এলাইটনেমেন্টের পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান ও যুক্তিবোধের উথান মানব জাতির ইতিহাসের জন্যে সূচনা করেছিল এক অবিস্মরণীয় বিপ্লব। ইমানুয়েল কান্ট যাকে বলেছিলেন ‘মানবজাতির নাবালকত্ব থেকে উত্তরণ’। সাহস আর সংকল্পের অভাবে এই নাবালকত্ব আরোপিত ছিল ইতিহাসের বিশাল পরম্পরায়। যুক্তিজ্ঞান ও বিজ্ঞানবোধের এমন মহান উথান দেখা যায় নি ইতিহাসে, মানুষ ধর্মের কর্তৃত্ববাদী ছেড়ে যুক্তিবোধের উপর আস্থা রেখে হাঁটতে চেয়েছিল নিজস্ব পথে। অথচ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই আধুনিক যুগেও মানুষ যেন ফিরে গিয়েছে এনলাইটেনমেন্টের পূর্ববর্তী অবস্থায়, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক কাঠামোর সবচেয়ে মৌলিক উপাদান এখনো বিশ্বাস। মানুষ এখনো বিশ্বাস করে নূহের প্লাবনে, বিশ্বাস করে কাল্পনিক গল্পে আর কুমারী মায়ের উপাখ্যানে- কিন্তু সেই বিশ্বাস কেন করে সেই প্রশ্ন উত্থাপিত হয় না তাদের মনে। বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনো বিজ্ঞানের থেকে আস্থা বেশি রাখেন বিশ্বাসে, অথচ বিজ্ঞান ছাড়া এক মুহূর্তও চলতে পারে না। মানুষের এই চরম উৎকর্ষের সাথেও কেন বিশ্বাস ভর করে আছে আমাদের মনে, মানুষি দুর্বলতাগুলো কেন এখনো গভীরভাবে আমাদের মননে বিন্যস্ত হয়ে আছে, কেনই বা আমরা বিশ্বাস করি, সমাজ বিবর্তনে বিশ্বাস আর প্রগতিশীলতার অসাম্য অবস্থান- এইসব ব্যাপার নিয়েই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সুবোধ্য বৈজ্ঞানিক আলোচনা করেছেন বিজ্ঞানলেখক ও প্রযুক্তিবিদ রায়হান আবীর। তার জিজ্ঞাসু ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানী মন গভীরে গিয়ে দেখতে চেয়েছে বিশ্বাস সংস্কারের আদি রূপটি; ধর্মীয় বিশ্বাসের স্ববিরোধীতা আর এর বিজ্ঞান্সম্মত নির্মোহ বিশ্লেষণ । বাংলাভাষাভাষীর অগ্রবর্তী বিজ্ঞানপাঠকদের জন্যে এই বইটি একটি চমৎকার অভিজ্ঞতা হয়ে রইবে।