এমএইচভির কন্ঠস্বর

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে মনে অনেক প্রশ্ন? ও তার উত্তর...

***********এমএইচভির কন্ঠস্বর

১। দুই কোম্পানির দুই টিকার মধ্যে পার্থক্য কি? ও কত ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখতে হবে?

উত্তরঃ যে দুইটি ভ্যাকসিন চালু হয়েছে, তারা তথাকথিত এমআরএনএ ভ্যাকসিন। তারা মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রোটিন রেপ্লিকেট করে। শরীরে তখন ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু দুইটি ভ্যাকসিনের মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। মডার্নার ভ্যাকসিন সাধারণ ঘরোয়া ফ্রিজে ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়।

মডার্নার ভ্যাকসিন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমান লাগে না। কিন্তু বায়োনটেক-ফাইজারের ভ্যাকসিনের জন্য লাগে। তবে ব্যবহার করার আগে এই ভ্যাকসিন পাঁচদিন ফ্রিজে রাখা যায়।

২। প্রথম ডোজের কতদিন পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে?

উত্তরঃ তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। বায়োনটেক-ফাইজার ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ ১৭ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিতে হয়। এর পরেও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যায়। তবে সময়ের মধ্যেই তা নেয়া ভালো।

৩। দ্বিতীয় ডোজে অন্য ভ্যাকসিন নেয়া যাবে কি?

উত্তরঃ না। প্রথম ও দ্বিতীয়বার একই ভ্যাকসিন নিতে হবে। এই মুহূর্তে রেগুলেটরদের কাছে বিভিন্ন ভ্যাকসিন সম্পর্কে খুব বেশি অভিজ্ঞতা বা পরীক্ষার ফল হাতে নেই। তাই মানুষ যেন এই ঝুঁকি না নেন।

৪। যাদের করোনা হয়ে সেরে গেছে তাদের কি ভ্যাকসিন নিতে হবে? বা বর্তমানে করোনা আক্রান্তদের কি ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে?

উত্তরঃ যাঁদের করোনা হয়েছে, তাঁদেরও ভ্যাকসিন নেয়া জরুরি এবং তাঁদের প্রতিষেধক দেয়া হচ্ছে। কারণ, একবার করোনা হলে যে তা আবার হবে না বা নির্দিষ্ট সময়ের পরে হবে না, এরকম কোনো পরীক্ষিত তথ্য হাতে নেই।

তবে যাঁদের করোনা হয়েছে, জ্বর আছে বা সর্দি হয়েছে, তাঁদের তখনই ভ্যাকসিন দেয়া উচিত নয়। সেরে যাওয়ার পর দেয়া উচিত।

কোয়ারান্টিনে থাকা মানুষদেরও ভ্যাকসিন দেয়া উচিত নয়। কারণ, তাঁরা করোনায় আক্রান্ত এক বা একাধিক মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন। কোয়ারান্টিনের সময় শেষ হলে তাঁদের ভ্যাকসিন দেয়া উচিত।

৫। কাদের ভ্যাকসিন দেয়া ঠিক নয়?

উত্তরঃ সাধারণত এই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকরা নেবেন। কারো যদি কিছু বিশেষ লক্ষণ থাকে, তা হলে তাঁদের ভ্যাকসিন দেয়া উচিত কি না, সেটা তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন। অর্থাৎ, কারো বিশেষ ধরনের অ্যালার্জি থাকলে বা অ্যানাফিল্যাকটিক শক পেলে তাঁকে ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়টি চিকিৎসকরা ভেবে দেখবেন।

কিন্তু যাঁদের সাধারণ অ্যালার্জি আছে, তাঁরা এই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। ডায়াবেটিস, ওবেসিটি বা যাঁদের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে গেছে, তাঁরাও ভ্যাকসিন নেবেন। কারণ, তাঁদের করোনা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

৬। বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেয়া যাবে?

উত্তরঃ বায়োনটেক বা মডার্নার ভ্যাকসিন কেবলমাত্র ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের দেয়ার অনুমতি এখনো পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।

৭। গর্ভবতী মা এই টিকা নিতে পারবে কি?

উত্তরঃ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমআরএনএ ভ্যাকসিন গর্ভবতী নারীদের কোনো ক্ষতি করবে না। তাঁদের বাচ্চাদেরও নয়। তবে জন্তুদের উপর এই নিয়ে পরীক্ষা চলছে। এই মুহূর্তে তাই চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করেই এবং করোনা সহ সব ধরনের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে। মায়েরা কতটা মেশেন, তাঁদের করোনা হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, সে সবই বিবেচনা করতে হবে।

৮। ভ্যাকসিনের কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে?

উত্তরঃ ভ্যাকসিন নেয়ার পর এখনো পর্যন্ত খুব হালকা বা মাঝারি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। সাময়িকভাবে জায়গাটা ফুলে যাচ্ছে। মাথা ধরছে। ক্লান্ত লাগছে। জ্বরও হচ্ছে। প্রথম তিন দিন এই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তার পরের দুই দিনের মধ্যে তা ঠিক হয়ে যাচ্ছে।

এর চেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া হয় যে সেন্টার থেকে তিনি ভ্যাকসিন নিয়েছেন, সেখানে বা ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁরা তখন রেগুলেটরি অথরিটিকে জানাবেন।

৯। করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে অন্য কোনো ভ্যাকসিন নিতে গেলে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?

উত্তরঃ ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাম্পস, মিসলস, রুবেলা, টিটেনাসের ভ্যাকসিন ১৪ দিন পরে নেয়া যাবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে এই সময় রাখা হয়েছে।

যদিও চিকিৎসকরা মনে করেন, দুই ধরনের ভ্যাকসিন একসঙ্গে নিলেও কোনো সমস্যা হবে না। তবে এটা প্রমাণ করার মতো কোনো তথ্য হাতে নেই। তাই সাবধান হওয়াই ভালো।

১০। ভ্যাকসিন কি হালাল­?

উত্তরঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনে শুকুরের কোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়নি।

তবে যদি থাকে সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় ব্যাখ্যাঃ

বিকল্প কোনো ওষুধ পাওয়া না গেলে জীবন বাঁচানোর জন্য হারাম উপাদানে তৈরি ওষুধও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ জায়েজ। এ ব্যাপারে সুরা বাকারার ১৭৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘একান্ত নিরুপায় অবস্থায় গোনাহ করার ইচ্ছা ছাড়া শুধু জীবন বাঁচানোর জন্য হারাম খাদ্য খেলে কোনো অপরাধ নেই।’ সুরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘গোনাহ করার ইচ্ছে ছাড়াই কেউ যদি জীবন বাঁচানোর জন্য বাধ্য হয়ে হারাম খায়, তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’

১১। ভাাকসিন নেয়ার পরেও কি হাত ধুয়ে যেতে হবে, মুখে মাস্ক পরতে হবে?

উত্তরঃ দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার পর করোনার হাত থেকে ৯৫ শতাংশ বাঁচা যাবে বলে প্রস্তুতকারকরা দাবি করছেন। তা সত্ত্বেও ভ্যাকসিন নেয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি পালন করা উচিত এবং মাস্ক পরা উচিত হবে।

ভ্যাকসিনের প্রভাব কতদিন স্থায়ী হবে, সে পরীক্ষা এখনো হয়নি।

তথ্যসূত্রঃ

ডয়েচেভেলে ও ইত্তেফাক।

সংগ্রহেঃ

এমএইচভির কন্ঠস্বর