আরেকটি বিষয় খুব আকর্ষণ করেছে আমাকে, সেটি হল বইয়ের একদম শেষে ‘Ingersoll's Vow’ নামে ইঙ্গারসোলের ছোট একটা রচনা; রায়হান অনুবাদ করেছেন ‘ইঙ্গারসোলের প্রতিজ্ঞা’ শিরোনামে। রবার্ট গ্রিন ইঙ্গারসোল (১৮৩৩-১৮৯৯) ছিলেন পেশায় আইনজীবী, অসাধারণ বাগ্মী, এবং ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত অজ্ঞেয়বাদী মুক্তচিন্তক। তার একটি উক্তি দিয়েই আমি শুরু করেছিলাম আমার বিশ্বাসের ভাইরাস বইটি -
‘বিশ্বাসী মন খাঁচায় বন্দি পাখি, আর মুক্তমন যেন মুক্ত বিহঙ্গ – ঘন মেঘের পর্দা ভেদ করে উড়ে চলা অবিশ্রান্ত এক ডানামেলা ঈগল।’
রায়হান আবীরের ‘মানুষিকতা’ গ্রন্থে সংকলিত এই ‘ইঙ্গারসোলের প্রতিজ্ঞা’ সবসময়ই আমার কাছে এক অনাবিল প্রেরণার উৎস :
আমার অন্তর সেদিন কৃতজ্ঞতায় ভরে গিয়েছিল। আমি কৃতজ্ঞতা বোধ করেছিলাম ইতিহাসের সেই সব নায়কদের প্রতি, মানুষের প্রতি যারা নিজের জীবন বিপন্ন, বিসর্জন করেছিল মানুষের হাত এবং মস্তিষ্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে। আমি ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম পৃথিবীর আলোকিত সকল সন্তানদের, যাদের কেউ আত্মাহুতি দিয়েছিল মূর্খের সাথে যুদ্ধে, মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল অন্ধ প্রকোষ্ঠে আ-বদ্ধাবস্থায়, যাদের মাংস পুড়েছিল ধর্মান্ধদের আগুনে। আলোকিত সেইসব সাহসী মানুষেরা, যারা এসেছিল পৃথিবীর আনাচে-কানাচে, যাদের চিন্তায়-কর্মে স্বাধীনতা পেয়েছে মানুষের সন্তানেরা। অতঃপর আমি নিচু হলাম, যে আলোর মশাল তারা জ্বালিয়েছিলেন সে আলোর মশাল তুলে নিলাম নিজের হাতে, উঁচু করে তুলে ধরলাম সেটা, এ আলো নিশ্চয়ই একদিন জয় করবে সকল অন্ধকার।’
আরজ আলী মাতুব্বর, হুমায়ুন আজাদ, আহমদ শরীফ, বার্ট্রান্ড রাসেল, ফ্রান্সিস বেকন, রিচার্ড ডকিন্স, মাইকেল শারমার, লরেন্স ক্রাউস, ভিক্টর স্টেঙ্গরদের দেখানো পথে রায়হানের মত লেখকেরা যে আলো জ্বালিয়েছেন তা দিয়েই হয়তো আলো নিশ্চয়ই একদিন জয় করবে সকল অন্ধকার, এ আস্থা আমার আছে।
বইটি অনেকদিন ধরেই আউট অব প্রিন্ট। বইটি নিঃসন্দেহে পুনর্মুদ্রণ দাবী করে।