Sudhir Ranjan Halder
10th of November, 1946. Bangla Calender: 23rd Kartik, 1353.
Of the undivided Bengal. Barisal Zilla (Now: Pirojpur), Swarupkati Thana, Maisani Village.
Firthers' Name: Brajendra Nath Halder.
Mothers' Name: Subhashini Halder.
House : Brajendra Bhaban
Road : Bidhan Sarani, Palpara (West)
Post Office : Chakdaha
District : Nadia
State : West Bengal
Pin : 741222
Country : India
পিতা এবং গৃহশিক্ষকের কাছে প্রাথমিক শিক্ষার শুরু। একেবারই তৃতীয় শ্রেণীতে প্রথম গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হন। চতুর্থ শ্রেণীতে দুর্গাকাঠী স্কুলে ভর্তি হন। পরে সপ্তম শ্রেণীতে সেখেরহাট হাইস্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই ১৯৬৩ সালে সেকেণ্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন এবং চাখার ফজলুল হক কলেজে আই.এস.সি.তে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গার ফলে ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে সরকারিভাবে হিন্দুদের প্রতি বৈষম্য মূলক ব্যবহার এবং বারবার হিন্দুনিধন দাঙ্গায় আশাহত হয়ে ১৯৬৫ সালের জুলাইয়ে দেশত্যাগ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আসেন। অল্পকাল মধ্যেই ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের ফলে পূর্বপাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দারুণ অর্থসংকটে পড়েন এবং পশ্চিমবঙ্গের আশ্রয় ত্যাগ করে ওড়িশার কোরাপুট জেলায় আত্মীয়ের আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন। সেখান থেকেই ভারত সরকারের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীন দণ্ডকারণ্য প্রকল্পে শিক্ষকতার চাকরি গ্রহণ করেন। প্রায় বিশ বছর কাল মালকানগিরি অঞ্চলের বিভিন্ন উদ্বাস্তু-গ্রামে ছেলেমেয়েদের নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষাদান কার্য সম্পন্ন করেন। ওই সময় দণ্ডকারণ্যের উদ্বাস্তুদের অবস্হা তিনি প্রত্যক্ষভাবে দেখেন। অতঃপর দণ্ডকারণ্য প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবার প্রাক্কালে ‘কলকাতা টেলিফোন্স্’-এ যোগদান করেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও অধিককাল চাকরি শেষে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পঠনকালে দুর্গাকাঠী স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক প্রয়াত স্বর্ণকুমার মাঝির প্রেরণায় প্রথম কবিতা লেখা শুরু। ছাত্রাবস্হায়ই তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছড়া, কবিতা, গল্প প্রকাশিত হ’তে থাকে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস “দুষ্টকীটের শিষ্টমতি” প্রকাশিত হয় ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘নরনারী’ পত্রিকার ১৯৬৫ সালের বিশেষ ঈদ সংখ্যায়। তার আগে গ্রাম থেকে নিজস্ব সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ছোটদের মাসিক পত্রিকা “কিশলয়”। দণ্ডকারণ্যে থাকাকালীন সাহিত্যচর্চা প্রায় বন্ধ হলেও মাঝে মাঝে বিভিন্ন লিট্ল ম্যাগাজিনে কবিতা, গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৮৫ সালে ‘কলকাতা টেলিফোন্সে’ যোগদানের পর ‘অদল বদল’ পত্রিকার সান্নিধ্যে এসেই তিনি প্রকৃত আম্বেদকরবাদী হয়ে ওঠেন। এরপর প্রতিবাদী-সাহিত্য রচনায় নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করেন এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশিত হলে বিশিষ্ট ‘কবি ও সাহিত্যিক’ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন, বিশেষ করে ‘অরণ্যের অন্ধকারে’ উপন্যাস প্রকাশিত হবার পর। ‘সুরঞ্জন হালদার’ ছদ্মনামেও তাঁর বেশ কিছু কবিতা ও প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
উপন্যাসঃ অরণ্যের অন্ধকারে, আদরী, অহল্যা কাহিনি, জলমাটির মানুষ (অসমাপ্ত), In The Darkness of Jungles.
গল্প সংকলনঃ জনগণমন , বিচারের বাণী (ছোটগল্প)
প্রবন্ধঃ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দণ্ডকারণ্য ও মরিচঝাঁপি, অতীতের সন্ধানে, বিবেক ভাবনা, মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে
কাব্য ও কবিতা সংকলনঃ ভূমিপুত্রেরা শোনো, রূপকথা, ছড়া ও ছবিতে বাবাসাহেব আম্বেদকর, পরবাসী মন, রামচরিত কথা, কৃষ্ণচরিত কথা, ছড়ায় ছড়ায় হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুর, শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিতামৃত (সুরঞ্জন হালদার ছদ্মনামে)।
অন্যান্য রচনাঃ (ভ্রমণোপান্যাস) জননী জন্মভূমিশ্চ, (ধর্মীয়) মতুয়াধর্ম ও অনুষ্ঠানবিধি, হরিচাঁদ ঠাকুর ও মতুয়াধর্ম (বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ও ওড়িআ ভাষায়), মতুয়াধর্ম প্রসঙ্গে, যুগনায়ক শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর (চিত্রনাট্য), মনুসংহিতায় ব্রাহ্মণ, নারী ও শূদ্রের স্থান, (স্মৃতিকথা) দণ্ডকারণ্যের দিনগুলি। (জীবনী) আমাদেরবাবাসাহেব, আমর বাবাসাহেব (ওড়িআ)।
সম্পাদিত গ্রন্থঃ “অদল বদল”-এর গল্প।
অনুবাদিত গ্রন্থঃ ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর, বুদ্ধ ও তাঁর ধম্ম, অস্পৃশ্যদের জন্য কংগ্রেস ও গান্ধি কী করেছেন, বাল্মীকি রামায়ণ কবির কল্পনা মাত্র, ব্রাহ্মণ্যবাদের স্বরূপ, হরিজন কারা, হিন্দুরা বিদেশি, হিন্দুদের গোমাংস ভক্ষণ, সংরক্ষণ বিরোধী ঃ দেশদ্রোহী, ভারত পরাধীন হবার কারণ হিন্দুধর্ম।
ভারত সরকারের দণ্ডকারণ্য প্রকল্পে কর্মরত থাকার সময়েই উদ্বাস্তুদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। উদ্বাস্তু ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি সব সময়ই সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর সাধ্যের মধ্যে কোনও কিছু করতে কখনওই দ্বিধা করেননি। পশ্চিমবঙ্গে এসেও দলিত মানুষের স্বার্থে যে কোনও কাজে তিনি সাধ্যমত অর্থব্যয় করেন। ওড়িশার মালকানগিরিতে তপশিলি জাতি-উপজাতি কলেজ-ছাত্রদের বিনা মূল্যে থাকার জন্য সম্পূর্ণ নিজের খরচে একটি ছাত্রাবাস ও তৎসংলগ্ন একটি অতিথিশালা নির্মাণ করেন। প্রায় দশ বছর ছাত্রবাসটি চালু রেখে সম্পূর্ণ একা থেকে দেখাশুনা করতেন। অবশেষে বয়সজনিত কারণে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ছাত্রাবাসটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গে নিজবাড়িতে বসবাস করছেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, গল্পসংগ্রহ ইত্যাদির জন্য “ভারতী সাহিত্য সম্মেলন” তাঁকে ২০০৪ সালের ‘যোগেশ সরকার স্মৃতি’ পুরস্কার প্রদান করে। ‘রামচরিত কথা’ এবং ‘ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দণ্ডকারণ্য ও মরিচঝাঁপি’ বইয়ের জন্য ‘হরি-গুরুচাঁদ-আম্বেদকর চেতনা মঞ্চ’ ২০০৯ সালে তাঁকে মানপত্রসহ সংবর্ধনা জানায়। দিল্লিস্থ ‘ভারতীয় ‘দলিত সাহিত্য একাডেমি’ ২০১৩-এ ‘জাতীয় আম্বেদকর ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করে। ‘হরি-গুরুচাঁদ-আম্বেদকর চেতনা মঞ্চ’-এর বগুলা শাখার পক্ষ থেকে মানপত্রসহ ২০১৪ সালের ‘শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার’ প্রদান। ‘পশ্চিমবঙ্গ তপশিলী জাতি, আতিবাসী সমাজ কল্যাণ সংস্থা’, ‘নিউ ব্যারাকপুর আম্বেদকর ফাউণ্ডেশন’ ও ‘নিউ ব্যারাকপুর পিপলস ফাউণ্ডেশন সোসাইটি’ যৌথভাবে “মহাপ্রাণ সাহিত্য সম্মান : ২০১৯” এবং “আম্বেদকর সমাজ সম্মান --- ২০২১” প্রদান করে। ২০২২ সালে “মতুয়া মূলনিবাসী মিডিয়া” তাঁকে ‘সাহিত্য রত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করে সংবধর্না জানায়।