রে এই ঘূর্ণিপাকে রূপান্তরিত হয়ে আবহমান কাল হতে একই অবস্থায় রয়ে গেছি। এই দেহযন্ত্র বিরাট যন্ত্র। একেই বাজিয়ে তুলতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে আজ পর্যন্ত যত ধর্ম, পূজা-পার্বন সবই নিজেকে জানবার জন্য, ভগবানকে খুশী করবার জন্য নয়। আমরা নিজস্ব সত্তার মহানন্দে যাগ-যজ্ঞ, হোম করে চলেছি, তারই পূজা করছি সুপ্ত নিনাদকে জাগ্রত করবার জন্য। সাধারণভাবে মাহাত্ম্য প্রকাশের ভিতর তাকে ডাকলে তিনি খুশী হবেন—এই রকম কথা আছে। কিন্তু খুঁজে দেখলে নিজের সত্তাকে নিজের অন্তর্নিহিত সুরকে জাগরিত করবার জন্যই সাধনা।

ভগবান সন্তুষ্ট হবেন এই ভাব আজও আমাদের মধ্যে রয়েছে। কে খুশী হবেন? ভগবান কোথায়? ভগবানের ভগবৎ সত্তা তোমার ভিতরেই। সুতরাং তুমি নিজের সত্তায়, নিজের সুরে খোঁজ, এটাই আদি, তাই পূজা-পার্বনের ব্যবস্থা। আলাদা রূপের মাঝে ভগবান বিরাজ করেন না। ভগবান চক্ষু বুজলে এসে কথা বলবেন, এতে ভগবানকে ছোটই করা হয়। আমরাই ভগবানের ভগবত্তা হয়ে, সেই ভগবানের বীজ হয়ে রয়েছি। যেখানে বীজ সেখানেই আবার গাছ, ফল-ফুল। তাই, সেই গাছ, ফুল-ফল হয়েই আমরা রয়েছি। এই জীবলোক তার বীজ হয়ে আছে। আমরা ভগবানকে পাব, না আমরাই ভগবান হয়ে যাব, সেটাই ভাববার বিষয়?

একটি জিহ্বা বুঝিয়ে দেয় বহু রকমের স্বাদ, মিষ্টি, তেঁতো, ঝাল কত কি। তোমার ভিতর এমন একটা যন্ত্র আছে যা সমস্ত স্বাদ বুঝিয়ে দেয়। তোমার এমন একটা চোখ আছে যা সমস্ত কিছু দেখিয়ে দেয়। এমন একটা শ্রবণ ইন্দ্ৰিয় আছে যা সমস্ত কিছু শুনিয়ে দেয়। এই যে বুঝ, এই যে জ্ঞান এই যে ইন্দ্রিয়গুলো যা পূর্ণ আকারে আছে আবার বীজ হয়ে আছে। এই বীজ যখন ফুটবার অবকাশ পাবে, মনের সঞ্চালনে যখন ফুটতে থাকবে তখন দেখবে তুমি ও এই বস্তু যে একই সত্তা সেটা বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না।

সুতরাং, এই যে ব্যবস্থা, পূজা ইত্যাদি তাতে আমরা অনেক দূর সরে রয়েছি। দেহের দিক দিয়ে, বাস্তবতার দিক দিয়ে পিছিয়ে গেছি। এই সব প্রচলিত প্রথায় কাজ করলেই হয় না। কাজের পেছনে চাই তার সত্য রূপকে জানা কেন এইসব করা হচ্ছে, কেন এইসব বিধি-ব্যবস্থা, তার যুক্তিসঙ্গত, বিজ্ঞানসম্মত যে অর্থ রয়েছে সেটা আগে জানা দরকার। না জেনে পাথরের সামনে হা-হুতাশ করলে পাথর সাড়া দেবে না। নিজের ভিতরকার জিনিস না জানা পর্যন্ত পাথর সাড়া দেবে না। আমাদের জানতে হবে কেন এইসব বিধি ব্যবস্থা। আজ বেশীর ভাগ লোকই দর্শন হতে বঞ্চিত। হাজার হাজার বছর ধরে যে বিধি-ব্যবস্থা চলে আসছে তাতে তারা দর্শন পাচ্ছে না, অনুভূতি হয় না। কেন পায় না এটা বুঝলেই হয়ে যায়। চীৎকার করে কাঁদলেই যদি হয়ে যেত, কান্নাকাটি করে, মাথা খুঁড়ে নমস্কার করে বেড়ালেই যদি ভগবান আসত! একজন শোকাচ্ছন্ন ব্যক্তি যে চীৎকার করে কাঁদে, ভীষণ দূরবস্থায় পড়ে যখন ভগবানকে ডাকতে থাকে তখন তাদের অত একাগ্রতা থাকা সত্ত্বেও তো ভগবান আসে না। পুত্রের মৃত্যুতে মা-বাবা কাঁদতে কাঁদতে চক্ষু অন্ধ করে ফেলেছে, পাগল হয়ে যাচ্ছে। কান্না, চীৎকার করার ইচ্ছা, একাগ্রতা কোনটারই সেখানে অভাব নেই। কিন্তু কৈ তার কান্নার রোলে কেউতো বোল দেয় না, ভূত-প্রেত এসে তো দেখা দেয় না, পুত্ৰ তো এসে দেখা দেয় না। মা-বাবার একাগ্রতায় তাদের সাথে এসে তো কথা বলে না। একাগ্রতার নিয়ম হল যার জন্য কাঁদছ তাকে প্রত্যক্ষ করা যাবে। একাগ্রতার সাথে যাকে চিন্তা করবে সে আসবে।

একজন বলেছিল, প্লানচেটের ব্যাপারটা কি রকম? কোন বিষয়ে পট্ করে কিছু বলতে চাই না। তোমরা বুঝে নাও। প্লানচেটে ঠাকুর আনা হয়, অনেকে আসেন। তাতে কি করা হয়? এক জায়গায় অনেকে বসেন, তারপর একজনের চিন্তা সকলে মিলে করছেন। তিনি আসবেন, একজনের হাত কাঁপতে থাকল, তিনি এসে পড়েছেন, জিজ্ঞেস করা হল আপনি কোত্থেকে এসেছেন, লিখল সপ্ত, তা থেকে বুঝে নিল সপ্তলোক থেকে এসেছেন। তখন বলা হল বুদ্ধদেবকে পাঠিয়ে দিন। এতটুকু চিন্তায় যদি এই ফল হয় তবে শোকাচ্ছন্ন মা-বাবার চিন্তায় কি ফল হতে পারে ভেবে দেখ। তাহলে ভূতের উপদ্রবে কেউ বাঁচতে পারত না। মৃত মা, বাবা, পুত্র সবাই সেই কান্নাকাটিতে সামনে এসে লাফালাফি শুরু করে দিত। এত তাড়াতাড়ি এসে গেলে সাঙ্ঘাতিক কথা। এই সব দিয়ে ভগবানের বিষয়বস্তুকে খেলো করা হয়েছে। সাধারণ লোকেরা সাধারণ ব্যাখ্যাই বোঝে। ব্যাখ্যার প্যাঁচে পড়ে গেলেই মুস্কিল। সাধনা এমনভাবে থাকবে যাতে কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন হবে না। নিজের বুঝ-বুদ্ধি দিয়ে নিজের ভিতর থেকে নিজেই বুঝে নিতে পারবে।

আমাদের দেখতে হবে, কেন আমরা এসেছি, কোথায় যাব? কি আমাদের কর্তব্য? এর মীমাংসা এসে গেলেই সব হয়ে গেল। মূর্তি পূজা করব, এই করব, ঐ করব এই করে হৈ চৈ করা যায় শুধু। কিন্তু আমাদের জানতে হবে কেন এই সব বিধি-ব্যবস্থা করা হয়েছিল? একতা আনবার চেষ্টা করা হয়েছিল, একান্নভুক্ত করবার চেষ্টা করা হয়েছিল, শিল্পের দিক দিয়ে উন্নত করবার চেষ্টা করা হয়েছিল, ফুল-ফল এইসব চেনাবার চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন অত সব ফল চিনত না। জঙ্গলময় দেশ ছিল, গাছে ফল হয়ে থাকত। ঠাকুরদা একটা ফল খেয়ে মারা গিয়েছিল, ছেলেকে বলে যায় নি, এখন সে ভাবছে কোন গাছের ফল খেয়েছিল, কেউ আর ফল খেতে সাহস করত না। তখন এত সব গ্রন্থ ছিল না। এত সব প্রার্থনা ছিল না। চিন্তাশীলরা মানুষের ভয়কে আশ্রয় করে, তাদের একটা নিয়ম-শৃঙ্খলায় আনতে চেষ্টা করলেন। এই ভয় থেকে ভীষণ আকার মূর্তি তৈরী হল। সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হল, দেখ তোমরা যে ভয় পাও এই তার দেবতা। এ তোমাদের ভয় দেখান, একে সন্তুষ্ট রাখবে। তোমরা বাড়ী গিয়ে একসঙ্গে থাকবে। এই কাজগুলো পাপ, এগুলো করবে না। এই ঠাকুরকে এই ফল দেবে। এ এই ফল খেতে ভালবাসেন। তারপর থেকে লোকে ঐ ফল খেতে শিখল। এক-এক ফল এক-এক ঠাকুরকে দেওয়া হয়। এই করে হাটে-বাজারে সব বিক্রি হতে থাকল। আস্তে আস্তে মূর্তিগুলো শান্ত রূপ নিতে থাকল। স্বপ্নেই হোক আর বানিয়েই হোক তারা দেখল সবাইকে একজোট করতে হলে, এক জায়গায় হাতজোড় করা শেখাতে হবে। তাই থেকে হাতজোড় করা শিখল, হাতে তালি দেওয়া শিখল। তারা আবার বলে দিল হাতে তালি দেবে, তবে কাজের সময় নয়। আস্তে আস্তে স্কুলঘর হল, শাস্ত্র এল, এক একভাবে এক-এক মূর্তি তৈরী হতে থাকল। বলা হল, এই দেবতা বিদ্যা দান করেন, ইনি হলেন সরস্বতী, একে পূজা করবে। দেশের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নানাভাবে মূর্তি এসে পড়ল, মন্ত্র সৃষ্টি হল। এই মূর্তির এই ধ্যান, এই বীজমন্ত্র। এই মূর্তির এই উপকারিতা সব বলে দেওয়া হল। আজও সেই ব্যবস্থা চলে আসছে। প্রকৃতির প্রকৃতিগত রূপটা কি করে জানা যায় তারই চেষ্টা করা দরকার। কুমোরেরা মূর্তির পর মূর্তি গড়ে চলেছে, তারাই আবার এসে হাতজোড় করে দাঁড়াচ্ছে। বৎসরের পর বৎসর এই হয়ে চলেছে। এখন প্রকৃতই কি করা দরকার? করে যাবে যে, কি পাবে, কোথায় যাবে? এই করে যাও তারপর পেয়ে যাবে, কি পাবে জানে না, কোথায় যাবে জানে না। জপ করে যাচ্ছে শেষে ঝিমিয়ে পড়ছে। এইভাবে অনেক আছে, তার মধ্যে দু-একটা বললাম। এত ভাবে সাজানো, এত যে কনসাস্, এত যে বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যবস্থা, কোন্ ব্যক্তির নির্দেশে এমনভাবে সব চলছে? কার অঙ্গুলি হেলনে এই সব হচ্ছে? সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব কিভাবে বোঝা যায়? কোন শক্তির প্রেরণায় এই জগৎ এমন ভাবে চলছে? এমন ভাবে সব ফুটে উঠছে? সেই আর্টিস্টটি কোথায়? সাধারণ কথায় এইসব বলা চলে, কিন্তু যদি ঘড়িটা প্রতি মিনিটে মিনিটে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় আঙ্গুল দিয়ে কাঁটাটা নেড়ে নেড়ে চালাতে হত, এক ঘণ্টা পর পর ঘড়ি ঠিক করতে হত তবে আর কেউ ঘড়ি চালাত না। এই বিশ্বের এমন নিয়ম আপন সুরে সব হয়ে যাচ্ছে। আপন সুরের নিয়মাবলীতে চৈতন্যের কণিকাগুলো এমন ভাবে রয়েছে, ধূলিকণাবৎ এই মহাশূন্যে বিরাজ করছে। এত ক্ষুদ্র কিন্তু গতির আলোড়নে পরিবর্ধিত হয়ে এক-একটি পৃথিবী, সূর্য, গ্রহ তৈরী হয়ে যায়। বাস্তব ক্ষেত্রে অনেক কণিকা একত্রিত করে পৃথিবী তৈরী হয়। অনেক বালিকণা একত্রিত করেই দেশ হয়। অনেক বালিকণা একত্রিত করে পৃথিবী তৈরী হয়, এই যে গোলাকার বস্তুটিকে মৃন্ময় পৃথিবী বলছ কিন্তু অজস্র অণু পরমাণুর সংমিশ্রণই মাটি। মাটির রূপ তার নিজস্ব রূপ নয়। এতে জল রয়েছে, বাষ্প রয়েছে, আগুন রয়েছে এতো সব সূর্য হতেই আসা সম্ভব। সূর্যের রূপ তার নিজস্ব রূপ নয়। অনেকগুলো তেজপূর্ণ কণিকা নিয়ে সূর্য গঠিত হয়। এই তেজ কণিকাগুলো শূন্যে বিরাজ করছিল। গতির আলোড়নে দুধ হতে যেমন কণিকা কণিকা মাখন বেরিয়ে আসে তেমনি মাখনবৎ এই কণিকাগুলো এই অনন্ত বিশ্বের মহাশূন্যে ছড়িয়ে আছে। মনের মন্থনে এই মাখন বেরিয়ে আসে। বিশ্বের মন্থনে এক-একটি সূর্য গঠিত হয়েছে। সেই সূর্য হতে পৃথিবী, তাহা হতে জীবলোক তাহাও তেজকণিকায় পূর্ণ। অজস্র অজস্র তেজকণিকা একত্রিত হয়ে এই দেহ। এই সব কণিকাগুলোতে সুপ্ত সুরের ধারা পরিপূর্ণভাবে রয়েছে। শুধু উন্মুক্ত করে দাও। এই সূর্যের ক্ষমতা পিপীলিকার ক্ষমতার ন্যায় তোমার ভিতর রয়েছে। এই দেহের সমস্ত সুরগুলি যদি বাজিয়ে তুলি, সেই সুরে আছে এই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহের কথা, এতে আছে মহাসুরের কথা। অণিমা, লঘিমা, তেজের কথা পুঞ্জীভূত হয়ে, এই দেহে রয়েছে। সেই পুঞ্জীভূত তেজগুলি হতে যে মৈথুনের মন্থনে আমরা সৃষ্টি হয়েছি, সেই মৈথুনের মন্থনে আমরা মহাসঙ্গমের পারে এসে উপস্থিত হয়েছি। এই তেজকণিকায় রয়েছে মেঘগর্জনের সুর, আলো, বিদ্যুতের তেজ। আমরা তেজকণিকার সমষ্টিগত সাড়া নিয়ে রয়েছি। হে মানব, হে পথিকগণ, তোমরা ভুল কর না, বৃথা কালক্ষয় কর না, হত্যা তুমি একটি মানুষকে করছ না, অগণিত মানুষ মেরে ফেলছ। নিজেদের কথা ভেবে দেখ। এক বীর্য্যপাতের সাথে সাথে কত লক্ষ লক্ষ জনগণ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অত পাপ করা সত্বেও আমরা কিভাবে আছি। কিন্তু কামের উন্মাদনার যন্ত্র দিয়ে দেখলে আমাদের যা রূপ দেখা যাবে, তাতে দেখবে কতভাবে কত লোক আমরা চলে গেছি। গোপন রাজ্যে গোপনভাবে থাকাই আমাদের ধর্ম। কত বীর্য্যপাত হয়ে গেল তবুও আমরা শেষ হয়ে যাই নি। এসব কেন বলা হচ্ছে, বীর্যপাতের লালসায়, এতটুকু তৃপ্তির লালসায় আমাদের কি ভীষণ রূপ। এটা তো মহাসাগরের এক বিন্দু জল। পৃথিবীবৎ কণিকা আমাদের মধ্যে রয়েছে। যে একটি কণিকা আমাদের মধ্যে ফুটে রয়েছে তাতে কত কি করে। একটি কণিকার লালসায় এত, আর এই পৃথিবীবৎ সমস্ত কণিকা যদি ফুটে ওঠে, একটা কণিকার নিবৃত্তি না হয় মাঠে ঘাটে করতে পারছ, সেই পৃথিবীবৎ কণিকা যখন ফুটে উঠবে সেই অজস্র কণিকার কাম, সেই মহাবীৰ্য্যপাত কে সহ্য করবে? সেই মহাবীর্য্যপাতের ধারা বয়ে যাচ্ছে সহস্রারের ভিতর দিয়ে। তার জন্য এই শূন্য রয়েছে। এখানকার আনন্দ দাদের চুলকানির মত। রাত্রে খাওয়া-দাওয়া করে যখন বসেছে দাদের চুলকানি আরম্ভ হয়েছে। চুলকাতে চুলকাতে যখন রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে, তখন বেশ মজা লাগছে। কিন্তু যেই ঘাম, সেই লবণাক্ত জল সেখানে পড়ে, তখন ছটফট করতে থাকে। এতটুকু বীর্য্যপাত হয়ে গেলেই আবার দুঃখ। কিন্তু, এর শেষ নেই। যে সঙ্গমস্থলে আমরা চলেছি সেটা হচ্ছে প্রকৃতি-পুরুষের মিলন, শিব-শক্তির মিলন। সেই সঙ্গম অবস্থায় দেখবে কত সূর্য, পৃথিবীর মত সব তোমার মধ্যে প্রজ্বলিত অবস্থায় রয়েছে। এটা শাশ্বত অবস্থা, মহানির্বানের অবস্থা, চিদানন্দ, ব্রহ্মানন্দের অবস্থা। যখন তোমার সুর সেই সুরে সুর দিয়ে বসবে, সমাধির সেই আদি সুর তোমার ভিতর দিয়ে বয়ে যাবে তখন দেখবে প্রতিটি কণিকা তার নিজ নিজ সত্তায় থেকে তার কথা বলে চলেছে, তুমি ব্যাপ্তমান, তুমি সর্বদর্শী, মন্ত্রের ধ্বনি এনে দেয় আলো, একটা দেশলাইয়ের কাঠি আর বারুদ দেখলে মনে হয় না এতে আগুন আছে। কিন্তু, ঘর্ষণে ঠিক জ্বলে ওঠে।

এই সব বার বার বলে যাই যাতে হতাশ নিরাশের মাঝে না পড়। এইগুলো যাতে তোমাদের মধ্যে গেঁথে যায়। দেওয়া-দেওয়ি, নেওয়া-নেওয়ির মধ্যে থাকলে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। একজন দিতে পারল আর একজন দিতে পারল না। একটা বিচ্ছিরি অবস্থার সৃষ্টি হয়। তার চাইতে বরং ঐ সব না থাকাই ভাল। তোমাদের সাথে আমার কন্‌ট্রাক্ট হয়েছে, যে তোমাদের কিছু দিতে হবে না, শুধু একটু যোগাযোগ রাখবে। আমি তোমাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি, আমি তোমাদের সেই জায়গায় পৌঁছে দেব। তোমরা সকলে পৌঁছে যাবে ঠিকই। তাই তোমরা নিশ্চিন্তে সংসার করে যাও। যে যা করছ ঠিকমত সেবা করে যাও, সময় হলে আমি যে করেই হোক ফাটিয়ে ফুটিয়ে দিয়ে যাব। শিশুর মুখে মধু দেওয়ার আগে মধুর স্বাদ বুঝতে পারে না। কিন্তু, মধু দিলে আর আঙ্গুল ছাড়তে চায় না। তোমাদের জিহ্বা তৈরী হয়ে আছে। যখন পেয়ে যাবে তখন দেখবে কেমন তন্ময় হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। শয্যা তোমাদের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। সে শয্যা এমন শয্যা যেখানে গেলে সব জানা যায়, সব বোঝা যায়। তোমরা সেই মহাসমাধিতে ডুবে যাবে। গুরু যখন হয়েছি, আমাকে একটু ছেড়ে দিও। গুরু আর গরুতে কোন তফাৎ নেই। গরুর দুধ খেতে হলে তাকে স্বাধীনভাবে মাঠে খেতে দিতে হয়। সেইরকম গুরুর সেই তত্ত্ব যদি নিতে হয়, তোমাদের যদি সেই অবস্থায় যেতে হয় তবে আমাকে একটু ছেড়ে দিও। এমনভাবে তোমরা সাধারণ চাহিদায় জড়িয়ে ফেল না। কেননা, এক-একদিনে যদি চারশত / পাঁচশত বাধা-বিঘ্নের কথা আসে, তবে কত আর করা যায়। পড়েই শেষ করা যায় না। তোমরা পেটের অসুখ আর জ্বর দিয়ে আমার বিচার করতে যেও না। সব তো করা সম্ভব নয়। ধর, সব করলাম ৪০/৫০টা বাদ পড়ে গেল। গুরুদেব কিছু করল না এই ভেবে চলে গেল, তা করো না। গুরুদেব ৫০ টাকা নিয়ে নিলেন বা কিছু ক্ষতি করলেন, তা তো নেই। শুধু শুধু বিগড়ে যেও না। তবে আমি তোমাদের গ্যারান্টি দিচ্ছি ঠিকই তোমাদের পৌঁছে দেব। এক হাজার হোক্ আর দশ হাজার হোক কোন অসুবিধা হবে না। তোমাদের গুরুদেব হচ্ছে বুলেট গুরু, যা পারব হ্যাঁ বলব, না পারলে না বলে দেব। কিন্তু আসল জিনিসের দিক দিয়ে কোন অসুবিধা নেই। এরা অনেক সময় কাজে বসলে তোমাদের মিথ্যা কথা বলে দেয়। আমি ওদের বলি কেন মিথ্যা কথা বললি, আপনার অসুবিধা হবে তাই আপনাকে কিছু বলি নি। তোমরা একটু ওদের দিকটাও দেখ। কত নিন্দা, অপবাদ, কেস-ও হতে পারে। কখন কোন দিক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয় তার ঠিক আছে? কাজ করতে গেলেই বাধা আসবে। বড় গাছেই বড় ঝড় লাগে। ওসবে বিগড়ে যেও না। বিগড়ে গেলেও তাদের ডাকব। তোমরা একবার এস বলে জানাব। তোমাদের তো কথাই নেই। তোমাদের জেনে রাখা দরকার যে তোমাদের গুরুদেব এই তত্ত্ব আজ নূতন দান করছেন না। এই তত্ত্বকে তিনি বাচ্চা বয়সে উদ্ধার করে সেই বাচ্চা বয়স হতে দিয়ে আসছেন। তোমাদের গুরুদেবকে আলাদাভাবে চোখ বুজে বসে, আলাদাভাবে সাধনা করে এই তত্ত্বকে জানতে হয় নি। সেই নেংটা বয়স থেকে যখন বিছানায় প্রস্রাব করতাম তখন থেকে এই তত্ত্ব সবাইকে দিচ্ছি।

  ֎