সিতাকুন্ড, চন্দ্রনাথ পাহাড় ভ্রমন ২০২২ খ্রিঃ
উচ্চতা ও শৃঙ্গচন্দ্রনাথ পাহাড় হিমালয় হতে বিচ্ছিন্ন হিমালয়ের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ। এই পাহাড়টি হিমালয়ের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক ঘুরে ভারতের আসাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে ফেনী নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে মিশেছে। চট্টগ্রাম অংশে ফেনী নদী থেকে চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার। এই পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত হয়েছে সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক।
উচ্চতা ও শৃঙ্গ
সীতাকুণ্ড শহরের পূর্বে অবস্থিত চন্দ্রনাথ শৃঙ্গ প্রায় ১০২০ফুট (প্রায়) অথবা (৩১০ মিটার) উঁচু এবং চট্টগ্রাম জেলার সর্বোচ্চ স্থান। রাজবাড়ি টিলার উচ্চতা ৯০০ ফুট এবং সাজিঢালার উচ্চতা ৮০১ ফুট। চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি এসে এই পাহাড়ের উচ্চতা অনেক কমে এসেছে। চট্টগ্রাম শহরের উপকন্ঠে বাটালি হিলের উচ্চতা ২৮০ ফুট এবং শহর থেকে সামান্য উত্তরে নঙ্গরখানা ২৯৮ ফুট উঁচু।
ঝর্ণা ও প্রস্রবণ
ঝর্ণা ও প্রস্রবণএখানে রয়েছে সহস্রধারা আর সুপ্তধারা নামের দুটি জলপ্রপাত। মীরসরাই অংশে রয়েছে খৈয়াছড়া, হরিণমারা, হাটুভাঙ্গা, নাপিত্তাছড়া, বাঘবিয়ানী, বোয়ালিয়া, অমরমানিক্যসহ আরো অনেক অনেক ঝর্ণা ও জলপ্রপাত। পূর্বদিকে এই পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে কয়েকটি ঝর্ণা তথা খাল হালদা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এর মাঝে গজারিয়া, বারমাসিয়া, ফটিকছড়ি, হারুয়ালছড়ি এবং বোয়ালিয়া অন্যতম। পশ্চিম দিকে মহামায়া, মিঠাছড়া সহ আরো কয়েকটি ছড়া ও ঝর্ণা বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বর্তমানে মহামায়া ছড়ার উপর একটি রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে। এই লেক দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক, তাছাড়া নীলাম্বর হ্রদ নামে একটি মনোরম লেক এই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত।
চন্দ্রনাথ পাহাড়ে ওঠার জন্যে ২টা রাস্তা আছে। ডানদিকের দিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁড়ি আর বামদিকের রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ, কিছু ভাঙ্গা সিঁড়ি আছে। বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ আর ডানদিকের সিঁড়ির পথ দিয়ে নামা সহজ, তবে আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী পথ ব্যবহার করতে পারবেন। প্রায় ১ ঘণ্টা – ১.৫ ঘণ্টা ট্রেকের পর দেখা মিলবে শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির এর। প্রতিবছর এই মন্দিরে শিবরাত্রি তথা শিবর্তুদশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজী ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকেন। যেটি শিবর্তুদর্শী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন। বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে ১৫০ ফুট দূরেই রয়েছে চন্দ্রনাথ মন্দির যা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। এই ১৫০ ফুট রাস্তার প্রায় ১০০ ফুটই আপনাকে উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে যেখানে নিজেকে সামলে রাখা অনেকটাই কষ্টকর। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকবেন উঁচু-নিচু পাহাড়ের সবুজ গাছপালার দিকে। প্রশান্তিতে জুড়িয়ে যাবে চোখ।
চন্দ্রনাথ পাহাড় কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে এসি, ননএসি বাস ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম, সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক, শ্যামলী প্রভূতি। সবগুলো বাসই সীতাকুণ্ডে থামে। চট্টগ্রাম থেকে বাসগুলো একেখান ও অলঙ্কার বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়েঁ আসা দ্রুতগামী ট্রেন “ঢাকা মেইল” সীতাকুণ্ডে থামে, এটি ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১১টায় এবং সীতাকুণ্ডে পৌঁছে পরদিন সকাল ৬.৩০ থেকে ৭টায়। অন্যান্য আন্তঃ নগর ট্রেন গুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায়। শুধুমাত্র শিবর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থামে। সীতাকুন্ড বাজার থেকে CNG (জনপ্রতি ২৫/-) নামিয়ে দিবে পাহাড় এর প্রবেশ ফটকে। এখান থেকেই ট্রেকিং এর শুরু। সাধারণত ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে পাহাড়ের চূড়ায় পৌছাতে। চট্টগ্রাম শহর থেকে আপনি নিজ উদ্যোগে পারিবারিক ভাবে সিএনজি অটো রিক্সাতে করে ঘুরে আসতে পারবেন ভাড়া নিবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আপনি যদি পাবলিক বাসে যেতে চান তবে আপনাকে নগরির অলংকার কিংবা এ কে খান মোড় থেকে বাসে উঠতে হবে ভাড়া নিবে ৫০ টাকা প্রতি জন।
বিঃদ্রঃ সায়দাবাদ অথবা যাত্রাবাড়ি থেকে লোকাল বাসও যায় যাদের আর্থীক সমস্যা তারা লোকাল বাসে ৪৫০-৫০০/= টাকায় সিতাকুন্ড যেতে পারবেন। বাসে সিতাকুন্ড যেতে সময় লাগবে ৫ ঘন্টা ৩০ মিনিট থেকে ৬ ঘন্টা।
কিছু দরকারি জিনিস যা মনে রাখতে হবে
পাহাড়ে উঠার সময় বাঁশের কঞ্চি নিয়ে উঠবেন। ৩০ টাকা করে বিক্রি করে, ফেরত দিলে ২০/- ফেরত পাবেন।
ভারী কোনো ব্যাগ বা জিনিসপত্র নিয়ে পাহাড়ে উঠবেন না। (যেখান থেকে বাশ কিনবেন তার পাশেই টাকার বিনিময়ে ব্যাগ রাখার দোকান আছে)।
উপরে খাবার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে তাই নিচে থেকে টেনে নিয়ে উপরে ওঠার কোন মানে হয় না। (খাবার পানি, কোক, শশা, গাজর, মালটা, কলা সহ আরো খাবার ব্যবস্থা হয়েছে এখন) দাম নরমাল দাম থেকে ১০/- বেশি মাত্র।
অনেকটা পথ উপরে উঠার পর পুরো শরীর কাঁপতে শুরু করবে। তাই ধীরে ধীরে উঠুন। বেশি পানি ও স্যালাইন নিয়ে নিন সাথে কেননা প্রচুর ঘামাবে আপানার শরীর। তাড়াহুড়া করবেন না। যথেষ্ট মাথা ঠান্ডা রাখুন এবং মানসিক শক্তি বাড়ান।
পাহাড়ে ওঠার আগে থ্রি-কোয়টার এবং টি-শার্ট পরে নিন কেননা প্রচুর ঘামাবে আপনার শরীর তাই যতটা সম্ভব শরীরে কম কাপড় রাখাই ভালো কেননা ঘেমে যাওয়া কাপড় থেকে আপনার ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
বর্ষায় কিংবা বৃষ্টির পর এই পাহাড়ে না উঠাই ভালো।
কোথায় থাকবেন
সীতাকুন্ড কাঁচা বাজার এলাকায় এবং সীতাকুণ্ড থানা সংলগ্ন এলাকায় মোটামুটি মানের অল্পকিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে যাদের মধ্যে হোটেল কম্পোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া, সৌদিয়া, সায়মন উল্লেখযোগ্য। হোটেল কম্পোট জোন, জলসা, নিউ সৌদিয়া অপেক্ষাকৃত নতুন এবং মান ভালো। এদের রুম ভাড়া এসি ডাবল বেড – ১০০০ টাকা এবং নন এসি ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরের যে কোনো মানের হোটেল বা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। থাকা-খাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন মান ও দামের আবাসিক হোটেল-মোটেলের সুব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ড অথবা ভাটিয়ারীতে থাকার জন্য আবাসিক সুব্যবস্থা রয়েছে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলো। এগুলোই সবই মান সম্পন্ন কিন্তু কম বাজেটের হোটেল।
হোটেল প্যারামাউন্ট, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : নুতন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীতে। আমাদের মতে বাজেটে সেরা হোটেল এটি। সুন্দর লোকেশন, প্রশস্ত করিডোর (এত বড় কড়িডোর ফাইভ স্টার হোটেলেও থাকেনা)। রুমগুলোও ভালো। ভাড়া নান এসি সিঙ্গেল ১০০০ টাকা, ডাবল ১৫০০ টাকা, এসি ১৬০০ টাকা ও ২০০০ টাকা। বুকিং এর জন্য : ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪ ।
হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম : এটাও অনেক সুন্দর হোটেল। ছিমছাম, পরিছন্ন্ হোটেল। ভাড়া : নন এসি : ১৫০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল। এসি : ২০০০ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০১৭১১-৮৮৯৫৫।
হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টড়্রাম : একটি পারিবারিক পরিবেশের মাঝারি মানের হোটেল। ছাদের ওপর একটি সুন্দর রেস্টুরেন্ট আছে। রাতের বেলা সেখানে বসলে আসতে ইচ্ছে করবেনা। ভাড়া : ১০০০ টাকা থেকে শুরু। এসি ১৫০০ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০৩১-০৬১৪০০৪।
হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও,আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম। একটু বেশী ভাড়ার হোটেল। তবে যারা নাসিরাবাদ/ও আর নিজাম রোড এলাকায় থাকতে চান তাদের জন্য আদর্শ। ভাড়া : ৩০০০/৩৫০০ টাকা। বুকিং এর জন্য – ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২।
হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম : আগ্রাবাদে থাকার জন্য ভালো হোটেল। ভাড়া-২৮০০/৩৬০০ টাকা। বুকিং এর জন্য: ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭।
বিঃদ্রঃ যদি নতুন হয়ে থাকেন তাহলে, একা কখনো ওঠার চেষ্ট করবেন না।
ডিউটি অফিসার, সীতাকুন্ড থানা, চট্টগ্রাম : +৮৮০ ১৩২০ ১০৭৫০১